[জিজ্ঞাসু:—আমরা অনেক সময় শুনতে পাই যে, সমাজে এমন অনেক সাধু-সন্ন্যাসী রয়েছে_ যাদের মধ্যে অনেকেরই নানারকম সিদ্ধাই রয়েছে ! তারা বিশেষ ক্ষমতাবান সাধু ! কিছু কিছু সাধু-সন্তের এরকম ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা রহস্যটা কি ?_এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন গুরু মহারাজ। আজ তার পরবর্ত্তী অংশ।] ……..জানো, এইধরনের সোসাইটির(জার্মানির মহাকারী সোসাইটি) সদস্য হওয়ার আগে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ! যে কেউ চাইলেই যে এই সব দলের সদস্য হয়ে যেতে পারবে, তা নয় ! এইধরনের সোসাইটির member হোতে গেলে, তাকে প্রথমেই তার পূর্ব পূর্ব সংস্কার অর্থাৎ জন্মগতভাবে পাওয়া সমস্ত সংস্কার ভুলে যেতে হবে ! এই সংস্কার ভোলা বা সংস্কারের গলাটিপে হত্যা করার ব্যাপারটা বড় সহজ কথা নয় ! এইরূপ কঠিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হোতে হয় ওখানে ! আর সে পরীক্ষা যে কি পরীক্ষা সেসব কথা শুনলে হয়তো তোমরা শিউরে উঠবে ! যে কোনো রকম খাবার_ তা সে যতই নিষিদ্ধ বা কদর্য হোক না কেন, সেই খাবার বিনা দ্বিধায় খেয়ে নিতে হবে ! যে কারো সঙ্গে sex করতে হবে তা সে মা-মাসি-বোন-দিদি যেই হোক না কেন ! কোনো ব্যাপারেই কোনো প্রকারের বাছবিচার করা চলবে না ! ওদের ধারণা বা বিশ্বাস_ এই ধরনের ক্রিয়াকাণ্ড করলে, তবেই সমস্ত রকমের সংস্কারমুক্ত হওয়া যাবে এবং সংস্কারমুক্ত হোতে পারলে তবেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারা যাবে।
ঐ সমস্ত সংস্থার পদ্ধতিগুলো হয়তো ভারতীয় তন্ত্রক্রিয়ার চাইতে পৃথক, কিন্তু সংস্কারমুক্ত হ‌ওয়াটা সব সাধনাতেই জরুরী ! সংস্কারমুক্ত হোতে পারলে কি হয় জানো, এর ফলে মনের জোর বাড়ে অর্থাৎ মন সবল এবং সুদৃঢ় হয় ! এটা ঠিকই যে, শতসহস্র নিষেধের বাঁধনে আটকে পড়ে, মানুষের মন সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে যায় ! আর সংকীর্ণ মন নিয়ে কি সাধনায় সিদ্ধ হ‌ওয়া যায়কখনোই যায় না ! ওই সব সোসাইটির সদস্যরা কিন্তু আর যাই হোক না কেন –এইসব সংস্কার থেকে মুক্ত ! এমনটা হোতে পারে বলেই কঠোর সাধনার জন্য ওদের মন সদা প্রস্তুত হয়ে থাকে ! তারপর এই ধরনের negative আচার এবং শয়তানের পূজা করতে করতে ওদের মধ্যে যারা একনিষ্ঠ, সত্যি সত্যিই তাদের বছর চারেকের মধ্যেই এক একটা সিদ্ধাই করায়ত্ত হয়ে যায় !
অ্যাডলফ্ হিটলার এই সাধনায় সম্মোহনবিদ্যা করায়ত্ত করেছিল ! সম্মোহন আবার দুই রকমের হয় self-hypnosis এবং mass-hypnosis ! হিটলার mass-hypnosis আয়ত্ত করেছিল ! এই জন্য হিটলার যখনই জনগণের সামনে বক্তৃতা দিতো, তখন দুই হাত নেড়ে নেড়ে এমন সব বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিমা করতো যে, উপস্থিত জনগণ ঐ ক্রিয়ার ফলে সম্মোহিত হয়ে যেতো এবং হিটলার যা বলতো তারা সবাই তার কথা মাথা নিচু করে পালন করতো !
গুপ্তযুগে অর্থাৎ যে সময়ে ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা উন্নতি হয়েছিল বলে_ আধুনিক ইতিহাসকারেরা বর্ণনা করেছে এবং যাকে “সুবর্ণ যুগ”-ও বলা হয়(সমুদ্রগুপ্ত,চন্দ্রগুপ্ত ইত্যাদি রাজাদের আমলে), সেই সময়ে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বা বিক্রমাদিত্য এইরকমই তন্ত্রক্রিয়া করে “তাল-বেতাল” সিদ্ধ হয়েছিলেন বলে কথিত আছে ! এই সিদ্ধি অর্জন করেই চন্দ্রগুপ্ত সমস্ত যুদ্ধে জয় লাভ করতেন এবং প্রজাহিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইচ্ছামতো ধনরত্ন ব্যয় করতে পারতেন ! আসলে ব্যাপারটা হোচ্ছে এই সিদ্ধি থাকলে সংকল্প মাত্র‌ই ধনরত্ন লাভ করা যায় এবং সিদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধে সব সময় বিজয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
‘পিশাচসিদ্ধি’ ব্যাপারটাও খানিকটা এইরকমই ! সাধারণ যোগীরা যেমন গায়ে চন্দন মাখে বা বিভিন্ন সুগন্ধি মাখে_ পিশাচ সাধনারত সাধকেরা গায়ে বিষ্ঠা মাখে বা দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস মাখে ! তাছাড়া এরা পায়খানা করে শৌচ করেনা, পচাগলা মৃতদেহের(মানুষ সহ যে কোনো জীব) মাংস খায়, ফলে এই সবের একটা দুর্গন্ধ সব সময় এদের দেহে থেকেই যায় ! তাছাড়া এইসব হোলো উৎকট সাধন প্রণালী ! কোনো বিশেষ পাখির মাথা, কোন বিশেষ পশুর হাড় বা নখ ইত্যাদি নানা ধরনের উপাচার হিসাবে জোগাড় করতে হয় এবং ওদের বিশ্বাসতাতেই ওদের পিশাচ দেবতা প্রসন্ন হয় ! স্বামী বিবেকানন্দ প্রথমবার আমেরিকা যাবার আগে তখন দক্ষিণভারতে ছিলেন । হঠাৎ করে উনি ওনার গর্ভধারিণী জননী ভুবনেশ্বরী দেবীর অসুস্থতার খবর পেয়েছিলেন কিন্তু সেই মুহূর্তে ওনার কলকাতা ফিরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না ! অথচ আমেরিকা যাবার পূর্বে মায়ের শরীরের খবর জানাটা খুব জরুরিও ছিল ! তাই উনি সেইসময় খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ! সেই সময় ওনার দক্ষিণভারতের প্রধান সহযোগী আলাসিঙ্গা পেরুমল স্বামীজীকে একজন পিশাচসিদ্ধের সন্ধান দিয়েছিলেন, যিনি তার সিদ্ধি প্রয়োগ করে দূরবর্তী স্থানের খবর নিতে পারতেন, অর্থাৎ তাঁর দূরগমন, দূরশ্রবণ ইত্যাদির ব্যাপারে সিদ্ধাই ছিল।
এই খবর পাওয়ার পর স্বামীজী, পেরুমলকে সঙ্গে নিয়ে সেই পিশাচসিদ্ধের আশ্রমে গিয়েছিলেন ! কিন্তু স্বামীজী ঐ লোকটির কুটিরের কাছাকাছি যেতেই তার একজন সাগরেদ দৌড়ে এসে স্বামীজীকে বলেছিল –“আপনি কি স্বামী বিবেকানন্দ ? আপনি বাংলা থেকে এসেছেন ? আপনি কি আপনার মায়ের শরীরের খবর জানতে চাইছেন ? আমাদের গুরুদেব বলে পাঠালেন আপনার ভিতরে যাবার প্রয়োজন নাই, আপনি এখানেই একটু অপেক্ষা করুন আমাদের গুরুদেব এক্ষুনি আপনার মায়ের খবর জানিয়ে দেবেন!” ওই লোকটির মুখ থেকে এই ধরনের কথা শুনে স্বামীজী সত্যি সত্যি বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন ! লোকটির তো বেশ ক্ষমতা ! ঘরে বসেই স্বামীজীর মনের কথা জানতে পেরে গেল ? তাহলে তো ঐ লোকটাকে একবার চাক্ষুষ করতেই হয় ! স্বামীজী এইসব ভেবে যেই সামনের দিকে দু-এক পা বাড়াতে যাচ্ছেন এমন সময়, ওই সিদ্ধ সাধকের আর একজন চ্যালা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে স্বামীজীকে বললো“আমাদের গুরুদেব বলে দিলেন যে, স্বামীজীর মা এখন ভালো আছেন, চিন্তার কোনো কারণ নেই ! আর গুরুদেবের সঙ্গে তাদের দেখা করার‌ও কোনো প্রয়োজন নেই ! তাঁরা এবার চলে যেতে পারেন!” কেন ওরা বারবার ওনাকে ভিতরে যেতে নিষেধ করছিল, স্বামীজী তার কারণটা ভালোমতোই বুঝতে পারলেন ! কারণটা ছিল_ যেহেতু ওই লোকটি negative সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে, ফলে কোনো positive মানুষ বা আধ্যাত্মিক মানুষ, তার সংস্পর্শে এলে ঐ ব্যক্তির শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল ! এই জন্যই ঐ লোকটি স্বামীজীর কাছাকাছি আসতে চাইছিল না। …. (ক্রমশঃ)