জিজ্ঞাসু :– Naturopathy, আকুপ্রেসার, আকুপাংচার এইগুলি বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে – এগুলিতে কি সত্যই উপকার হয় ?
গুরুমহারাজ :– ‘এগুলি বর্তমানে এসেছে’_ বলতে কি বোঝাতে চাইছো ? আকুপাংচার বা আকুপ্রেসার এগুলি বহু প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, নতুন নতুন নাম দেওয়া হয়েছে_ এই যা ! আর তুমি এইসব বিদ্যার সাথে সবে পরিচিত হোচ্ছো বলে মনে করছো যে, এইগুলি নতুন কোনো চিকিৎসাবিদ্যা ! কিন্তু সেটা ঠিক নয়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র ঘাঁটলে দেখা যায় আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমস্ত ধারার জন্ম হয়েছে ওখান থেকেই !
আয়ুর্বেদে উল্লেখ রয়েছে শল্যবিদ্যা, শলাকাবিদ্যা–ইত্যাদির কথা। এই শলাকাবিদ্যা-ই বর্তমানে আকুপাংচার। হোমিওপ্যাথিকের potency-র যে concept, তারও মূলে আয়ুর্বেদ – কারণ ওখানে যে কোনো ঔষধির মূল বা নির্যাস তৈরি করা হোতো, যেটা এখন বলা হোচ্ছে Mother Tincture ! ঐ Mother Tincture–এর সাথে রোগ ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী জল, দুধ, মধু বা অন্য অনুপান মিশিয়ে খাওয়ানো হোতো। পাথরের খল-নুড়িতে ঘসে ঘসে ঔষধ তৈরি করে মাটির তৈরী পাত্রে, পাথরের পাত্রে এবং পরবর্তীতে বোতলে রাখা হোতো, আর রোগীকে খাওয়ানোর আগে বোতল ঝাঁকড়ে নিতে হোতো। এগুলি সবই potency তৈরী করারই তো পদ্ধতি।
এছাড়াও প্রকৃতিতে দেখা যায় মৌমাছিরা যখন মধু তৈরি করে – তখন ফুলের মকরন্দ (Necter)-এর সাথে নিজের শরীরের রাসায়নিক মিশিয়ে, একে অপরে বারবার দেওয়া-নেওয়া করে অবশেষে যখন প্রকোষ্ঠে ঢোকায়, তার আগে ডানার বাতাস দিয়ে দিয়ে কম্পিত করে । তারপর যখন ওরা বোঝে যে, পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে, তখন তারা প্রকোষ্ঠটিকে seal করে দেয়। এতে ঐ মধুর খাদ্যগুণ ও স্থায়িত্বকাল বহুগুণে বেড়ে যায়। এইভাবে ওখানেও মধুকে potentised করা হয়।
যাইহোক, কথা হচ্ছিলো আয়ুর্বেদশাস্ত্র নিয়ে। ওখানে রয়েছে স্বয়ং মহাদেব শিব এই বিদ্যা প্রথম পৃথিবীতে প্রবর্তন করেন। এইজন্য শিবের আরেক নাম বৈদ্যনাথ। আয়ুর্বেদের সার্থক প্রয়োগ ঘটেছিল চরক ও সুশ্রুত নামক দুইজন বিখ্যাত চিকিৎসকের সময়ে। চরক-সংহিতা, সুশ্রুত-সংহিতা নামে গ্রন্থ এখনও বাজারে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ঐ গ্রন্থে কিছু কিছু শ্লোক প্রক্ষিপ্ত হোলেও কিছু কিছু original বিদ্যা এখনো রয়ে গেছে। গাছ-গাছড়া বা ‘ঔষধি’, কিছু কিছু লবণজাতীয় পদার্থ বা ধাতব পদার্থ অর্থাৎ রসায়ন – এইগুলিকে কাজে লাগিয়ে ঔষধ তৈরি করা হোতো। ঔষধগুলি প্রয়োগের সময় তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু বলকারক খাদ্য বা সহকারী দ্রব্য অর্থাৎ অনুপান যোগ করে রোগীকে খাওয়ানো হোতো। এতে রোগীর রোগও ভালো হোতো আবার শরীরও দুর্বল হোতে পারতো না।
এখনকার এলোপ্যাথিক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ঐ প্রাচীন পদ্ধতির-ই নতুন সংস্করণ। তবে, বর্তমান এলোপ্যাথিক পদ্ধতিতে নানান side-effect হয় কারণ এখন ট্যাবলেট প্রস্তুতিতে আর ‘ঔষধি’ বা গাছের নির্যাস না ব্যবহার করে – ওই নির্যাসে কি কি chemical আছে তা দেখে নিয়ে রসায়ানগার থেকে সেগুলিকে প্রস্তুত করে ঔষধ তৈরি করা হয়।
এলোপ্যাথিকে antibiotic ঔষধগুলি মানুষের শরীরের naturality-কে দারুণভাবে বিঘ্নিত করে। বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণে দূষণ বাড়ছে এবং খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো হোচ্ছে অথবা কৃষিজ ফসলে বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটছে – তাতে মানুষের (বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া হয় না, কীটনাশক হিসাবে eco-friendly দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়।) শরীরে নানান ধরনের জটিল রোগ এসে বাসা বাঁধছে।
আর এর ফলে সেইসব রোগের প্রতিষেধক হিসাবে antibiotic ব্যবহারটা__এখন যেন প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনে compulsary হয়ে উঠেছে ! কিন্তু জেনে রাখবে – এটি শরীরের পক্ষে মোটেই ভালো জিনিস নয় ! দীর্ঘদিন antibiotic ব্যবহার করলে এর কি কি কুফল শরীরে দেখা দিতে পারে–তা বোঝা যায়। দ্যাখো, বিজ্ঞানীরা কিন্তু মানুষকে ঠকায় নি – নাম দিয়েছে antibiotic, যার বাংলা অর্থ হবে জীবন-বিরোধী ! যদিও এখানে biotic শব্দটা virus-bacteria, protojoa – এদেরকে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়, ব্যাপক অর্থে এটি কিন্তু জীবন-বিরোধী !