__স্বামী প্রজ্ঞানন্দ।। (পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এখন যদি ব্রহ্মাণ্ড উৎপত্তির পিছনে ‘মহাবিস্ফোটে’-র সিদ্ধান্ত ধরে নেওয়া হয়, আর এ ও যদি মেনে নেওয়া যায় যে, প্রোটন গুলির মৃত্যু হয়_ তাহলে মহা বিস্ফোটের সময় এর অবস্থা সম্বন্ধে এই অনুমান করতে পারা যায় যে__সৃষ্টির প্রারম্ভে শক্তির অসীম ভান্ডার ‘একটি বিন্দু’_ যেমন সুক্ষ্ণ কণাতে পরিপূর্ণ ছিল । আজ থেকে 10 কোটি বছর আগে(আধুনিক বিজ্ঞানীরা বলেন আরো অনেক আগে) তাতে এক প্রচন্ড বিস্ফোট হয়েছিল । ব্রম্ভান্ডের যখন এক সেকেন্ড ছিল (মহাবিস্ফোটের এক সেকেন্ড পরে) তার তাপ 10কোটি ডিগ্রি ছিল । এতে বোঝা যায় যে, যত তার আয়ু কম ছিল_ তার তাপমান বেশি ছিল, এবং সেখানে কোনো ভারী কণার অস্তিত্ব‌ই ছিল না । কেবল কোয়ার্ক আর হালকা আলোক কণা, নিউট্রন, ইলেক্ট্রন ইত্যাদি ওই সময় উপস্থিত ছিল । ওই সময় এত উচ্চতাপে ওই হালকা কণাগুলি একে অপরের এতো কাছাকাছি ছিল যে, ব্রহ্মান্ডের ঘনত্ব ছিল 10⁷⁴ গ্রাম/ সিসি। অতোটুকু আয়তনে এত পদার্থ ছিল যে,তা দিয়ে আমাদের পৃথিবীর মতো কোটি কোটি পৃথিবী তৈরি হয়ে যেতে পারে ! তাহলে বুঝতে অসুবিধা নাই যে, একটি বিন্দুতে কি অসীম শক্তি থাকতে পারে__ যা থেকে সিন্ধু-সম পদার্থরাজির উৎপত্তি হতে পারে !!
বিপরীতক্রমে যে নিয়মে ‘বিন্দু’ থেকে ‘সিন্ধু’ উৎপত্তি হয়_ সেই নিয়মে সিন্ধু-সম বিশাল ব্রহ্মান্ড‌ও লয় হয়ে যায় । তাহলে দেখা গেল যে, ব্ল্যাকহোল(Black-hole) একটি বিশাল শক্তির স্রোত, যা Circular motion-এর গতিতে ঘুরতে থাকে । জলপূর্ণ বালতিতে হাত ডুবিয়ে খানিকক্ষণ ঘুরিয়ে দিলে দেখা যাবে যে, ঘূর্ণায়মান জলের মধ্যে একটি গর্ত হয়ে গেছে ! ঠিক ঐভাবে ওই বিশাল মহাজাগতিক স্রোতে __এইরূপ একাধিক গর্ত তৈরি হয় । আর ওই স্রোতের ফলে তাতে এমন প্রচন্ড আকর্ষণ সৃষ্টি হয় যে তার সামনে যে কোনো বিশাল বস্তুর আগমন ঘটুক না কেন _ সে বিদ্যুত গতিতে তাকে টেনে নেয় ! আর ওই আকর্ষিত বস্তুটি ওই বিন্দুতে লীন হয়ে যায়।
আধ্যাত্মিক জগতের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম ! আমরা যেখান থেকে এসেছি, আবার সেখানেই আবার ফিরে যাবো, অর্থাৎ অসীমের সীমা সংকোচ এবং সসীমে অসীমের অভিব্যক্তি !
এই লেখাটির উপসংহারে এই কথাটা বলতে চাই যে, কোনো পদার্থের রূপান্তর বা ক্ষয় হোতে হোলে__time,space ও matter-এর উপর নির্ভর করতে হয় । তেমনি আধ্যাত্মিক জগতের মানুষকেও দেশ-কাল-পাত্রের উপর নির্ভর করতে হয়। এখানে ‘দেশ’ বলতে মাতৃগর্ভ, ‘পাত্র’ বলতে সদ্গুরুর সঙ্গলাভ, এবং ‘কাল’ বলতে মুমুক্ষুতা লাভের জন্য তীব্র ব্যাকুলতার সময়কে বুঝতে হবে । এই সময়ে মানুষ তার স্বরূপে উপনীত হবে এবং বুঝতে পারবে যে, কোথা থেকে তার জীবন-যাত্রা শুরু হয়েছিল । সেই অবস্থায় সমগ্র বিশ্বজুড়ে একই নিয়ম পরিলক্ষিত হয় । হয়তো প্রকৃতির নিয়মে সকলেই অবাঙ্মনসগোচর-এর দিকেই এগিয়ে চলেছে।
(সমাপ্ত)