সময়:– এপ্রিল 1989,
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:– নগেন, সব্যসাচী মান্না, আনন্দ ,পল্লব, মিশনের মহারাজগন ও অন্যান্য ভক্তবৃন্দ।
জিজ্ঞাসু:– তন্ত্রের অভিচার ক্রিয়া দ্বারা কি মানুষের ক্ষতি করা যায়?
গুরু মহারাজ:–ব্রহ্মকে বলা হয়েছে সৎ-চিৎ-আনন্দ! সুতরাং সৎ-কে আশ্রয় করে যে থাকে, তার ক্ষতি কে করবে? এইসব যে অভিচার ক্রিয়া_ এগুলি তো ভগবতমুখী নয় বরং উল্টো পথ! তবে দ্যাখো, যে কোন উপায়ে অর্জিত শক্তিই তো সেই প্রকৃতিরই শক্তি বা বলা ভালো_ ✓রী মায়েরই শক্তি! এবার যে সৎ-কে আশ্রয় করে আছে, সে তো মায়ের কোলে বসে আছে! ফলে কেউ উল্টোপথে অর্জিত শক্তি দ্বারা মায়ের কোলে বসে থাকা ব্যক্তির ক্ষতি করবে কি করে? বরং ঐ ধরনের অভিচারী ব্যক্তি যদি সেরকম লোকের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে যায়, তাহলে বরং উল্টো ফল হয়! ওই অভিচারীরই ক্ষতি হয়।
তাই যেমন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরা অশুভ শক্তিকে ভয় পায়না, জ্ঞানীরা ভয় পায় না_অজ্ঞানীর আচরনকে, তেমনি সদাচারী বা সত্যাশ্রয়ীরাও কখনো কোনো অভিচারী-অনিষ্টকারীকে তোয়াক্কা করে না! তবে তোমাদেরকে আমি বলতে পারি _তোমাদের আবার কিসের ভয়? মাভৈঃ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলে গেছেন _”লজ্জা, ঘৃণা, ভয় _তিন থাকতে নয়”! সুতরাং ভয় কে জয় করো! আর কি করলে ভয়কে জয় করা যায়, সেই উপায়ও বলে দিচ্ছি _ সদাচারী হও, পরোপকারী হও, সকলকে ভালোবাসো আর সংযমী হও! ব্যস! এইগুলির অনুশীলন করতে শুরু করো _তাহলেই হবে! তখন দেখবে শুভ-অশুভ যে কোন ক্ষেত্রেই মা জগদম্বা তোমার সহায় হবেন! তখন আর অশুভ বলে কিছু থাকবেই না, সবকিছুই শুভ হয়ে যাবে!
তবে কি জানো _এই সব কথা যতক্ষণ না অন্তর থেকে বুঝতে পারছো বা যতক্ষণ না তোমার বোধ হচ্ছে, ততক্ষণ ‘ভয়’ থাকবেই! আর যখন ঠিক ঠিক ‘বোধ’ হয়ে যাবে _তখনই বোঝা যায় মায়ের জগতে সবই লীলা, তার বাইরে অন্য কিছুই নাই!
জিজ্ঞাসু:– অভিচারাদি তন্ত্রোক্ত ক্রিয়াগুলি মানুষের ক্ষতিকারক যখন_তখন এগুলি সমাজে চালুই আছে বা কেন?
গুরুমহারাজ:– এগুলো তো প্রকৃত অর্থে “সাধনা” নয়! ‘সাধনা’ বা ‘আরাধনা’_ তাকেই বলা হয়, যেগুলিসাধককে ভগবৎমুখী করে তোলে, এবং সাধককে তার অন্তিম লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়,অর্থাৎ সাধক ঈশ্বরত্বে উপনীত হয়।
জীবজগতের কল্যাণ চেয়ে যে শক্তিলাভ বা বিভূতি-অর্জন করার জন্য যে প্রচেষ্টা বা ক্রিয়াদি_ তাকে বলা হয় “তপস্যা”! অভিচারাদি ক্রিয়া অপেক্ষা তপস্যা শ্রেষ্ঠ হোলেও কিন্তু জানবে_ তপস্যারও ‘ফল’ রয়েছে। সুতরাং তপস্যার ফলকেও কেউ শুভ কাজে লাগাতে পারে_ আবার অশুভ কাজেও লাগাতে পারে! কিন্তু যদি কোন সাধক বা তান্ত্রিক, তার তপস্যা-লব্ধ ফল কে অশুভ কাজে লাগায়_ তাহলে তার জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়!
মানুষ তপস্যা কোরে শক্তিলাভ করে, কিন্তু সে তো আর “জ্ঞানী” হয়না_আর পাঁচটা সাধারণ মানুষ অপেক্ষা একটু বেশি শক্তিশালী হয়, এইমাত্র! রাবণ,কংস_ এরাও তো খুবই তপস্বী ছিলেন কিন্তু সমাজ এদের কাছে কি পেল_ শুধু অত্যাচার আর অনাচার ছাড়া! তপস্যা-লব্ধ শক্তি থাকায় এদের অত্যাচারে যখন জীবজগৎ অতিষ্ঠ হল তখন ভগবানকে শরীর ধারণ করে আসতে হল _এদের নিধন করার জন্য!
তাহলে বুঝতে পারছো তো_ কর্ম করলেই তার ফল লাভ হয় ঠিকই, তবে কর্মের উদ্দেশ্য কিরূপ_ তার ওপরেই নির্ভর করে ফললাভ কিরূপ হবে!
আর ‘সাধনা’ বা ‘আরাধনা’-র প্রকৃত উদ্দেশ্য ফললাভ নয়, এর উদ্দেশ্য ঈশ্বরত্বে উপনীত হওয়া!এই অবস্থাতেই একমাত্র মানুষ (সাধক) ‘অভয়’ হয়! একটা গল্প এই প্রসঙ্গে মনে আসছে বলছি শোন_ সম্রাট অশোক প্রথম জীবনে ‘চন্ডাশোক’ ছিলেন। তিনি তাঁর ভাই বা জ্ঞাতিদের হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন_এইজন্য এই ধরনের নাম দেওয়া হয়েছিল। যাইহোক,তাঁর ভাই তখনো জীবিত আছে এবং তিনি স্বয়ং সশস্ত্র অবস্থায় তার পশ্চাদ্ধাবন করছিলেন, এই অবস্থায় ভাইটি প্রাণ ভয়ে পালাতে পালাতে তৎকালীন যুগের বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্তের শরণাপন্ন হন। উপগুপ্ত তাঁকে আশ্রমের ভিতরে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে, নিজে আশ্রমের দরজা আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন। ইতিমধ্যে উদ্যত তরোয়াল হাতে সম্রাট অশোক সেখানে এসে হাজির হয়ে, চিৎকার করে জানতে চাইলেন_ তার ভাই কি ভিতরে রয়েছে? সন্ন্যাসী সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। সম্রাট তখন তাঁকে বললেন_ “তাহলে আমার ভাইকে এক্ষুনি বের করে দাও!” কিন্তু সন্ন্যাসী উপগুপ্ত শান্তকণ্ঠে বললেন, “তা তো সম্ভব নয়, কারণ সে আমার আশ্রিত ও শরণাগত! তাকে আমি তোমার হাতে কি করে তুলে দিতে পারি?”
সম্রাট অশোক বৌদ্ধ-ভিক্ষুর সাহস দেখে আশ্চর্য হয়ে বললেন, “তুমি কি জানো না _আমার নাম চন্ডাশোক! খুন করতে আমার হাত কাঁপে না! এই মুহূর্তে তোমাকে হত্যা করে আমি আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যেতে পারি! তাই কেন তুমি প্রাণ দেবে ? যাও _ আমার ভাইকে ধরে নিয়ে এসে আমার হাতে তুলে দাও!”
সম্রাটের প্রাননাশের হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে সন্ন্যাসী উপগুপ্ত আবারও শান্তভাবে হেসে উত্তর দিলেন, “সম্রাট! আপনাকে আমি আগেই বলেছি যে, আপনার ভাই আমার শরণাগত! আর আমি প্রভু বুদ্ধের শিক্ষা_ “অহিংসা পরম ধর্ম”-এ বিশ্বাসী, তাই আমার জীবদ্দশায় সেই হিংসার প্রয়োগ যাতে না হয় _আমি সেই চেষ্টাই করছি!আর তার করতে গিয়ে যদি আমার মৃত্যু ঘটে, আমার পক্ষে তাই শ্রেয়! সুতরাং আপনার ভাইকে নিয়ে যেতে হলে আমাকে হত্যা করে তবেই সে কাজ করতে হবে! আপনি চাইলে তাই করুন!”
সন্ন্যাসীর প্রশান্ত হাসিমাখা মুখ আর ভয়লেশহীন আচরণ দেখে বিচলিত হলেন সম্রাট অশোক_ বললেন, “আমি প্রবল পরাক্রমশালী সম্রাট! আমার অনেক শক্তি, কিন্তু আমি তো শান্তি পাই না_ আপনার মতো শান্ত থাকতে পারি না! আমি আপনারর মতো ঐরকম হাসতে পারিনা, সদাই ভয় হয় _এই বুঝি আমায় রাজ্যছাড়া হতে হবে! আর এই জন্যই আমি আমার ভাই ও আত্মীয়দের একে একে হত্যা করতে চাইছি। কিন্তু তোমার তো ঐশ্বর্য, সামর্থ্য ইত্যাদি কিছুই নাই, একটা অস্ত্রও নাই _তবু তুমি এত শান্ত, ভয়শূন্যহলে কি করে? তুমি এত সুন্দর করে হাসো কি করে?”
একথা শুনে উপগুপ্ত আবার মধুর হেসে উত্তর দিলেন, ‘ভগবান বুদ্ধের চরণে শরণাগতিই শান্তির উপায়! আর বুদ্ধত্ব লাভ হলে তখনই মানুষ অভয় হয়!”
একথা শুনে অশোকের মনে ভাবান্তর এলো, তাঁর হাত থেকে রক্তমাখা অস্ত্র খসে পরলো, তিনি উপগুপ্তের চরণে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন, “হে ভিক্ষু! তুমি আমাকে ওই অভয় মন্ত্র দান করো, আমাকে তোমার শিষ্যত্বে বরণ করো, আর আমার জীবনে পরম শান্তি এনে দাও!” এরপর উপগুপ্তের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলেন এবং ধীরে ধীরে চন্ডাশোক থেকে ধর্মাশোকে রূপান্তরিত হলেন।
এই ঘটনা থেকে বোঝা গেল একজন ঈশ্বরে নিবেদিতপ্রাণ মহাত্মা কতটা আত্মনির্ভর বা ঈশ্বর নির্ভর! আর শুধু তাই নয় তিনি অপরকেও কতটা নির্ভরতা দান করতে পারেন! সুতরাং মানুষকে কল্যাণমুখী, জীবনমুখী ও ভগবৎমুখী করে তোলে যে আচরণ_ সেটাকেই বলা হয় প্রকৃত সাধনা। আর সাধনার চূড়ান্তে যখন আত্মজ্ঞান লাভ হয় তখনই সাধক ‘অভয়’ হয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন একটুও আঁশ থাকতে যেমন সূচে, সুতো পড়ানো যায় না_ তেমনি বিষয়াদিতে সামান্য কামনা-বাসনা থাকতে পরম প্রাপ্তি ঘটে না! এগিয়ে চলতে হলে পিছন দিকে ফিরতে নেই। চূড়ান্ত লক্ষ্যের প্রতি স্থির- অবিচল থাকাই প্রকৃত “সাধনা” !
জিজ্ঞাসু:– ‘বস্তুবাদ’_দিয়ে কি মানব-কল্যান সম্ভব?
গুরু মহারাজ:– অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি করা হয়তো সম্ভব হয় কিন্তু প্রকৃত মানব-কল্যাণ কি করে সম্ভব হবে? কারণ বস্তুবাদীরা ‘জড়’ দিয়ে ‘জীবন’-এর ব্যাখ্যা করতে চায় কিন্তু মানুষ তো জড় নয়। Metaphysics-এ ‘উন্নত গাভী’ বোঝালে জানতে হবে যে গরুটি খুব বেশি দুধ দেয়, ‘উন্নত শস্য’ বোঝালে জানতে হবে_ঐ শস্যের ফলন বা উৎপাদন বেশি হয় ! কিন্তু ‘উন্নত মানুষ’ বোঝাতে তুমি ঐ রকম কোন পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে পারবে না! কাজেই প্রাণীদের মধ্যেও আবার মানুষ পৃথক। ‘উন্নত মানুষ’ _মানে ব্যাপারটা গুণগত অর্থাৎ সেই ব্যক্তির স্বভাব সুন্দর!
এই জন্যই প্রাচীনকাল হতে সমাজের মানুষকে, গুণ ও কর্মের বিভাগ অনুযায়ী চার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল_ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। এই বিভাগ বংশপরম্পরায় নয়_ এটা কর্ম ও গুণগত বিভাগ! সমাজের যে কোন স্তর থেকেই উঠে আসুক না কেন ‘উন্নত মানুষ’ অর্থাৎ গুরুকুল(সবশ্রেনীর শিক্ষক)-কেই বলা হতো ব্রাহ্মণ! দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব যারা গ্রহণ করত অর্থাৎ যারা শৌর্যবীর্য-সম্পন্ন _তারাই ক্ষত্রিয়!
দেশের economy যারা ধরে রাখতো অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, চাষবাস _এইগুলি যারা দেখতো,তাদেরকে বলা হতো বৈশ্য। আর যে সমস্ত মানুষ কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করে থাকে এবং অপর তিন বর্ণের মানুষকে কাজে সহযোগিতা (সেবা) করে থাকে _ তারাই শুদ্র! জাতিভেদ, অবজ্ঞা, অবমাননা বা শোষনের কোন অবকাশ ছিল না এই বর্ণাশ্রম পদ্ধতিতে! যে ব্যক্তি, যে কাজের জন্য উপযুক্ত _তাকে সেই কাজ করার সুযোগ দেওয়া হতো! কিন্তু স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে সবারই গুরুত্ব ছিল। এই ভাবেই গড়ে উঠত সমাজ-শরীর, যা ঠিক মানব-শরীরের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত। সমাজের সদস্যদের বিভাজনের এটাই সঠিক ধারণা! ভারতীয় ঋষিদের প্রবর্তিত ধারণায় কখনো কোন ভূল হোতেই পারে না। এখন তো মহাকাশ বিজ্ঞানীরাও নিশ্চয় করছে যে, এই সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র-নীহারিকা সমন্বিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে যদি কেউ একত্রে দেখতে পায় বা কল্পনা করে _তাহলে তা একটা ‘বিরাট-মানুষ’-এর রূপ পরিগ্রহ করবে ! ঋষিদেরবলা ‘কালপুরুষ’-এর concept থেকেই হয়তো এইসব আবিস্কার সম্ভবপর হয়েছে।
সে যাইহোক, যা বলছিলাম_ মানব শরীরের সব চাইতে প্রয়োজনীয় অঙ্গ মস্তিষ্ক, তাই এটাকে বলা যায়_ ‘ব্রাহ্মণ’ !এবার দ্যাখো, মাথাতে কোন আঘাত আসলে, তাকে রক্ষা করে__ বাহু ! তাই বাহু হোল শরীরের ‘ক্ষত্রিয়’ অংশ। এইভাবে, গোটা শরীরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পুষ্টি যোগায়_বক্ষ এবং উদর, তাই এরা বৈশ্য।আর এই সব কিছুকে অর্থাৎ সমস্ত অঙ্গগুলিকে ধরে আছে পদযুগল_তারা যেন শুদ্র।
শরীরের এমনই অবস্থান যে মাথা উঁচুতে এবং পা নিচে অবস্থিত_তাই বলে কি মানবশরীরে পায়ের মর্যাদা কম _না এটা তোমার কাছে অবজ্ঞার পাত্র! আর যদি কেউ তা ভাবে তাহলে সে মূর্খ নয় কি ! একটা সুস্থ মানব শরীর গড়ে তুলতে গেলে যেমন সমস্ত অঙ্গের ই সমানভাবে বিকাশ ঘটানোর প্রয়োজন _তেমনি সমাজের চারটি বর্ণের মানুষদেরও _সমান মর্যাদা দেওয়াটাই ছিল রীতি। ঠিক যেন একে অপরের পরিপূরক হয়ে বেঁচে থাকা! রাজতন্ত্র বা রাজন্যপ্রথা যখন থেকে সমাজে শুরু হল, তখন থেকেই এইসব শিক্ষা সমাজে ধীরে ধীরে অবমূল্যায়িত হতে শুরু করেছিল!বিশেষতঃ ভারতবর্ষেই এর চরম বিকৃত রূপ দেখা গিয়েছিল অস্পৃশ্যতার আকারে! কিন্তু আজও যদি কোথাও এই বর্ণাশ্রম প্রথা, কোন দেশ ঠিক ঠিক ভাবে মেনে চলে _তাহলে তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক বা যেকোন রকম উন্নতি দ্রুত ঘটবে, এতে সন্দেহ নেই। আমার মনে হয় _ বর্তমানে যে সমস্ত দেশ উন্নত, জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে তারা বর্ণাশ্রম রীতি follow করেই উন্নত হয়েছে _ সম্পূর্ণভাবে না হোক আংশিকভাবেও করেছে!
দ্যাখো, এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে আরও বলতে হয় যে, প্রযুক্তিগত উন্নতি বা অর্থনৈতিক উন্নতিই_ কোন রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নতি নয়! কারণ এসব উন্নতি তো ভাঙা-গড়ার খেলা_সময়ের সাথে এগুলি পরিবর্তনশীল!সিন্ধু-সভ্যতা তো এককালে বিশাল নগর-সভ্যতা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল_এখন তার “মৃতের স্তুপ” নামে পরিচিত!
সমাজ-বিজ্ঞানীরা বলছে_ Thesis,Anti thesis, Synthesis_এই Synthesis-ই আবার নতুন কোন Thesis-এ রূপ নিচ্ছে_ফলে চক্রক্রমে এর পিছু পিছু চলে আসছে Anti thesis! স্থায়ী Synthesis কিছু হচ্ছে কি _হচ্ছে না! আর হবেও না কোনদিন! কোন প্রকারের -ism বা বাদ দিয়ে মানব জীবনের তথা সমাজ জীবনের কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়! একমাত্র আধ্যাত্মিকতাই মানুষকে একটা শান্তির জায়গায় নিয়ে যেতে পারে! তাই কোন ব্যক্তির বা কোন জাতির উন্নতির মূল কথা হলো, সেই ব্যক্তিটি বা সেই জাতি কতটা আধ্যাত্মিক অর্থাৎ সেই জাতির মধ্যে কতজন আধ্যাত্মিক মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন _তার উপর ! এই কথাগুলো যা বললাম, তা হয়তো তোমাদের বুঝতে বা মানতে কষ্ট হতে পারে _কিন্তু এটাই সত্য ! দশ বছর বিবেকানন্দ চিন্তা এবং দশ বছর মার্কস্-এর চিন্তায় অতিবাহিত করা দুটি পৃথক ব্যক্তির জীবনের ব্যবহারিক দিকটা কিরূপ হয়, তা যদি ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করো_তাহলে দেখা যাবে, দ্বিতীয় ব্যক্তি অপেক্ষা প্রথম ব্যক্তির গুণগত মান ও আচরিত কর্ম এতটাই জীবনমুখী ও মানব কল্যাণমুখী যে, দ্বিতীয় ব্যক্তির সঙ্গে তার কোনো তুলনাই করতে পারবে না!
তাই বলছিলাম, মানুষের প্রকৃত উন্নতি হয় আধ্যাত্মিকতায় _তবে, আধ্যাত্মিকতার অনুশীলনের জন্য প্রয়োজন সদাচার, পরোপকার, ভালোবাসা এবং সংযম ! এই অনুশীলনগুলি জীবনে যোজনা করলেই মানুষ আধ্যাত্মিক হয় এবং সেই মানুষকেই উন্নত মানুষ বলা হয়। আর উন্নত মানুষের সংখ্যা সমাজে বাড়লেই সমাজ-শরীরেরও উন্নতি হয়!
জিজ্ঞাসু:– শ্রেণী-সংগ্রাম তাহলে মানবের উন্নতির উপায় নয়?
গুরু মহারাজ :–আর বাবা শ্রেণী সংগ্রাম! বললাম তো _এগুলো কোনোটাই চিরন্তন নয়! কখনো রাজায়-প্রজায়, কখনো ব্রাহ্মণ-শুদ্রে, কখনো বিদেশী-স্বদেশী, কখনো ধনী-দরিদ্র, কখনো বুর্জোয়া প্রলিতারিয়েত __এইভাবে সংগ্রামের রূপরেখা শুধু পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে! চিরন্তন যে সংগ্রাম মানুষের অভ্যন্তরে রয়েছে তা হলো সুরাসুরের সংগ্রাম! এরই বহিঃপ্রকাশ তোমরা দেখছ বাইরের সংগ্রাম গুলিতে! ঈশ্বরমুখী ব্যক্তিরাই _সুর, আর ঈশ্বরবিমুখীরাই _অসুর! বিবেকীরাই সুর এবং অবিবেকীরাই অসুর! এইভাবে সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তির জীবনে কাজে-কর্মে, চিন্তায় যে দ্বন্দ্ব চলছে _তার মূল কারণ অন্তর্জগতের এই সুরাসুরের সংগ্রাম!
ফলে সমাজে তো দ্বন্দ থাকবেই, কারণ সমাজের unit হোল মানুষ_ তাই ব্যষ্টির শান্তি বিঘ্নিত হলে সমষ্টির শান্তি বিঘ্নিত হবেই! এবার দেখতে হবে_ কোন ব্যক্তি কিভাবে শান্তি পেতে পারে ? মানুষ শান্তি পায় সদগুরুর সাহচর্য লাভ করলে এবং জীবনে সংযম অবলম্বন করলে! ব্যক্তিজীবনের অসুর(কাম-ক্রোধ ইত্যাদি) দমন হয় সদগুরুর সংস্পর্শে, আর তখনই মানুষ শান্ত হয়! আবার ঈশ্বরের অবতাররূপ মহামানবগণের আবির্ভাব ঘটলে সমাজজীবন শান্ত হয়_তখন সমাজের অসুর দমন হয় তাঁদের প্রভাবে! কারণ তাঁরা আপামর জনগণের অজ্ঞানতা, অপবিত্রতা হরণ করেন আর বিনিময়ে তাদেরকে দেন প্রকৃত ‘জ্ঞান’ আর প্রত্যাশাবিহীন ‘ভালোবাসা’! তাইতো তাঁরা “শ্রীহরি”-র অবতার! এজন্যেই চৈতন্যদেবকে বলা হয় গৌড়হরি! তৎকালে যারা ধর্ম-বিরোধী ছিলেন, চৈতন্যদেব তাঁর অপ্রাকৃতিক প্রেমের দ্বারা, করুনার দ্বারা_ঐ ব্যক্তিদের চৈতন্য এনে দিয়েছিলেন!
যাইহোক, ‘প্রকৃত সংগ্রাম’ বলতে কী বোঝায়_এতক্ষনে নিশ্চয়ই তুমি বুঝতে পেরেছ! আর বাকি যা কিছু সংগ্রামের কথা তুমি বলতে চাইলে_ সেগুলি স্বার্থ পূরণের জন্য, নয়তো যশকীর্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। এর কোনো স্থায়ী সুফল মানবসমাজ পায়না! কিন্তু মহাপুরুষের আগমনের সাথে সাথে মানুষের অন্তর্জগতে যে সংগ্রাম শুরু হয়ে যায় _বহুদিন পর্যন্ত তার সুফল পায় মানব সমাজ! মহাপুরুষগণ যেন মানুষের ঘুমন্ত বিবেককে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দেন _ এভাবেই অবিবেকীরা ধীরে ধীরে সংগ্রামে পরাস্ত হয়, জয়ী হয় বিবেকীরা! দেখা গেছে, বুদ্ধ- শ্রীচৈতন্য -ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রমূখ মহাপুরুষ যখনই পৃথিবীতে শরীর নিয়েছেন তার পর থেকেই কোন বিশেষ ক্ষেত্রে অথবা গোটা পৃথিবীব্যাপী যেন কলা -বিজ্ঞান -সাহিত্য -শিল্প ইত্যাদি নানা দিকের প্রভূত উন্নতি ঘটতে দেখা গেছে! যে কথাগুলো বলছি এগুলো সব ইতিহাস _অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই! ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখে নিতে পারো!
জিজ্ঞাসু:–তাহলে কোন “বাদ” গ্রহণ করা উচিত-আধ্যাত্মিকবাদ?
গুরু মহারাজ:– কোন-ism বা ‘বাদ’ নয়! ‘বাদ’ থাকলেই জীবনে বিবাদ এসে উপস্থিত হবে,যা তোমার ইষ্টলাভের পথে অন্তরায়! এইজন্যই “বাদ”- শব্দটি আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জুড়তে যেওনা ! ইংরাজিতেও আধ্যাত্মিকতা বোঝাতে, spiritualism কথাটি না ব্যবহার করে spirituality বা Spiritualness শব্দ ব্যবহার করা উচিত। ‘বাদ’ কে ধরে কি হবে? কোন উন্নত মানবকে আদর্শ করো_ যাকে বলে “শক্ত খোঁটায় নৌকা বাঁধা”! যাঁর আত্মতত্ত্বের বোধ হয়েছে_ তিনিই ঐরূপ ব্যক্তি!আর ঐরূপ ব্যক্তিরাই পারেন মানুষকে জীবত্ব থেকে শিবত্বে পৌঁছে দিতে! মানবজীবনে ভুল ব্যক্তিত্বকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা হয় বলেই মানব জীবনে ঘটে বিপত্তি! অবশ্য সাধারণ মানুষ বুঝতেও পারেনা _কোন আদর্শকে গ্রহণ করা তার পক্ষে মঙ্গলকর! মানুষের বিবেকের জাগরণ না ঘটার কারণেই এমনটা হয়। যেমন মরুভূমিতে দৃষ্টিবিভ্রম ঘটলেও গন্ধতন্মাত্রার সাহায্যে উট সঠিকভাবে জলাশয় খুঁজে নেয়, তেমনি মানুষেরও উচিত সাধারণভাবে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে যখন “সঠিক টি কি”,তার ধরা যাচ্ছে না _তখন বিবেকজ্ঞানের দ্বারা কোনটি গ্রহণীয় তার বিচার করা! চিন্তাশীল ব্যক্তিরা চিন্তনের দ্বারাই ভালো-মন্দ বিচার করে কিন্তু বিবেক চালিত বুদ্ধি ছাড়া সঠিক বিচারকখনোই সম্ভব নয়। ‘আত্মা’র দ্বারাই ‘আত্মা’র উপলব্ধি হয় _পরম আনন্দের অনুভব হয়! স্থুল চোখে কি আত্মা তথা ভগবানকে দেখা যায়! আমাকে অনেকেই এসে জিজ্ঞাসা করে _”আপনি ভগবান দেখেছেন?” আমি বলি _”তা দেখেছি বই কি! ধ্যানে- জ্ঞানে এবং প্রেমে তাঁকে অহরহ দেখি _তাঁর স্পর্শও পাই! তাই বলছিলাম শুধু ‘বাদ’ দিয়ে কি হবে _ আসলে প্রয়োজন “বোধে বোধ”।।
জিজ্ঞাসু:— ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যে সানাই-এর পোঁ-ধরার কথা বলেছেন_ এর তাৎপর্য কি ?
গুরু মহারাজ:– সানাইয়ের ‘পোঁ’-ধরার অর্থ নিজের মতটাকেই ঠিক ভাবা, আর সেটাতে নিজেকে আবদ্ধ রেখে পক্ষান্তরে অন্যান্য মত বা ভাবের সত্যতাকে অস্বীকার করা! কিন্তু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আরও বলেছিলেন যে, ওস্তাদ বাজিয়ে যেমন বিভিন্ন রাগ রাগিনী বাজায় কিন্তু সর্বদা মূল ভাবটিকে অব্যাহত রাখে, তেমনি প্রকৃত আধ্যাত্মিক মানুষেরা সবকিছুতেই থাকতে পারেন কিন্তু নিজের লক্ষ্যে সদা-সর্বদা অবিচল থাকেন। ঠাকুর এইসব বোঝাতে বহু উদাহরণ ব্যবহার করেছেন। নিজে প্রার্থনা করতেন মা জগদম্বার কাছে _”আমাকে রসেবশে রাখিস মা, দেখিস যেন শুঁটকে সাধু করিস না!” এখানে লক্ষ্য করার বিষয় _ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ “রসেবশে” রাখার প্রার্থনা করেছেন অর্থাৎ রসের সঙ্গে যেন “বশ” বর্তমান থাকে, অন্যথায় বিপদ ঘটে যাবে!
বিভিন্ন মতের বিভিন্ন সাধন পদ্ধতি আছে, এর যে কোন একটাকে ধরে চরম লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। তবে হ্যাঁ, প্রবাদের বৈচিত্র্য আছে! ঠাকুরেরই কথা, যেমন ধরো এক এক টুকরো মিছরী নিয়ে _কেউ চুষে খাচ্ছে, কেউ চিবিয়ে খাচ্ছে, আবার কেউ শরবত করে খাচ্ছে _এটাই বৈচিত্র্য!মূল সত্যটি কিন্তু “এক”! আর এইটি “বোধে-বোধ” করতে হবে, _যা মানব জীবনের উদ্দেশ্য! উদাহরণস্বরূপ বলা যায় _যেমন একটা গাছকে দ্যাখো, তার শাখা-প্রশাখা বিভিন্ন, আবার সেগুলি বিস্তারের দিক আলাদা আলাদা– কিন্তু গাছটির প্রকাশ ও বিকাশকে ধরে রেখেছে __এক অভিন্ন অস্তিত্ব,এটাই মূল! এই মূল-তত্ব জানতে গেলে কিন্তু শাখা-প্রশাখা দিয়ে জানা যাবে না _গভীরে প্রবেশ করতে হবে। এই ভাবেই বিভিন্ন মতবাদ, আচার-অনুষ্ঠান দেখে বা সেগুলির বিচার করে আধ্যাত্মিকতার মূল সত্যটির সন্ধান পাওয়া যায় না! এই কথাটা আগে বুঝতে হবে।কারণ এইটা বোঝার পরই শুরু হয় প্রকৃত অন্বেষণ বা খোঁজ! ধর্মের মূলটি কোথায় নিহিত আছে _ তার খোঁজ! ঋষিরা ধ্যানের গভীরে গিয়ে এর খোঁজ পেলেন এবং বললেন_”তোমার অন্তর্জগতেই তা রয়েছে! তাই, তোমার অন্তর্জগতে শুরু করো তার অন্বেষণ!”
এই ভাবেই শুরু হয় প্রকৃত ধার্মিকের বা আধ্যাত্মিক ব্যক্তির পথ চলা! তারপর ‘চরৈবেতি’-র চিকন পথ ধরে একদিন ঠিক চরম লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়!
আরেকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরো ভালো বোঝানো যাবে_ সাগরের যে অনন্ত জলরাশি, তা তো এক অনু_এক অনু জল নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে! অথচ এক অনু জল দিয়ে সাগরের সমস্ত জলকে মাপা সম্ভব হবে না, কিন্তু এক অনু জলকে বিশ্লেষণ করে তুমি সাগরের সমস্ত জলের প্রকৃত স্বরূপ জানতে পারো। এক অনু সাগরের জলে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ছাড়াও যেসব অন্যান্য খনিজ দ্রব্য রয়েছে _ সাগরের সমস্ত জলে কম-বেশি সেগুলোকেই পাবে! ঠিক তেমনি এই সমস্ত জগত সংসার যেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ওতপ্রোত রয়েছে, তাকে বাইরের দৃষ্টি দিয়ে জানা যায় না_ তাকে বাক্যে প্রকাশ করা যায় না _কোন তথ্য দিয়ে তার ব্যাখ্যা করা যায় না! শুধুমাত্র নিজেকে জেনে সেই বিরাট ব্রহ্মের স্বরূপ কি, তা জানা যায়! এইটা বোঝাতেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “ননীর পুতুল সাগরের জল মাপতে গিয়ে সাগরেই মিশে গেল!”
এই যে শিক্ষা_ এসব দীর্ঘকাল গিরি-গুহা-অরণ্যে গুরু পরম্পরায় বাহিত হোত_সাধারন মানুষ জানতও পারতো না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আগমনের পর থেকেই সমাজে সাধারণের মধ্যে এই শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়েছে। আমি তো দেখি_ বর্তমান মানুষ পূর্বের অপেক্ষা অনেক বেশি অনুগৃহীত_কারণ, তারা এই অধ্যাত্মবিদ্যা সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। এখন, এই শিক্ষা লাভ করে যে যত তাড়াতাড়ি তার জীবনে প্রয়োগ ঘটিয়ে স্বরূপের বোধে উন্নীত হতে পারবে_ সেই ধন্য! যাত্রা যখন শুরু হয়েছে শেষ তো করতেই হবে! তাই অজ্ঞানের আবরণে থেকে অকারণ ত্রিতাপ জ্বালায় ক্লিষ্ট হয়ে জন্ম মৃত্যুর আবর্তনে বারবার ঘুরে বেড়াবে _আর কতকাল? গুটিপোকা নিজেই তার চারিদিকে আবরণ তৈরি করে এবং নিজে নিজেই তার ভিতর আবদ্ধ হয়। কিন্তু যেদিন সে সেই আবরণ কেটে বেরিয়ে আসে _তখন সে হয় প্রজাপতি! আহা _ তখন তার সে কি রঙের বাহার! আর সে তখন স্বাধীন! মুক্ত আকাশে রঙিন পাখা মেলে উড়ে যায় সে! এটাই প্রকৃত মুক্তির সংজ্ঞা! আধ্যাত্মিক জগতের রহস্য বলে দিলাম তোমাদের _বোঝার চেষ্টা করো, আর জীবনে তার প্রয়োগ করো দেখবে নিশ্চয়ই সুফল পাবে। জীবন ধ্বংসমুখী না হয়ে গঠনমুখী হবে। স্বামী বিবেকানন্দ মানুষের দুরবস্থা দেখে দুঃখ করে বলতেন _”বজ্রাহত বৃক্ষ”! তোমরা আবার নতুন জীবন পেয়ে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠো! পূর্বের থেকে তোমরা অনুগৃহীত, তাই ওঠো _কাজে লেগে যাও, অকারণ আলস্য-প্রমাদে সময় অতিবাহিত করোনা!