জিজ্ঞাসু:—সূক্ষ্ম শরীর এবং কারণ শরীর কি দেখা সম্ভব হয় ?
গুরু মহারাজ:–কোনো ব্যক্তি যদি চেতনায় স্থুল-সুক্ষ এবং কারণ এই ত্রিঅভিমানিক শরীরকে অতিক্রম করতে পারেন, তখন তাঁর কাছে সূক্ষ্ম শরীর বা কারণ শরীর দেখা আর এমন কি ব্যাপার ! কিন্তু যার চেতনা শুধুই স্থূলে বিচরণ করে, তার সুক্ষ বা কারণ অবস্থার রূপ দর্শনের চিন্তা করতে যাওয়াটাই বিষম কষ্টকল্পনা হয়ে যাবে না কি ? সূক্ষ্ম অবস্থায় two’ dimension বিশিষ্ট figure দেখা যায় এবং কারণ অবস্থায় দেখা যায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ ডিম্বাকৃতি আলোকপিণ্ডের ন্যায় শরীর। সাত্বিক, রাজসিক এবং তামসিক গুনসম্পন্ন ব্যক্তিদের গুণ ভেদে ঐ আলোর রঙের পরিবর্তন হয় কিন্তু আকৃতির কোনো পরিবর্তন হয় না । যেমন তামসিক ব্যক্তির শরীর ছাড়ার পর আলোর বর্ণ হয় reddish, রাজসিক ব্যক্তির হয় rosy, সাত্বিক ব্যক্তির কারণ শরীরের আলোকের রং হয় violet ! কোনো উচ্চ আধ্যাত্মিক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার কারণ শরীরের আলোর বর্ণ হয় blue বা deep blue !
জানো, এমন‌ই একজন ব্যক্তির আগমন ঘটেছিল আমার কাছে এই বনগ্রাম আশ্রমে ! আমি দেখেছিলাম ডিম্বাকার ঘন নীল এক জ্যোতির্বলয় আকাশ মার্গ অবলম্বন করে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল !
পুরো ঘটনাটা বলছি শোনো । তখন এখানে আশ্রম সবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে । আমার বর্তমান ঘরটা এখন(১৯৯১) যেখানে আছে, সেখানেই একটা ছোটো কুটিরের মতো ছিটেবেড়ার ঘর ছিল। সন্ধ্যার পর তখন এখানে(আশ্রম অঞ্চলটি) পুরোটাই অন্ধকার(তখন‌ও ঐসব অঞ্চলে কারেন্ট প্রবেশ করে নি) এবং নির্জন হয়ে যেত, কারণ তখন আমি ছাড়া রাত্রিতে কেউই এখানে থাকতো না । যে ক’জন ব্রহ্মচারী ছেলে মেয়ে permanantly থাকার জন্য এসেছিল, তারা গ্রামে ন’কাকাদের কালিমন্দিরের কাছে টিনের চালা ঘরটিতে থাকতো। ফলে রাত্রিতে একা একা ওই কুটিরের সামনেটায় বসে আকাশের দিকে চেয়ে আমার রাতের পর রাত কেটে যেতো। এইরকমই এক রাতে অন্ধকারে আকাশের দিকে চেয়ে বসে আছি। রাত্রি তখন সাড়ে বারোটা থেকে একটা হবে ! হঠাৎ দেখি পূর্ব আকাশ থেকে যেন একটা ঘন নীল জ্যোতিঃপিণ্ড সোজা আমাদের আশ্রমের দিকে নেমে আসছে !! তার সেই জ্যোতিঃর ছটায় আশ্রম প্রাঙ্গণের গাছপালাগুলি,মাটি, পুকুর সব নীল হয়ে গেল !! তারপর দেখি আমার শরীরেও একটা অদ্ভুত পরিবর্তন হোতে শুরু করলো ! শরীরের সমস্ত গ্রন্থিগুলি খটাখট্ শব্দ করে দৃঢ় হয়ে গেল অর্থাৎ হাড়ের জয়েন্টগুলো যেন সব গিঁট লেগে গেল ! তখন আমার নিজের শরীরের দিকে চেয়ে দেখলাম চেতনা এবং জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলির কাজ সবই ঠিকঠাক করছিল কিন্তু আমি আমার ইচ্ছা মতো কোনো বহিঃ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি(কর্মেন্দ্রিয়গুলি) নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না ! শুধু দ্রষ্টাবৎ থেকে অপেক্ষা করতে লাগলাম__ কি ঘটে তা দেখার জন্য!!
আমার শরীরে সেদিন যে পরিবর্তন ঘটেছিল, তা অবশ্য আমার কাছে নতুন কিছু নয়। বাইরে থেকে foreign কোনো কিছু আমার শরীরের কাছাকাছি এলেই_আমি দেখি যে, আমার শরীর নিজেই নিজেকে এমন ভাবে adjust করে নেয়, যাতে সে নিজে সেই বিশেষ অবস্থাটার মোকাবিলা করতে পারে ! কেন এমনটা হয়_ এটা যদি তোমরা জানতে চাও, তাহলে এর উত্তরে আমাকে বলতে হয় যে_ আমার এই স্থুল শরীরটা যেটা দেখছো, এটা কিন্তু সেই অর্থে পার্থিব শরীর নয় ! এই শরীরের উপাদান সমূহ বাইরেটা পৃথিবী গ্রহ থেকে নেওয়া কিন্তু বাকি সব কিছু Aquarius বা শতভিষা নক্ষত্র থেকে নেওয়া ! ‘শতভিষা’ নক্ষত্রের উন্নত জীবের চেতনা_ পৃথিবী গ্রহের মানুষের চেতনার লেভেল অপেক্ষা কয়েক লক্ষ বছর এগিয়ে রয়েছে ! সুতরাং পৃথিবী গ্রহে এসে(শরীর গ্রহণ করে) এই শরীর নিয়ে আমাকে কখনোই বিশেষ কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এই গ্রহের সংস্কার বর্তমানে ক্রিয়াশীল, তাই কোনো কোনো সময় সাময়িক অসুবিধা বলে মনে হয় _কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তা সুবিধায় পরিণত হয়ে যায়। সেদিনও আমি বুঝতে পেরেছিলাম অপার্থিব কোনো কিছু ঘটতে চলেছে। তাই এটা ছিল _সেই foreign element-এর সাথে মোকাবিলার প্রস্তুতি পর্ব।…… (ক্রমশঃ)