পরমপ্রেমময় , আনন্দময় আমাদের গুরুজী , স্বামী পরমানন্দ বলছেন — তাঁর ছোটবেলার কাহিনী – আর আমরা ভাগ্যবান শ্রোতারা , শুনে দিব্য আনন্দ উপভোগ করছি।

গুরুজী বলেছেন– জানিস , আমি পথে বেরিয়েছি প্রেমের সন্ধানে – । ঘুরতে ঘুরতে বৃন্দাবনে এলাম। অনেক ঘোরাঘুরির পর দেখা হলো যাদবেন্দ্র স্বামীর সাথে । বড় প্রেমিক সাধু , প্রেমের সান্নিধ্য পাবো বলে বেশ কয়েকদিন এনার কাছে থেকে গেলাম ।

একদিন দেখি যাদবেন্দ স্বামী শ্রী বিগ্রহের সাথে কথা বলছেন। আমি ছোটোবেলা থেকেই পরচিত্তে প্রবেশ করতে পারি । শ্রীবিগ্রহ যাদবেন্দ্র স্বামীকে বলছে- দেখো আমাদের কথা তোমার পিছন থেকে কেউ একজন শুনছে। উনি পিছন ফিরে তাকিয়ে আমায় দেখে , আমাকে বুঝে গিয়ে , আমায় আলিঙ্গন করলেন ।

একদিন যাদবেন্দ্র স্বামীকে বললাম– আপনি তো ব্রহ্মজ্ঞানী, তাও আপনি আরতি করেন ?

উনি বললেন , সন্ধ্যায় আরতি হবে, তখন দেখবে। আরতির সময় দেখলাম– শ্রীবিগ্রহের সামনে সন্ধ্যারতি করতে করতে মন-প্রাণ ঈশ্বরের সহিত একাকার হয়ে গিয়ে প্রেম ঝরে ঝরে পড়ছে!

এই প্রথম প্রেমের সন্ধান পেলাম ।

বৃন্দাবনে ঘুরতে ঘুরতে আর এক সাধুর দেখা পেলাম , পাগলা বাবা ।

কাউকে দেখলে জিজ্ঞাসা করে _”আগর হ্যায় কেয়া” ‌। আমাকেও জিজ্ঞাসা করতে আমি বললাম– “ভগবন! আপ তো হ্যায়!”

একথা শুনে‌ আমাকে জড়িয়ে ধরল , আমি ওনার স্পর্শে সেই পরম প্রেম অনুভব করলাম । পাগলা বাবা পরমহংস প্রেমিক সাধু। ওনার কাছেও কয়েক দিন ছিলাম ।

বৃন্দাবনে বহু ঋষি , মহাত্মা বৃক্ষ হয়ে রয়েছে । আমি কয়েকজনের সাথে সংযোগ করে বলেছি এরূপ কেন– ।

তাঁরা বলেছেন বৃন্দাবনে কৃষ্ণ-রস আস্বাদন করছি । সাধারণভাবে থাকলে মানুষ বিরক্ত করবে এই রস আস্বাদন করতে পারতাম না।

কয়েকজন মহাত্মাকে দেখেছি প্লাজমিক শরীর নিয়ে রয়েছেন। আমি তাঁদের সাথে সংযোগ করাতে, তাঁরাও একই উত্তর দিয়েছিলেন ।

জানিস্ কত বিচিত্র এই বৃন্দাবন! এখানে কতজন কতভাবে , কত রূপে , কৃষ্ণ রস আস্বাদন করছে — ।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একবার বৃন্দাবনে এসে কিছুদিন থাকার পর আর এখান থেকে যেতেই চাননি। অবশেষে মায়ের কথা চিন্তা করে দক্ষিণেশ্বরের ফিরে যান। যাবার সময় বৃন্দাবনের রজঃ (মাটি) নিয়ে যান।সেই মাটি দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটী বনে মিশিয়ে দেন এবং বলেছিলেন _”আজ থেকে পঞ্চবটীই শ্রী বৃন্দাবন”!

 পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ রুপে বৃন্দাবনে লীলা করেছেন ।

পরমেশ্বর পরমানন্দ, বালক রবীন রূপে সেই লীলা রস , লীলা মাধুর্য পূর্ণরূপে আস্বাদন করেছেন । বাকিরা আংশিক –।

স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া তাঁর পূর্ণ লীলা কে বুঝবে !

 গুরুজী বলছেন___  ঘুরতে ঘুরতে বেনারসের কাশীতে এলাম । দুই তিন দিন কাশীতে ঘুরছি কোন খাবার জোটেনি । প্রথম দিন অন্নপূর্ণার মন্দিরে অন্নছত্রে লাইন দিয়ে ছিলাম কিন্তু আমার একটাই জামা প্যান্ট অনেক দিন ধরে পড়ে আছি, ফলে ময়লা হয়ে গেছে। ময়লা জামা প্যান্ট দেখে, আমাকে খাবারের লাইন থেকে বার করে দিল ।

মনে মনে ভাবছি কাশীতে কেউ অনাহারে থাকে না কিন্তু আমার অন্ন জুটছে কই ? কিছুক্ষণ পরে দেখি খুবই ময়লা কাপড় পড়া বয়স্কা একজন মহিলা আমায় ডাকছে । কাছে গেলাম দেখি ময়লা আঁচলের খুঁটে বাঁধা খাবার আমায় খুব আদর করে দিতে চাইছে । ময়লা কাপড়ে বাঁধা খাবার দেখে প্রথমটায় নিতে ইতস্ততঃ করছিলাম । বুড়ি মা জোর করে হাতে আমার খাবার দিয়ে দিল, খেয়ে দেখলাম —কি অপূর্ব সুস্বাদু সেই সব খাবার, কি অনির্বচনীয় স্বাদ ! বুড়িমার হাতে খাবার খেয়ে খুবই পরিতৃপ্ত হলাম । মনসংযোগ করে দেখি মা অন্নপূর্ণা নিজেই বুড়িমা র ছদ্মবেশে এসে আমাকে খাইয়ে গেলেন । কিন্তু বেশ কয়েক দিন না খেতে পাওয়ার জন্য মায়ের এবং ছেলের মধ্যে কিছুক্ষণ মান-অভিমানের পালা চললো !

কাশীতে একদিন দেখি একটা বুড়ি মেয়ে একটি মুচিকে বারবার বলেছে "সাধু মরনেসে সবধান , সাধু মরনেসে সবধান" । বুড়িটি বারবার আসছে আর মুচিকে ঐ কথাগুলো বলছে ! বুড়িটির দিকে মনোসংযোগ

করে দেখলাম মা অন্নপূর্ণা স্বয়ং , আর মুচিটি পূর্ব জন্মে সাধু ছিল । সাধুটি মৃত্যুর সময় দেখে ভক্তের দেওয়া জুতোজোড়া চালে গোঁজা আছে ! জুতোজোড়া পরা হয়‌নি বলে মৃত্যুর পূর্বে মনে মনে আফশোষ হয়েছিল । তাই সাধুকে মুচি হয়ে জন্মাতে হয়েছিল ! আমি মুচিকে স্পর্শ করায় তাঁর পূর্বজন্ম জানতে পারলো এবং বুড়িটি কে তাও জানতে পারলো ।

পূর্ব পূর্ব জন্ম জানা এবং অন্যকে জানানো স্বয়ং ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব । এখানে গুরুজী বালক রবীন রূপে তাই করে দেখালেন ❗

‼️পরমেশ্বর গুরুজীর চরণে শ্রদ্ধা ভক্তি সহ শতকোটি প্রণাম‼️

         ক্রমশ - - -