[চর্মরোগে কোন চিকিৎসা পদ্ধতি শ্রেষ্ঠ এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন গুরু মহারাজ। আজ সেই আলোচনার শেষ অংশ!] ….. তবে, তোমাদের তো আগেও বলেছি যে কোনো ‘pathy'(হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, নেচারোপ্যাথি ইত্যাদি)-র থেকেও শ্রেষ্ঠ ‘pathy’ হোলো sympathy ! শুধুমাত্র sympathy- প্রয়োগের মাধ্যমেই কোনো প্রেমিক মানুষ বা কোনো সেবাপরায়ণ মানুষ, ডাক্তার না হয়েও বহু মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারেন–এমন record মানব সমাজে অনেক জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় ! এবার যে কোনো ‘pathy’-র ডাক্তাররাই তো চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের সারিয়ে তোলেন বা অন্ততঃ চেষ্টাটুকু করেন। কিন্তু এবার ঐ ধরণের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা যদি sympathy-সম্পন্ন হন, তাহলেই তাঁর কাছ থেকে best treatment- টা পাওয়া যায় ! ব্যাপারটা ধরতে পারলে কি ? সাধারণভাবে দেখা যায়, সমাজে ডাক্তারের অভাব নাই কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে_ এমন ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম ! কোনো কোনো অঞ্চলে হয়তো এমন একটা বা দুটো ডাক্তারের নাম খুঁজে পাবেযাদের কথা স্থানীয় মানুষেরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে থাকে ! মানুষের মনে এইরূপ শ্রদ্ধার জায়গাটা দখল করতে গেলে প্রথমে যে শর্ত প্রয়োজন, তা শিক্ষাই (ডাক্তারী পাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা) শুধুমাত্র নয়এরজন্য ঐ ডাক্তারের জীবনে আরো কিছু প্রয়োজন হয়, যেগুলি হোলো ত্যাগ– সংযম এবং নিঃস্বার্থপরতা ! এইসব মানবিক গুনগুলি থাকলে_ তবেই ওই ব্যক্তি অপরের প্রতি অর্থাৎ তার রোগীর প্রতি sympathetic হোতে পারবে ! দ্যাখো, মানুষের চরিত্রে অন্য মানুষের প্রতি sympathy -থাকাটা বড় সহজ কথা নয় ! দীর্ঘদিন সাধন-ভজন করার পর কোনো সাধকের জীবনে যে যে মানবিক গুণ সমূহ প্রকটিত হয়, সেইসব গুণগুলি ঐ ডাক্তারের মধ্যে থাকতে হবে ! সেই অর্থে, সমাজের কল্যাণকারী যে কোনো ব্যক্তিই সাধক মহাসাধক ! সমাজ-কল্যান মূলক কাজের মধ্যে দিয়েই তাদের সাধনা হয়ে যায়।। ভারতীয় দর্শনে এটাকেই ‘কর্মযোগ’ বলা হয়েছে।
শ্রীমৎভগবদ্গীতায় ‘কর্মযোগ’ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে । সেখানে দেখা যায় একজন কর্মযোগীকে ‘ভগবানের সবচাইতে প্রিয়’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে ! যাই হোক, আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছিল চর্মরোগের ব্যাপারে ! আমরা এখন সেই আলোচনায় ফিরে আসি ! ভারতীয় নিম-নিশিন্দা ইত্যাদি উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ চর্মরোগ-সহ যেকোনো ঘা-ফোঁড়ায় (তা সে যত বিশ্রী ধরণেরই হোক না কেন) খুবই কার্যকরী । নিমপাতা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানগুলি বারবার ধুয়ে নিতে পারলে খুবই উপকার হয় ! এইরকম জলে স্নান করা বা অন্ততঃ গা-ধুয়ে নেওয়া খুবই ভালো ! সেই অর্থে তোমরা যেসব সুগন্ধি সাবান স্নানের সময় ব্যবহার করো সেগুলি নিমযুক্ত অর্থাৎ নিমের তেল দিয়ে তৈরি হোলে ভালো হয় ! নিম-তেল গায়ে মাখাও খুব ভালো । অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এগুলি সরাসরি গাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে ব্যবহার করে, ফলে ওদের চামড়াও খুব ভালো !
বর্তমানে তথাকথিত সভ্যতার যুগে কর্মব্যস্ত মানুষ, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যস্ত ছেলে মেয়েরা, চাকুরিজীবী বা ব্যবসায়ী মানুষেরা_ সারাদিনে গায়ের জামাকাপড় খোলারই সময় পায় না ! তাই তারা বিভিন্ন রকম সেন্ট্ বা বডি স্প্রে ব্যবহার কোরে, গায়ে ঘামের দুর্গন্ধ ঢাকা দেবার চেষ্টা করে ! কিন্তু তাতে কি হয় ? গায়ে ঘাম বারবার বসে যায় ! এই ধরনের ঘাম বসে যাওয়াটা খুবই খারাপ এখান থেকেই শরীরে ব্যাকটেরিয়া,ফাঙ্গাস বাসা বাঁধে ! সেইজন্যেই গা ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তা মুছে ফেলা বা ধুয়ে ফেলা উচিত ! কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে তা তো আর সব সময় হয়ে ওঠে না ! সে ক্ষেত্রে সমস্ত কর্মের শেষে দিনান্তে অন্তত একবার ভালো করে গা ধুয়ে নেওয়া বা মুছে নেওয়া উচিত !
মানুষের গায়ে ঘামের সঙ্গে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ ও হরমোন নিঃসৃত হয়, সেগুলি সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে না ফেললে _সেইগুলোতে ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে ! আর এরফলেই শুরু হয় irritation, বাইরে থেকে আসা ব্যাকটেরিয়াভাইরাস-ফাঙ্গাস জনিত নানা রকম চর্মরোগের সূত্রপাত এইভাবেই হয়। তবে, বংশগত চর্মরোগের ব্যাপারটা আলাদা !
বর্তমানে সুদূর আমেরিকা মহাদেশ থেকে migrate হয়ে আসা ‘পার্থেনিয়াম’ খুব দ্রুত এদেশে বংশবিস্তার করছে ! প্রথমে রেলস্টেশন বা রেললাইন বরাবর এই গাছগুলিকে দেখতে পাওয়া যেতো, এখন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছটি ছড়িয়ে পড়েছে ! এই গাছের ফুলের রেণু এবং পাতার রস ইত্যাদিগুলি হাঁপানি এবং চর্মরোগ সৃষ্টি করছে ! এছাড়াও আমাদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত আলাকুশি, বিছুটি ইত্যাদি গাছগুলির অংশবিশেষ চামড়ায় নানারকম প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে ! কয়েক প্রকারের ফুলের রেণু, মানুষের শরীরে নানারকম ‘অ্যালার্জি’ সৃষ্টি করে ! তবে, এই ধরনের চর্মরোগ বা চর্ম-প্রদাহ সহজে সেরে যায়, কিন্তু পুরুষানুক্রমিক চর্মরোগ সারাতে গেলে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাসহ মানবজীবনে আহার এবং বিহার অর্থাৎ food habit and life style-এ সংযমের প্রয়োজন।।