জিজ্ঞাসু :–গুরু মহারাজ প্রচুর মানুষ চর্মরোগে ভোগে। আমাদের মিশনের ছেলেদেরও দেখেছিপ্রায়শঃই খোস-পাঁচড়া হয়। শরীরে চর্ম রোগ হোলে কিভাবে চিকিৎসা করা দরকার ? গুরু মহারাজ:— দ্যাখো, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে যে কোনো চর্ম রোগকেই ‘কুষ্ঠ’ বলা হয়েছে ! দাদ, চুলকানি, একজিমা – এগুলি সবই আয়ুর্বেদ মতে কুষ্ঠ! শ্বেতি কেও ‘ধবল কুষ্ঠ’ বলা হয়েছে । ওখানে বলা হয়েছে , নানা ধরণের চুলকানি জাতীয় চর্ম রোগ বা অন্যান্য চর্মরোগ যে বাহ্যভাবে সৃষ্টতা কিন্তু নয় । অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তাররা আয়ুর্বেদের এই যুক্তি মানে না – তাদের মতে বেশিরভাগ চর্মরোগই হোলো বাহ্য কারণবশতঃ সৃষ্ট। তাই তারা চর্মরোগের চিকিৎসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাহ্যিক(মলম জাতীয় ঔষধ) ঔষধ প্রয়োগ করে থাকে, কিন্তু ওদের ওষুধে বেশিরভাগ চর্মরোগ ই সারে না !
বাহ্যিকভাবে চামড়ার কোনো infection হয়ে বা বিষাক্ত পোকা মাকড়-এর লালারস(কামড়ে দিলে) বা দেহরস লাগলে যে সব ফুসকুড়ি জাতিয় উদ্ভেদ(swelling) বের হয় সেগুলি বাহ্য ঔষধ প্রয়োগে (মলম জাতীয় ঔষধ) সেরে যেতে পারে, কিন্তু যে সমস্ত চর্মরোগের কারণ অনেক গভীরে, হয়তো পুরুষানুক্রমিক ভাবে জাতকের জিন বহন করে নিয়ে এসেছে – সেগুলি বাহ্য ঔষধ প্রয়োগে সারবে কি করে বল দেখি ! এই জন্যই অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় অধিকাংশ চর্মরোগ নির্মূল হয় না – বাহ্যত সারলেও পরে আবার দেখা দেয়। শরীরের immunity system-এর গন্ডগোলের ফলে, চর্মরোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন fungus বা bacteria গুলি অ্যালোপ্যাথিক ঔষধে না সেরে শরীরের অন্যত্র বাসা বাঁধে এবং অন্য রোগ সৃষ্টি করে বসে।
তবে, চর্মরোগে যদি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা হয়, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগটি প্রথমেই বেশ খানিকটা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় – আর এই থেকেই বোঝা যায় ওই রোগীর ক্ষেত্রে ঔষধ নির্বাচন যথাযথ হয়েছে । এইবার potency ও dose ঠিক করে নিয়ে কিছুদিন চিকিৎসা করতে পারলেই রোগের পুরোপুরি recovery সম্ভব হয় ! তবে, সেক্ষেত্রে রোগীর ধৈর্য এবং সহ্যশক্তির খুবই প্রয়োজন হয়।।
আয়ুর্বেদেও বিভিন্ন চর্ম রোগের চিকিৎসার বিধান রয়েছে । ঠিকমতো ঔষধ অনুপান সহ সেবন করতে পারলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাতেও শুধু চর্মরোগই নয়, সমস্ত রকমের রোগ সেরে যায় । প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র আয়ুর্বেদ শাস্ত্রই রোগ এবং রোগীর বিজ্ঞানসম্মতভাবে সঠিক চিকিৎসা করতে পারে । আর এটাও জেনে রাখবে যে, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি থেকেই অন্যান্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির সৃষ্টি হয়েছে ! এইজন্যেই দেবাদিদেব মহাদেবকে আয়ুর্বেদের জনক হিসাবে মেনে নেওয়া হয়।
যাই হোক, এখন সমাজে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক শাখা রয়েছে । আর সেগুলির মধ্যে এ দেশে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি সবচাইতে বেশি চলে ! তবে, এই তিন বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে আবার প্রচন্ড অমিল রয়েছে । এমন একটা ভাব_ যেন পরস্পর পরস্পরের শত্রু ! একজন অপরজনকে দেখতে পারেনাকথায় কথায় একে অপরের দোষ ধরে, সমালোচনা করে ! কিন্তু এটা ঠিক নয় ! মানুষের রোগ-আরোগ্যই যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হয়তাহলে বিরোধ হবে কেন ? মানুষের মঙ্গলের স্বার্থে সমস্ত প্রকার চিকিৎসা বিজ্ঞানের শাখার মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন করতে হবে। সরকারিভাবেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ! সরকারেরই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির Combind course চালু করা উচিত ! সেটা এমন হবে যে, সেই course-এ সমস্ত রকম চিকিৎসা পদ্ধতিকেই শ্রদ্ধা করা হবে এবং সব পদ্ধতিগুলোই শেখানো হবে । ছাত্রছাত্রীরা সব পদ্ধতি সম্বন্ধেই পড়াশোনা করবে, এবার যার যে পদ্ধতিটা পছন্দ _ সে সেইটা নিয়ে higher studies-এ যাবে এবং সেই ভাবে চিকিৎসা করবে । আরো ভালো ভাবে বলতে গেলেযে রোগীকে যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে তার মঙ্গল হয়, ডাক্তারেরা পরস্পরে পরামর্শ করে সেই পদ্ধতিটিই অবলম্বন করবে ! এতে বিরোধ আসছে কেন ? একজন ডাক্তারের কাছে রোগীর রোগমুক্তি এবং তার মঙ্গল সাধনই যখন প্রকৃত উদ্দেশ্য _তখন সেই রোগীটি কিভাবে এবং কতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে সেই কাজটাই তো করতে হবে, তাই নয় কি ? …. (ক্রমশঃ)