[ আগের দিনের জিজ্ঞাসার continuation হিসাবে এই জিজ্ঞাসাটি এসেছে।]
জিজ্ঞাসু :– যেমন গঙ্গোত্রী-গোমুখের pure গঙ্গাজল সমভূমিতে এসে কলুষিত হয় – ঠিক তেমনি ?
গুরুমহারাজ :– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছো ! ঐরকমটাই হয় ! কিন্তু জানােতো সমভূমির গঙ্গা বা যে কোনো নদী যতোই কলুষিত হোক না কেন – সাগরের মিশলে আর কোনো কলুষতা থাকে না। সাগরে মেশার পর তুমি তখন আর ড্রেনের জল এবং কারখানার নোংরা জল আলাদা করতে পারবে না ৷ একজন সুফি সাধক ছিলেন “রুমি”, তিনি তাঁর গানে লিখেছেন – ” আমি গাছের পাতায় আটকে পড়া একটা শিশিরবিন্দু ! আমার কখনোই সাধ্য হবে না সরাসরি সাগরে পড়ার ! কিন্তু হে মহান ! তোমার করুণায় কোনো স্রোতস্বিনীতে যদি আমি ঝরে পড়তে পারি – তাহলে সেই আমাকে সাগরে পৌঁছে দেবে।” এখানে রূপকটা হোলো – প্রতিটি জীব যেন ঐরূপ গাছের পাতায় আটকে থাকা বারিবিন্দুর ন্যায়! যা রৗেদ্রের তাপে অল্প সময়েই শুকিয়ে যেতে পারে, আবার মাটিতে ঝরে পড়লে মাটি-ই তাকে শুষে নিতে পারে, অর্থাৎ এই জগৎ-সংসারের মোহ-আবর্তে মানুষ কামনা-বাসনার আগুনে বা তাপে আপন সত্তাকে ভুলে থাকছে_ আপন অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সে-ই যখন স্রোতস্বিনীরূপ সদ্গুরুর আশ্রয়ে এসে পৌঁছাচ্ছে – তখন তিনি অর্থাৎ লোকোত্তর পরম্পরার সেই গুরু, জীবকে সাথে করে পরমাত্মারূপ মহাসাগরে পৌঁছে দেন।
সুতরাং ওই যে তুমি বলছিলে – পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষজনেরা সহজ-সরল, কিন্তু ওরা যখন তোমাদের নগর সভ্যতার সাথে পরিচিত হবে, জন্ম-জন্মান্তরের বিবর্তনে so-called এই সভ্য সমাজে শরীর নেবে – তখন ওই সহজ-সরল মনগুলির মধ্যেও নানাবিধ কলুষ এসে দানা বাঁধবে !
এই জগৎ-সংসার এইরকম ভাবেই চলছে_ বাবা। কিন্তু মানব যে অবস্থাতেই থাক না কেন, যখনই তার মধ্যে কামনা-বাসনার হাত থেকে মুক্তির জন্য ব্যাকুলতা জাগ্রত হয়_ তখনই সদ্গুরু এসে তার হাত ধরেন। আর তাকে(সাধককে) পিছু ফিরে তাকাতে হয় না । এরপর শুধুই চরৈবেতি – চরৈবেতি – চরৈবেতি ! শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে চলা !
দ্যাখো, দুটো উপায়ে এই অগ্রগতি হয়_ একটা নিষ্ঠাভরে সাধন, এবং অন্যটা হোলো সদগুরুর কৃপা লাভ(তাঁর সেবার দ্বারা বা অন্য কোনো উপায়ে)! আর এই দুই উপায়েই অধ্যাত্মজীবন সমৃদ্ধ হয় এবং মানবজীবনের উদ্দেশ্য সফল হয় । এর প্রকৃত অর্থ হোলো_ সচ্চিদানন্দ ব্রহ্ম থেকে উৎপন্ন জীব পুনরায় সচ্চিদানন্দ সাগরেই মিশে যায়, আর তখনই বোধ হয় যেএই জীবনের যাত্রাপথটি দুঃখপূর্ণ, জ্বালা-যন্ত্রণায় ভরা নয়_তখন মনে হয় জীবন যেন আনন্দময়, আনন্দে এবং শান্তিতে পূর্ণ।৷