জিজ্ঞাসু :– গুরুজী ! আমরা কিছুদিন আগে হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে এলাম, ওখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভোলার নয়! কিন্তু গুরুমহারাজ__ পাহাড়ি লোকজনদের সাথে মিশে দেখলাম ওরা কত সহজ-সরল !!
গুরুমহারাজ :– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো ! একশভাগ না হোলেও বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তোমার কথা ঠিক ! কোনো কোনো সময় সমাজের সভ্য মানুষের দ্বারা বঞ্চনার শিকার হয়ে, অভাবের জন্য অথবা কোনো ব্যক্তি বা দলের influence-এ ওরা হিংস্র হয়ে পড়ে, হাতে অস্ত্র তুলে নেয় ! কিন্তু এমনিতে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের মানসিকতা এখনও তোমাদের so called সভ্যদের চাইতে অনেক বেশি কলুষমুক্ত !
জানো – এখনও পর্যন্ত কোনো হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাহাড়ি জনজাতির মধ্যে syphilis রোগ নাই (যারা কাজের খোঁজে শহরে চলে এসেছে তাদের কথা বলা হোচ্ছে না)! এইসব জনজাতির মধ্যে যে মানবিক গুণগুলি এখনো প্রবলভাবে বিদ্যমান, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোলো – বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বিপন্ন ও শরণাগতকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করা।
আদিম মানবসমাজের যে দুটি প্রধান গোষ্ঠী ছিল – সেই দুটি হোলো কৃষিজীবী গোষ্ঠী ও পশুপালক গোষ্ঠী। এই পাহাড়ী জনজাতিরা পশুপালক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। ফলে, এরা বহুকাল ধরে তথাকথিত সভ্য মানবসমাজ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রেখে – নিজেদের মতো করে জীবন কাটিয়ে এসেছে। তবে এখন পৃথিবীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির যুগ চলছে, ফলে রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে পাহাড়ি মানুষেরাও জীবিকার সন্ধানে শহরে যাচ্ছে । আবার সমাজের শিক্ষিত মানুষেরাও পর্যটক হিসাবে বা নানান উন্নয়নমূলক কাজ করতে – ঐ সব অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। এর ফলে একটা পারস্পরিক মেলামেশা এবং তার সাথে ভাবের আদান-প্রদান, সংস্কৃতির আদান-প্রদান ইত্যাদি হোচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এসে, ওদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া শিখছে, নানান কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হোচ্ছে, হাতের কাজ বা handicraft-এর কাজ শিখে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হোচ্ছে।
এইভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ভারতীয় আদিবাসী সমাজের এবং পাহাড়ের জনজাতিদের মধ্যে অনেকেই ধীরে ধীরে উন্নত হবে– শিক্ষিত হবে– অর্থবান হবে ! কিন্তু হারাবে ওদের প্রকৃতির কোলে লালিত হবার ফলে সহজাতভাবে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সহজতা-সরলতা ! ধীরে ধীরে ওরাও আজকের so called সভ্যদের মতোই কলুষযুক্ত হবে ! অবশ্য, মা জগদম্বার জগতে এইরকমটাই হয়ে চলে ! কারণ এটাই যে মায়ের জগতের লীলা বৈচিত্র্য।৷