জিজ্ঞাসু:—- বাংলা রাজাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাকে বলা যায় ?
গুরু মহারাজ :—- আধুনিক কালের ইতিহাস অনুযায়ী অবশ্যই রাজা শশাঙ্ক ! বাংলার যে ইতিহাস তোমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়ো, সেইগুলি বিচার করলে দেখা যায় শশাঙ্কের মত বীর ও দক্ষ প্রশাসক__ বাংলার রাজাদের মধ্যে আর কোথায় ? তৎকালে থানেশ্বর (বর্তমান হরিয়ানা) থেকে কামকোটিপুর (বর্তমান আসামের কামরূপ) এবং ওদিকে ছোটনাগপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা শশাঙ্কের অধীনে ছিল । শশাঙ্ক খুবই সুশাসক ছিল। শশাঙ্কের রাজত্বকালে কোনো প্রজাবিদ্রোহ হয় নি, বরং প্রজারা রাজভক্ত এবং তাদের রাজার প্রতি খুবই বিশ্বাসী ছিল। কারণ তারা অনায়াসে রাজার ধর্মকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে নিতে পেরেছিল।
শশাঙ্কের সময় উত্তর ভারতে শক্তিশালী রাজা ছিল পুষ্যভূতি বংশের রাজ্যবর্ধন এবং পরে তার ভাই হর্ষবর্ধন ! শশাঙ্কের উত্থানে ভীত হয়ে এরা তৎকালীন আসাম রাজ্যের রাজার সাথে আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে (রাজ্যবর্ধনের বোন রাজশ্রীর সাথে আসাম রাজ গ্রহবর্মার বিবাহ হয়েছিল) শক্তি বৃদ্ধি করে শশাঙ্ককে সরাতে চেয়েছিল কিন্তু তাকে এক চুলও নড়াতে পারেনি। বরং এই যুগ্ম বাহিনী যতবার শশাঙ্কের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল, ততবারই শশাঙ্ক তাদের খানিকটা করে তাদের রাজ্যের অংশ দখল করে নিয়েছিল। এই ভাবেই তো শশাঙ্কের রাজ্য অতোদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। শশাঙ্কের সাথে যুদ্ধে আসাম-রাজ মারা গিয়েছিল, এমনকি পরবর্তীতে রাজ্যবর্ধনও মারা পড়েছিল। হর্ষবর্ধন রাজা হয়ে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ঠিকই কিন্তু শশাঙ্কের জীবদ্দশায় তার কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারেনি, তার রাজ্যের কোনো অংশ দখলে নিতেও পারে নি।
শশাঙ্কের আগে সমগ্র বাংলা জুড়ে বৌদ্ধপ্রভাব ছিল, কিন্তু শশাঙ্ক ছিলেন একজন একনিষ্ঠ শৈব সাধক। ফলে, তার নির্দেশে সেই সময় থেকেই বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, শহরে, নগরে শিবের মন্দির গড়ে ওঠেছিল- সর্বত্র শিব পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল। রাজভক্ত প্রজারা তা মেনেও নিয়েছিল। শশাঙ্ক নিজেও বহু বৌদ্ধমঠ বা monestry ভেঙে দিয়ে শিব মন্দির তৈরি করে দিয়েছিল। কোনো কোনো ঐতিহাসিক অবশ্য _এমন বলেছে যে, এই পাপেই শশাঙ্কের অকাল মৃত্যু ঘটেছিল। এখনো রাঢ়বঙ্গের গ্রামেগঞ্জে বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় নানান নামে (ধর্মরাজ, বুড়োরাজ, ইত্যাদি) ধর্মঠাকুরের পুজো হয়। এগুলি পূর্বে বৌদ্ধদের অনুষ্ঠান ছিল। এইসব অনুষ্ঠানে এখনো মস্তক-মুণ্ডন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করা, গৈরিক পোশাক(কাষায়ের এর বিকল্প) পড়া- ইত্যাদি আচার পালন করা হয়, যেগুলি বৌদ্ধদের আচারের সঙ্গে একান্ত ভাবে সাদৃশ্য যুক্ত! বর্তমানে ধর্মরাজ, বুড়োরাজ, বুড়োশিব, কালুরায়, খেলারাম ইত্যাদি নানান নামে পুজো হোলেও মূলত এগুলি শিব পূজা বলেই মান্যতা পায়। কিন্তু শশাঙ্কের পূর্বে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বুদ্ধ পূর্ণিমায় ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে পূজা পাঠ হোতো !
বঙ্গদেশে বৌদ্ধ প্লাবনের সময় তৎকালীন সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষেরা বা অন্তজ শ্রেণীর মানুষেরা দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল। কারণ ভগবান বুদ্ধ সবাইকে পূজা পাঠের, ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছিলেন, যেখানে তৎকালীন সমাজে কঠোর এবং কঠিন ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং যার ফলে নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবন ছিল নিয়মের নিগড়ে এবং কঠিন অনুশাসনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ! সেইসময় ব্রাহ্মণদের সৃষ্ট জাতিভেদ প্রথার কড়া অনুশাসন এবং অত্যাচারে নিম্নশ্রেণীর লোকেরা অকারণে খুবই অবহেলিত এবং অত্যাচারিত হোতো। এইরকম এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ভগবান বুদ্ধ শরীর ধারণ করলেন এবং তিনি তৎকালীন ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের কল্যাণকল্পে প্রথমেই ‘বৈদিক নিয়ম’- বলে চালানো অনেক কুপ্রথাকে অস্বীকার করলেন। তারপর তিনি যে অসাধারণ কাজটি করলেন_তাহোলো তিনি নিম্নবর্ণের-উচ্চবর্ণের ভেদাভেদ তুলে দিয়ে সকলকে ধর্মাচরণের অধিকার দিলেন। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকেদেরকে তিনি সম্মান দিয়েছিলেন, তখনকার দিনে এটা ছিল একটা বিরাট বিপ্লব !
তৎকালীন বহু রাজা বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল বলেই_ উনি সমাজপতিদেরকে উপেক্ষা করে সমাজে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। যাইহোক, নিম্নশ্রেণীর মানুষেরাও বুদ্ধকে ভালোবেসে_ বৌদ্ধধর্মকে আপন করে নিয়েছিল ! বুদ্ধপূর্ণিমায় বা তার পরের পূর্ণিমায় এখনো রাঢ়বঙ্গে বিভিন্ন নামে ধর্মঠাকুরের[বুদ্ধের ‘ধম্মং( ধর্মং) শরণং গচ্ছামি’ মন্ত্র থেকেই ধর্মঠাকুর] পূজা হয় ! সেখানে দেখা যায় যে, ডোম, বাগদি, হাড়ি, মুচি ইত্যাদি সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই ঐসব পূজার মূল পূজারী বা “দেয়াসী”-র ভূমিকা পালন করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসব বর্গের মানুষেরাই ধর্মরাজ পূজার “সন্ন্যাসী” বা ভক্ত হয়ে, অনুষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ম পালন করে।
তবে জানো তো_ ভারতীয় সমাজে (বিশেষতঃ বাংলায়)__ ডোম, বাগ্দী ইত্যাদি সম্প্রদায়ের লোকেরা পূর্বে ক্ষত্রিয়ের মর্যাদা পেতো ! এরা তৎকালীন রাজাদের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতো। এখনও গ্রামে-গঞ্জে লাঠিখেলা, শারীরিক কসরত, রায়বেশে নৃত্য__ইত্যাদির প্রদর্শন এরাই করে থাকে ! এইসব দেখেই বোঝা যায় যে, একসময় এদের পূর্বপুরুষেরা যুদ্ধবিগ্রহ কোরতো, অর্থাৎ এরা ক্ষত্রিয় সৈনিক ছিল ! যার কিছু কিছু character, এরা বংশানুক্রমিকভাবে আজও বহন করে আসছে। তাহলে, বর্তমানে এরা অন্তজ শ্রেনীতে পরিণত হোলো কি করে ? আসলে এরা যে সময়ে, যে রাজার সৈনিক ছিল, কোনো যুদ্ধে সেই রাজার পরাজয় ঘটেছিল এবং অন্য কোনো রাজবংশ বাংলার সিংহাসনে বসেছিল । সেই সময় পরাজিত রাজার সৈন্যরা হয় মারা পড়েছিলো অথবা যুদ্ধবন্দী হয়েছিল। ফলে এদের স্ত্রী-পুত্ররা অসহায় হয়ে পড়েছিল। অনেকক্ষেত্রেই অসহায় স্ত্রী-রা নতুন রাজার সৈন্যদের দখলীভূত হয়ে গিয়েছিল ! এই ব্যাপারটার জন্যই তৎকালীন সমাজ এদেরকে হীন চোখে দেখতে শুরু করেছিল। ফলে, নতুন রাজার রাজত্বে এই সব সম্প্রদায়ের মানুষেরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছিল। এই ভাবেই ভারতীয় সমাজে এক এক রাজবংশের উত্থানে পরাজিত রাজার ক্ষত্রিয় সৈন্যদের পরিবারের লোকেরা নিম্নবর্গের বিভিন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
এইজন্যই বলা হয়__জাতিভেদ কোনো প্রাচীন প্রথাও নয়, এটা ঈশ্বরের সৃষ্টিও নয় __এগুলো সবই মানুষের সৃষ্টি ! পৃথিবীর সব দেশেই এক এক সময়ে, সমাজের বিবর্তনে এইসব কুপ্রথার উদ্ভব হয়_আবার কালের নিয়মে তার অবসানও হয়ে থাকে।৷
গুরু মহারাজ :—- আধুনিক কালের ইতিহাস অনুযায়ী অবশ্যই রাজা শশাঙ্ক ! বাংলার যে ইতিহাস তোমরা পাঠ্যপুস্তকে পড়ো, সেইগুলি বিচার করলে দেখা যায় শশাঙ্কের মত বীর ও দক্ষ প্রশাসক__ বাংলার রাজাদের মধ্যে আর কোথায় ? তৎকালে থানেশ্বর (বর্তমান হরিয়ানা) থেকে কামকোটিপুর (বর্তমান আসামের কামরূপ) এবং ওদিকে ছোটনাগপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা শশাঙ্কের অধীনে ছিল । শশাঙ্ক খুবই সুশাসক ছিল। শশাঙ্কের রাজত্বকালে কোনো প্রজাবিদ্রোহ হয় নি, বরং প্রজারা রাজভক্ত এবং তাদের রাজার প্রতি খুবই বিশ্বাসী ছিল। কারণ তারা অনায়াসে রাজার ধর্মকে নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে নিতে পেরেছিল।
শশাঙ্কের সময় উত্তর ভারতে শক্তিশালী রাজা ছিল পুষ্যভূতি বংশের রাজ্যবর্ধন এবং পরে তার ভাই হর্ষবর্ধন ! শশাঙ্কের উত্থানে ভীত হয়ে এরা তৎকালীন আসাম রাজ্যের রাজার সাথে আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে (রাজ্যবর্ধনের বোন রাজশ্রীর সাথে আসাম রাজ গ্রহবর্মার বিবাহ হয়েছিল) শক্তি বৃদ্ধি করে শশাঙ্ককে সরাতে চেয়েছিল কিন্তু তাকে এক চুলও নড়াতে পারেনি। বরং এই যুগ্ম বাহিনী যতবার শশাঙ্কের বিরুদ্ধে আক্রমণ করেছিল, ততবারই শশাঙ্ক তাদের খানিকটা করে তাদের রাজ্যের অংশ দখল করে নিয়েছিল। এই ভাবেই তো শশাঙ্কের রাজ্য অতোদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। শশাঙ্কের সাথে যুদ্ধে আসাম-রাজ মারা গিয়েছিল, এমনকি পরবর্তীতে রাজ্যবর্ধনও মারা পড়েছিল। হর্ষবর্ধন রাজা হয়ে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ঠিকই কিন্তু শশাঙ্কের জীবদ্দশায় তার কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারেনি, তার রাজ্যের কোনো অংশ দখলে নিতেও পারে নি।
শশাঙ্কের আগে সমগ্র বাংলা জুড়ে বৌদ্ধপ্রভাব ছিল, কিন্তু শশাঙ্ক ছিলেন একজন একনিষ্ঠ শৈব সাধক। ফলে, তার নির্দেশে সেই সময় থেকেই বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, শহরে, নগরে শিবের মন্দির গড়ে ওঠেছিল- সর্বত্র শিব পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল। রাজভক্ত প্রজারা তা মেনেও নিয়েছিল। শশাঙ্ক নিজেও বহু বৌদ্ধমঠ বা monestry ভেঙে দিয়ে শিব মন্দির তৈরি করে দিয়েছিল। কোনো কোনো ঐতিহাসিক অবশ্য _এমন বলেছে যে, এই পাপেই শশাঙ্কের অকাল মৃত্যু ঘটেছিল। এখনো রাঢ়বঙ্গের গ্রামেগঞ্জে বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় নানান নামে (ধর্মরাজ, বুড়োরাজ, ইত্যাদি) ধর্মঠাকুরের পুজো হয়। এগুলি পূর্বে বৌদ্ধদের অনুষ্ঠান ছিল। এইসব অনুষ্ঠানে এখনো মস্তক-মুণ্ডন, গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করা, গৈরিক পোশাক(কাষায়ের এর বিকল্প) পড়া- ইত্যাদি আচার পালন করা হয়, যেগুলি বৌদ্ধদের আচারের সঙ্গে একান্ত ভাবে সাদৃশ্য যুক্ত! বর্তমানে ধর্মরাজ, বুড়োরাজ, বুড়োশিব, কালুরায়, খেলারাম ইত্যাদি নানান নামে পুজো হোলেও মূলত এগুলি শিব পূজা বলেই মান্যতা পায়। কিন্তু শশাঙ্কের পূর্বে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বুদ্ধ পূর্ণিমায় ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে পূজা পাঠ হোতো !
বঙ্গদেশে বৌদ্ধ প্লাবনের সময় তৎকালীন সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষেরা বা অন্তজ শ্রেণীর মানুষেরা দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল। কারণ ভগবান বুদ্ধ সবাইকে পূজা পাঠের, ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছিলেন, যেখানে তৎকালীন সমাজে কঠোর এবং কঠিন ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং যার ফলে নিম্নশ্রেণীর মানুষের জীবন ছিল নিয়মের নিগড়ে এবং কঠিন অনুশাসনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা ! সেইসময় ব্রাহ্মণদের সৃষ্ট জাতিভেদ প্রথার কড়া অনুশাসন এবং অত্যাচারে নিম্নশ্রেণীর লোকেরা অকারণে খুবই অবহেলিত এবং অত্যাচারিত হোতো। এইরকম এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ভগবান বুদ্ধ শরীর ধারণ করলেন এবং তিনি তৎকালীন ক্ষয়ে যাওয়া সমাজের কল্যাণকল্পে প্রথমেই ‘বৈদিক নিয়ম’- বলে চালানো অনেক কুপ্রথাকে অস্বীকার করলেন। তারপর তিনি যে অসাধারণ কাজটি করলেন_তাহোলো তিনি নিম্নবর্ণের-উচ্চবর্ণের ভেদাভেদ তুলে দিয়ে সকলকে ধর্মাচরণের অধিকার দিলেন। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকেদেরকে তিনি সম্মান দিয়েছিলেন, তখনকার দিনে এটা ছিল একটা বিরাট বিপ্লব !
তৎকালীন বহু রাজা বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল বলেই_ উনি সমাজপতিদেরকে উপেক্ষা করে সমাজে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। যাইহোক, নিম্নশ্রেণীর মানুষেরাও বুদ্ধকে ভালোবেসে_ বৌদ্ধধর্মকে আপন করে নিয়েছিল ! বুদ্ধপূর্ণিমায় বা তার পরের পূর্ণিমায় এখনো রাঢ়বঙ্গে বিভিন্ন নামে ধর্মঠাকুরের[বুদ্ধের ‘ধম্মং( ধর্মং) শরণং গচ্ছামি’ মন্ত্র থেকেই ধর্মঠাকুর] পূজা হয় ! সেখানে দেখা যায় যে, ডোম, বাগদি, হাড়ি, মুচি ইত্যাদি সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই ঐসব পূজার মূল পূজারী বা “দেয়াসী”-র ভূমিকা পালন করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসব বর্গের মানুষেরাই ধর্মরাজ পূজার “সন্ন্যাসী” বা ভক্ত হয়ে, অনুষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ম পালন করে।
তবে জানো তো_ ভারতীয় সমাজে (বিশেষতঃ বাংলায়)__ ডোম, বাগ্দী ইত্যাদি সম্প্রদায়ের লোকেরা পূর্বে ক্ষত্রিয়ের মর্যাদা পেতো ! এরা তৎকালীন রাজাদের সেনাবাহিনীতে চাকরি করতো। এখনও গ্রামে-গঞ্জে লাঠিখেলা, শারীরিক কসরত, রায়বেশে নৃত্য__ইত্যাদির প্রদর্শন এরাই করে থাকে ! এইসব দেখেই বোঝা যায় যে, একসময় এদের পূর্বপুরুষেরা যুদ্ধবিগ্রহ কোরতো, অর্থাৎ এরা ক্ষত্রিয় সৈনিক ছিল ! যার কিছু কিছু character, এরা বংশানুক্রমিকভাবে আজও বহন করে আসছে। তাহলে, বর্তমানে এরা অন্তজ শ্রেনীতে পরিণত হোলো কি করে ? আসলে এরা যে সময়ে, যে রাজার সৈনিক ছিল, কোনো যুদ্ধে সেই রাজার পরাজয় ঘটেছিল এবং অন্য কোনো রাজবংশ বাংলার সিংহাসনে বসেছিল । সেই সময় পরাজিত রাজার সৈন্যরা হয় মারা পড়েছিলো অথবা যুদ্ধবন্দী হয়েছিল। ফলে এদের স্ত্রী-পুত্ররা অসহায় হয়ে পড়েছিল। অনেকক্ষেত্রেই অসহায় স্ত্রী-রা নতুন রাজার সৈন্যদের দখলীভূত হয়ে গিয়েছিল ! এই ব্যাপারটার জন্যই তৎকালীন সমাজ এদেরকে হীন চোখে দেখতে শুরু করেছিল। ফলে, নতুন রাজার রাজত্বে এই সব সম্প্রদায়ের মানুষেরা ব্রাত্য হয়ে পড়েছিল। এই ভাবেই ভারতীয় সমাজে এক এক রাজবংশের উত্থানে পরাজিত রাজার ক্ষত্রিয় সৈন্যদের পরিবারের লোকেরা নিম্নবর্গের বিভিন্ন জাতিতে পরিণত হয়েছিল।
এইজন্যই বলা হয়__জাতিভেদ কোনো প্রাচীন প্রথাও নয়, এটা ঈশ্বরের সৃষ্টিও নয় __এগুলো সবই মানুষের সৃষ্টি ! পৃথিবীর সব দেশেই এক এক সময়ে, সমাজের বিবর্তনে এইসব কুপ্রথার উদ্ভব হয়_আবার কালের নিয়মে তার অবসানও হয়ে থাকে।৷