[ ২০০১/২ সালের এক রাত্রে বনগ্ৰামের সাধনা ভবনের দোতলার বেঞ্চে রায়নার জগাদা , আমি এবং আমার ভাই বিশ্বকান্তি বসে কথা বলেছিলাম। রায়নাতে জগাদার বাড়ি প্রথমবার যাওয়ার কথা হচ্ছিল ।]

( পূর্বের প্রকাশিতর পর)

…….জগাদা বলে চলেছেন কিছুক্ষণ পরে তোমাদের সকলকে দোতলায় গুরুজীর কাছে পৌঁছে দিয়ে নিচে এসে তোমার বৌদিকে বললাম – তোমার নাকের নাকছাবিটা খুলে দাও ! অতিথিরা এসেছে – দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করতে হবে তো !” আমার কথা শুনে মা(জগাদার মা) বললেন- “মেয়েদের নাকছাবি
খুলতে নেই, তাছাড়া ওটাই ওর শেষ সম্বল!” আমি আমার স্ত্রীকে বললাম __”এখন দাও তো, পরে যা হয় হবে !”

  আমার কথা শেষ হ‌ওয়া মাত্র তোমার বৌদি তৎক্ষণাৎ নাকছাবিটা খুলে আমাকে দিয়ে দিল । বাজারে গিয়ে নাকছাবি টা ৩৯ টাকায় বিক্রি করে চাল , ডাল , আলু , পোস্ত ইত্যাদি কিনে নিয়ে এলাম ।

সেদিন এইভাবে তোমাদেরকে খাইয়ে__ আমরাও সবাই পেটভরে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম । তোমার হয়তো মনে আছে__সেদিন তোমাদেরকে থাকতে বলছিলাম কিন্তু ভেতরে ভাবছিলাম — না থাকলেই ভালো হয়, কারণ রাত্রিতে থাকলে খেতে দেবো কি ?

  এইবেলাটা যাহোক করে ম্যানেজ করেছি, আর কিছু করার তো কোন উপায়‌ই ছিল না ! যাক্ তোমরা সেদিন থাকলে না__ চলে গেলে! তোমরা চলে যাবার পর প্রাণে একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম___ এ ঘটনা জীবনে আমি  কখনো ভুলবো না ।

   জানো মৃণাল –  আমার জীবনে ভীষণ উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটা আজও ভুলিনি । আজ তোমাকে বলছি শোন সেটা আশ্রম প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকের কথা !

 তখন বনগ্রামে গুরুজীর কাছে মাঝে মধ্যেই আসতাম। বেশ কয়েক মাস পরে একদিন আশ্রম এসেছি__এসে শুনলাম, গুরুজী সেদিন সকালের সিটিংয়ে বলেছেন –"যে আমি জগতে একজনের কাছে ভীষণ ভাবে ঋণী । আর সেটা হোলো রায়নার জগাদার কাছে " ।

 আমিতো(জগাদা) একথা শুনে গুরুজীর সঙ্গে দেখা না করে __আশ্রমের এককোণে রাখা খড়ের গাদার কাছে বসে কাঁদতে লাগলাম। অনেকই খাবার জন্য আমাকে ডাকাডাকি করেছিল ‌। আমি   বসে বসে কাঁদছিলাম।

দুপুরের দিকে গুরুজী আমার কাছে এসে বললেন – “জগাদা ওঠো” __আমি গুরুজীর পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম ।

    গুরুজী আবার বললেন– "জগাদা ওঠো , চুপ করো।" আমি বললাম - "আগে বলো_ আর কখনো এই ধরনের কথা বলবে না!" 

  গুরুজী বললেন – "আশ্রমে এখন টাকা আছে , আমি তৃষাণকে বলে তোমাকে  কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু তাতেও কি সেইদিন তুমি আমার কামারপুকুরের ভক্তদের জন্য যেটা করেছিলে, সেটা কি শোধ হবে — ?"

  কথা বলতে বলতে জগাদার চোখ জলে ভরে গেল ! সে কি ভালোবাসা ! এ ভালোবাসা যে জীবনে ভোলার নয় !

~~~~~~

   জগাদা আবার বলতে শুরু করলেন __"জানো ভাই , একবার দেখি গুরুজী আমাদের মাটির বাড়ি দোতলা থেকে নেমে আসছে__ কাঁধে একটি কলসি নিয়ে । আমি গুরুজীকে  বললাম _'বাঃ বেশ লক্ষ্মী ঠাকুরটি দেখাচ্ছে তো !'

গুরুজী আমায় বললেন– ‘জগাদা তোমাকে দুটো জবা ফুল দিচ্ছি , একটা ফুল নিয়ে তোমার ঘরের বাইরে _এই মনসাতলায় ফেলে দাও ! আর তারপরেই দেখবে ওখান থেকে সাতঘরা মোহর উঠে আসবে , তবে তার সাথে একটি গোখরো সাপ‌ও আসবে । এরপর তুমি একটা জবা ফুলটি নিয়ে গোখরো সাপের গায়ে ফেলে দিলে সাপটি পালিয়ে যাবে !’

 আমি(জগাদা) গুরুজীকে বললাম - 'তারপর কি হবে!' গুরুজী বললেন –'তারপর তুমি ওই সাত কলসি মোহর নিয়ে নেবে' ।

আমি(জগাদা)  গুরুজীকে বললাম –'তারপর কি হবে!'

গুরুজী বলল – "তারপর আমি চলে যাব।"

    আমি গুরুজীকে বললাম– " অমন মোহর আমি চাইনি  (—) !!"

স্বয়ং ঈশ্বর স্বামী পরমানন্দে র কি অপূর্ব লীলা । ভক্তরা যেমন ভগবান কে বারবার পরীক্ষা করে , ভগবান ও তেমন কখনো কখনো ভক্তদের পরীক্ষা নেয় ।

গুরুজীর কাছে প্রার্থনা করি –তোমার অসীম ভালোবাসা ও দিব্য প্রেম , আমাদের মনে –প্রাণে যেন সদা জাগ্রত থাকে ।

               ক্রমশঃ - - -