কথা অমৃত বর্ষণ করছেন– স্বয়ং ঈশ্বর স্বামী পরমানন্দ -, তাঁর পদতলে বসে দিব্য আনন্দময় ,প্রেমময় অমৃত কথা শুনছিলাম — আর দিব্য আনন্দে ডুবে – তা উপভোগ করছিলাম বনগ্ৰাম আশ্রমে !! সমসাময়িক বা পরবর্তী যারা এই গুরুজীর সান্নিধ্যে সিটিংএ উপস্থিত হয়েছে, তারা প্রত্যেকে এই দিব্য আনন্দ রস উপভোগ করেছেন !


হরিদ্বার কুম্ভমেলায় গুরুজীর সাথে আমার হটাৎ দেখা হবার ঘটনাটা এবং আরো কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি।

~~~~~~

(পূর্বের প্রকাশিতর পর)

  হরিদ্বারে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, আশ্রমের মহারাজ আমাদের বললেন__ সকালে টিফিন খেয়ে বিভিন্ন মন্দির দেখতে বা মেলা দেখতে যাবে ! কিন্তু আবার দুপুরে বারোটা থেকে একটার মধ্যে চলে এসে খাবার খেয়ে নেবে । তারপর আবার মেলা দেখতে যাবে। মহারাজের নাম জানতে পারলাম__স্বামী ১০৮ মৃত্যুঞ্জয়ানন্দ।।  মধ্যপ্রদেশের  রাজপুত্র ছিলেন, ছোট থেকেই ঈশ্বর অনুরাগী ছিলেন। তাই সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছেন। ইনিই ঐ আশ্রমের মহন্ত মহারাজ। হরিদ্বারে ওনার স্থায়ী আশ্রম আছে এবং সারা ভারতে মোট ১১০ টি আশ্রম আছে।

তাঁবুর আশ্রমে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের লোক ছিল এবং দেখলাম তাদের মধ্যে বহু foreigner-ও ছিল। দুদিন ধরে গোটা হরিদ্বার খুব ঘুরেছিলাম, পরেরদিন কুম্ভের শাহী স্নান। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে তিনটে-সাড়ে তিনটের সময় তাঁবুর কাছাকাছি এসে পৌঁছেছিলাম।

ঐসময় খুবই গরম ছিল, ফলে সূর্যের প্রচণ্ড রোদ ও উত্তাপ ! বালির উপর একটি রাস্তা চন্ডী মাতা পাহাড়ের দিকে গেছে। বালুচর-এর উপর প্রচুর নুড়িপাথর, রোদে গরমে এত গরম যে, পা দিলে ফোসকা

পড়ে যাবে ! ওই রাস্তার দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ যেন দূর থেকে মনে হোল গুরুজী আসছেন । গেরুয়া বসন পরিহিত ব্যক্তিটি কাছে আসতেই দেখি_ যা মনে করেছিলাম তাই !! আমি তাড়াতাড়ি গুরুজীর কাছে গিয়ে গুরুজীকে প্রণাম করে বললাম “এই গরমে খালি পায়ে কোথায় গিয়েছিলেন!” উনি উত্তরে বললেন চন্ডী মাতা পাহাড়ে, মায়ের কাছে গিয়েছিলাম”। গুরুজীর খালি পা দেখে সেদিন আমার খুবই কষ্ট হয়েছিল, কারণ আমি জানতাম যে, গুরুজীর হাত-পা খুবই নরম! এতো নরম_ যে একবার একটু শক্ত হয়ে যাওয়া ফুলকো লুচি ছিঁড়তে গিয়ে ওনার হাতের আঙুল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়েছিল !

 তার পাশেই একটি ঠান্ডা পানীয়ের দোকান ছিল , গুরুজীকে  বললাম _" ঠান্ডা খাবেন ?" গুরুজী  'হ্যাঁ'- বলায় 300ml থামস আপ তিনটি নিয়ে তিনজনে(আমার দিলীপ সহ) খেলাম। গুরুজীর কানের কাছে গালের উপর একটি কালোদাগ দেখে জিজ্ঞাসা করলাম-- "এটি কিসের দাগ? কি হয়েছিল আপনার ?" গুরুজী বললেন _"আর বলিস না ! বনগ্রাম আশ্রমে থাকাকালীন‌-ই(অর্থাৎ কুম্ভমেলায় যাবার justআগে) একটা বিষধর সাপ তার অভিযোগ নিয়ে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু আমি সাড়া না দেওয়ায় সে আমার ওখানে ছোবল মেরেছে" ! একথা শুনে আমি একেবারে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, তারপরে আবার জিজ্ঞাসা করলাম--"সে কি ?  – তারপর গুরুজী !" গুরুজী বললেন– "সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘর বন্ধ করেছিলাম , ওই সাপের বিষ হজম করার জন্য ! আর সাপেদের সব বলেছি আমার এখান থেকে চলে যেতে, ওরা সব চলে গেছে ‌!"

এরপর সাক্ষাৎ পিতৃস্বরূপ গুরুজী বললেন -- "কোথায় আছিস ?"– সামনের অনেক তাঁবু ঘেরা আশ্রমটি দেখিয়ে বললাম - "এখানে"।

গুরুজী বললেন – “আমি এখন আসছি, তোরা রাত্রি আটটার সময় রেলওয়ের ডাক্তারের কোয়াটারে আয়।” এই কথাগুলি বলে গুরুজী কাঠের ব্রীজ পেরিয়ে চলে গেলেন। উনি চলে যাবার পর আমরা ভাবছিলাম_ কুম্ভ মেলাতে লক্ষ লক্ষ লোক !! এই ভাবে গুরুজীর দেখা পাবো —, এটা খুবই অসম্ভব ব্যাপার !! তাও কৃপা করে কৃপাময় আমাদেরকে দর্শন দিলেনএই করুনার কথা ভেবেই চোখে জল এসে যাচ্ছিলো।

বাড়িতে যখন থাকি, তখন এক ভাবনা , আর এই বৃহৎ মেলায় এসে ভাবনা তার বিপরীত । কামারপুকুরে যখন ছিলাম ভেবেছিলাম কুম্ভ মেলায় গিয়ে গুরুজীর সাথে দেখা হবে । কিন্তু কুম্ভ মেলায় এই জন অরণ্য দেখে ভাবলাম —এটা অসম্ভব ব্যাপার।

সাত – আট কিলোমিটার জুড়ে এইরূপ বৃহৎ মেলা আমি আগে কখনো দেখিনি ! লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের লোক , বিভিন্ন পোশাকে বহু ধরনের সাধু এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদেশি লোক !

এত জনগণের মধ্যে গুরুজীর সাথে দেখা – !! তাই আমাদের মনে হলো — উনি কৃপা করে আমাদের দর্শন দিয়েছেন ।

যথারীতি রাত্রি আটটার সময় খোঁজ করতে করতে রেলওয়ের ডাক্তারের কোয়ার্টারে গেলাম। রাত্রি আটটা থেকে রাত্রি বারোটা পর্যন্ত গুরুজীর সাথে একান্তে আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো। এরপর গুরুজী বললেন_ "এখন তোরা কি করবি?"  আমি বললাম  - "আজ রাত্রি থেকে শাহী স্নান শুরু হবে । আমরা দিনের বেলা দেখে এসেছি 'হর কি পৌড়ি'-- ঘাটের ব্রিজের গায়ে একটা থাম আছে, ওইখানে বসে  সাধুদের শাহী স্নান দেখব"। গুরুজী বললেন _"ওখানে যেতে হবে না, আশ্রমে ফিরে গিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়্। সকালে উঠে বরং আদিগঙ্গার পূর্ব পাড়ে গিয়ে সোজা দক্ষিণ দিকে যাবি, বেশ কিছু দূরে যাবার পর মাচার  উপরে দুইশ চল্লিশ বছরের সাধু মাচান বাবা(দেওরহা বাবা)-কে  দর্শন করে আসবি। উনি খুব বড় মহাত্মা "।

              ক্রমশ - - -

আজ মহাষষ্ঠী , গুরুজীর শ্রী চরণে শ্রদ্ধা যুক্ত ও প্রণাম জানাই।

‼️🙏🌺🙏❤️🙏