সময় ~ ১৯৮৬ সাল । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ মিশনস্থ মহারাজ ও বহিরাগত ভক্তবৃন্দ ।

জিজ্ঞাসু :– Operation ব্লু-ষ্টারে যে হাজার হাজার military মারা গেল — এটা কি ইন্দিরা গান্ধীর নীতির ব্যর্থতা নয়?

গুরুমহারাজ :– দূর পাগল! ঘটনার সত্যতা না জেনে মন্তব্য করলে বোকা সাজতে হয়। ‘অপারেশন্ ব্লু-ষ্টার’ কেন, কোন ষ্টারই ইন্দিরা গান্ধীর কিংবা ইণ্ডিয়া গভর্নমেন্টের করার কোন কথাই ছিল না ! কারণ স্বর্ণমন্দিরকে কেন্দ্র করে যে অত অস্ত্র-শস্ত্র জোগাড় হয়েছিল বা ভিন্দ্রেনওয়ালের নেতৃত্বে যে হাজার হাজার যুবক আত্মদানে প্রস্তুত হয়ে ওখানে সমবেত হয়েছিল, এরকম কোন খবরই C.B.I-এর কাছে ছিল না ! সুতরাং ইন্দিরাগান্ধী তো কিছুই জানতো না। রাশিয়ার K.G.B খবরটা পায় এবং মস্কো-ই প্রথম hot-line-এ ইন্দিরাগান্ধীকে খবরটা দেয়! আর শুধু খবর‌ই নয়_ হুঁশিয়ারী দেয় যে, যদি India Govt. স্বর্ণমন্দির থেকে জঙ্গিদের বের না করে তাহলে ওরা আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে স্বর্ণমন্দির উড়িয়ে দেবে! এইসব হুমকি শুনে ইন্দিরা গান্ধীর ঘুম ছুটে যায়, উনি রাষ্টপতির সঙ্গে জরুরী পরামর্শ করে সেনা অভিযান করার কথা ভাবেন। প্রথমে ঠিক হয় যে, মিলিটারী দিয়ে মন্দিরপ্রাঙ্গণ ঘিরে শিখ regiment-কে সামনে রেখে ওখানে থাকা শিখ জঙ্গীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হবে। শিখ regiment সামনে থাকলে বিদ্রোহীরা হয়তো গুলি চালাবে না; বিনা রক্তপাতে operation successful হবে। কিন্তু ফল হল উল্টো। প্রথম যে শিখ মিলিটারি দলটি স্বর্ণমন্দিরে ঢোকে তারা ওখানে গিয়েই বাকি মিলিটারীদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণমন্দির থেকে বর্ষিত হতে থাকে অত্যাধুনিক অস্ত্রসমূহের গুলি এবং গোলা। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমেই কয়েকশ ভারতীয় সৈন্য বিনা যুদ্ধে মারা পড়ে সেনারা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়! পরে final operation-এর সময় জঙ্গীরা সহ প্রথম ব্যাটেলিয়ানের শিখ মিলিটারীরা যারা স্বর্ণমন্দিরে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তারাও মারা পড়ে। এইভাবেই অত ভারতীয় সৈন্যের অকারণে প্রাণ যায়।

এখানে দুটো ব্যাপার লক্ষণীয়, এক — ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অক্ষমতা এবং দুই_ রাজনৈতিক নেতাদের অদূরদর্শিতা। কারণ রাশিয়ার গোয়েন্দা দপ্তর যে খবর রাখেতারা যতটা সচেতন, ভারতের গোয়েন্দা দপ্তর তার নিজের দেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-রক্ষার ব্যাপারে ততটাই উদাসীন! কারণ লঙ্গওয়াল এবং ভিন্দ্রনওয়ালের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে যে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিয়েছিল — সেটা কতটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে বা তার ভবিষ্যৎ কি হতে পারে — এ ব্যাপারে ভারতীয় গোয়েন্দাদপ্তর বা কূটনীতিক মহলের কোন ধারণাই ছিল না। রুশ গোয়েন্দা দপ্তর এই ধারণাটা দিল! ওরা বোঝালো যে, পাঞ্জাব যদি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় পাকিস্তান তাকে সম্পূর্ণ মদত দেবে! এমনিতেই পাকিস্তানিরা প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করছে — এরপর প্রয়োজনে সৈন্য সাহায্য করবে। এদেরকে মদত দেবে আমেরিকা_ আমেরিকা হয়তো জম্মু-কাশ্মীরসহ পাঞ্জাবকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণাই করে দেবে। ফলে American Lobby-তে নতুন একটা দেশের সংযোজন হবে এবং পাঞ্জাবে যদি আমেরিকা ঘাঁটি গাড়তে পারে_ তাহলে সে ভারত ও পাকিস্তান দুটোকেই দুর্বল করে দেবে এবং Russian Lobby দুর্বল হয়ে যাবে। এ সমস্ত হচ্ছে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। এই হিসাব নিকাশ অনুযায়ীই Moscow হুমকি দিয়েছিল যে, ভারত যদি স্বর্ণমন্দির আক্রমণ না করে_ তাহলে তারা ওখান থেকেই মিসাইল চালিয়ে স্বর্ণমন্দির ধ্বংস করে দেবে।

আর একটা লক্ষণীয় ব্যাপারটা হোল — ভিন্দ্রনওয়ালের নেতৃত্ব ! শিখজাতি এমনিতেই বীরের জাতি, ওরা লড়াই করতে জানে ! ধর্মীয় sentiment ওদের কাছে এতটাই বড় যে, তার জন্য ওরা হাসতে হাসতে প্রাণ দিতে পারে। শিখজাতির এই দুর্বলতম স্থানটিতেই সুড়সুড়ি দিয়েছিল ভিন্দ্রনওয়ালে! সে নিজেকে একাদশতম গুরু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল শিখ সমাজে(যদিও গুরু গোবিন্দ সিং ঘোষণা করে গেছেন যে,দশম গুরু হিসাবে শিখদের তিনিই শেষ গুরু!)। সাংগঠনিক ক্ষমতা অবশ্যই ছিল তার, ফলে সে কিছুদিনের মধ্যেই অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিল। এমন একটা অবস্থা হল যে, ওর কথায় হাজারহাজার তরুণ শিখ প্রাণ পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ধর্মের সঙ্গে politics-কে ঢোকাতে গিয়েই ও বেচারা তরুণগুলোকে বিপথগামী করল, আর নিজেরও ঐরকম চরম পরিণতি হোল। ভিন্দ্রনওয়ালের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেনি_ তাই ধর্মজগতের নির্বাচিত গুরু সে ছিল না ! আবার রাজনীতির প্রথম সারির নেতাও সে নয়। তাছাড়া কোন ভাবেই ওর মতটা ন্যায় বা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না, তাই ভিন্দ্রনওয়ালে ব্যর্থ হয়েছিল!

 ওখানে duty-রত একজন Military Officer আমাদের আশ্রমের ভক্ত, যে কদিন অপারেশন চলেছিল time to time আমাকে টেলিফোনে ওখানকার সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছিল। ফলে আমি তোমাদের প্রকৃত ঘটনাটা বললাম। এবার কে দায়ী, কে দোষী এসব বিচার করার দায়িত্ব চিন্তাবিদদের — আমাদের নয়।

জিজ্ঞাসু :– শোনা যায় আরব দেশগুলি খুব ধনী — এটা কি শুধুই তেলের জন্য?

গুরুমহারাজ :– আরব দেশগুলি ধনী বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছ? সেখানকার সাধারণ মানুষ কিন্তু সাধারণ অবস্থাতেই রয়েছে, কিছু কিছু শেখ যাদের তৈল-উৎপাদন সংস্থা রয়েছে তারা ধনী! ধনী বলতে তারা আবার কতটা ধনী তা তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না ! ‘তেল’ মানে তো Petroleum, যাকে বলা হচ্ছে তরল সোনা। বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে Petro-dollar। বিশ্বের সমস্ত দেশ তা উন্নতই হোক বা অনুন্নতই হোক, তেল সবার দরকার! আর সমগ্র বিশ্বের এই বিপুল চাহিদার সিংহভাগ মেটায় আরব দেশগুলি। ফলে গোটা পৃথিবীতে রপ্তানীকৃত তেলের অর্থের বিপুল ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে আরবের শেখেরা। আরবের নাম “সৌদিয়া আরবিয়া” যার অর্থ সৌভাগ্যের দেশ। হজরত মহম্মদ ওই দেশে শরীর নিয়েছিলেন তাই আল্লাহর বিশেষ কৃপা রয়েছে ওই দেশগুলির ওপর এরূপ ধারণা করা হয়। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে সমুদ্রের তলায় ঢেলে দিয়েছে অফুরন্ত তেলের ভাণ্ডারআর তাতেই ওদের অর্থনৈতিক সৌভাগ্য খুলে গিয়েছে! প্রায় সব দেশেই কমবেশি তেল উৎপাদন হয়, আমেরিকা(USA)-তেও হয়, কিন্তু ওদের জনসংখ্যা ১৮-২০ কোটি। ফলে যদি USA-র সব পরিবারের একটি করে গাড়ি থাকে তাহলেও ভারতে ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা থেকে তা অনেক কম হবে। ভারতের ১১০ কোটি লোক(১৯৮৬/৮৭-সাল) যদি হ্যারিকেনও জ্বালায়_ তাহলে যে পরিমাণ কেরোসিন তেল লাগবে সেই টাকায় ইউরোপের অনেক দেশের মোট গাড়ির পেট্রোলের খরচ হয়ে যাবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রধান সমস্যা জনসংখ্যা, ফলে ভারতে যে তেল উৎপাদন হয় তাও নিতান্ত কম নয়__ কিন্তু এই বিশাল দেশ এবং বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল ! ফলে ভারতকেও আরবদেশগুলি থেকে প্রচুর তেল কিনতে হয়। তবে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান চালিয়ে কাম্বে-উপসাগর, ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের তলায় প্রচুর তেলের সন্ধান পেয়েছেন — এটা আশার কথা।

যাইহোক _আরবের ধনী লোকেদের কথা হচ্ছিল, ওরা এতটাই ধনী যে, ওদের বিলাসবহুল জীবনের কথা এখানকার সাধারণ মানুষ চিন্তাই করতে পারবে না। এরা যে কিভাবে টাকা খরচা করে তার দু-একটা উদাহরণ দিচ্ছি!

কোন ধনী শেখ তার শখ মেটাতে গিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান থেকে বিমানে করে মাটি বয়ে বয়ে নিয়ে গিয়ে বালিয়ারির বুকে একটা ক্রিকেট গ্রাউণ্ড-ই বানিয়ে ফেলল! কোন শেখের হয়তো গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের একজন করে নিয়ে মোট ৫০টা বা ৬০টা বেগম রয়েছে এবং তাদের দেখভালের জন্য ১০০টা বাঁদীও রয়েছে। এদের মধ্যে কোন ভারতীয় বেগম হয়তো মাঝে মাঝেই চুল বাঁধতে মুম্বাই আসে নিজস্ব প্লেনে চেপে ! যে পার্লারে ভারতীয় ফিল্মষ্টারেরা চুল বাঁধে _ ঐ বেগম এসে সেইখানে চুল বেঁধে যায়! ভাবো একবার_ শুধুচুল বাঁধার জন্য বিমান Land করা বাবদ বিমানবন্দরকে হয়তো ঘন্টায় ১০-১৫ হাজার টাকা Landing fee-ই দিতে হয়, তারপর ওই বিউটি পার্লারটি কয়েক ঘন্টার জন্য সম্পূর্ণ book করারও এলাহি খরচ! কিন্তু এসবে কিছু যায় আসে না, ওরা শখ মিটিয়ে চলে যায় ! একবার চুল বাঁধতেই হয়তো একজন বেগমের লক্ষ পেট্রোডলার খরচা হয়ে গেল! তারপর ওখানে ফিরে গিয়ে “দূর ভালো লাগছে না”_বলে হয়তো চুলটা আবার খুলেও দিল!

বেগমদের থেকেও বেশি বিলাস দেখায় স্বয়ং শেখেরা__যখন তারা ইউরোপে বা আমেরিকায় বেড়াতে যায়! হয়তো সে সব দেশে তারা ব্যবসার প্রয়োজনে ৭ দিন থাকবে __তার জন্য আগে থেকেই ম্যানেজার পাঠিয়ে একটা বা দুটো রোলস্ রয়েস্ গাড়ি বা ওইসব দেশে সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ফেলে! তারপর ঐ কদিন  বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে থাকলো_ সেখানেও প্রচুর খরচা করলো। ফিরে গিয়ে সকলকে gift দেবে বলে বড় বড় 'মল' থেকে (তখনও ভারতে 'মল'য়কি জিনিস,তা আমাদের ধারনা ছিল না।)দামী দামী জিনিসপত্রও কিনল প্রচুর! তারপর কি করল জানো — চলে যাবার সময় বিমানে উঠতে উঠতে ৭ দিনের জন্য যে ইউরোপীয়ান বা আমেরিকান ড্রাইভারটিকে নিযুক্ত করা হয়েছিল_ তাকে গাড়ির চাবিটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল 'keep it'। ভাবো একবার! প্রায় কোটি টাকা দরের গাড়িটা একটা driver-কে দিয়ে দিল! ফলে ওখানে উপস্থিত বিমান বন্দরের অফিসারগণও মনে মনে ভাবে _'যদি এই ক'দিন ওনার গাড়িটা আমি চালাতাম _তাহলে তো রোলস্ রয়েসের মালিক হতে পারতাম'।

কিন্তু ওরা যাই করুক, ভাল ভাল University বা অত্যাধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র অথবা কোন Research Centre এসব তৈরি ব্যাপারে ওদের আগ্রহ বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। ঈশ্বরের অনুগ্রহকে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নত করে নিক, কারণ মাটির তলায় তেলভাণ্ডার তো আর অফুরন্ত নয়_একদিন না একদিন তা শেষ হয়ে যাবে, তখন কি হবে? এসব কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বা উৎপাদনমূলক সংস্থা গঠনের দিকে নজর দেওয়া উচিত আরবের শেখেদের।

জিজ্ঞাসু :– কোন অবতার পুরুষের পরম্পরায় উত্তরসূরিরা ঠিকমতো কি সেই মহানপুরুষের আদর্শ অনুসরণ করে বা তাঁর শিক্ষা যথাযথভাবে মেনে চলে?

গুরুমহারাজ :– তা কি করে মানতে পারবে? সাধারণতঃ দেখা যায় অবতারকল্প মহাপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত আদর্শ পরবর্তী দু’তিন প্রজন্ম ঠিক ঠিক মানতে পারে ! আর অন্য অন্য পরম্পরায় যিনি আচার্য,হয়তো শুধু তিনিই মহাপ্রকৃতির অনুকূলে থেকে কিছু মানবকল্যাণ মূলক কাজ করে যান_ অন্যরা আর পারে না! তবে সব আশ্রমেই স্থূল কিছু ব্যাপার হয়ত পরম্পরাগতভাবে চলে আসে। যেমন রামদাস কাঠিয়াবাবার কোমরে কাঠ জড়ানো ছিল — এখনও ওদের পরম্পরায় তুমি কোমরে কাঠবাঁধা দেখতে পাবে।

রাজস্থানে একটা সম্প্রদায় আছে যারা কানকাটা বা কানফাটা সম্প্রদায়। এই পরম্পরার যিনি মূল আচার্য তিনি প্রথম জীবনে এমন কিছু অন্যায় কাজ করেছিলেন যার জন্য শাস্তিস্বরূপ স্থানীয় মানুষ তাঁর একটি কান কেটে দেয়। এতে হল কি _তিনি আর লোকসমাজে মুখ দেখাতে পারছিলেন না, কারণ কানকাটা ব্যাপারটা সকলেরই নজরে পড়বে আর তা হলেই সকলে তাঁকে অপরাধী হিসাবে চিনে ফেলবে। এই লজ্জায় ঘর থেকে বেরুতে না পেরে তিনি ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়লেন। আর এই দুঃসহ লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিরন্তর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন। তারপর একদিন গভীর রাত্রে তিনি বাড়ি থেকে বহুদূরে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সাধু-সন্ন্যাসীদের আখড়ায় আখড়ায় ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। সাধু-সন্তদের সঙ্গ করে এবং তাঁদের সান্নিধ্যে তাঁর মধ্যেও প্রবল বৈরাগ্যভাব এল। ওঁদেরই মধ্যে একজনকে উপযুক্ত ভেবে তাঁর কাছে সন্ন্যাসদীক্ষা গ্রহণ করে কঠিন সাধনায় দিনাতিপাত করতে লাগলেন। একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরন্তর প্রার্থনায় তাঁর ভগবৎ কৃপা লাভ হল।

এখন তো তিনি সিদ্ধ_ ফলে বহু মানুষ তাঁর শ্রীমুখের ধর্মকথা শোনার জন্য এবং সাংসারিক, শারীরিক, সামাজিক সমস্যা মেটানোর জন্য তাঁর কাছে আসতে থাকল। ধীরে ধীরে বহু মানুষ তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে চাইল। তিনি দীক্ষাও দিতে থাকলেন। এবার মজাটি হল কি, যেহেতু গুরুদেবের একটা কান কাটা এবং ওই কানকাটার ব্যাপারটাই তাঁর জীবনের আধ্যাত্মিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে, সুতরাং শিষ্যরাও ওই ব্যাপারটায় জোর দিল। তারাও নিজের নিজের কান কেটে আধ্যাত্মিক জীবন শুরু করতে চাইল। এইভাবে তৈরি হয়ে গেল কানকাটা সম্প্রদায়। অতি সম্প্রতি অবশ্য ওই পরম্পরায় আর পুরো কানটা কেটে বাদ না দিয়ে কিছুটা অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। সে যাইহোক, প্রথমে যেটা বলছিলাম — ঐ গুরুদেবের জীবনের ত্যাগ, বৈরাগ্য, সাধনা এগুলোকে পরবর্তী পরম্পরা অনুসরণ করল না — করল শুধু বাহ্যিক কানকাটার ব্যাপারটাকে ! এইভাবেই বিভিন্ন পরম্পরায় আধ্যাত্মিক শক্তির অবমূল্যায়ন হতে থাকে যদি না আবার কোন সাধক সিদ্ধ হয়ে পুনরায় ওই পরম্পরাকে উজ্জীবিত করেন। এরকম ভাবে বুদ্ধ পরম্পরায় এবং গোরখনাথ পরম্পরায় অনেক সিদ্ধ মহাজন থাকায়__এই দুটি পরম্পরা বহুকাল তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি বজায় রাখতে পেরেছিল।