জিজ্ঞাসু :– দক্ষিণ ভারতের মানুষের নাম অনেক বড় বড় – তুলনায় আমাদের এখানে ছোটো ছোটো নাম – ওটা কি দ্রাবিড় culture-এর একটা অঙ্গ?
গুরুমহারাজ :– সাধারণতঃ ‘নাম’ এবং ‘উপাধি’ এগুলো তো কোনো একজন ব্যক্তির একটা পারিবারিক পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয় !! সামাজিক, রাজনৈতিক,ধর্মনৈতিক নেতৃবর্গের পরিচয়ের জন্য অন্যান্য নানা উপাধি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দ্যাখো, ভারতীয় শাস্ত্রাদিতে যে কোনো কিছুকে বোঝাতে দুটো শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে ‘নাম’ এবং ‘রূপ’! যেকোনো রূপের-ই নাম রয়েছে, আবার কোনো ‘নাম’-কে স্মরণ করলে ঐ ব্যক্তি, বস্তু বা যে কোনো কিছুর রূপটি স্মরণ হয়(নিরাকার সাধন-মার্গীদের দর্শন স্বতন্ত্র)। এইজন্য বৈষ্ণবশাস্ত্রে নাম-জপ সাধনকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে _ ‘নাম-নামী’ অভেদ জ্ঞানে নাম-জপ করার কথা বলা হয়েছে ! তবে, তুমি এটা ঠিকই বলেছো যে, দক্ষিণভারতে বেশিরভাগ রাজ্যেই বেশিরভাগ ব্যক্তির নাম অনেকটাই বড় ! যেমন P.V.Narasimma Rao, A.P.J.Abdul Kalam ! ওখানকার culture-এ রয়েছে যে, এই একটা নাম দিয়েই ঐ ব্যক্তির নাম, তার বাবার নাম, জন্মস্থানের বা গ্রামের নাম ইত্যাদি অনেককিছু বোঝানো হয়। তবে, আমার তো এই ব্যাপারটা ভালোই লাগে! আমাদেরও যেটা title বা পদবী সেটাও পিতৃপরিচয় সংক্রান্ত-ই ! ওটা দিয়েই ‘গোত্রপিতা’র নাম বোঝানো হয় ! যেমন ধরো, তোমাদের ব্যানার্জি title – এটা দিয়ে বোঝানো হোচ্ছে যে তোমরা শান্ডিল্য ঋষির বংশধর ! তেমনি কেউ কশ্যপ মুনির বংশধর, কেউ ভরদ্বাজ বা মদগুল্য ঋষির বংশধর – ব্যাপারটা বুঝতে পারলে ? সুতরাং কোনো একটা নামের মধ্যে দিয়ে যদি তার সমস্ত পরিচয়টা বুঝিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তো ভালোই হবেআলাদা করে আর ঠিকানা লিখতে হবে না! তবে শুধু দক্ষিনে নয় উত্তরভারতেও কোনো কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে তার জন্মভূমি বা ঐ অঞ্চলের নামটি জুড়ে দেবার বেশ ভালোই প্রবণতা রয়েছে ! আমার সন্ন্যাস(১৯৮০) নেওয়ার পরে প্রায় এক বছরের মতো সময়কাল ধরে আমি হরিদ্বার, ঋষিকেশ, উত্তরকাশী ইত্যাদি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে কাটিয়েছিলাম (ঐ সময় উনি ঋষিকেশের কৈলাস আশ্রমে বা ঐ আশ্রমের অন্যান্য শাখাতেই বেশি থাকতেন)। ঋষিকেশে থাকার সময় দেখতাম, আমাকে ওখানকার ভান্ডারী মহারাজ বলতেন “পরমানন্দ বর্ধমানওয়ালা”! আসলে, এইরকমটা বললে ‘ঐ বিশেষ ব্যক্তির পারিবারিক বা সামাজিক নাম’-টি তার জন্মভূমি-অঞ্চলের নামের সাথে জুড়ে বিশেষভাবে বিশেষিত হয়ে যায় – এই আর কি !
কৈলাস আশ্রমের সাধুরা আমার ঐরূপ নামকরণ করবার পিছনে যে কারণটা ছিল, সেটা বলছি শোনো ! তখন ঋষিকেশ অঞ্চলে আরও দুজন ‘পরমানন্দ’ ছিলেন “বড় পরমানন্দ” আর “ছোট পরমানন্দ” ! দুজনের-ই শরীর ছিল বিশাল আকৃতির। তবে বড় পরমানন্দ ছিলেন এতটাই স্থূলকায় যে, উনি দাঁড়ালে ওনার থলথলে বিশাল ভূঁড়িতে ওনার নিম্নাঙ্গ ঢাকা পড়ে যেতো ! ফলে উনি ‘নাঙ্গা’ কি কৌপিন পড়ে রয়েছেন – তা বোঝাই যেতো না! তবে এটা ঠিক যে, অতোটা স্থুল শরীরবিশিষ্ট ব্যক্তিকে__ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলা যায় না। এইরকম ধরনের অধিক ‘স্থুল’-দের প্রধান সমস্যা হাতে-পায়ের খাঁজে খাঁজে দাদ-হাজা ইত্যাদি নানা ধরণের ঘা হয়ে যায়। কারণ শরীরের ঐ ভাঁজ বা খাঁজগুলিতে তো কখনোই হাওয়া বাতাস লাগতে পায়না, সবসময়েই ঘামে ভিজে থাকে ! তাই ফাঙ্গাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে অমনটা হয়। সেইজন্যই বলছিলাম, ঐ ধরনের মোটা হয়ে গেলে তখন শরীর নিয়েই সমস্যা – সাধন, ভজন বা অন্যান্য কিছু আর কি করা হবে ?