[ জিজ্ঞাসু:—“সূক্ষ্ম শরীর এবং কারণ শরীর কি দেখা সম্ভব হয় ?”___এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন গুরু মহারাজ।। আজ সেই আলোচনার শেষাংশ]
…….. যাইহোক, সেই অসম্ভব উজ্জ্বল নীল জ্যোতিঃপিন্ডটি আমার সামনে এসে স্থির হয়ে গেল, তারপর ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট আকার নিতে লাগলো । যেহেতু এটা পৃথিবী গ্রহ এবং এই গ্রহের উন্নত প্রাণী মানুষ, তাই ওই জ্যোতিঃবলয় একটা মানুষেরই মতো আকার নিলো !
এরপর কি হোলো জানো_ ওই অদ্ভুত মানবের শরীরের নাভিদেশ থেকে তলোয়ারের মতো একটা আলোক জ্যোতিঃর ধারা আমার দিকে ছুটে এগিয়ে আসতে লাগলো ! তারপর দেখলাম আমার শরীরের নাভিদেশ থেকেও ওইরকম‍ই একটা আলোর ধারা তার দিকেও ছুটে গেল ! আর আমাদের দুজনের মাঝামাঝি জায়গায় ওই দুটো আলোর ধারা এসে মিশে গেল, ঠিক যেমন দুজন ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে shake hand করে অথবা দুজন যোদ্ধা যেমন উভয়েই তলোয়ার বের করে পরস্পরের দিকে আগিয়ে দিয়ে একবার ঠেকিয়ে নেয় এবং একে অপরকে সম্ভাষণ করে__ ঠিক তেমনি একটা ব্যাপার এখানেও ঘটে গেলো।
এরপর থেকে চলতে থাকলো বিচিত্র বর্ণের আলোর খেলা !! ওই অদ্ভুত শরীরটা থেকে নানা বর্ণের আলো বেরিয়ে আমার দিকে আসতে থাকলো, আবার আমার শরীর থেকেও বিভিন্ন বর্ণের আলোকতরঙ্গ ওই শরীরের দিকে ছুটে যেতে লাগলো এবং ওই দুই আলো একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা করে অদ্ভুত এক আলোক-তরঙ্গমালার সৃষ্টি করলো!! এইভাবে কয়েক ঘন্টা ধরে চলতে থাকলো এই বিচিত্র বর্ণের আলোর খেলা ! আর সেই আলোক-তরঙ্গমালার মাধ্যমে চলতে থাকলো বিভিন্ন ধরণের তথ্যের আদান-প্রদান এবং এছাড়াও চললো নানারকম communication ! কিছুক্ষন পরই ও চলে গেল। আর ওই অদ্ভুত শরীরটি চলে যাবার পরেই দেখলাম_ আমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খটাখট্ শব্দ করে আগের মতোই শিথিল হয়ে গেল। আমি আবার হাত পা সবকিছু নড়াচড়া করতে পারলাম ! এতোক্ষণ যেন সবকিছু lock হয়ে গিয়েছিল !
যাইহোক, এই ঘটনার পরে প্রকৃতপক্ষে যেটা ঘটলো তা হোলো__ এরপর থেকেই আমার মস্তিষ্কের সমস্ত কোষ ক্রিয়াশীল হয়ে গেল! অর্থাৎ এতদিন ধরে মস্তিষ্কে ১০০% কোষ ক্রিয়া করতো না (হয়তো ততদিন পর্যন্ত প্রয়োজন ছিল না)সেদিনকার ঐ ঘটনার পর সব কোষগুলোই খুলে গেল ! ফলে এরপর থেকে আমি দেখলাম আমার মধ্যে এমন ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেল, যাতে করে যে কোনো মহাজাগতিক কমিউনিকেশন করতে বা সেখান থেকে আসা তরঙ্গের আকারে পাঠানো কোনো নির্দেশ ধরতে অথবা তা বুঝতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।
কিন্তু এখন তো আমাকে বিভিন্ন শহরাঞ্চলে যেতে হোচ্ছে__ফলে আমি দেখছি কোনো কোনো স্থানে, বিশেষতঃ ইলেকট্রিক ফিল্ড যেখানে খুব প্রবল_সেইসব স্থানে এই ধরনের কমিউনিকেশন করতে অসুবিধা হোচ্ছে ! কেমন হয় জানো__ যেমন ধরো 5-7 জন লোক যদি একসাথে সবাই কথা বলতে শুরু করে, তাহলে যে কোনো একজনের কথা শুনতে বা বুঝতে যেমন অসুবিধা হয় _ এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয় ! ইলেকট্রিক ফিল্ডটা হোলো horizontal field, এইজন্যই এই অসুবিধা হয়।
আরেক দিনের কথাও তোমাদেরকে বলছি শোনো__ যেটা এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ! সেদিনও আমি একাই আশ্রমে আমার কুঠিয়ার বারান্দায় বসেছিলাম। সেদিনেও দেখলাম পশ্চিম আকাশ থেকে একটা সবুজ রঙের জ্যোতিঃবলয় নেমে এলো আমার কাছে। আশ্রমের সবুজ গাছেরা যেন সবুজে স্নান করে গেল ওই জ্যোতিঃবলয়ের জ্যোতিতে ! ধীরে ধীরে সেটাও একটা মানব রূপ পরিগ্রহ করলো‌ ঠিক আগের বারের মতোই। এবারেও একইভাবে তার সাথে কমিউনিকেশন হোলো আমার ।
এই ঘটনার পর থেকে আমি দেখেছিলাম যে, বৃক্ষ-লতা-গুল্ম ইত্যাদি যেকোনো উদ্ভিদের সাথে আমার কমিউনিকেশন করতে কোনো অসুবিধা হয়না। তাদের কথা আমি বুঝতে পারি_ আবার আমার কথাও তারা বুঝতে পারে ! এখন গভীর রাতে আমি আমাদের আশ্রমের গাছগুলির সাথে কমিউনিকেশন করি, তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনি, অভিযোগ শুনি ! পরদিন সকালে মুরারি (স্বামী নিষ্কামানন্দ) মহারাজকে অথবা তপেশ্বরানন্দ মহারাজ (তখন উনি বাগানের দায়িত্বে ছিলেন)-কে বলে ওদের অসুবিধা দূর করার চেষ্টা করি।
এই তো সেদিন একটা ঘটনা ঘটলো ! আমার ঘরের সামনে একটা গোলাপ গাছের ফুলগুলি খুব ছোটো ছোটো গোলাপ ধরছিল । একদিন ওই গাছটার কাছে গিয়ে ওটাকে স্পর্শ করে ওর চেতনায় আমার চেতনাকে নিয়ে গিয়ে ওর সাথে যোগাযোগ করলাম। তারপর ওকে অনুরোধ করলাম যাতে ওর অসুবিধা কাটিয়ে গাছটি বড় বড় গোলাপ ফোটাতে পারে । ও আমার কথা শুনলো। এখন দেখছি ওই গাছটায় খুব বড়ো বড়ো গোলাপ ধরছে। এইটা দেখে তপেশ্বরানন্দ মহারাজ‌ও খুব খুশি হয়েছেন। কারণ কোনো বাগানের রক্ষনাবেক্ষণ যিনি করেন, তিনি সব সময়তেই চান যে_ তার বাগানের ফুলগাছে যেন ভালো ফুল ফোটে এবং ফল গাছে যেন উৎকৃষ্ট ফল ধরে!!