জিজ্ঞাসু:—আপনার কাছেই শুনেছিলাম, মৃত্যুকালীন সময়ে মানুষ যা ভাবে তাই হয়! কিন্তু গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস মৃত্যুর আগে শেষ কথা বলেছিলেন_ ‘একটি মুরগির সম্বন্ধে’। তাহলে ঐরকম একটা মহান দার্শনিকের গতি কি হবে??
গুরু মহারাজ:—সক্রেটিসের মতো একজন মহা পন্ডিত ব্যক্তি যদি মৃত্যুকালীন সময়ে কোনো জীব বিষয়ে চিন্তা করতে করতে মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি পরবর্তী জন্মে কোনো জীব বিজ্ঞানী হয়ে জন্মাবেন। তার কারণ সক্রেতিস তৎকালীন সময়ের অন্যতম একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং মহাপন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন ! এটা ঠিক যে তিনি realised person ছিলেন না কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে ঈশ্বরের বিচার করাটাও কিছু কম কথা নয়যেটা সক্রেটিস করেছিলেন ! দ্যাখো, বুদ্ধিমানের সংখ্যা সমাজে প্রচুর রয়েছেআর দেখছো তো সেই সব মানুষেরা কিভাবে তাদের বুদ্ধির প্রয়োগ করে চলেছে ! বেশিরভাগটাই মানব কল্যাণের পরিপন্থী। তাই কোনো দার্শনিক তার বুদ্ধি দিয়ে ঈশ্বরকে সঠিকভাবে বিচার করছেতার মানে জেনে রাখবে যে তিনিও sixth dimension-এর লোক ! ভারতীয় শাস্ত্রে সপ্তলোকের কথা আছে, তার মধ্যে ব্রহ্মলোক একটি ! কিন্তু এই ব্রহ্মলোকটি কোথায় ? সেটা কি অন্য কোনো গ্রহের কথা বলা হয়েছে? তা কিন্তু নয় ! মানব চেতনারই বিভিন্ন অবস্থা এগুলি ! আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত ব্যক্তির চেতনার অবস্থা হোলো ব্রহ্মলোক। ভারতীয় শাস্ত্রে রয়েছে উর্দ্ধ সপ্তলোক এবং নিম্ন সপ্তলোকের কথা। কোনো পন্ডিত ব্যক্তি শাশ্ত্রকথা ঝর্ ঝর্ করে বলছে, বেদান্ত বিচার করছে কিন্তু জ্ঞান হয়নি এইরকম ব্যক্তিদের শাস্তি-স্বরূপ নিম্নলোকগুলির যে কোনো একটার প্রাপ্তি ঘটে। আর অপরপক্ষে সাধন ভজনের দ্বারা নিজের চেতনাকে উন্নত করতে পারলে ঊর্দ্ধ সপ্তলোকের যে কোনো একটিতে স্থিতিলাভ করতে পারে। ব্যাপারটা বুঝলে কি ? আচ্ছা– আরো পরিষ্কার করে বলছি শোনো, এই যে তোমরা সব এখানে বসে আছো_ হরি কথা শুনছো, সৎপ্রসঙ্গ শুনছোতাতে তোমাদের চেতনা কি এখন এই মুহূর্তে পার্থিব চেতনার (অর্থাৎ যে চেতনায় আমরা সব সময় থাকি_ সেই চেতনার) ঊর্ধ্বে নাই ? প্রকৃতপক্ষে, তোমরা যতক্ষণ আমার এই আলোচনার মধ্যে আছো তোমরাও ব্রহ্মলোকেই বিচরণ করছো ! জ্ঞানগঙ্গায় স্নান করছো তোমরা ব্রহ্মস্নান! যা মহা মহাসাধকদের সাধনার গভীরে, ধ্যানের গভীরে হয়ে থাকে। হয়তো এই অবস্থানটা তোমাদের স্থায়ী হোচ্ছেনা কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য হোলেও তোমরাও ওই ব্রহ্মলোকেই বিচরণ করছো ! এইবার যদি তোমরা তোমাদের এই অবস্থানকে স্থায়ী করতে চাও, তখন প্রয়োজন হয় আন্তরিক প্রচেষ্টার অর্থাৎ নিবিড় সাধনার ! তাহলেই ধীরে ধীরে তোমরাও স্থায়ীভাবে ঐ লোকে(ব্রহ্মলোকে) বসবাস করতে পারবে ! হয়তো একদিনে হবে না কিন্তু ধীরে ধীরে হবে। তুলসীদাসের কথায় আছে’তেরি বনত বনত বনি যাই’ !!
‘এ জীবনে আমার কিছুই হোলো না’__ বলে হতাশ হবার কিছুই নাই ! কিছু করলেই কিছু পাওয়া যায়। সুতরাং চেষ্টার ত্রুটি করোনা, প্রচেষ্টায় বিমুখ হয়ো না ! লেগে থাকো ! দেখবে, একদিন না একদিন ঠিকই প্রাপ্য বস্তুর সন্ধান তুমি পেয়ে গেছো ৷৷