[পূর্ব প্রকাশিতের পর..]
....গুরুজীর রায়না আসার খবর পেলে, রায়নাতে গুরুজীর সঙ্গলাভের লোভ সামলাতে না পেরে বারবার ছুটে যেতাম গুরুজীর কাছে ।
এইভাবে কয়েকবার গুরুজীর সঙ্গলাভের সাথে সাথে রায়না গুরুজীর ভক্ত মন্ডলীর সাথে আমার পরিচয় হতে শুরু করেছিল।
রায়নার 'সন্ধ্যামা'(ওখানকার গালর্স হাইস্কুলের শিক্ষিকা) তখন একটা মাটির দোতলা বাড়িতে ভাড়া থাকতেন । রায়না তে যাওয়া আসা সময় ওনার সাথে আলাপ হয় । উনি একদিন আমায় ডেকে নিয়ে গিয়ে মাতৃস্নেহে দুধ মুড়ি খাইয়েছিলেন।
পরবর্তীকালে সন্ধ্যামা কামারপুকুর বেড়াতে এসে আমাদের বাড়িতে এসে ছিলেন ।
গুরুজী রায়নায় এসেছেন, এই খবর পেয়ে ওখানে গেলাম । ওখানে তখন পরমানন্দ মিশনের শাখাকেন্দ্রটি তৈরি হয়েছে। রাত্রিতে আশ্রমের সবার
এবং রায়নার অনেক গুরুভাইদের, সন্ধ্যামা র বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল। ফলে, গুরুজী ও ওই দিন সন্ধ্যামা-র বাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন । তখন কার্গিল যুদ্ধ চলছিল । রাত্রিতে আমি যখন সন্ধ্যা মার বাড়িতে যাই তখন গুরুজী টিভি তে কার্গিল যুদ্ধের খবর দেখছিলেন।
আমিষ, নিরামিষ (দই-মাংস সহ আরো বহু কিছু) ইত্যাদি নানান আইটেমের পর্যাপ্ত খাবার ছিলো যে যত খুশি খেতে পারে !
ডক্টর বিদ্যুৎ কান্তি বড়ুয়ার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। উনি একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, রায়নাতে ওনার চেম্বার ছিল । উনি আমায় চেম্বারে নিয়ে গেলেন । গুরুজীর সম্বন্ধে সেদিন অনেক কথা হবার পর উনি একটি ঘটনা বললেন,
কিছুদিন আগে হল্যান্ড থেকে একজন ডাক্তার এসে ছিলেন, রায়নাতে গুরুজীর সাথে দেখা করতে ।
হল্যান্ডের ডাক্তারটি খুব ধ্যান করতেন। ওনার দেশে থাকাকালীন সময়ে ধ্যান করতে করতেই গুরুজীর সাথে ওনার সংযোগ(সূক্ষ্মে) হয় এবং ঐ অবস্থায় গুরুজীর নির্দেশ পান, আর সেই মতোই উনি রায়নাতে এসেছিলেন। তবে রায়নায় কিছুদিন থেকে, উনি আবার নিজের দেশে ফিরে গিয়েছিলেন।
অবাক করা ব্যাপার হলো এই যে, উনি ছুরি-কাঁচি ছাড়াই অপারেশন করতে পারতেন । উনি ওনার শরীরের সূক্ষ্ম শক্তি আঙ্গুলের ডগায় transfer করতে পারতেন । তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনি রোগীর শরীরের বড় বড় লোমকূপের গর্ত গুলো দেখতে পেতেন । চামড়া ও শরীরের উপরের অংশ আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে ফাঁক করে – আঙ্গুল দিয়ে প্রয়োজনমতো অপারেশন করতেন । অপারেশন হয়ে যাবার পর শরীরের ওই অংশটি আবার আঙ্গুল দিয়ে টিপে জুড়ে দিতেন।
একটি রোগীর গ্যাস্ট্রিক আলসারের এইরকম অপারেশনের কয়েকটি পরপর(step by step) তোলা still ছবি ডাক্তার বিদ্যুৎ বড়ুয়া আমাকে সেদিন দেখিয়েছিলেন ।।
এরপর দুপুরে খেয়েদেয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছি । বিকালের দিকে গুরুজী আমায় বললেন – “আমার সাথে চল , একজনের বাড়ি যাবো , উনার শরীর খারাপ তাই দেখতে যাব। গুরুজীর সাথে ওনাদের বাড়ি গেলাম
,দেখলাম – ভদ্রলোককে বাড়ির উঠানে শুয়ানো রয়েছে , খুবই অসুস্থ ।গুরুজী উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। ওনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমাকে বললেন তুই এনার কাছে বসে কপাল একটু হাত বুলিয়ে দে। আমি কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিবার পর -, গুরুজী আমায় বলেন – “এবার উঠে পর “।
বাড়ির লোকেরা গুরুজী কে বসতে বললেন কিন্তু গুরুজী বসলেন না ।
গুরুজী আমায় “চল” বলে গুরুজী বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। রাস্তায় চলতে চলতে গুরুজী আমায় বললেন – ” তোকে কেন উনার কপালে হাত দিতে বললাম জানিস , উনি অসুস্থ উনার নেগেটিভ এনার্জি । আর তুই সুস্থ তোর পজিটিভ এনার্জি।এই পজিটিভ এনার্জি গিয়ে ওর নেগেটিভ এনার্জি কে ব্যালেন্স করবে । এতে উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন ।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত শক্তির আধার যিনি – তিনি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে – এই ভদ্রলোককে কৃপা করলেন , কৃপানাথ স্বামী পরমানন্দ , আমাদের গুরুজী । গুরুজী করুণা করে আমাকে মাধ্যম করেছেন মাত্র । এটা আমার পরম সৌভাগ্য ।
ক্রমশ - - -