[“সমাজে সবল অত্যাচারী,দুস্কৃতীরা সুখে জীবন কাটাচ্ছে আর অসহায় দুর্বলরা পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে এমনটা কি চলতে থাকবে?” —এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন গুরু মহারাজ। আজ তার শেষাংশ….]
…… ধরো, একজন ধনী-অত্যাচারী ব্যক্তি একজন দরিদ্র, দুর্বল প্রতিবেশীর উপর অত্যাচার-অনাচার করে তার জমি-জমা, সম্পত্তি সব কেড়ে-কুড়ে নিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত, পথের ভিখারী করে ছেড়ে দিল। স্থূলভাবে যারা ঘটনাটা দেখল তারা কোনো সুরাহা করতে না পেরে শুধু “হা-হুতাশ” করতে লাগলো, ঈশ্বরের বিচারের উপর দোষারোপ করলো ! ওই দুর্বল ব্যক্তির দুরবস্থা দেখে তাদের খুবই করুণাও হোলো এবং ঐ সবল, ধনী, অত্যাচারী ব্যক্তিটির প্রতি তাদের ঘৃণা জন্মালো…..ইত্যাদি ইত্যাদি নানারকম ঘটনা ঘটলো।
ধরে নেওয়া যাক, পুলিশ-প্রশাসন বা আইনব্যবস্থাও সবল ধনী ব্যক্তির অর্থের প্রভাবে তারই অনুকূলে রায় দিল ! দুর্বল ব্যক্তিটি সামাজিকভাবে কোনো ন্যায়বিচার-ই পেল না !
তাহলে স্থূল বিচারে কি দেখা গেল – না ঈশ্বরের দুনিয়ায় কোনো সুবিচার হয় না ! মানুষের দুনিয়ায় তো হয়-ই না, এমনকি ঈশ্বর‌ও কোনো ন্যায়বিচার করেন না – তাই তো ?
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি হয় জানো – কিছুকাল দুঃখ, দূরাবস্থা ভোগ করার পর ঐ দুর্বল ব্যক্তিটি একদিন অবশ্যই মারা যাবে, আর তার অর্থ-সামর্থ্য ভোগ করার পর ঐ সবল ধনী ব্যক্তিটিও কালের নিয়মে আয়ুশেষে মারা যাবে।হ্যাঁ, এটা হোতেই পারে যে, দুর্বল ব্যক্তিটি হয়তো বিনা চিকিৎসায় একটু আগেই মারা গেলো, আর তুলনায় ধনী ব্যক্তিটি টাকা-পয়সা খরচ করে দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে health cheque-up করিয়ে, চিকিৎসা করিয়ে না হয় আরো কিছুদিন বেশি বেঁচে থাকলো।
কিন্তু মরতে তো একদিন সকলকেই হবে_ বাবা ! বরং বৃদ্ধ অবস্থায় যতো বেশিদিন পৃথিবীতে বাঁচবে – ততোই কষ্ট-যন্ত্রণা, ততই অশান্তি ! পরিবারের কোনো বৃদ্ধ দীর্ঘদিন বাঁচলে_ তার পরিবারের লোকজনেরাই বলে, “বুড়োটা মরলে বাঁচি !” জীবদ্দশায় এইকথা শোনা কিন্তু খুবই কষ্টের জানো! কারণ দ্যাখো, একদিন ওই(বৃদ্ধটি) ব্যক্তিই যুবক ছিল – সেই পরিবারের উন্নতির জন্য সে কতকিছু করেছে, সারাজীবনে পরিবারের স্বার্থে কতো পরিশ্রম করেছে, কতো মানুষের সাথে লড়াই করেছে – অপরের সম্পত্তি জোর করে বা চাতুরি করে অথবা মামলা-মোকদ্দমা করে কেড়ে নিয়ে ধনী হয়েছে। আজ তারই বৌমা বা নাতি-নাতনি যদি এই কথা বলে – তাহলে তা সহ্য করা কতোটা কষ্টের বলো দেখি! যাইহোক যা বলছিলাম ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাদের কি অবস্থা হয় সেটা শোনো ! ঐ যে দুর্বল ব্যক্তিটি অর্থাৎ যার বিষয়-সম্পত্তি হরণ করা হোলো এবং যার দুঃখ-দারিদ্রের ভোগ এই জীবনে সাঙ্গ হয়ে গেল — সেই লোকটি মৃত্যুর পর এই ধনীর ঘরে পুত্র হয়ে বা নাতি হয়ে জন্ম নেবে। ফলস্বরূপ এই ছেলেটি বড় হয়ে ঐ সব সম্পত্তির মালিক হবে এবং তা ভোগ-দখল করবে। তার মানেটা কি দাঁড়াল, না যে ব্যক্তি ঐ জমিরগুলির মালিক ছিল, সেই ব্যক্তিই মালিক থেকে গেল ! অপরপক্ষে যে ধনী ব্যক্তি শক্তি খাটিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে, মোকদ্দমা করে অপরের সম্পত্তি কেড়ে-কুড়ে নিয়ে আগের জন্মে ধনী হয়েছিল _সেই ব্যক্তি ঐ দরিদ্র ব্যক্তিটির ঘরে পুত্র বা নাতি হয়ে জন্মাবে এবং সারাজীবন দুঃখ-দুর্দশা, অপরের হেনস্থা, অবহেলা ভোগ করবে ! এবার বলো, এই রহস্য যদি সমস্ত মানুষ ঠিক ঠিক ভাবে আত্মস্থ করতে পারে বা এই নিয়মকে মান্যতা দেয়, তাহলে কেউ কি কোনোদিন কোনো অন্যায় কর্ম করতো ? নিশ্চয়ই করতো না ! কিন্তু মানুষ যেন এইগুলি বুঝতেই চায় না (হয়তো অনুভব করে)– তাই ভাবে মহাজনবাক্য বোধহয় বৃথা ! তবে, তোমরা জেনে রাখবে – এগুলি সত্য ! এই নিয়মগুলি অবশ্যই ফলে থাকে মানবের জীবনে এর ব্যতিক্রম হয় না, তাতে কেউ বিশ্বাস করুক বা নাই করুক !