জিজ্ঞাসু (একটি তরুণ):– প্রতিটি মানুষের জীবনেই যৌবনকালে শরীরে যে রিপুদের জোয়ার আসে – তা কি যে কোনো ভাবে অর্থাৎ জোর করে হোলেও দমন করা উচিৎ ? কারণ ভয় হয় – কখন হয়তো সেই জোয়ারে ভেসে যাবো ?
গুরুমহারাজ :– তোমার নিজের কথা বলছো তো – না যৌবনকালে রিপুর প্রভাবের কথা সার্বজনীনভাবে জানতে চাইছো ? এই কথাটা বললাম_ কারণ ঐ বিষয়গুলো নিয়ে তোমার মনোজগতের যা সমস্যা, তা কিন্তু সবার সমস্যা নাও হোতে পারে ! পৃথিবীর সকল মানুষের শরীর বা তার শারীরিক সমস্যা যেমন এক নয়, তেমনি আবার প্রতিটি মানুষের মনোজগত যেহেতু ভিন্ন, তাই তাদের প্রত্যেকের মানসিকতাও আলাদা। সম্ভবতঃ তুমি ‘কাম’-এর প্রভাব বা আদিরিপুর তাড়নার কথা বলতে চাইছো । দ্যাখো, কোনো মানুষ কোন্ চেতনার level-এ রয়েছে, তার উপরেই আদিম রিপুর প্রাবল্য নির্ভর করে। ঘোর তামসিকতাপূর্ণ কোনো যুবকের রিপুর তাড়না যতটা প্রবল হবে – শুদ্ধসত্ত্ব কোনো যুবকের ততটা প্রবল হবে না। তুমি কি ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করতে চাইছো – তাহলে এই সম্বন্ধে তোমাকে সবকিছু জানতেই হবে – অন্যথায় প্রকৃতির উপর ছেড়ে দাও। যখন যেমন হবে – তখন তেমনভাবে অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে খাপ খাওয়াবে। আর যদি তুমি ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করতে চাও – তাহলে তোমার যিনি গুরু হবেন_ তিনি তোমাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম পালনের কথা শিখিয়ে দেবেন, তোমার চলার পথ দেখিয়ে দেবেন ! গুরু-ই তোমার ভার নেবেন – তখন আর তোমার অতটা ভাবনা থাকবে না। ব্যাপারটা বুঝলে ?
নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করতে যেও না। দ্যাখো, বাঁধ দিয়ে বন্যার জল আটকানোর চেষ্টা করলে সময় সময় বাঁধ ভেঙে আরও বেশি ক্ষতিসাধন হয় – মানবজীবনে বা বহু সাধকের জীবনে ও দেখা গেছে এইরকমই অঘটন ঘটে গেছে। ভালো করতে গিয়ে ফল অধিকতর খারাপ হয়েছে। তাই তোমাকে বলছিলাম, প্রকৃতির অনুকূলে চলো –এটা জেনে রাখবে যে, জোর করে বৈরাগ্য হয় না ! জোর করে গাছের কাঁচা ফল ছিঁড়ে তাকে পাকালে কি ওই ফলটি সুস্বাদু হয়, না পুষ্ট হয় ? কখনোই হয় না – এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ, তাই Nature এটাকে মেনে নেয় না। মানুষের জীবনেও এমনটাই ঘটে!
জোর করে কোনো মানুষকে আধ্যাত্মিক করা যায় না, ব্যক্তির নিজের মধ্যে থেকেই সবকিছু আসে – গুরু শুধু তাকে তখন সাহায্য করেন মাত্র ! গাছের পাকা ফল যখন গাছ থেকে বোঁটা খসে পড়ে যায় – তখন গাছ বুঝতেই পারে না, অর্থাৎ এতে গাছের কোনো কষ্ট হয় না – এটাই Natural ! ওই ফলটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হবে, ঐটিকে যে গ্রহণ করবে তার পুষ্টিও হবে এবং খেয়ে আনন্দলাভ‌ও করবে !
সুতরাং _বাবা ! জোর করে কিছু করতে যেও না। নিজেকে watch করো – দেখবে তোমার ভিতর থেকেই সব সমস্যার উত্তর পাবে। নাহলে কোনো সদ্গুরুর শরণাপন্ন হয়ে, তার নির্দেশ মেনে চলো – দেখবে জীবনের কোনো সমস্যাই আর সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া এটা জেনে রাখবে যে, এই সমস্যা তো তোমার একার নয় – যুগ যুগ ধরে তোমার বয়সী ছেলে-মেয়েরা এই একই সমস্যায় ভোগে, আবার তারা এর থেকে বেরিয়েও আসে ! কেউ উপভোগের দ্বারা, কেউ ত্যাগের দ্বারা এই সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট । এবার তোমার সংস্কার এবং পুরুষাকার অনুযায়ী এই দুই পথের একটিকে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে । আর এই এগিয়ে চলা– পূর্ণত্বের দিকে। কারণ পূর্ণতাই হোলো সকল মানবের অন্তিম লক্ষ্য !