[“জিজ্ঞাসু :— সারদা মায়ের জীবনী সংক্রান্ত একটা বই পড়ছিলাম । তাতে দেখলাম যে, সারদা মা বৃদ্ধ বয়সেও অনেকক্ষণ জপ করতেন। কিন্তু তিনি তো স্বয়ং জগজ্জননী__ তাহলে তাঁর আবার জপের প্রয়োজন কি ছিল??”
গুরু মহারাজ এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন। আজ তার শেষ অংশ।।]
*কথা প্রসঙ্গে* (অষ্টম খণ্ড)
………………………………….
[আলোচলার শেষাংশ]
…… তবে, এই আধ্যাত্মিক প্লাবন বা spiritual flood অর্থাৎ ঈশ্বরের অবতরণ_কদাচিৎ এই পৃথিবী গ্রহে হয়ে থাকে! এটা কখন হবে_ তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নাই । একজন অবতারের সাথে আরেকজনের অবতরণের সময়ের পার্থক্য ১০০ বছরের মধ্যে হোতে পারে, আবার ৫০০ বা ৬০০ বছর পরেও হোতে পারে । সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মই অবতাররূপে মুর্ত হ’ন! এটা re-incarnation নয়, এটাকে বলা হয় আবির্ভাব! মহাপ্লাবনে যেমন নদনদী, খালবিল, নালানর্দমা সকলেই সেই সাগরে পৌঁছে যায়_ ঠিক তেমনি মুর্ত সচ্চিদানন্দ যাকেই স্পর্শ করে__ তার-ই মুক্তি ঘটে ! এক এক বারে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ মুক্ত হয়ে যায় । তিনি ‘তারণ’ এবং ‘পারণ’-রূপ পরিগ্রহ করে ধরণীতে অবতীর্ণ হ’ন অর্থাৎ তিনি জীবকে ত্রাণ করতেও পারেন এবং তাদেরকে ভবসাগর পার করতেও পারেন ।
অবতারগণের এই যে শরীর ধারণ__ এটাকেই অহৈতুকী কৃপা বলা যেতে পারে। যদিও এই অবতরণেরও অত্যন্ত গুহ্য principle রয়েছে।।
তবে এটা জেনে রাখবে যে, জগতে সবসময়ই কোনো না কোনো নামে, কোনো না কোনো রূপে, কোনো না কোনো স্থানে __সদ্গুরু বিদ্যমান থাকেন। পৃথিবীতে সদ্গুরুদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন শিবগুরু _ যেমন আচার্য শংকর, তৈলঙ্গ স্বামী, স্বামী বিবেকানন্দ, রামানন্দ অবধূত, গোরক্ষনাথ প্রমুখ। এঁদের মধ্যে শুধুমাত্র গোরক্ষনাথ পরম্পরাতে ৮০ জন সাধক সিদ্ধ হয়েছিলেন। তারাপীঠের মহাসাধক বামদেব ছিলেন মহাভৈরব। শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণদেব _ এঁরা স্বয়ং পুরুষোত্তম! এঁদেরকে অবতার ভেবে ভুল করলে হবে না। এঁদের পার্ষদরা ছিলেন অবতার ! শ্রীচৈতন্যের পার্ষদ অদ্বৈত, নিত্যানন্দেরা ছিলেন অবতার! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদ, রাখাল মহারাজ,স্বামী বিবেকানন্দরাও ছিলেন অবতার।
চৈতন্যলীলায় গম্ভীরালীলা ছিল_ রস আস্বাদন লীলা! সেই অবস্থাতেই ওনার ঠিক ঠিক অন্তঃকৃষ্ণ-বহিঃরাধা, আবার বহিঃকৃষ্ণ-অন্তঃরাধা_ ভাব হয়েছিল কিন্তু সর্বসাধারণের চোখে সেই রূপ ধরা পড়েনি। বৈষ্ণব শাস্ত্রেই রয়েছে যে, মহাপ্রভুর শত সহস্র ভক্তদের মধ্যে মাত্র সাড়ে তিন জন ভক্ত মহাপ্রভুর এই বিশেষ লীলা চাক্ষুষ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পুরীর স্থানীয় মানুষেরা(বিশেষতঃ মেছুয়ারা, যারা সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে থাকতো)হয়তো মাঝে মাঝে ভাবস্থ অবস্থার শ্রীচৈতন্যকে দেখেছিল, যখন উনি অর্ধবাহ্যদশায় ছুটে ছুটে গম্ভীরা থেকে বাইরে বেড়িয়ে যেতেন! তারা এবং মহাপ্রভুর অন্যান্য ভক্ত ও পার্ষদরা হয়তো তাঁর প্রেমের স্পর্শও পেয়েছিল কিন্তু ঠিক ঠিক আস্বাদ একমাত্র ওই সাড়ে তিন জনই করতে পেরেছিল ।
দ্যাখো, প্রকৃতপক্ষে রহস্যটা হোলো মানব শরীরেই রাধা রয়েছে_ কৃষ্ণ রয়েছে_যমুনা রয়েছে_ রয়েছে রাসমঞ্চ ! সাধনার দ্বারা সেই যমুনার উজানে রাধার অভিসার ঘটিয়ে রাসমঞ্চে পৌঁছে শ্রীকৃষ্ণের দর্শনলাভ-স্পর্শ লাভই মানবের অন্তিম লক্ষ্য বা চূড়ান্ত destination ! এই ভাবই মহাভাব_ যা শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যের মধ্যে প্রকটিত হয়েছিল ৷৷