….. সত্যি সত্যিই এটা ভাবার বিষয় যে, একজন মানুষ হিসাবে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দীর্ঘদিন কোলকাতায় বসবাস করা সত্ত্বেও কামারপুকুর অঞ্চলের ভাষাটা পর্যন্ত পরিত্যাগ করলেন না ! তার উপর তথাকথিত স্কুল-কলেজের বিদ্যাশিক্ষা তো তার কিছুই ছিল না ! এসব সত্ত্বেও রামকেষ্ট-রূপী অশিক্ষিত, কালিমন্দিরের পূজারী, ভদ্রলোকেদের ভাষায় uncultured গাঁইয়া একটা লোক __কিন্তু ঐ মানুষটাই তৎকালীন কলকাতার সভ্য সমাজের বাঘা বাঘা চাঁইগুলোকে নিজের চ্যালা বানিয়ে ফেললো ! দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের সংগঠন( রাজা রামমোহন ব্রাহ্মধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ঠিকই, কিন্তু এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ঠাকুর পরিবার) একেবারে ভেঙে চুরমার করে দিলো ওই কৈবর্ত বাড়ির পুরোহিত, লালপেড়ে সাতহাত কাপড় পরা একটা গেঁয়ো বামুন ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কখনোই কোনোরকম কলকেতিয়া প্রভাবে নিজেকে প্রভাবান্বিত করলেন না ! তৎকালীন যুগে কলকাতার বাবুদের বিরুদ্ধে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের এটা যেন একটা বিরাট প্রতিবাদ !! আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবলে সত্যি সত্যি যেকোনো মানুষকে অবাক হোতেই হবে!!
এছাড়াও দ্যাখো__ শিবনাথ শাস্ত্রী তখনকার সময়ের কত বড়ো লোক ! পন্ডিত, বিদ্বান, ব্রাহ্মসমাজের মাথা_ খ্যাতনামা মানুষ ! কিন্তু সেও তো ঠাকুরকে অনেকবার দেখেছিল। তবু, ও একদিন ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালকে বলেছিল_ ” ‘মা’- ‘মা’ করে শ্রীরামকৃষ্ণের মাথা খারাপ হয়ে গেছে!” ত্রৈলোক্য এই কথা ঠাকুরকে বলেছিলেন। কিছুদিন পর ঠাকুর একদিন ব্রাহ্মসমাজে গেছেন সেই সময় শিবনাথ শাস্ত্রী সেখানে এসে হাজির। ঠাকুর ধরলেন শিবনাথকে, বললেন_” হ্যাঁ গা শিবনাথ ! তুমি ত্রৈলোক্যকে আমার সম্বন্ধে কি সব কথা বলেছো ? তা বাপু_ তোমাদের জমিজমা, বিষয়-আশয়, মাগ-ছেলের চিন্তা করে মাথা খারাপ হোলো না আর আমার ঈশ্বর( মা ভবতারিণী)-চিন্তা করতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে গেল ? লেখাপড়া শিখে এই বুদ্ধি হয়েছে তোমাদের ?”
এই কথায় শিবনাথ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঠাকুরের পায়ের ধুলো নিয়েছিল এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল।
এইরকম কতই উদাহরণ দেওয়া যায় ! তাই বলছিলাম__ ঈশ্বর মানা বা না মানায় কিছু যায় আসে না, তাঁকে জানাটাই বড় কথা ! বোধটাই বড় কথা! সালোক্য, সামীপ্য, সারূপ্য,সাযুজ্য,সার্ষ্ঠি_এই হোলো ক্রম।। সম্পূর্ণতা লাভ করতে গেলে সাধককে এই ক্রমে-ই এগিয়ে যেতে হবে শুধু সালোক্য বা সামীপ্যে থেমে থাকলে হবে না__ সামনের দিকে এগিয়ে যাও ! এগিয়ে চলো_ আরো এগিয়ে চলো! চরৈবেতি- চরৈবেতি-চরৈবেতি !! এগিয়ে চলো_ অভীষ্ট লাভ না হওয়া পর্যন্ত থেমো না ! তাঁকে লাভ করাই অভীষ্ট লাভ !
তাঁকে জানো_ তবেই তো তুমি সিদ্ধ হবে ! অন্যথায় সাধকের সিদ্ধাই প্রাপ্তি ঘটতে পারে, শক্তিলাভ হোতে পারে __কিন্তু অদ্বৈত তত্ত্বের বোধ হবে না। জ্ঞানের চরম ভূমিতে প্রবেশাধিকার ঘটবে না ৷৷