স্থান ~ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন ৷ সময় ~ ১৯৮৬ ৷ উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ পঙ্কজবাবু, নগেন ও আশ্রমস্থ মহারাজগণ ৷

জিজ্ঞাসু :— গীতায় রয়েছে ‘চাতুর্বর্ণ্যং ময়াসৃষ্টং’–তাহলে সমাজে দেখা যায় কোন সময় ব্রাহ্মণরা শূদ্রদের লাঞ্ছনা করছে, আবার কোন সময় শূদ্ররা ব্রাহ্মণ বা অন্যদের লাঞ্ছনা করছে—তাহলে ভগবানের নিজের সৃষ্টিতে এই অসাম্য কেন ?

গুরুমহারাজ :—- হ্যাঁ, গীতায় ভগবান বলেছেন ওকথা, কিন্তু ওর পরে আরও কথা আছে সেইটা তো বললি না। ‘চাতুর্বর্ণ্যং ময়াসৃষ্টং গুণকর্ম বিভাগশঃ’। ব্রাহ্মণ বলতে তুই কাদের বুঝিস–চাটুজ্জে, বাঁড়ুজ্জে, ভটচায্ হলেই ব্রাহ্মণ, আর তা না হলে নয় ? এই ধারণাটাই তাে ভুল। গীতায় তাে কোথাও লেখা নেই বংশানুক্রমের কথা__এমনলেখা নাই তো যে, ব্রাহ্মণের ছেলে ব্রাহ্মণ হয় অথবা শূদ্রের ছেলে শূদ্র হয়। ওই শ্লোকের বাংলা করলে দাঁড়াবে ‘গুণ এবং কর্ম অনুযায়ী আমি চারটি বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) সৃষ্টি করিয়াছি।’ তা গুণ এবং কর্ম অনুসারে বিচার করে তুই কটা ব্রাহ্মণ বা কটা শূদ্রকে দেখেছিস ? তা হলেই একে অপরকে হেয় করার ব্যাপারটা বুঝতে পারতিস্।

   দ্যাখ, প্রকৃতপক্ষে যিনি ব্রহ্মৰিৎ, তিনিই ব্রাহ্মণ । কিন্তু সমাজ পরিকল্পনায় গুরুকুল বা আচার্যদের বলা হোত ব্রাহ্মণ। এঁরা সমাজের মাথা। এঁরা সমাজকে শিক্ষা-দীক্ষা দেবেন, জ্ঞান দেবেন, ভালাে ভালাে চিন্তা বা পরামর্শ দেবেন, তাছাড়া এঁরা সত্ত্ব প্রধান ব্যক্তি বা গুরু হবার যােগ্য—তাই এঁরা ব্রাহ্মণ। এবার সমাজকে এবং গুরুকুলকে রক্ষা করবে যারা, তারা ক্ষত্রিয় । এরা রজঃগুণপ্রধান এবং পেশীপ্রধান। সমাজকে খাদ্য যােগাবে, সমাজের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখবে বৈশ্য সমাজ। এরা রজস্তমােগুণসম্পন্ন। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষবাস ৰা উৎপাদনের দ্বারা সমাজের চাহিদা মেটানাে এবং সমাজকে একটা সুদৃঢ় অর্থনীতির উপর দাঁড় করানােই এদের কাজ। এবার কৃষক, শ্রমিক, মজুর—যারা শুধুই পেশীশক্তির উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ তমঃপ্রধান মানুষদের বলা হয়েছে শূদ্র। এরাই সমাজের ভিত্তিভূমি—এদের পরিশ্রমের উপর দাঁড়িয়ে থাকে সমাজ”! কারণ যে কোন শ্রমসাধ্য কাজ_ এরাই করে থাকে! তাহলে_ এই ছিল বৈদিক বর্ণবিভাগ অর্থাৎ গুণ এবং কর্ম অনুযায়ী সমাজবিভাগ। এখানে কেউ বড় ছােট নয়, সবাই সমান Important এবং কাউকে ধরে-বেঁধে একটা বিশেষ বর্ণে রেখে দেবার ব্যবস্থাও করা হয়নি। পরবর্তীকালে মধ্যযুগে অর্থাৎ রাজতন্ত্রের যুগে ব্রাহ্মণ্যপ্রথা, কৌলিন্যপ্রথা ইত্যাদি কুপ্রথা কিছু স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিজীবী মানুষ রাজশক্তির সহায়তায় সমাজে নিয়ে আসে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন চারটি বর্ণের কথা _তার সঙ্গে এই বংশানুক্রমিক ব্রাহ্মণ হবার বা শূদ্র হবার কোন সম্পর্ক নেই। সমাজের যে কোন স্তরের মানুষ তার গুণ ও কর্ম অনুযায়ী অন্য যে কোনস্তরে উন্নীত হতে পারে। এই জন্যই তো কর্মের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবৎ গীতাতেই রয়েছে কর্মবিভাগের কথা! তিন প্রকারের কর্ম রয়েছে–প্রারব্ধ কর্ম, সঞ্চিত কর্ম ও ক্রিয়মাণ কর্ম। এর মধ্যে ক্রিয়মাণ কর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এইজন্যই। মানুষের সঞ্চিত বা প্রারব্ধ কর্ম যাই থাক্ না কেন, সে ক্রিয়মাণ কর্মকে সুন্দর  করলে তার ভবিষ্যৎকে সুন্দর করতে পারবে। অপকর্ম বা অন্যায়কর্ম করতে এইজন্যই নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু সব মানুষ তাে শাস্ত্র বাক্য মানে না —মহাপুরুষদের উপদেশও গ্রহণ করেনা, ফলে সারাজীবনে এমন সব কর্ম করে_ যার ফল নিজেকেই ভুগতে হয়! আবার তাকে তামসিক গুণসম্পন্ন মানবরূপে জন্মগ্রহণ করতে হয়, আবার পরিবেশ বা পরিস্থিতি তার প্রতিকূল হয়—এইভাবে এক-একটা জীবন শুধু শুধুই অতিক্রান্ত হয়ে যায়_চেতনার উত্তরণ আর হয় না।

  তাহলে সমাজের মানুষের এই গডডালিকা প্রবাহে ভেসে যাওয়া আটকাবে কে ? যিনি আটকাতে আসেন তিনিই ভগবানের অবতার! ভগবৎশক্তিই পারে মহামায়ার জগতের কাল-স্রোত থেকে তুলে যােগমায়ার উর্ধ্বমুখী স্রোতে ফেলে জীবকে শিব করতে। এছাড়া ভগবানের কাজের সহযোগী অনেক ভক্তরা অর্থাৎ মহাপুরুষেরাও জীবকে এ ব্যাপারে কিছুটা সাহায্য করে থাকেন।

সে যাইহােক, কথা হচ্ছিল চতুর্বর্ণ নিয়ে। মানুষের শরীরে যেমন মাথা বা মস্তিষ্ক, গুরুকুলও তেমনি সমাজের মাথা। আজও যে কোন সমাজে আচার্য বা শিক্ষক যারা আছেন, যাদের সমাজকে বা সমাজের মানুষকে কিছু দেবার আছে_ তাঁরা সম্মান পান! তিনি কোন বংশে জন্মেছেন কেউ তা দেখে না তো! কত ভট্টচার্য, বামুনের ছেলে হাজরা বা থান্দার বা মুর্মু শিক্ষক মহাশয়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছে! এখন তাে ঐ অর্থে জাতিভেদ প্রথা নেই! হয়তাে কোথাও কেউ মানছে, কিন্তু সমাজের সর্বস্তরে আর ছোঁয়া-ছুঁয়ি, বর্ণের ভেদাভেদ প্রথা নেই তো! আর থাকবে যদি তাহলে আমি এলাম কেন ? ওসব ভাঙতেই তো এবার আমার আসা!

দ্যাখ্, গুরুকুল হোল সমাজের মাথা, আর মাথায় আঘাত পড়ার উপক্রম হলেই দেখবি হাত দুটো উঠে গিয়ে মাথাকে রক্ষা করতে চায়। তেমনি সমাজশরীরেও ক্ষত্রিয়কুল স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই ব্রাহ্মণকুলকে রক্ষা করে থাকে। এই সহজতা তার মধ্যে understanding বা বােঝাপড়া হলেই জানতে হবে গােলমাল! যতদিন এই সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে ঘটে যাচ্ছে ততদিনই মঙ্গল। এবার মস্তিষ্ককোষ বা পেশীদের শক্তি জোগায় কে ? রস-রক্ত তৈরী করে শরীরের পুষ্টি ও শক্তি জোগায় বুক ও পেটের অভ্যন্তরস্থ যন্ত্রগুলি। তারা খাদ্য থেকে খাদ্যরস তৈরী করে রক্তকে শােধন করে, তারপর রক্তের সঙ্গে খাদ্যরস বা পুষ্টিরসকে শিরা-উপশিরার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন কোষে কোষে ছড়িয়ে দেয়। ঠিক তেমনি বৈশ্যকুলও সমাজশরীরে এমনিভাবেই খাদ্য ও প্রয়ােজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়ােজনে Transportation-এর দ্বারা সমাজের সর্বস্তরে পৌছে দেয়। এবার আসি শুদ্রের কথায়! যেমন মানব-শরীরের সমস্ত অঙ্গগুলােকে ধরে রাখে পদদ্বয়, ঠিক তেমনি সমাজশরীরের সর্বস্তরের মানুষকে শ্রম দিয়ে, সামর্থ্য দিয়ে, সেবা দিয়ে যারা ধরে রাখে— তাদেরকেই শূদ্র বলা হয়েছে। এরা তমঃপ্রধান ব্যক্তি, শারীরিক পরিশ্রম দ্বারাই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। অন্যকিছু কাজ করতে দিলেও এরা করতে পারবে না—নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ীই কর্ম করবে। ছােট জাত বলে শ্রমসাধ্য কাজ করানাে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। যে কোন কুলের(উচ্চকুল বা নিম্নকুল) লােকই হোক না কেনশুদ্র-স্বভাববিশিষ্ট হলেই সে এই ধরণের কাজ খুঁজে নিয়ে করবে।(গুরু মহারাজ বলেছিলেনপৃথিবীতে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা “জংবাজ” বা যুদ্ধবাজ। যাদের কাজ‌ই হোল গোটা পৃথিবীতে কোথায় যুদ্ধ হচ্ছে তা খুঁজে খুঁজে বের করে সেখানে গিয়ে যুদ্ধ করা! শুনতেই কেমন আশ্চর্য লাগছে না!)

মানবশরীর হচ্ছে পৃথিবীগ্রহের সবচেয়ে উন্নত শরীর। ফলে সমাজের যে কোন পরিকাঠামো,মানব-শরীরের গঠন অনুযায়ী হলে, সমাজের মঙ্গল হবে বা তার উৎকর্ষতা হবে। মহাপ্রকৃতির নিয়মেও এই ব্যাপারটা রয়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, এই মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্রমণ্ডলী, নীহারিকাপুঞ্জকে কোন বিরাট চক্ষু দিয়ে দেখলে যেন মনে হয়, এক বিরাট পুরুষ শুয়ে রয়েছে। হয়তাে পুরাণে বিষ্ণুর অনন্ত শয্যায় শয়ন এই ধরনের ভাবনা থেকেই বর্ণিত হয়েছিল। এছাড়া মহাকাশের কালপুরুষের কল্পনাও হয়তাে এখান থেকেই এসেছিল।

যাইহােক যা বলছিলাম, মানবশরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সমস্ত অঙ্গেরই পরিপূর্ণতা দরকার। মস্তিষ্ক, হৃদয় ও পেশীশক্তির মধ্যে কোনটার অপুষ্টি হােক কেউ কি চায়? নিশ্চয়ই_ না! কারণ তা হোলে তাে শরীরটাই অপুষ্ট হবে, তেমনি সমাজশরীরেরও সর্বস্তরেই উৎকর্ষতা দরকার। নিজ নিজ গুণ এবং স্বভাব অনুযায়ী কর্ম করে যেতে হয়—এতে বিরােধ হবে কেন? এই বিরােধ করতে গিয়েই যত ঝামেলা। কোন সময় একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সমাজে বংশানুক্রমিক কোন প্রথা এনেছে বলে আজও তা মানতে হবে নাকি ! বিবেকবান মানুষ তাে প্রশ্ন তুলৰেই, এর পিছনে ইতিহাস অথবা বিজ্ঞান কি, তা জানার চেষ্টা তো করবেই। যদি যুক্তি খুঁজে পায় তাে মানবে, অন্যথায় কুসংস্কার ইত্যাদি বলে ছুড়ে ফেলে দেবে। এইভাবেই সমাজে বিবর্তন হয়ে চলেছে—বিভিন্ন সমাজদর্শনের বিবর্তন, অর্থনৈতিক পরিকাঠামাের বিবর্তন, উৎপাদনের বিবর্তন–আর এটাই ক্রম। পৃথিবীগ্ৰহ এইভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে পূর্ণতার দিকে, সম্পূর্ণতার দিকে। সুতরাং চরৈবেতি–চরৈবেতি ।

      তবে দ্যাখ, মানুষ নিজের প্রয়ােজনে বারবার মহাজাগতিক নিয়মগুলিকে ব্যাহত হয়তো করেছে, কিন্তু তারজন্য তাকে মাশুলও দিতে হয়েছে । সমাজে বংশানুক্রমিক বিভিন্ন ধারার প্রচলন করেছে, জাতিভেদ প্রথা_অস্পৃশ্যতার ন্যায় কুপ্রথা এনেছে!  এসবের দ্বারা বেশ কিছুকাল সমাজপতিরা অপরের উপর প্রভাব খাটিয়ে হয়তাে সুখভােগ‌ও করেছে, কিন্তু তার শাস্তি হিসাবে বারবার বিদেশী-বহিরাগতরা, এই দেশের রান্যবর্গ এবং সমাজপতিদেরকে মেরে ফেলেছে এবং এইভাবে দেশটাকে বারবার বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে হয়েছে। এটা ইতিহাস জানবি। সমাজে নিম্নবর্গ বলে যাদের অবজ্ঞা আর অবহেলা করা হয়েছিল, তারা ত কখনোই কোনদিন বিদেশী শাসকদের বিরুদ্ধে উচ্চবর্গের সাথে একসাথে লড়াই করেনি । যদি কখনও কোথাও করে থাকে __ সে নিজেদের গােষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য _সমগ্র দেশ রক্ষার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেনি! বিদেশীদের ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের এটাই অন্যতম কারণ ! ইংরেজ বা মুসলিম শাসকেরা সাধারণ মানুষকে ধর্মান্তরিত করেছিল ঠিক‌ই কিন্তু বিনিময়ে মর্যাদা দিয়েছে, চাকরী দিয়েছে, নিরাপত্তা দিয়েছে! যেটা তারা তার স্বদেশী, রাজা বা সমাজপতিদের কাছ থেকে কখনও পায়নি। ফলে, তারা বিদেশীদের মেনে নিয়েছে! জানিস তাে_ মানুষ অনেক কিছু সহ্য করতে পারে—অত্যাচার, অভাব, দারিদ্র! কিন্তু সইতে পারেনা__ "অবজ্ঞা" আর "অবহেলা"। তােরাও যদি মানুষের কাছে ভাল ব্যবহার আশা করিস _তাহলে এ দুটো থেকে সর্বদা সাবধান থাকবি। মানবের উচিত মানুষের সঙ্গে মানবোচিত আচরণ করা_ তাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা নয়! কিন্তু মানুষের চেতনার তো এখনও তেমন বিকাশ ঘটেনি, তাই পৃথিবীতে এখনও এসব চলে। আগামীতে অর্থাৎ পৃথিবীগ্রহের মানুষের চেতনার উন্নতি ঘটলে মানুষ দেবতার ন্যায় না হােক_অন্ততঃ মানুষের ন্যায় আচরণ করবে। তবে তা করতে হলেও এখনও এই সমাজে অনেকবার মহাপুরুষদের জন্ম নিতে হবে_ নাহলে হবে না। তবে সমাজকে সুস্থিত, সুস্থ এবং বলিষ্ঠ করতে গেলে সমাজপতিদের দেওয়া সামাজিক বিধান ত্যাগ করে প্রকৃত সমাজবিজ্ঞানী অর্থাৎ ঋষিদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করতে হবে! কারণ মহাজাগতিক বা মহাপ্রাকৃতিক নিয়মকে by লঙ্ঘন করে কিছু করতে গেলেই নানা বিভ্রাট হৰে,_ আর হচ্ছেও তা, তবু মানুষ সেগুলি থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না_এটাই দুঃখের!!

   বর্তমান মানবসমাজে প্রচলিত এক-একটা সমাজ দর্শনের প্রয়োগ _যেন এক-একটা Experiment। মানুষগুলােকে যেন ঠিক গিনিপিগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এক-একটা দেশে এক-একরকম সমাজ-দর্শন চালাতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলতে হচ্ছে—কষ্ট দিতে হচ্ছে। কি পরিহাস! যাদের জন্য সমাজদর্শনটি প্রতিষ্ঠা, তারাই মরে যাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছে আর দার্শনিকের বা দর্শন প্রয়ােগকারী নেতার Experiment হচ্ছে। তারপর হয়তাে তিনি মৃত্যুকালে নােট লিখে যাচ্ছেন যে, এই ধরনের Experiment করাটা ঠিক হয়নি’, বােঝ কাণ্ডটা ! আর সাধারণ মানুষও তো ওতটা উন্নত নয় । তাছাড়া বেশীর ভাগ মানুষই পৃথিবী, সমাজ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না, নিজের নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে থাকতে ভালবাসে। ফলে উন্নত চিন্তা করার ক্ষমতাটাই লােপ পেয়ে যাচ্ছে। ঐ জন্যই মানুষকে মাঝে মাঝে সুউচ্চ পর্বত অথবা দিগন্ত বিস্তৃত গভীর সমুদ্র ইত্যাদির সামনে গিয়ে বসা উচিত। সীমাহীন উদার আকাশ, সুউচ্চ পর্বতের গাম্ভীর্য, গভীর জলধি মানুষের মনে বিশালতার স্পর্শ এনে দেয়। দ্যাখ, মনকে বা হৃদয়কে সঙ্কুচিত করে রেখে লাভ কি? ছােট মন নিয়ে কি বড় কাজ করা যায় ? বড় কাজ করতে হলে বিশাল হৃদয়, বড় মনের প্রয়ােজন হয়। তা তােরাও ঐরকম হ, সমাজ সুস্থির হােক—উন্নত হােক সমাজব্যবস্থা, তােদের মত নবযুবকদের কাছে সমাজের এটাই তাে প্রত্যাশা।