(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

…… স্বয়ং ঈশ্বর – মানুষের শরীরে প্রেমময় , আনন্দময় স্বামী পরমানন্দ রুপে আবির্ভূত হয়েছেন , জগৎ কল্যাণের জন্য এবং দিব্য প্রেম বিলানোর জন্য । যেখানে তাঁর উপস্থিতি সেখানেই দিব্য আনন্দ স্রোত বইতে থাকে । আমরা যাঁরা গুরুজীর সঙ্গ করেছি , তারা প্রত্যেকেই এই দিব্য আনন্দ উপলব্ধি করেছি।

বনগ্রাম আশ্রমে গুরুজী তাঁর কুঠিরের দক্ষিণ দিকের বারান্দায় বসে – তাঁর ছোটবেলার হিমালয় ভ্রমণে অত্যাশ্চর্য কাহিনী বলে চলেছেন আর আমরা দিব্য আনন্দ উপভোগ করে চলেছি ।

   গুরুজী বলছিলেন__ "জানিস– উত্তর পূর্ব হিমালয়ের পাহাড়ী পথে চলেছি  , একটা জায়গায় দেখলাম , একজন বছর পঁচিশের একটি যুবক বসে ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ করছে এবং ৯০ - ৯৫ বছরের কয়েকজন অতিবৃদ্ধ বসে বসে তা শুনছে । আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম দেখে_ ২৫ বছরের ঐ যুবক বক্তাটি আমাকে  ডেকে বসতে বলল এবং আমার সাথে আলাপ করল । এখানে যারা শ্রোতা , বসে আছে এরা আমার নাতি ।

আমি ওনাকে বললাম কিভাবে ? তখন যুবকটি বললেন – ” তাহলে শুনুন– আমি একবার একটি পাথরকে সরাচ্ছিলাম , ওই পাথরের তলায় একটি ছোট সাপ ছিল । সাপটি আমায় কামড়ে দেয় । সাপের বিষে আগুনের মত অসহ্য জ্বালা সারা শরীরে হচ্ছিল । সেই সময় একটি সাধু যাচ্ছিল , উনি সব শুনে ওনার ঝোলা থেকে একটি গাছের শিকড় বার করে আমায় খাইয়ে দেন ।

তারপর আমার বাড়ির লোকদের বলে_ একটি মানুষের সমান লম্বা গর্ত করে তাতে গোবর জল ভর্তি করে তার মধ্যে আমার মাথা বাদ দিয়ে পুরো শরীরটা সাতদিন ডুবিয়ে রাখতে ।”

   সাতদিন এইভাবে থাকার পর, আমার শরীর আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে  । সেই থেকে আমার শরীর একইরকম রয়েছে, বয়সের কোনো ছাপ পড়ে নি, এখন‌ও এই বয়সে আমি জমিতে চাষাবাদের সমস্ত কাজ করতে পারি  । আমার ছেলেরা কেউ জীবিত নেই – সবাই বৃদ্ধ হয়ে মারা গেছে । আমার নাতিদের বয়স দেখে চিন্তা করুন – আমার শরীরের বয়স এখন কত হতে পারে ? এইসব দেখে শুনে_ যে কেউ অবাক হবে ! ভাবলাম সবই মা জগদম্বার ইচ্ছা ।

  হিমালয়ের পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে একটি ছোট জনপদ পড়ল । এখানে পাহাড়ি উপজাতিরা বসবাস করে  । দেখলাম একটি রাস্তার উপর একটু উঁচু জায়গায় একটি পাত্রে তেল রাখা আছে । ওখানকার লোকদের জিজ্ঞাসা করলাম রাস্তার উপর তেল রাখার কারণ কি ?

ওরা বলল – ” পুরুষানুক্রমে আমরা জানি যে, এই রাস্তার উপর দিয়ে অশ্বত্থামা যাতায়াত করে থাকেন । উনি তেল দেখতে পেলেই– হাতে কিছুটা নিয়ে ওনার মাথায় ঘসে নেন। এর কারণ ওনার মাথায় একটা ঘা আছে, তেল পেলেই উনি মাথায় তেল লাগান । আমাদের শরীরেও কিছু রোগ হলে – ওনার ব্যবহার করা তেল লাগালে ভালো হয়ে যায়” । আমিও সাধুদের কাছে শুনেছিলাম যে, পৃথিবীতে সাতজন চিরকাল জীবিত
রয়েছেন__তার মধ্যে হনুমান আছেন আর আছেন অশ্বত্থামা।

[ ভক্ত ঈশ্বরকে যে রূপে , যেভাবে যেখানে ডাকে , ভক্তের ভক্তিকে মর্যাদা দিতে– ঈশ্বর সেইভাবে সেই রূপে আবির্ভূত হয় । ]

    গুরু মহারাজ বলে চলেছেন __"জানিস,  পাহাড়ের পাকদন্ডী রাস্তা ধরে নিচে দিকে নামছি, পাহাড়ি রাস্তার বাঁকের মুখে হঠাৎ দেখি একটি বড় হিমালয়ান  ভল্লুক আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে !

আমি জানি পাহাড়ি রাস্তায় জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে কিভাবে শরীরকে রক্ষা করা যায় ! তাই সময় নষ্ট না করে , তৎক্ষণাৎ আমার হাতে যে লাঠিটি ছিল, সেইটা ভল্লুকের মুখে আড়াআড়িভাবে লাঠিটি ঢুকিয়ে দিলাম । ভল্লুকটিও মুখে লাঠি নিয়ে পিছনের পা দুটি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

আমি পাহাড়ী পথে না নেমে , পাহাড়ের গা বেয়ে তাড়াতাড়ি নামতে লাগলাম । পাহাড়ি পথে নামলে ভল্লুকটি তাড়া করে আমায় এসে আবার আক্রমন করত।”

    গুরু মহারাজ বলেছিলেন__ "জানিস, আরেকবার হিমালয়ের পাহাড়ি রাস্তার উপর একটি বন্য হাতির সামনে পড়ে ছিলাম । আমি যদি সোজা ছুটি – পাহাড়ি রাস্তায় নামতে যায়, তাহলে হাতিটি আমায় ধরে ফেলবে । তাই আমি পাহাড়ি রাস্তার এই দিকে ওদিকে বেঁকে বেঁকে ছুটতে লাগলাম। হাতি এঁকেবেঁকে ছুটতে পারে না  । তাই দেখলাম হাতিটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথাটাকে এদিক ওদিক দুলাচ্ছে , আমার এঁকেবেঁকে চলার অনুসারে । এইভাবে সেই দিন বন্যহাতির  থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম ।

{ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যাঁর ইচ্ছায় চলছে । যিনি সমস্ত গ্রহের – সমস্ত জীবকে রক্ষা করছেন, সেই ঈশ্বর যখন মনুষ্য শরীরে লীলা করেন –তখন তাঁর লীলা আর কে জানতে পারে !! ‘লীলা’ ছাড়াও তাঁর আগমনের আর একটা উদ্দেশ্য হলো আমাদের মত সাধারণ মানুষদের শিক্ষা দিয়ে অজ্ঞান অন্ধকার থেকে আলোর জগতে নিয়ে আসা । }

      ক্রমশ - - -