“মানুষের বিষয়াসক্তি কখন যায় ? — যখন ভগবানের উপর গভীর প্রেম হয় ।

প্রকৃত হিতৈষী কে ? – সদগুরু ।

তোমার মালিক কে ? – পরমেশ্বর

পরমেশ্বরকে খুঁজবে কোথায় ? —তোমার নিজের মধ্যে, কারণ তিনি সর্বব্যাপক—সমস্ত জায়গায় আছেন ৷ সুতরাং তোমার মধ্যেও আছেন আর তোমার দেহ তোমার সব থেকে নিকটে ।

পরমেশ্বর আমার ভিতর কি প্রকারে আছেন ? — ফুলে যেমন সুগন্ধ, দুধে যেমন ঘি এবং কাষ্ঠে যেমন অগ্নি আছে, সেরূপ পরমেশ্বরও আমার মধ্যে রয়েছেন।

ঐ পরমেশ্বরের কিভাবে বোধে-বোধ হয় ? — সদ্‌গুরুর কাছে যাও, তিনি তোমায় তাঁকে বোধে-বোধ করার কলা শিখিয়ে দেবেন । অর্থাৎ শ্রীগুরুর নির্দেশানুসারে কর্ম করলেই তাঁকে বোধে-বোধ করা যায়, যেমন দুধ মন্থন করলে ঘি, ফুলের মন্থন থেকে আতর আর কাষ্ঠের মন্থন করলে অগ্নির প্রাপ্তি ঘটে।

পরমেশ্বর আর আমাতে ভেদ কি প্রকার ? —যেমন সূর্য ও সূর্যরশ্মি, অগ্নি ও অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এবং সাগর ও বুদ্বুদ—ঐরূপ ।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ॥”

                                                                                                            —স্বামী পরমানন্দ

সূচনা

প্রেমের ঠাকুর মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব প্রবর্তিত বৈষ্ণবমত সংসারে গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম নামে পরিচিত। মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ পার্ষদগণ তাঁর শ্রীমুখ নিঃসৃত বাণী হতে কৃষ্ণতত্ত্ব, রাধাতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব ভক্তিতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব, রসতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ের প্রকৃত তত্ত্ব এবং অভিমত অবগত হয়েছিলেন। অতঃপর পরম ভাগবতস্বরূপ বৈষ্ণবগণ তাঁদের বিভিন্ন বৈষ্ণবগ্রন্থে এবং পদাবলী সাহিত্যের মাধ্যমে বৈষ্ণব দর্শনের যাবতীয় তত্ত্বগুলি বিবৃত করেছেন এছাড়াও বিভিন্ন পরমবৈষ্ণব মহাজনগণ নানা ধরণের কবিতা, ছড়া, গান ও সাহিত্যের ভিতর দিয়ে বৈষ্ণবতত্ত্বের নিগূঢ়তম রহস্যগুলি অপূর্ব কৌশলে ব্যক্ত করেছেন এবং বৈষ্ণবদর্শনের পুষ্টিসাধন করেছেন ৷

ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর মতাদর্শের মূল ভিত্তি হল অচিন্তাভেদাভেদতত্ত্ব সুতরাং এবার আমরা ঐ মতাদর্শ নিয়ে বা শ্রীমন মহাপ্রভু প্রবর্তিত বৈষ্ণবধর্ম নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হব ।

শ্রীমন্ মহাপ্রভুর পরমভক্ত এবং পরম ভাগবত শ্রীজীব গোস্বামী ‘ভাগবত সন্দর্ভ’ নামক একখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁর এই গ্রন্থই গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান দার্শনিক গ্রন্থ। এর পর এই গ্রন্থের ‘সর্ব সম্বাদিনী’ নামক একখানি অনুব্যাখ্যা আছে। আর ঐ ব্যাখ্যাতে শ্রীজীব গোস্বামী অচিন্ত্যভেদাভেদতত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং সংস্থাপন করেছেন। পরবর্তীকালে বলদেব বিদ্যাভূষণ নামক আর একজন পরমবৈষ্ণব ‘গোবিন্দ ভাষা” নামক আর একটি ভাষ্য রচনা করেন। [ এটা ব্রহ্মসূত্রের গোবিন্দ ভাষ্য। ] তিনি ঐ রচনার মধ্য দিয়ে অচিন্ত্যভেদাভেদতত্ত্বের ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করেছেন ।

বৈষ্ণবের উপাস্য হলেন গোপীজন বল্লভ শ্রীকৃষ্ণ এবং উদ্দেশ্য হল ব্রজগোপীগণের আনুগত্যে লীলাবিলাসী ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের প্রেম- সেবা । এই গোপীরা হলেন শ্রীভগবানের স্বরূপশক্তির মূর্তবিগ্রহ। শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র পরতত্ত্ব। তা হতে ভিন্ন অন্য কিছুই নেই । তিনিই একমাত্র স্বয়ং ভগবান্ । তাঁর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠ বস্তু আর কিছুই নেই । ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ ভগবান্ তিনি এবং তিনিই একমাত্র পুরুষোত্তম । তিনি নিত্য—শাশ্বত—চিরকিশোর—অনুপম— রসময়—চিরসুন্দর—সৎ-চিৎ-আনন্দময় বিগ্রহ ।

এই সচ্চিদানন্দময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত শক্তি । কিন্তু তার মধ্যে প্রধান তিনটি শক্তি—অন্তরঙ্গা, বহিরঙ্গা ও তটস্থা, যথাক্রমে চিৎশক্তি, মায়াশক্তি এবং জীবশক্তি । শ্রীভগবানের এই সকল স্বরূপশক্তির ভিতর অন্তরঙ্গা চিৎশক্তিই প্রধান । সচ্চিদানন্দময় শ্রীভগবানের সৎ অংশে সন্ধিনী, চিৎ অংশে সম্বিৎ এবং আনন্দ অংশে হ্লাদিনী। এই হ্লাদিনী শক্তির দ্বারা শ্রীভগবান্ আপনাকে আপনি আস্বাদন করেন অর্থাৎ পরম আনন্দময় শ্রীভগবান্ এই শক্তি দ্বারা আপনি আপনার আনন্দরস আস্বাদন করেন।

এই হলাদিনীর সারতত্ত্ব হল প্রেম, যা আনন্দঘন চিন্ময় রস। আর এই প্রেমের পূর্ণতায় বা গভীরতায় মহাভাব এবং এই মহাভাব হল ভাবময়ী শ্রীরাধা। শ্রীকৃষ্ণকে আহ্লাদ দেন, তাই নাম হলাদিনী । অর্থাৎ শ্রীরাধা হলেন ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িনী শক্তি হলাদিনী শক্তি ভগবৎ প্রেমের সারভূত উৎকৃষ্ট রূপান্তর। ক্ষীর যেমন দুধের ঘনীভূত উৎকৃষ্ট রূপান্তর অথচ দুধ হতে পৃথক্‌ নয়, এইরূপ লাদিনী শক্তিও ভগবৎ-প্রেম হতে পৃথক্ নয়। ভগবৎ-প্রেমেরইসারভূত অবস্থা যা হলাদিনী শক্তিস্বরূপিণী প্রেমময়ী শ্রীরাধা। অর্থাৎ ঔ সারভূত ভগবৎ-প্রেম মূর্তি পরিগ্রহ করেই হয়েছেন শ্রীরাধা । শ্রীরাধা প্রেমময় শ্রীকৃষ্ণ হতে পৃথক্ নন। যেমন শক্তি ও শক্তি মান্, অগ্নি ও অগ্নির দাহিকাশক্তি পৃথক্ নয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণ-শক্তিস্বরূপিণী – শ্রীরাধা শক্তিমান্ শ্রীকৃষ্ণ হতে পৃথক্‌ নন । তাঁরা পরস্পর একাত্মা—একদেহ হয়েও ভিন্নরূপে প্রতীয়মান এবং অনাদিকাল হতে ভিন্ন ভিন্ন শরীর ধারণ করেছেন । সুতরাং শ্রীরাধা বস্তুতঃ কৃষ্ণপ্রেম । বৈষ্ণবশাস্ত্রাদিতে মহাজনগণ এই কৃষ্ণপ্রেম সারতত্ত্বকেই শ্রীরাধাতত্ত্বরূপে বর্ণনা করেছেন ।

সচরাচর আমরা লক্ষ্য করে থাকি—বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভিতর উপাস্থ্য বা লক্ষ্য এক হলেও উপাসনা প্রণালী এবং সাধনার আচার-অনুষ্ঠানগত অনেক বৈচিত্র্য ও পার্থক্য রয়েছে। সাধারণতঃ ব্রহ্মের সঙ্গে জীব ও জগতের সম্বন্ধ নিয়ে মতের প্রভেদ লক্ষ্য করা যায় । আর মতের পার্থক্য অনুসারে দার্শনিকগণ সম্প্রদায় নির্ণয় করে থাকেন।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভগবানে কোন মতবাদ বা সম্প্রদায় নেই। যেখানে সমস্ত মতবাদ সমাপ্ত হয়, সেখানেই ভগবৎ-তত্ত্ব বোধে বোধ হয় ।

বৈষ্ণবমতে জগৎ নশ্বর কিন্তু মিথ্যা নয়। আর জীব স্বরূপতঃ পরব্রহ্মস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন শক্তির প্রকাশমাত্র । পরব্রহ্ম বা শ্রীকৃষ্ণের উপর কোন তত্ত্ব নেই। ব্রহ্মের সাথে জীব ও জগতের ভেদ স্বীকৃত। এইজন্য তাঁরা ভেদাভেদবাদী ।

আচার্য শঙ্করের মতে ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব স্বরূপতঃ ব্ৰহ্ম । আর ব্রহ্মের সাথে জগতের সম্বন্ধ নিরর্থক । কারণ যার বাস্তবিক অস্তিত্ব নেই, তা ব্রহ্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে না এই মায়াবাদ বৈষ্ণবগণ স্বীকার করেন না । ত আচার্য মারে মতে, ব্রহ্ম স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন তত্ত্ব আর জীব ও জগৎ অস্বতন্ত্র অর্থাৎ ব্রহ্মের অধীন, তা চিরকালই ব্রহ্ম হতে পৃথক্‌ । এরূপ আত্যন্তিক ভেদবাদ গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণও সমর্থন করেন না। বৈষ্ণবগণ বলেন ব্রহ্মের সাথে জীব ও জগতের স্বাভাবিক-সহজ-অভেদ সম্পর্ক স্বীকার করলে জগৎ ও জীবসমূহের দোষকে ব্রহ্মের স্বাভাবিক দোষ বলতে হবে। কিন্তু ব্রহ্মের দোষের কথা শ্রুতি-আদি শাস্ত্রতে উল্লেখ নেই । সেহেতু তাঁরা ব্রহ্মে উপাধি-সংযোগ কল্পনা করেন না। তাঁরা বলেন—জীব ও জগৎ ব্রহ্মের শক্তির প্রকাশ বা ব্রহ্মেরই শক্তি। কিন্তু ব্রহ্মের সাথে তাঁর শক্তির যুগপৎ ভেদ ও অভেদ সম্বন্ধ বিদ্যমান । । এই পরস্পর বিরোধী ভেদ ও অভেদ সম্বন্ধ যুক্তিতর্কের অগোচর হলেও শ্রুতার্থাপত্তি প্রমাণসিদ্ধ । “তাই ব্রহ্মের সঙ্গে তাঁর শক্তির অর্থাৎ জীব ও জগতের সম্বন্ধ হল যুগপৎ ভেদ ও অভেদ আর এই ভেদ ও অভেদ সম্বন্ধ হল অচিন্ত্য। সেইজন্য এই মতকে বলা হয় অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ। এই মতবাদ যারা মানেন, তাঁদিগকে গৌড়ীয়বৈষ্ণব সম্প্রদায় বলা হয়।

গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ অপ্রাকৃত চরমতত্ত্ব বিষয়ে শব্দপ্রমাণের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে থাকেন। কারণ প্রাকৃত বিষয়ের প্রত্যক্ষ, অনুমান, আর্য, উপমান, অর্থাপত্তি, অনুপলব্ধি, ঐতিহ্য, সম্ভব, চেষ্টা ইত্যাদি প্রমাণের উপযোগিতা থাকলেও এই সকল প্রমাণ নির্দোষ নয়। কারণ তা পৌরুষেয় । সাধারণ পুরুষের ভ্রম, প্রমাদ, বিপ্রলিপ্পা এবং করণাপাটব ইত্যাদি দোষ থাকে, কিন্তু শব্দপ্রমাণে ঐ সকল দোষ থাকে না। কারণ শব্দ বা বেদাদিশাস্ত্র কোন ব্যক্তিবিশেষের মৌলিক রচনা নয়। সেহেতু শব্দ অপৌরুষেয় এবং পরব্রহ্ম দ্বারা প্রকটিত। এইজন্য তা স্বতঃ প্রমাণিত। সুতরাং প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ শব্দের প্রামাণ্য নিরসনে অসমর্থ । শব্দপ্রমাণ বা বেদাদি শাস্ত্রের প্রতিকূল কোন প্রমাণ স্বীকার্য নয়। অনুমানাদি প্রমাণ যে স্থলে বেদাদি শাস্ত্রের সহায়ক হয়, কেবলমাত্র সেই স্থলেই তাকে প্রমাণ বলে স্বীকার করা হয়, নতুবা নয়।

বৈষ্ণবমতে শব্দপ্রমাণ কেবল বেদাদি শাস্ত্ৰই নয়। তাঁরা বলেন পুরাণ এবং ইতিহাস ( মহাভারত ) শব্দপ্রমাণের ভিতর গণ্য এবং তা পরমব্রহ্মের নিঃশ্বাস হতে প্রকটিত বাক্য। সেহেতু তা শব্দপ্রমাণের মধ্যে গণ্য। সুতরাং পুরাণ ও ইতিহাস বেদতুল্য এবং বেদার্থ পরিপূরক

বৈষ্ণবমতে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ ভেদে পুরাণ তিন প্রকারের। সাত্ত্বিক পুরাণ শ্রীকৃষ্ণের, রাজসিক পুরাণ ব্রহ্মার এবং তামসিক পুরাণ শিবের । এই পুরাণগুলিতে পর্যায়ক্রমে এঁদের মহিমাকীর্তন করা হয়েছে । পরমার্থ বিষয়ে সাত্ত্বিক পুরাণের প্রমাণই শ্রেষ্ঠ। আবার এই সাত্ত্বিক পুরাণসকলের ভিতর শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণই সর্বশ্রেষ্ঠ। বৈষ্ণব আচার্য- গণ বলে থাকেন——মহামুনি ব্যাসদেব বেদ-উপনিষদের তাৎপর্য বুঝাবার জন্য ব্রহ্মসূত্র রচনা করেছিলেন। কিন্তু মায়াবাদী ভাষ্যকারগণ সেই ব্রহ্মসূত্রের মর্ম উদঘাটন করতে পারেন নি। গৌড়ীয় বৈষ্ণবমতে শ্রীমদ্ ভাগবত পুরাণই ব্রহ্মসূত্রের অকৃত্রিম ভাষা। এর প্রমাণই চরম প্রমাণ ।

বৈষ্ণবমতে শ্রীকৃষ্ণই পরতত্ত্ব, ভগবান সম্বন্ধ এবং ভক্তি অভিধেয় আর প্রেম প্রয়োজন। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণই পরতত্ত্ব, এক এবং অদ্বিতীয়।এই তত্ত্ব প্রাকৃত পদার্থের মত জড় নয়। তা চিৎরূপ বা চিন্ময় । বোধের পার্থক্য অনুসারে এই চিন্ময়তত্ত্বই ব্রহ্ম, পরমাত্মা এবং ভগবান্ -এই তিনরূপে পরিগণিত হন । জ্ঞানিগণ ঐ তত্ত্বকে ব্রহ্ম আখ্যা দিয়ে থাকেন, যোগিগণ ঐ তত্ত্বকে পরমাত্মা নামে অভিহিত করেন এবং ভক্তগণ ঐ তত্ত্বকে ভগবান্ বলে থাকেন ।

ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত শক্তি আর এই শক্তিসমূহের ভিতর স্বরূপশক্তিই প্রধান বা সর্বশ্রেষ্ঠ । কারণ এতে জড়ত্বের চিহ্ন নেই। এটা চিন্ময় । এর আর এক নাম অন্তরঙ্গা, কারণ এর সাথে ভগবানের সম্পর্ক সর্বাপেক্ষা নিবিড় বা ঘন। এটা পরাশক্তি নামেও পরিচিত।

ভগবানের অন্তরঙ্গা, বহিরঙ্গা এবং তটস্থাশক্তি যথাক্রমে স্বরূপশক্তি, মায়াশক্তি এবং জীবশক্তি নামে অভিহিত। তাঁর অন্তরঙ্গা বা চিৎশক্তি, মায়াশক্তি ও জীবশক্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সৎ-চিৎ-আনন্দ বিগ্রহ। তাঁর অন্তরঙ্গা চিৎশক্তি এক হলেও তিনভাবে প্রকাশিত, যেমন সৎ অংশে সন্ধিনী, চিৎ অংশে সম্বিং এবং আনন্দ অংশে হ্লাদিনী। সন্ধিনী দ্বারা তিনি নিজের এবং অপর সকলের সত্তাকে ধারণ করেন ও অস্তিত্বযুক্ত বস্তুকে সত্তাদান করেন। সম্বিৎ দ্বারা তিনি স্বয়ং জ্ঞানস্বরূপ হয়েও শক্তি দ্বারা নিজেকে জানেন এবং অপর সকলকে জ্ঞানদান করেন। হ্লাদিনী দ্বারা তিনি আনন্দস্বরূপ হয়েও ঐ শক্তি দ্বারা নিজেই নিজের আনন্দ আস্বাদন করেন এবং অপর সকলকে আনন্দ আস্বাদন করান। এই হ্লাদিনী শক্তির মূর্তবিগ্রহ শ্রীরাধা । শ্রীকৃষ্ণ নিজেই নিজের আস্বাদ্য। ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ হ্লাদিনী শক্তি দ্বারা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে যে ‘আনন্দ-বৈচিত্র্য সৃষ্টি হচ্ছে, তিনি রসস্বরূপ হয়েও ঐ রসবৈচিত্র্য আস্বাদন করছেন ৷

শ্রীভগবানে অনন্ত ঐশ্বর্য ও গুণের প্রকাশ কিন্তু তৎসত্ত্বেও মাধুর্য হচ্ছে ভগবৎ সারতত্ত্ব। তাঁর ঐশ্বর্য আদিতে মাধুর্যের সার নেই। শ্রীভগবানের সহজ মাধুর্যই সমস্ত কিছুকে আকর্ষণ করছে । তিনিই আকর্ষক শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর অনন্ত মূর্তরূপ-মাধুর্য থাকলেও নৱ- রূপই যথার্থরূপ । তিনি চিরকিশোর, অনন্ত, সর্বজ্ঞ ও বিভু হয়েও নররূপে লীলাময়। পরব্রহ্মের যে স্বরূপটিতে তাঁর পুর্ণতম শক্তির অভিব্যক্তি তাকেই ভগবান আখ্যা দেওয়া হয়। বৈষ্ণবগণ বলেন শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপের মধ্যেই সেই পূর্ণতম অভিব্যক্তি । তাঁর ভিতর দিয়ে পূর্ণশক্তির প্রকাশ, সৌন্দর্য ও মাধুর্যেরও পূর্ণতম অভিবিকাশ ঘটেছে । সেহেতু শ্রীকৃষ্ণই পূর্ণ ভগবান্ এবং তিনিই পরতত্ত্ব।

পরব্রহ্মের তিনটি প্রধান শক্তির ভিতর যা বহিরঙ্গা অর্থাৎ চিদ্ বিরোধিনী বা জড়রূপা তা-ই মায়া নামে পরিচিত ৷ মায়া অর্থাৎ অজ্ঞান বা অসৎ । অন্ধকার যেমন সূর্যকে স্পর্শ করতে পারে না, মায়াও তদ্রূপ পরব্রহ্মকে স্পর্শ করতে পারে না। পরব্রহ্মের চিৎশক্তির ক্রিয়া ও ক্রিয়াস্থল হতে সর্বদা বাইরে অবস্থান করে বলে একে বহিরঙ্গা শক্তি বলা হয়। বিশ্বজগৎ-সংসাররূপে ‘এই শক্তি প্রকাশিত। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডই এর কার্যস্থল । গুণমায়া ও জীবমায়া ভেদে এই বহিরঙ্গা শক্তির দুটি কার্য। সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণময়ী প্রকৃতির নাম হল গুণমায়া। এই প্রকৃতি জড় বা অচেতন। সুতরাং আপনা-আপনি পরিণামপ্রাপ্ত হতে পারে না । শক্তিমান পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর দৃষ্টি দ্বারা প্রকৃতিতে শক্তি সঞ্চার না করলেজড় প্রকৃতিতে ষট্-বিকার (ষট্‌বিকার—প্রাক্উৎপত্তি,উৎপত্তি,প্রবৃদ্ধি,রূপান্তর,ক্ষয়ওলয়।) সম্ভব হতে পারে না। তাই পরমেশ্বরের শক্তিতে গুণমায়া জগতের উপাদানরূপে পরিণত হওয়ার অবস্থা লাভ করে থাকে। সুতরাং জগতের মুখ্য উপাদান কারণ গুণমায়া প্রকৃতি নয়। পরমেশ্বরের চেতনাময়ী শক্তিই জগতের মূল বা মুখ্য উপাদান কারণ এবং গুণমায়া হল জগতের গৌণ উপাদান কারণ । আর এই বহিরঙ্গা শক্তি বা মায়ার—সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কারী কার্যের নাম জীবমায়া । এই জীবমায়া তার আবরণাত্মিকা বৃত্তির দ্বারা জীবের প্রকৃত স্বরূপকে আবৃত করে রাখে এবং বিক্ষেপাত্মিকা বৃত্তির দ্বারা জীবের চিত্তবৃত্তিকে বিক্ষিপ্ত করে থাকে । এই কারণে বহির্মুখী জীব এই মায়ার প্রভাবে জাগতিক ভোগ-বাসনা চরিতার্থ করবার জন্য প্রাকৃত বা স্থূলদেহ ধারণ করে এই মায়িক জগতে প্রবেশ করে। এই মায়া দ্বারা মুগ্ধ জীবের প্রাকৃত বা জাগতিক সুখভোগের লালসার নিমিত্ত জগৎ এবং প্রাকৃতদেহ উৎপন্ন বা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই জীবমায়া দ্বারা জগতের উৎপত্তি সাধিত হলেও জীবমায়া জগতের মুখ্য নিমিত্ত কারণ নয়। এই জীবমায়া পরমেশ্বরের চিৎশক্তিতে শক্তিমান হয়ে সৃষ্টির অনুকূল হয়। সুতরাং পরমেশ্বরই হলেন সৃষ্টির মূল নিমিত্ত কারণ আর জীবমায়া সৃষ্টির গৌণ কারণ । এই বিশ্বজগৎ পরিণামশীল, সর্বদা ষট্‌বিকার প্রাপ্ত হচ্ছে। জগৎ পরমেশ্বর হতে উৎপন্ন । তাই জগৎ সত্য কিন্তু পরিণামশীল। কিন্তু পরমেশ্বর পরিণামী নন। জগৎ পরমেশ্বরের শক্তির পরিণাম । পরমেশ্বরের বহিরঙ্গা মায়াশক্তির পরিণতি এই বিশ্বজগৎ, কিন্তু স্বয়ং পরমেশ্বর এবং তাঁর স্বরূপশক্তি জগৎরূপে পরিণতি প্রাপ্ত হন না। 

শক্তি ও শক্তিমান অভেদ, এই জন্য শক্তির পরিণামকেই শক্তিমানের পরিণাম বলা হয়ে থাকে। কিন্তু পরমেশ্বর মায়াশক্তির সাহচর্যে জগৎরূপে পরিণত হয়েও আপন অচিন্ত্যশক্তি বা মহিমা দ্বারা স্বয়ং অবিকৃত অবস্থায় থাকেন। সেইজন্য পরমেশ্বরই প্রকৃত সৃষ্টি কর্তা। মায়াপ্রকৃতি তাঁরই সৃষ্টিকার্যে সহায়তা করছে। আর জীবগণ সৃষ্টবস্তু অর্থাৎ জাগতিক বিষয়ভোগের আকাঙ্ক্ষায় দেহ স্বীকার করে সৃষ্টিকে সফল করতে সহায়তা করছে। সুতরাং পরমেশ্বরের শক্তিতেই প্রকৃতি বিকারপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। কালের আনুকূল্য ব্যতীত জগৎ উৎপন্ন হতে পারে না । কাল পরমেশ্বর দ্বারা প্রবর্তিত হয়ে থাকে। জীবের কর্ম বা অদৃষ্ট জীবের কর্মফলের প্রকৃতিকে পরিণামপ্রাপ্ত করিয়ে থাকে। এইভাবে অদৃষ্টও সৃষ্টিকর্মে আনুকূল্য করে থাকে । অতএব কাল ও কর্ম বিশ্বসৃষ্টির সহায়ক ।

পরমেশ্বরের অন্তরঙ্গা ও বহিরঙ্গা শক্তি ছাড়াও আর একটি প্রধান শক্তির নাম জীবশক্তি অর্থাৎ তটস্থা শক্তি। বৃক্ষ, উদ্ভিদ, কীট ও পতঙ্গ হতে মানব পর্যন্ত প্রত্যেক প্রাণীদেহে জীবাত্মা বিদ্যমান। এটা পরমেশ্বরের জীবশক্তির প্রকাশ। জীবশক্তি বহিরঙ্গা মায়াশক্তি হতে উৎকৃষ্ট, কারণ মায়াশক্তি জড় আর জীবশক্তি চেতন বা চৈতন্যময় ৷ জীবশক্তি অন্তরঙ্গা চিৎশক্তির সমজাতীয় হলেও তা অন্তরঙ্গা নয় । কারণ অন্তরঙ্গা চিৎশক্তি পরমেশ্বরের স্বরূপে নিত্য অবস্থান করছে। কিন্তু পরমেশ্বরের স্বরূপে জীবশক্তির স্থিতি নেই । সুতরাং তটস্থা জীবশক্তির স্থান–বহিরঙ্গা মায়াশক্তির ঊর্ধ্বে এবং অন্তরঙ্গা চিৎশক্তির নিয়ে অর্থাৎ চিৎশক্তি ও মায়াশক্তির অন্তর্ভূক্ত নয়—মধ্যবর্তিনী । এজন্য একে তটস্থাশক্তি বলা হয় ৷

পরমেশ্বরের অন্তরঙ্গা চিৎশক্তি কখনও মায়ার গুণ দ্বারা আবরিত হয় না। কিন্তু জীবশক্তি মায়াশক্তির অন্তর্ভুক্ত না হলেও মায়ার গুণ দ্বারা রঞ্জিত বা আবরিত হয়ে পড়ে। জীব পরমেশ্বরের শক্তি বলেই জীবকে পরমেশ্বরের প্রকাশ বা অংশ বলা হয়। তাই শক্তি ও শক্তিমান অভেদ—আলাদা নয়। সুতরাং অন্তরঙ্গা, বহিরঙ্গা ও জীব এই সমস্ত শক্তির সত্তা পরমেশ্বরের উপর নির্ভরশীল।

বৈষ্ণবগণ বলেন সমস্ত শক্তি শক্তিমান পরমেশ্বরে নির্ভরশীল হলেও পরমেশ্বরের সাথে সমস্ত শক্তির যোগ এক প্রকার নয় । একমাত্র অন্তরঙ্গা চিৎশক্তিই পরমেশ্বরে ঘনিষ্ঠরূপে যুক্ত এবং তাঁর স্বরূপেই অবস্থান করে । আর বহিরঙ্গা মায়াশক্তিরও আশ্রয় এবং নিয়ন্তা পরমেশ্বর । কারণ তাঁর আশ্রয় না পেলে মায়া থাকতে পারত না । সুতরাং মায়াশক্তিও তাঁর সাথে যুক্ত কিন্তু তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। আর জীব পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের অংশ হলেও তা তটস্থা শক্তি। পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের অংশের নাম স্বাংশ, ভগবৎ অবতার সকল এই স্বাংশের অন্তর্গত।

জীবকে মায়াশক্তিবিশিষ্ট পরমেশ্বরের অংশও বলা হয় না। কারণ চেতনসত্তা জড়সত্তা হতে উৎপন্ন নয় । সুতরাং তটস্থাশক্তি বিশিষ্ট পরমেশ্বরের অংশ জীব। এই জীবসকল পরমেশ্বরের স্বরূপের বাইরে অবস্থান করে। যেমন পরমেশ্বর সূর্যমণ্ডলস্বরূপ আর জীব সূর্যরশ্মি তুল্য। সূর্যরশ্মি যেমন সূর্য হতে উৎপন্ন এবং সূর্যের অংশ হলেও সূর্যের বাইরে অবস্থান করে, সূর্যমণ্ডলে প্রবেশ করে না, সেরকম জীবসকল কখনও পরমেশ্বরের স্বরূপ হয়ে যায় না। ভগবৎস্বরূপে এবং জীবস্বরূপে পার্থক্য থাকে ৷ মুক্ত অবস্থাতেও নয়, পরমেশ্বর বিভু—সর্বব্যাপক, কিন্তু জীব অণুমাত্র। কিন্তু অণুমাত্র হলেও তা জড় নয়, চেতন। সুতরাং পরমেশ্বর বিভূচৈতন্য আর জীব অণুচৈতন্য ।

বৈষ্ণবমতে জীবদেহ জড় পঞ্চভূত দ্বারা গঠিত আর জীবাত্মা জীবদেহের হৃদয়ে অবস্থান করে। জীবাত্মা এরূপ হৃদয়ে অবস্থান করে সমগ্রদেহে চেতনা বিস্তার করে থাকে। জীব কর্মবশে পাঞ্চভৌতিক মায়িক জড়দেহ গ্রহণ করে। এই দেহের উৎপত্তি ও বিনাশ আছে । কিন্তু জীবাত্মার উৎপত্তি বা বিনাশ নেই । আত্মার জন্মও নেই— মৃত্যুও নেই । জীবাত্মা নিত্য, কিন্তু সংখ্যায় অনস্ত ।

পরমেশ্বর সর্বজ্ঞ, কিন্তু জীবের জ্ঞান সীমাবদ্ধ । তাই জীব অল্পজ্ঞ । জীবসকলের কর্তৃত্ব আছে কিন্তু তা পরমেশ্বরের অধীন । পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের শক্তির সহায়তা বিনা জীব আপন কর্তৃত্বকে বিকাশ করতে পারে না । এজন্য পরমেশ্বরের শক্তিতেই জীব আপন কর্তৃত্ব বিকাশ করে থাকে। আর ঐ কর্তৃত্ব বা অভিমানবশতঃ যা করে থাকে অর্থাৎ কর্তৃত্ব বিকাশের ফলে যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয়—সেই কর্মের দায়িত্ব পরমেশ্বরের নয়, তা জীবের। সেজন্য পরমেশ্বর কর্মের ফল ভোগ করেন না, জীব কর্মফল ভোগ করে। পরমেশ্বর কর্মফল দান করে থাকেন। প্রতিটি জীবের ভিতর ইচ্ছাপোষণ করবার ক্ষমতা রয়েছে। কর্ম করবার সময় জীব সেই ইচ্ছাকে ব্যবহার করে থাকে । পরমেশ্বর নিয়ন্তা, জীব নিয়ন্ত্রিত। জীবের ইচ্ছার স্বতন্ত্রতা থাকলেও অবাধ নয়। কারণ যে কোন ইচ্ছা হৃদয়ে পোষণ করবার ক্ষমতা থাকলেও ইচ্ছানুসারে কর্ম করবার সামর্থ্য জীবের নেই। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে— ব্রহ্মাণ্ডসৃষ্টি করবার ইচ্ছাশক্তি জীবের আছে, কিন্তু কার্যে পরিণত করবার সামর্থ্য নেই । সুতরাং জীবের ইচ্ছার স্বতন্ত্রতা সীমাবদ্ধ। কিন্তু জীবের তারাধ স্বাতন্ত্র্য না থাকলেও অনুস্বাতন্ত্র্য আছে। আর ঐ অণুস্বাতন্ত্র্যকে সে যথেচ্ছ ব্যবহার করতে পারে এবং সেই ব্যবহারিক কর্মের জন্য সে দায়ী হয়।

জীবের দুটি শ্রেণী—এক শ্রেণীয় ভগবৎমুখী আর অন্যটি ভগবং বিমুখ। অনন্তকাল ধরে ঐ ভগবৎমুখিগণ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের পার্ষদরূপে ভগবৎ সেবা করে আসছেন। এদের লক্ষ্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তির প্রতি। এঁরা নিত্যমুক্ত। আর ভগবৎবিমুখ জীবগণ মায়াজালে আবদ্ধ এবং মায়ার খেলায় মুগ্ধ । এদের লক্ষ্য মায়াশক্তির বিলাসের প্রতি। এই সুখাভিলাষী মায়ামুগ্ধ জীবসকল সুখের আশায় পরম আনন্দস্বরূপ পরব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে কর্তৃত্ব অভিমানবশতঃ মায়াময় এই সংসার ভোগ করতে অগ্রসর হয়। তারা তাদের অণুস্বাতন্ত্রের অপব্যবহার করে ও কর্মফল ভোগ করে থাকে। মায়া পরমেশ্বরেরই শক্তি, সেজন্য ভগবৎবিমুখ জীবসকলকে নানা দুঃখ-কষ্ট দিয়ে তাদের ভগবৎমুখী করে থাকে। মায়া জীবের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে কবলিত করে না । মায়া বিভু-চৈতন্য পব্ৰহ্ম শ্রীকৃষ্ণকে আবৃত করতে পারে না। কিন্তু অণুচৈতন্য তটস্থ জীবকে মুগ্ধ করে তাকে আবৃত করে থাকে। মায়া পরমেশ্বরের স্বরূপশক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এই কারণের জন্য নিত্যমুক্ত এই ভগবৎমুখী জীবগণকে মায়ামুগ্ধ করতে পারে না, কারণ তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তির দ্বারা অনুগৃহীত। সুতরাং ভগবৎবিমুখ জীবগণের প্রতি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তির অনুগ্রহ নেই। সেইজন্য মায়া তাদের মুগ্ধ করে কবলিত করে থাকে।

সাধরণতঃ জীবের ভগবৎবিমুখতা অনাদি বটে, কিন্তু চিরস্থায়ী নয় । ভগবৎ বিস্মৃতি দূর করতে পারলেই তা দূরীভূত হয়ে থাকে । জীব ভগবৎমুখী হলে মায়ার বন্ধন ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন আর মায়া তাদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না ।

এই ভগবৎবিস্মৃতি দূর করতে হলে সর্বদা ভগবৎ স্মরণ প্রয়োজন । কিন্তু মায়া প্রভাবে বিক্ষিপ্তচিত্ত জীব ভগবৎারণ স্থায়ী করতে পারে না। সেইজন্য বৈষ্ণবগণ বলেন— এই মায়ার প্রভাব হতে মুক্ত হবার উপায় শরণাগত হয়ে ভগবৎ ভজন করা ৷