জিজ্ঞাসু:– গুরুজী ! আপনার সাথে স্বামী বাউলানন্দের সাক্ষাৎ হয়েছিল_ এটা শুনেছিলাম। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল ?কারণ তখন তো আপনি রায়নায় ছিলেন , আর উনি ছিলেন দক্ষিণ ভারতের পেরেন্টাপল্লীতে ! তাহলে উভয়ের সাক্ষাৎ হওয়া কি করে সম্ভব ??
গুরু মহারাজ:– হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। আমি তখন একটা টিম নিয়ে রায়নায় রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন-এর কাজ করছিলাম। হসপিটাল-এর কাছেই আমাদের ক্যাম্প ছিল। আর হসপিটালের পিছন দিকটায় ছিল শ্মশান এলাকা। সারা দিনের কাজের শেষে আমাদের টিমের সব ছেলেরা ক্যাম্পে ফিরে এসে নিজের নিজের মতো সময় কাটাতো এবং রাঁধুনীরা রান্না শেষ করলেই সকলে মিলে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়তো। কারণ সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ওদের আর জেগে থাকার ধৈর্য থাকতো না। অপরদিকে সন্ধ্যার পর আমি চলে যেতাম ওই হসপিটালের পিছনের রাস্তা ধরে একেবারে শ্মশানে। সেখানে নানারকম ভাবে(আকাশের দিকে তাকিয়ে, ধ্যানের অন্তর্লীন,অবস্থায় ইত্যাদি)আমার সময় কেটে যেতো । একদিন যখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম_ তখন দেখি আকাশ থেকে উজ্জ্বল একটা আলোক বিন্দুর মতো জ্যোতিঃপুঞ্জ এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষের রূপ ধারণ করলো। আমি দেখলাম তিনি একজন প্রবীণ সন্ন্যাসী, যাঁর সাদা রঙের লম্বা লম্বা দাড়ি ও লম্বা চুল ছিল।
তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে সঙ্গে নিয়ে আকাশমার্গ অবলম্বন করে উড়ে চলতে লাগলেন দক্ষিণ অভিমুখে। আমরা এতো জোরে যাচ্ছিলাম যে, ওনার লম্বা লম্বা চুল-দাড়ি হাওয়ায় পতপত্ করে উড়ছিল। আমাদের যাত্রাপথে পড়লো পাতালগঙ্গা বা কৃষ্ণা নদী, মাল্যবান পর্বত বা মালখান গিরি ইত্যাদি। এরপরে উনি আমাকে নিয়ে গিয়ে নামালেন গোদাবরীর তীরে একটা ছোটো পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার ন্যায় ঝরে পড়া একটা জলাধারায় পাশে। তারপরেই সেই সন্ন্যাসী তরতর্ করে ওখান থেকে উপরে উঠে চলে গেলেন। আমি ওনার যাত্রাপথ অনূসরণ করে উপরে এসে দেখি__ একটা ছোটোখাটো আশ্রমের মতো স্থানে একটা ছোট্ট শিব মন্দির রয়েছে । আর রয়েছে দু-একটা ছোটো ছোটো ঘর। সেখানে সেই ঘরগুলির বারান্দায় তিনজন বয়স্কা মহিলা বসেছিলেন । পরে শুনেছিলাম তাঁদের নাম রামকৃষ্ণাম্মা, অন্নপূর্ণাম্মা এবং নন্দনাম্মা। ওনাদের জিজ্ঞাসা করে ঘরে ঢুকে দেখি ওই বৃদ্ধ সন্ন্যাসী বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। আমি প্রথমে ওনার কাছ থেকে জল চাইলাম । উনি ইঙ্গিতে ওই ঘরে থাকা একটা পাত্র থেকে আমাকে নিজেকেই এক পাত্র জল আনতে বললেন । আমি জল নিয়ে গিয়ে ওনার পায়ে ঠেকিয়ে তিনবার বললাম_ “গুরু পাদোদকম্, গুরু পাদোদকম্, গুরু পাদোদকম্” _তারপর ওই জল সবটা খেয়ে নিলাম। এই ঘটনা ঘটার পরেই উনি হঠাৎ করে বিছানা থেকে উঠে আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে অনেকক্ষন ধরে নানান কথা বলতে শুরু করলেন ! আমার মধ্যে তখন একটা আবেশ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, ফলে আমার মধ্যে কি ঢুকছিল, তা তখনই কিছু বুঝতে পারিনি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, ওই সময় সারারাত ধরে উনি পৃথিবীর যাবতীয় আধ্যাত্মিক দর্শন, ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রাদির সমস্ত শিক্ষা ইত্যাদি অনেক কিছুই আমার মস্তিষ্কে একেবারে গেঁথে দিয়েছিলেন।
এই ভাবেই আমার সাথে গুরুদেব বাউলানন্দের সাক্ষাৎ হয়েছিল । আর,এটা হয়েছিল_ঠিক ওনার শরীর ছাড়ার আগের রাত্রিতে!
রায়নার যে শ্মশানের মাঠটিতে আমি বসতাম বা ওই ঘটনাটা যেখানে ঘটেছিল__ সেই স্থানটি এখন আশ্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ওখানে পরবর্তীতে বিদ্যা শিক্ষার ইনস্টিটিউট্ হবে, বিশেষত অল্টারনেটিভ মেডিকেল কলেজ(Alternative Medical Center)করার কথা আমি ওখানকার মহারাজদের এবং ভক্তদেরকে বলেছি । ওই রকম একটা ইনস্টিটিউট হোলে সাধারণ মানুষের অনেক কল্যাণ করা সম্ভব হবে ৷৷