জিজ্ঞাসু:— আচ্ছা গুরুজী, আপনি একটু আগে ‘taste of birth’ সম্বন্ধে অনেক কিছু বললেন । এবার যদি অনুগ্রহ করে ‘taste of death’– সম্বন্ধে কিছু বলেন_ তাহলে আমরা শুনে কৃতার্থ হই !!

গুরু মহারাজ:– এটা ঠিকই বলেছো__ মানবজীবনে birth বা death _এগুলো তো taste-ই ! জন্মগ্রহনের যেমন taste রয়েছে, মৃত্যুবরণেরও তেমনি একটা taste রয়েছে এবং বলা যায় মৃত্যুর taste বেশ মজার ! আমার বিভিন্ন জন্মের শরীরের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং আমি প্রতিটি শরীরের মৃত্যুর taste ভিন্ন ভিন্ন রূপে enjoy করেছি !

দ্যাখো, প্রতিটি জীবের মতন মানুষেরও মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী । তবুও সাধারণভাবে দেখা যায় মানুষসহ সমস্ত জীব‌ই মৃত্যুকে ভয় পায়। মানুষ মৃত্যুকে ভয় পায় বলেই সমগ্র জীবনকাল ধরে মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। আবার যে মানুষের মৃত্যুর ভয় নাই, তার আনন্দের ঘাটতি হয় না !
যাই হোক, পূর্ণ জীবনকাল কাটানোর পর সাধারণ মানুষের মৃত্যু(natural death) কিভাবে হয় এবং কিভাবে পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং পঞ্চ-তন্মাত্রার ক্রিয়াশীলতা ধীরে ধীরে চলে যায়__ তা বলছি শোনো !

পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় হোলো বাক্- পাণি- পদ- উপস্থ ও পায়ু। এদের সাথে সম্পর্কযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি হোলো যথাক্রমে কর্ণ, চক্ষু, ত্বক, জিহ্বা ও নাসিকা। এইগুলির সাথে পঞ্চ তন্মাত্রা(রূপ,রস,শব্দ,গন্ধ ও স্পর্শ)-র সম্পর্ক করলে হবে বাক> কর্ণ> শব্দ ||পানি> চক্ষু> রূপ || পদ> ত্বক> স্পর্শ || উপস্থ> জিহ্বা> রস || পায়ু> নাসিকা> গন্ধ || মানুষের মৃত্যুর ঠিক পূর্বে শরীরের kinetic energy বা functional energy-র উৎপাদন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে ঐ শরীরটির শারীরবৃত্তীয় কাজগুলিও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হোতে থাকে। এই অবস্থাতেও শরীরকে বাঁচিয়ে রাখে শরীরের potential energy । kinetic energy বা functional energy শরীরে সৃষ্টি হয় খাদ্য থেকে, অর্থাৎ খাদ্য পাচিত হয়ে যে পুষ্টি রস তৈরি হয়_ সেখান থেকে । মৃত্যুর পূর্বে মানুষের খাদ্য গ্রহণ বা খাদ্যের পাচন এবং পুষ্টি__ইত্যাদি বিষয়গুলি বন্ধ হয়ে যেতে থাকে_ তাই ঐ শক্তির supply ও বন্ধ হয়ে যায় । ফলে, তারপরেও শরীরটা যে বেঁচে থাকে_তার জন্য দায়ী ঐ যে বলা হোলো মস্তিস্কস্থিত potential energy ! Kinetic energy-র ক্রিয়াশীলতা নিম্ন থেকে উর্ধ্বে এবং potential energy-র ক্রীয়াশীলতা pinial থেকে perimium পর্যন্ত অর্থাৎ উর্দ্ধ থেকে নিম্নমুখে।

মরণ উন্মুখ মানুষটির potential energy-র এই প্রবাহ‌ও যখন কমে আসে বা এই শক্তির প্রবাহের গতি ধীর হয়ে যায়_ তখন তা আর perinium পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা । তখন চলে pinial to gonad ! ধীরে ধীরে এই শক্তির প্রবাহ আর gonad পর্যন্ত পৌঁছায় না, তখন শক্তি প্রবাহ হয় pinial to adreanal ! এইভাবে শক্তির প্রবাহ যতই কমতে থাকে মরণোন্মুখ ওই ব্যক্তির কাছে উপস্থিত লোকজন বলতে থাকে_ ‘লোকটি এখন মরণের দোরগোড়ায় চলে এসেছে!’ নাড়ীজ্ঞান সম্পন্ন উত্তম বৈদ্য সেখানে উপস্থিত থাকলে সে নাড়ী টিপে ধরে অনেক আগেই বুঝতে পারে যে, রোগীর আয়ু আর কতক্ষণ !
সে যাই হোক, বুঝতেই পারছো যে_ মৃত্যুর ঠিক পূর্বে কোনো মানুষের ‘চেতনা’ প্রথম লুপ্ত হয় পায়ুতে । কারণ তখন মস্তিস্ক থেকে উৎপন্ন শক্তিপ্রবাহ perimium পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা, তাই ওই অঞ্চলের কোষগুলির মৃত্যু হোতে শুরু করে । অতোদূর পর্যন্ত শক্তির প্রবাহ চালু রাখতে পারেনা বলেই পায়ূ তার ক্রিয়াশীলতা হারায় এবং সঙ্গে সঙ্গেই এই কর্মেন্দ্রিয়ের সঙ্গে যে জ্ঞানেন্দ্রিয় সম্পর্কযুক্ত অর্থাৎ নাসিকা__ সেও ক্রীয়াশীলতা হারায়। এর ফলে গন্ধ তন্মাত্রার আর কোনো বোধ ওই ব্যক্তির থাকে না ।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়__ ওই শরীরে উপস্থ বা লিঙ্গ তার ক্রীয়াশীলতা হারায়, ফলে মরণোন্মুখ ব্যক্তির উপস্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রিয় জিহ্বা অবশ হয়ে যায় ‌। তখন ঐ মানুষটি আর কথা বলতে পারেনা, কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু কথা জড়িয়ে জড়িয়ে যায় । আর এর সঙ্গে সঙ্গেই জিহ্বার স্বাদ গ্রহণ ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ রস তন্মাত্রার বোধ হারিয়ে যায়।……… [ক্রমশঃ]