গুরু মহারাজের সেই প্রেমময় , আনন্দময় মনমোহিনী রূপ , মিষ্টি-

মিষ্টি কথা ,আমার চোখের সামনে সর্বদা ভাসছিল । মনের মধ্যে দিব্য আনন্দের স্রোত বইছিল। ভেতর থেকে একটা কবিতা /গান বেরিয়ে এলো — ।
কৃপা করো কৃপাময়ী

ব্রহ্মময়ী ও জননী ।

হৃদি পদ্মে বিরাজ করো

ও মা তারা ত্রিনয়নী ।।

ছয় রিপুতে পেষন করে

দিবারাত্রি ঘুরিয়ে মারে।

এ জীবন গেল বৃথা কেটে

ওই ছয় ভূতেরই বেগার খেটে ।।

মুক্তি দাও মা মুক্তকেশী

পাপ তাপ বিনাশিনী ।।

ষড়চক্র ভেদের চেষ্টা করি

সহস্রারে উঠতে নারি।।

(আমি) মন ঘোড়াকে ঠিক রেখেছি

স্মরণ করি পা-দুখানি।।

অন্তিমকালে পাদপদ্মে

স্থান দিও মা সনাতনী।

~~~~

   গুরুমহারাজের তীব্র আকর্ষনে মন প্রাণ সর্বদা বনগ্রাম যেতে চায়, তাই মাঝে মাঝেই বনগ্রাম আশ্রমে যাতায়াত করা শুরু করলাম । প্রথম প্রথম যখন আশ্রমে যেতাম, তখন দেখতাম__ গুরুজী মাটির দুয়ারে ইজি চেয়ারে বসতেন ।

আমরা ভক্তরা , দুয়ারে নিচে জবা গাছের পাশে ‘তলাই’ পেতে আট – দশ জন সিটিং এ বসতাম ।

গ্রীষ্মের দিনে গুরুজীকে কেউ কেউ তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করতো । আমিও বেশ কয়েকবার বাতাস করার সুযোগ পেয়েছি। অনেকেই বাতাস করার সময় গুরুজীর গায়ে পাখাটি লাগিয়ে ফেলতো । গুরুজী তাকে বলতেন “এতে সেবা দোষ হয় ! যদিও আমি এই দোষ নিই না কিন্তু মা মহামায়া ছাড়বে না।

পরের দিকে দেখেছিলাম_ গুরুজী কাউকেই বাতাস করতে দিতেন না ।

গুরুজী এইসময়(১৯৮২-সাল) ছোটবেলার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলতেন ।

সেই সব কথাগুলির মধ্যে তাঁর বাল্যলীলা এবং কৈশোর লীলার ঘটনাসমূহ ফুটে উঠতো ।

 একদিন উনি বনগ্রামে সিটিং-এ বলছিলেন__"আমি তখন ৯ বছরের বালক । ভগবৎ-ভাবে বিভোর হয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমি বিহারের রাঁচিতে পৌঁছে গেছিলাম। ওখানে একদিন এক গাছতলায় সারারাত দিব্য চেতনায় মগ্ন হয়ে বসেছিলাম । বাহ্যিক কোনো জ্ঞান‌ই ছিল না। সাধারণ লোকে ডাকাডাকি করেও কোনো  উত্তর না পেয়ে পাগল মনে করে, আমাকে রাঁচির মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছিল ।

  রাঁচির মেন্টাল হসপিটালের ডাক্তারবাবুরাও আমাকে পাগল ভেবে বারবার আমাকে মাথায় ইলেকট্রিক-চার্জ দিয়েছিলেন ! কিন্তু কতোগুলো চার্জ দেবার পরেও আমার শরীরের কোনো বিকার ঘটেনি বা অন্য মেন্টাল রোগীদের মত চিৎকার চেঁচামেচিও করিনি ! এইটা দেখে , ডাক্তারবাবুরাও অবাক হয়ে গেছিলেন ! ওনারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন--' তুমি এতোগুলো চার্জ সহ্য করেও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছো কি করে ? এটা কি করে সম্ভব?'

আমি বলেছিলাম -“আমি চেতনে আছি, আপনারাই অচেতনে আছেন” ।

   সত্যিই তো___উনি যে পরমেশ্বর ,  উনি তো সর্বদা দিব্য- চেতনাতেই আছেন। আদিতেও ছিলেন , বর্তমানেও আছেন-- ভবিষ্যতেও থাকবেন। তাঁর সৃষ্ট জগতে সাধারণ জীবেরা

সবাই অচেতনে আছে। একমাত্র ‘বোধে বোধ’ হোলে, তবেই দিব্য চেতনা আসে ।

             ক্রমশ - - -