স্থান ~ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ নগেন, গঙ্গাবাবু, স্বামী স্বরূপানন্দ মহারাজ ইত্যাদি ।

জিজ্ঞাসু:—ভাগ্য বা অদৃষ্ট এই শব্দগুলো ব্যবহার হয়—কিন্তু এগুলি কি ঠিক, কারণ কর্ম না করলে কি করে একটা মানুষের উন্নতি হবে ?

গুরুমহারাজ:—দ্যাখাে, এই বিতর্ক শুধু আজকের নয় বহুকাল ধরে এই একই point-এর উপর বহু বিতর্ক হয়েছে। কিছু তার্কিকরা তর্ক করুক বা করতে থাকুক – তােমরা তার্কিক হয়াে না – তােমরা বােধ কর—এটাই আমার আন্তরিক ইচ্ছা।

প্রকৃতপক্ষে কর্ম এবং অদৃষ্ট বলে পৃথক কিছুই নেই। শুধু কর্ম আছে_ আর আছে তার কর্মফল, এটাকেই “অদৃষ্ট” নাম দেওয়া হয়েছে, যা অ-দৃষ্ট ! জন্ম-জন্মান্তর ধরে মানুষ কত কর্ম করে চলেছে যেন এটা একটা ধারাবাহিক কর্ম প্রবাহ! সেই কৃতকর্মেরই ফল তাকে ভােগ করতে হয় ধারাবাহিকভাবে । সেটা কখনও খারাপ হয় আবার কখনও ভাল হয়। কারণ খারাপ বা ভাল হওয়াটা আবার নির্ভর করছে তুমি পূর্বে কেমন কর্ম করে রেখেছো তার উপর। ব্যাপারটা বুঝতে পারলে ! যাইহােক _এই প্রসঙ্গে একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি শােন।

কাশেমবাজারের মহারাজা কৃষ্ণকান্ত নন্দী প্রথম জীবনে একজন কৃষক ছিলেন। গঙ্গার ধারে তার পানের বরজ ছিল। পানক্ষেত বা ‘পান-বরজ’ কে চারিদিক ঘন বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে হয় এবং মাথাটাও নানান কিছু দিয়ে আবৃত রাখতে হয়-বাইরের হাওয়া-বাতাস,সূর্যালোক ইত্যাদি আটকাতে পারলে_ তাতে পানের উৎপাদন ভাল হয়। সে যাইহােক, রামপ্রসাদের গানে একটা লাইন আছে “ওই যে পান বেচে খায় কৃষ্ণ পানতি,

তারে দিলে জমিদারি”॥ তা কৃষ্ণকান্ত কি করে জমিদারি পেল সে ঘটনাটাই বলছি। পলাশীর যুদ্ধের just পরবর্তী সময়ের ঘটনা। ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া দেশী সিপাহিরা একজায়গা হয়ে তখন ঐ অঞ্চলে(কাশেম বাজার) চারিদিকে ‘মার-মার’ শব্দে চোরাগোপ্তা ইংরেজদের তাড়া করে মারছিল। কারণ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালালেও তাদের হাতে গুলি-গোলা-বন্দুক তো ছিল_তার‌ও তো একটা “জোস”কাজ করে! তাছাড়া ইংরেজসৈন্য‌ও তো তখন আর বেশী ছিল না— ফলে এদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইংরেজদের তখন করুণ অবস্থা! খবর দিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ইংরেজ অফিসারেরা যে যেখানে আছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন সকলে কলকাতায় চলে আসে। কারণ কলকাতা তখন ইংরেজদের রাজধানী, ওখানে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ রয়েছে বা সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, তাই এই ব্যবস্থা। ওয়ারেন হেস্টিংস নামে একজন ইংরেজ অফিসার(তখনও উনি লর্ড হন নি) তখন ছিলেন মুশিদাবাদের ভগবান গােলায়। কিছু কর্ম উপলক্ষে তিনি ওখানে গিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে সিপাহি-বিদ্রোহ শুরু হয়েছে আর ফিরতে পারেননি। বিপদ বুঝে রাতের অন্ধকারে একটা বজরায় কয়েকজন দেহরক্ষী নিয়ে হেষ্টিংস সাহেব জলপথে ফেরার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু নবাবের সিপাহিরাও তাে খবরটা জানে যে, হেষ্টিংস এই পথেই ফিরবেন। ঠিক সিপাহিরা কাশেমবাজার এলাকায় পথিমধ্যে আটকালাে বজরা। দেহরক্ষীদেরকে মেরে সিপাহিরা যখন হেষ্টিংসকে আক্রমণ করতে যাবে—উনি গঙ্গায় দিলেন ঝাঁপ। সিপাহিরাও পশ্চাদ্ধাবন করল কিন্তু রাতের অন্ধকারে আর খুঁজে পেলনা। ভাবল পরের দিন সকালে দুদিকের পাড় বরাবর খুঁজলেই জীবিত বা মৃত সাহেবকে পাওয়া যাবে।

এদিকে হেষ্টিংস সাঁতারে পটু ছিলেন, তিনি সিপাহিদের চোখ এড়িয়ে ডুব সাঁতার দিতে দিতে ওপারে গিয়ে উঠলেন। ঐ সমস্ত অঞ্চলে অনেকেই পান চাষ করতো! ফলে উনি একটা পানবরজের বেড়া ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন এবং ভিতরে কাটা ঘাস ছিল _তারমধ্যে শরীরটা চাপা দিয়ে বসে রইলেন। সকাল হতেই গঙ্গার দুদিকে সিপাহিরা খোঁজ শুরু করল। এদিকে সকালে কৃষ্ণকান্ত পানবরজ পরিষ্কার করতে ভিতরে ঢুকেছে, আগের দিনের কাটা ঘাসগুলো সরাতে গিয়ে দেখল কাদামাখা লালমুখাে এক সাহেব। প্রথমটায় ভয়ে চীৎকার করে উঠল কৃষ্ণকান্ত! তারপর সাহেবের ভয়ার্ত কাতর অনুনয় দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পারল সে। দ্যাখাে, মানুষ হয়তো সব ভাষা বােঝেনা কিন্তু আঙ্গিক বােঝে। আর প্রাণভয়ে ভীত মানুষের আর্তি সে তাে বােঝা যাবেই। তাছাড়া ভারতীয় মানসিকতাই হচ্ছে আশ্রিতকে আশ্রয় দেওয়া, বিপন্নকে রক্ষা করা। ফলে ও আর কিছু না বলে হেস্টিংসকে আবার ঘাসচাপ দিয়ে রেখে দিল। কিছুক্ষণ পরেই সিপাহিরা খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে হাজির। নিয়ম হচ্ছে পানবরজে যখন তখন বা যে কোন অবস্থায় ঢোকা নিষেধ, শুচি অবস্থায় ঢুকতে হয়। তাই সিপাহিরা পানবরজের ভিতরে ঢুকতে পেল না, কৃষ্ণকান্তকে জিজ্ঞাসা করল সে কি কোন সাদা চামড়ার সাহেবকে দেখেছে। কৃষ্ণকান্ত বলে দিল—‘না সে কাউকে দেখেনি’। সিপাহিরা বলে গেল যদি কোন সাহেবকে দেখে তাহলে যেন তাদেরকে খবর দেওয়া হয় – এই বলে তারা চলে গেল।

কৃষ্ণকান্ত সাহেবের ওখানে থাকার খবরটা কাউকে জানাল নাএমন কি তার স্ত্রীকেও না ! কারণ ও বুঝতে পেরেছিল by-chance যদি নবাবের সিপাহিরা জানতে পারে তা’হলে সাহেব তাে মরবেই সেও রেহাই পাবেনা। তাই স্ত্রীকে বলে দিল যে, সে ক’দিন বাড়ী যাবেনা। যেন তার খাবার ও পানীয় ঐ পানক্ষেতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওর স্ত্রী পরিমাণমত খাবার পাঠাতো– তাতে কৃষ্ণকান্ত বকাবকি করে আরও বেশী খাবার আনিয়ে নিতো। খাবার কি ছিল জানতো, ভিজেভাত অর্থাৎ পান্তাভাত আর বেগুন পােড়া, পেঁয়াজ লঙ্কা নুন দিয়ে মাখা। প্রাণের তাগিদে সাহেব কৃষ্ণকান্তের সঙ্গে ঐ খাবারই কয়েকদিন আনন্দের সঙ্গে খেয়ে প্রাণে বেঁচে থাকলেন। এদিকে কিছুদিনের মধ্যেই ইংরেজ সৈন্যরা নবাবের বিদ্রোহী সৈন্যদেরকে দমন করে ফেলল। বিজয়ী ইংরেজ সৈন্যদের বজরা গঙ্গা বরাবর লুকিয়ে বেঁচে থাকা সাহেবদের খুঁজতে বেরােল, আর বজরা থেকেই চোঙা লাগিয়ে ঘােষণা করতে লাগল যে__’সিপাহি বিদ্রোহ থেমে গেছে, যে সমস্ত ইংরেজরা এখনও জীবিত আছে তারা যেন বজরায় চলে অাসে।’ হেস্টিংস তাে ঘােষণা শুনেই কৃষ্ণকান্তকে ধন্যবাদ জানিয়ে বজরায় উঠে পড়লেন।

নবাবের সঙ্গে যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধ মিটে গেলে ভয় পেয়ে তখনকার অনেক সাহেব অফিসার স্বদেশে পালিয়ে গিয়েছিল । ফলে পরবর্তী শাসনব্যবস্থা ঠিক রাখতে এবং যোগ্যতার বিচারে সেরা হ‌ওয়ায় হেস্টিংসকেই লর্ড করা হল। সিংহাসনে বসে প্রাথমিক ঝামেলা মিটিয়েই হেষ্টিংস হুকুম দিলেন কাশেমবাজার এলাকায় “কিসনাকানতা” বলে এক পানচাষী রয়েছে তাকে কলকাতায় নিয়ে এস, তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে। দ্যাখো, ইংরেজ হলেও সাহেব কিন্তু প্রাণদাতার কথা ভােলেনি! ঘটনা ঘটল কি, পুরস্কার পাবার লোভে আসল কৃষ্ণকান্ত ছাড়াও আরও দু-তিনটে কৃষ্ণকান্ত হাজির হ’ল কলকাতায়। সাহেব পড়লেন মহা-মুস্কিলে। এখানকার লােকের চোখে যাদের সাহেব দেখা অভ্যেস নেই, তাদের যেমন সাহেবদেরকে প্রায় একই রকম দেখতে মনে হয় __তেমনি বিদেশীদের চোখেও ইণ্ডিয়ানদের প্রায় একই রকম দেখতে লাগে! তার উপর সাহেব আবার বিপন্ন অবস্থায় পানবরজের ভিতর অন্ধকারে কৃষ্ণকান্তকে দেখেছিলেন এবং সেইসময়ই ওর নামটা জেনে নিয়েছিলেন ফলে ঠিক চিনতে পারছিলেন না– কোনটা আসল কৃষ্ণকান্ত।

বুদ্ধিমান হেস্টিংস সাহেব তখন একটা কৌশল করলেন। এক-এক জনকে ডেকে পাঠালেন তার গােপন কক্ষে আর জিজ্ঞাসা করলেন “টুমি আমাকে বাঁঠাইয়াঠিলে ?” সে বলল “হ্যাঁ হুজুর! আমিই তো তােমাকে বাঁচিয়েছিলাম!” তখন সাহেব জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা বলােটো—টুমি আমাকে কি খাওয়াইয়াঠিলে ?” সে বলল-“কেন সাহেব তােমাকে হালুয়া খাইয়েছিলাম।” সাহেব অনুচরদের আদেশ দিলেন, “ইহাকে ডশ্ ঘা বেট্ লাগাইয়া পিঠনের দরজা ডিয়া বাহির করিয়া ডাও।” এইভাবে একে-একে নকল কৃষ্ণকান্তরা ধরা পড়ে গেল। এবার আসল কৃষ্ণকান্তের পালা। সে এসে সাহেবকে দেখে চিনতে পারছে না, কাদা- মাখা খালি গায়ে সাহেবকে দেখেছে আর এখন দেখছে ব্যাণ্ড পার্টির লোকেদের মতো ঝকমকে পােষাক পরা, মাথায় হ্যাট্ লাগানাে ঝকঝকে সাহেবকে। তবুও বলল-“কি সাহেব তােমাকে যে চেনাই যাচ্ছে না? আমাকে চিনতে পারছাে তাে—আমি কিসনাকানতা(পানবরজে সাহেব তাকে ঐ নামেই থাকতো)।’ সাহেবও একটু ধারণা করতে পারছিল–তবু জিজ্ঞাসা করল “আঠঠা বোলোটো টুমি আমাকে কি খাওয়াইয়াঠিলে ?” কৃষ্ণকান্ত তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল—’কেন সাহেব মনে নেই_ঠান্ডা পােলাও আর বেগুন কা ভর্ত্তা?’ ব্যাপারটা হচ্ছে কৃষ্ণকান্তর দেওয়া জলছাঁকা ভাত সাহেব নাম দিয়েছিল, ‘ঠাণ্ডা পােলাও’৷ যাইহােক, একথা বলাতেই সাহেবের মনে পড়ে গেল এবং বুঝতে পারলেন যে, এই সেই আসল কৃষ্ণকান্ত, তখন সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে কাশেমবাজার এলাকার জমিদার এবং ধীরে ধীরে পাশাপাশি আরও কিছু জমিদারিকে include করে একেবারে “মহারাজা” করে দেওয়া হয়েছিল তাকে(সম্ভবত বুদ্ধিমান কৃষ্ণকান্ত, তার বয়সের কথা বিবেচনা করে পুত্রের নামে উইল করে নিয়েছিলেন)। তবে দ্যাখাে, পূর্বজন্মের সুকৃতি এবং সংস্কার এমনি যে, সাধারণ অবস্থা থেকে মহারাজা হয়েও কিন্তু তিনি Successful ছিলেন। ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে জানা যায় তিনি সুশাসক ছিলেন এবং তাঁর শিল্প-সংস্কৃতিতেও গভীর রুচিবােধ ছিল।

জিজ্ঞাসু:— আপনি বিদেশে গিয়ে তাে উপনিষদের কথাই বলেছেন ?

গুরুমহারাজ :– উপনিষদ বলতে কি বুঝিস ? ঋষিবাক্যই উপনিষদ। যাঁরা ব্ৰহ্মকে জেনেছিলেন বা বােধ করেছিলেন, সেই বােধজাত সত্য যখন তাঁরা বাক্যে প্রকাশ করেছিলেন তখন সেটাকেই বেদ বা উপনিষদ বলা হয়েছে। বহুদিন পর্যন্ত ওটা গুরুপরম্পরায় শ্রুতি হিসাবে ছিল, হয়তো পরে কেউ(ব্যাসদেব বিভাজন করেছিলেন) ওগুলি লিপিবদ্ধ করেছে—যেটা তােরা পাচ্ছিস। তাহলে আজও কোন বােধি ব্যক্তি, ব্ৰহ্মজ্ঞ ব্যক্তি যা বলবেন সেটা তাে উপনিষদই। কেন __স্বামী বিবেকানন্দর বাণী কি আধুনিক বা যুগােপযােগী বেদবাক্য অথবা উপনিষদের বাণী নয় ? সত্য সবসময়ই সত্য। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশ-কাল-পাত্রে শুধু পরিবেশনার ভঙ্গিমা পাল্টাতে হয়– Representation-টা অন্যরকম হয়–এই যা তফাৎ। এখন যেমন আমাকেপ্রায় সবকিছুরই ব্যাখায় জড়বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে বলতে হচ্ছে!

আর স্বদেশে-বিদেশে বলতে কি বলতে চাইছিস ? উপনিষদ কি একাই তােদের সম্পদ? তা__ তোদের কজন উপনিষদ জানে ? দ্যাখ্, সত্য সবার জন্য। সত্য, জ্ঞান এগুলি সবার সম্পদ। যিনি বােধ করেছেন—সত্য তাঁর, যিনি জেনেছেন–জ্ঞান তাঁর। এখানে Partiality কিভাবে হবে ? কোন ঋষি তো একথা কখনও বলেন নি ? সম্বোধন করেছেন ‘শৃন্বন্ত বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ’—এভাবে! আর তােরা এসব না বুঝে শুধু একটা Sentiment-কে বয়ে বেড়াচ্ছিস যে, বেদ-উপনিষদ ভারতের অর্থাৎ তোদের। ‘এই ধরণের Sentiment-এর কোন মূল্য নেই আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে। সামাজিক ক্ষেত্রে এর অবশ্য একটা মূল্য রয়েছে, স্বাভিমান বা স্বাদেশিকতাবোধ তৈরী হয় এতে। দ্যাখ, এই ধরণের ভাবনা-চিন্তাকেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ‘মতুয়ার বুদ্ধি’ বলতেন। আমার মতটা ঠিক আর ওদেরটা ঠিক নয় এটাই মতুয়া-বুদ্ধি। কিন্তু সত্য বা পরাজ্ঞান কখনও কোন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেনি। তাই বেদ-বেদান্ত কোন একটি মতের জন্য নির্দিষ্ট–এটা হতে পারে না ৷ সব মত বা সব আদর্শই এতে সিদ্ধ হয় । এইজন্যই আমি কখনও কাউকে মতুয়া হতে বলিনা, আমি বলি তােরা সমস্ত মত ও মতবাদের উর্ধ্বে ওঠ। আমি মানুষকে শেখাই—How to Survive ! Art of Life এবং Art of Living এখানে শেখানাে হয়। তাই এই বনগ্রাম আশ্রমকে বলতে পারিস Survival Camp ।

জানবি, যা চিরন্তন বা শাশ্বত তা কোন মত নয় ফলে তা সার্বজনীন। সকলেই ব্রহ্মের প্রকাশ এবং সকলেই পারে ব্রহ্মকে বােধ করতে। আবার যে কোন দেশের যে কোন সম্প্রদায়ের মানুষই হােক না কেন, তাদের জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে– ঐ সত্য বা ঐ জ্ঞানে প্রতিষ্ঠ মহামানবের কোন অসুবিধাই হয় না। কারণ তত্ত্বত সেই ‘এক’ই আছে, বৈচিত্র্য শুধু বহিরঙ্গে। কেউ ছােট-বড় নয়, কেউ হীন-নীচ নয়, সকলেরই উত্তরণের পথ খােলা । যে যে অবস্থায় রয়েছে, সে সেই অবস্থা থেকেই যদি উত্তরণের পথে যাত্রা শুরু করে, তাহলে তারই হবে অর্থাৎ সে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। আর যার প্রচেষ্টা নেই _সে জড়বৎ,সে এখানেই পড়ে থাকবে।

তবে, এই উত্তরণের প্রচেষ্টা জাগানাের জন্যই মানবজীবনে প্রয়ােজন হয় গুরুর। ঈশ্বরই গুরুরূপে মানুষের কাছে আসেন—নাহলে যে জীবের চেতনা চৈতন্যমুখী হবে না। জীবের সাধ্য কি রূপ-রসাদির, লােভ-মায়া-মোহাদির ফাঁস কাটিয়ে উত্তরণের পথে পা বাড়ায় ! এই অর্থেই ঈশ্বর করুণাময়, আর এইজন্যই মর্ত্তের গুরুই ভগবান। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন উত্তম বৈদ্যের কথা। এঁরা নিজে ব্রহ্মানন্দরস ভােগ করেন আর তার চারপাশের জনদেরও জোর করে সেই রস পান করতে বাধ্য করান। এই ‘জোর’টা হচ্ছে প্রেমের ‘জোর’ । এমন অপার্থিব প্রেমের জোয়ারে ফেলে দেন তাদের, যে তারা তাতেই হাবুডুবু খেতে থাকে, আর সেই ফাঁকে তিনি তাদেরকে দিয়ে প্রয়ােজনীয় কাজটা করিয়ে নেন—উত্তরণের পথ ধরিয়ে দেন।

কল্প থেকে কল্পান্তরে এই লীলাই বৈচিত্রপূর্ণভাবে হয়ে চলেছে– এখন দ্যাখা যাক্_ মা জগদম্বা আরও কত কি করেন !