(পূর্বের প্রকাশিতের পর)

বনগ্রাম আশ্রম থেকে স্বামী নিষ্কামানন্দ ( মুরারী ) মহারাজের একটি চিঠি পেলাম । চিঠিতে লিখেছেন গুরুজী রায়নায় জগাদার বাড়ি গিয়েছেন । উনি ওখানে প্রায় দিন পনেরো থাকবেন । তোমার সুবিধামতো তুমি গুরুজীর সাথে সাক্ষাত করবে । রয়না – বনগ্রামের চেয়ে আমাদের কামারপুকুরে নিকটবর্তী ।

তাই আমি , হরিদাস ( আমার যাঠতুতো ভাই ) , গুরুজীর সন্ন্যাসী শিষ্য

অসীমানন্দের ভাই ,প্রশান্ত এবং প্রশান্তর বন্ধু একজন মোট চারজন , তিনটে বাস পাল্টে রায়না জগাদার বাড়িতে হাজির হলাম , তখন প্রায় বারোটা বাজবে। কামারপুকুর এর জিলিপি নিয়ে গিয়েছিলাম তা জগদার হাতে দিয়ে বললাম – আমরা কামারপুকুর থেকে আসছি । আমাদের তাড়াতাড়ি করে মাদুর পেতে , দুতলা মাটির বাড়ির দুয়ারে বসতে দিলেন । কিছুক্ষণ পরে মাটির বাড়ির দোতলা থেকেএসে বললেন – “তোমরা উপরে চলো , ওখানে গুরুজী আছেন “। জগাদার সাথে উপরে গেলাম , গুরুজী কে প্রণাম করার পর কুশল বিনিময় হলো । তার পর গুরুজীর কাছে সুধা অমৃত পান করছি কতক্ষণ ধরে তা , আমাদের হুঁশ নেই , হঠাৎ জগতে এসে বলল – “তোমরা নীচে চলো , খেয়ে নিতে হবে” ।এই রূপ অমৃত
পানে রসভঙ্গে – মন তো নিরাশ হবেই । একটু ক্ষণ বসে আছি দেখে গুরুজী বললেন– “যা নিচে গিয়ে খেয়ে নে ” । অবশেষে গুরুজীর আদেশ ও গৃহস্বামী র আহবানে নিচে নেমে এসে , বৌদির হাতে রান্না করা ডাল আলু পোস্ত খেয়ে –খুবই পরিতৃপ্ত হয়েছিলাম । রান্নার স্বাদই ছিল – অত্যন্ত সুস্বাদু ।

খাওয়া-দাওয়ার পর ওপরে গিয়ে গুরুজী কে প্রণাম করে বাড়ি আসার অনুমতি নিলাম। নিচে নেমে এসে জগাদা , বৌদি ও জগাদার মাকে প্রণাম করে , বাড়ি যাব বলে বললাম , বলে বেড়িয়ে আসছি –, ঘড়িতে তখন তিনটে সাড়ে তিনটে হবে , এমন সময় একটি ঘর থেকে গুরুজী আমাকে ও প্রশান্ত কে ডাকলেন । গিয়ে দেখি ঘরের মধ্যে দুটি আসন পাতা আছে । একটি আসনে আমাকে অপর আসনটিতে প্রশান্ত কে বসতে বললেন ‌।

কৃপাময় কৃপা করে– আমাদের দীক্ষা দিলেন । দীক্ষার সময় গুরুজী যে দিব্য হাসি উপহার দিলেন – তা জীবনে ভোলার নয় । আমার মত অনেকে এই দিব্য হাসি , উপহার সরূপ পেয়েছেন।

মানবজীবনে সদ্ গুরুর দীক্ষা খুবই দুর্লভ , গুরুজীর অফুরন্ত প্রেমে – পরম সৌভাগ্য বসত , আমার জীবনেও সদ্ গুরুর কাছে দীক্ষা হল ।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথায় যখন সময় হবে সদ্ গুরু এসে দরজায় কড়া নাড়বে । এখানে ( রায়নাতে ) মহাকাল/ মহাকালি রূপী স্বয়ং গুরুজী , নিজেই দয়াকরে সময় ঠিক করে দিয়েছেন। দীক্ষা দেবার সাথে সাথে গুরুজী যে দিব্য প্রেম ও যে দিব হাসি দিয়েছেন – তা আস্বাদন করতে করতে বাড়ি ফিরলাম । এই দিব্য হাসি শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত ভুলার নই !!

 *************

আমি রায়নাতে প্রথমবার জগাদার বাড়ি গিয়েছিলাম তখন  ১৯৮২- ৮৩ সালের মধ্যে হবে।

বনগ্রাম আশ্রমে গেছি ২০০১ — ২ সাল হবে । রাত্রিতে সাধনা ভবনে আমি , আমার ভাই বিশ্বকান্তি এবং জগাদা একটা বেঞ্চে বসে আছি । গুরুজীর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল । জগাদা বলল – “জানো মৃণাল_ তুমি যখন রায়নাতে প্রথমবার গুরুজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে – সেই দিন ওই বারোটা পর্যন্ত গুরুজীকে জল খাবার দেবার মতো ঘরে কিছু ছিল না।

তোমরা যখন গেলে তোমার হাত থেকে জিলিপির প্যাকেটটা চট করে নিয়ে , চারটি জিলিপি দিয়ে গুরুজীকে জল খাবার খেতে দিলাম । গুরুজী জিলিপি দেখে বলল – "কামারপুকুরের জিলিপি ! বাঃ _ঐ জিনিসটা খেতে আমি খুব ভালোবাসি"।

          ক্রমশ - - -