স্থান ~ পরমানন্দ মিশন, বনগ্রাম । সময় ~ ১৯৯০, নভেম্বর । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ মিশনস্থ ব্রহ্মচারী, সন্ন্যাসী ও বহিরাগত ভক্তবৃন্দ ৷

জিজ্ঞাসু :– মানুষের মুখ দেখে কি শরীরের ব্যাধি নির্ণয় করা যায়?

গুরুমহারাজ :– তোমাদের তো বহুবার বলেছি যে, শরীরে স্থুল ব্যাধির প্রকোপ শুরু হবার পূর্বেই মানুষের মনে ব্যাধির সুক্ষ্মরূপ “আধি”-র সুত্রপাত হয়, তারও পূর্বে ‘কারণে’ এটি সুক্ষাতিসুক্ষরূপে অবস্থান থাকে। তাহলে কি দাঁড়ালোসুক্ষাতিসুক্ষ কারণ থেকে সূক্ষ্মরূপ নিয়ে “আধি” প্রথমে ‘মন’কে আক্রান্ত করে, পরে সেটাই স্থূলরূপে শরীরে ‘ব্যাধি’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং কোন রোগ বা ব্যাধি স্থুলভাবে প্রকাশ পাবার আগেই তা কিন্তু শরীরে প্রবেশ করে যায়ফলে সুক্ষ দৃষ্টি-সম্পন্ন ব্যক্তি তা আগেই জেনে যেতে পারে।

 ইংরাজীতে বলে Face is the reflection of mind ! তাহলে মনের প্রতিফলন বা দর্পণ যদি মুখমণ্ডল হয় তাহলে মুখ দেখে শরীরের রোগ নির্ণয় করা নিশ্চয়ই সম্ভব। তবে এগুলো যোগলব্ধ শিক্ষা। Academic ডাক্তারি পড়ে এটা শেখা যাবে না। Academic qualification-ওয়ালাদের মধ্যে ডাঃ বিধান রায় এটা পারতেন। অবশ্য তার একটা কারণ‌ও ছিল ! ওনার বাড়িতে এক সাধুবাবা আসতেন — হিমালয়ান যোগী, তিনি এই বিদ্যাটা ওনাকে ছোটবেলাতেই শিখিয়েছিলেন। যোগীবর জানতেন যে, ছেলেটি পরবর্তীকালে ডাক্তারি করবে এবং এই বিদ্যা আয়ত্ত করলে ও মানুষের প্রভূত কল্যাণ করতে পারবে। কিন্তু দ্যাখো বিধানচন্দ্র কিন্তু এটা কাউকে শিখিয়ে যেতে পারলেন না। কারণ তাঁর উপর শেখাবার নির্দেশ ছিল না। উপযুক্ত আধার ছাড়া যেমন এসব বিদ্যা দান করা যায় না তেমনি গুরু হবার উপযুক্ত না হয়ে উঠলে তা অপরকে দেওয়াও যায় না।

  যাইহোক যে কথা হচ্ছিল — মুখ শরীরের দর্পণ। সুতরাং মুখে শরীরের ব্যাধির স্থূল কিছু লক্ষণও ফুটে ওঠে। যেমন ধরো চোখের নিচের সমগ্র অংশ জুড়ে কালো দাগ_ কিডনির দুর্বলতার লক্ষণ, চোখের নিচের অংশে শুধু মাঝখানটায় কালো স্পট_ লিভারের দুর্বলতা। চোখের কোনে কালো ছোপ এবং এর সঙ্গে যদি আবার প্রস্রাবের বেগও কমে যায়, তাহলে অতি অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত_ জানতে হবে কিডনির গণ্ডগোল হয়েছেই। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে প্রাণিজ প্রোটিন (দুধ, ডিম, মাংস, মাছ) ও উগ্র ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার একদম বন্ধ করে দিতে হবে এবং সহজপাচ্য নিরামিষ খাবার গ্রহণ করতে হবে।

  আজকাল দেখা যাচ্ছে, নিরামিষ খাবার খেয়েও মানুষের শরীর ভালো হচ্ছে না বা তেমন রোগ-প্রতিষেধক ক্ষমতা গড়ে উঠছে না। এর কারণ হচ্ছে বর্তমানে যে কোন খাদ্যদ্রব্যেরই তো গুণগত মান কমে গেছে। সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যাপক ব্যবহারের ফলে খাদ্যের মধ্যে দিয়ে বিষ শরীরে প্রবেশ করছে। আর উচ্চ-ফলনশীল ফসল ফলাতে গিয়ে তাদের যে 'জেনেটিক' পরিবর্তন করা হচ্ছে, সেটা আবার মানবশরীরে আরও মারাত্মক ক্রিয়া করছে। এইসব কারণে খাদ্য সম্পর্কে মানুষকে খুবই সচেতন হতে হবে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ তো ভীষণ স্বাস্থ্য-সচেতন। ওরা 'গ্রীনহাউস' বানিয়ে তাতে ফসল ফলাচ্ছে। রাসায়নিক সারের বদলে জৈবসার ব্যবহার করছে। কীটনাশক না দিয়ে নিমতেল বা বিভিন্ন ভেষজদ্রব্য ব্যবহার করছে। উচ্চফলনশীল product ব্যবহার না করে সেই প্রজাতির original seed ব্যবহার করছে, এতে হয়ত ফলন কম হচ্ছে কিন্তু জেনেটিক পরিবর্তন না থাকায় এতে শরীরে কোন bad-effect (কুফল) হচ্ছে না। তোমরা হয়তো ভাবছ অরিজিন্যাল সীড পাচ্ছে কোথা থেকে? কারণ বর্তমানে সব বীজই তো হাইব্রীড। কিন্তু জেনে রাখবে বিজ্ঞানীরা অরিজিন্যাল সীড নষ্ট করেনি — সমস্ত ফসলের অরিজিন্যাল সীড গবেষণাগারেসংরক্ষিত রয়েছে। কারণ বিজ্ঞানীরা জানে যে, একদিন এই সমস্ত হাইব্রীড বীজ ফেল (fail) হয়ে যাবে এবং আবার অরিজিন্যালে ফিরে আসতে হবে। তাই মন্বন্তরের বা মহাপ্রলয়ের সময় মহাপ্রকৃতি সমস্ত সৃষ্টির বীজ যেমন আঁচলে বেঁধে রাখেন বা সংরক্ষিত করেন, তেমনি বর্তমানের কৃষি বিজ্ঞানীরাও অরিজিন্যাল সীডকে ধরে রেখেছে।

জিজ্ঞাসু :– বর্তমানে শারীরিক গোলযোগ তো মানুষের অন্যতম একটা সমস্যা, বেশিরভাগ পরিবারের আয়ের একটা মোটা অংশ শরীরের রোগ-ব্যাধির পিছনে চলে যাচ্ছে, এটার থেকে কি মুক্তির উপায় নেই?

গুরুমহারাজ :– আছে বইকি? যে সমস্ত family-তে লোকেরা সংযত জীবনযাপন করে অর্থাৎ যাদের আহার-বিহার(food habit & life style) সংযত অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালী ঠিক আছে, তারা রোগ-ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হবে না। সাধারণ viral fever, সর্দিকাশি এগুলো হতে পারে — মারাত্মক ব্যাধি তাদের হবে না। এমনকি যাদের জেনেটিক প্রবলেম রয়েছে অর্থাৎ পারিবারিক সূত্রে পাওয়া রোগ আছে, সংযত জীবন-যাপনে ধীরে ধীরে সেটাও ভালো হয়ে যাবে ।

  মানুষের শরীরে মূলত তিনটি নাড়ি বা গ্রন্থি রয়েছে — সূর্যগ্রন্থি, চন্দ্রগ্রন্থি ও ব্যোমগ্রন্থি। সূর্যগ্রন্থি শরীরের দক্ষিণ অংশে, চন্দ্রগ্রন্থি শরীরের বাম অংশে এবং ব্যোমগ্রন্থি শরীরের মাঝখানে অবস্থিত। দিনের বেলায় যতক্ষণ সূর্য আকাশে থাকে, ততক্ষণ সূর্যগ্রন্থি অধিক ক্রিয়াশীল থাকে। সূর্যগ্রন্থির অন্যতম কাজ খাদ্য-পরিপাক, ফলে মানুষের প্রধান ভোজন যে মধ্যাহ্নভোজন (lunch)— সেটি মধ্যাহ্নের মধ্যেই করা ভালো, এতে পরিপাক ভালো হয়। আবার নৈশভোজন(dinner)অধিক রাত্রে না করে সূর্যাস্তের আগে করলেই ভালো হয়, অথবা সন্ধ্যার just পরে। নৈশভোজন সবসময়েই  হাল্কা কিছু খাদ্যগ্রহণ হওয়া প্রয়োজন,যেন অধিক একেবারেই না হয়! আর ক্ষুধা না থাকলে শুধু এক গ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়ো। রাত্রে ভূরিভোজ বা ফীস্ট (feast) আমাদের দেশের কালচার নয়, ইংরেজরা এদেশে এসে এটা চালু করেছিল _যা আমরা আজও ফলো (follow) করে চলেছি। আমাদের দেশের climate-এ  রাতে ভোজ খাওয়া বা অধিক ঝালমশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা এবং খেয়েই শুয়ে পড়া __এটা খুবই স্বাস্থ্যবিরোধী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নৈশভোজ ব্যাপারটা তুলে দেওয়া যায় ততই ভারতবর্ষের মানুষের পক্ষে মঙ্গল !

এবার বিশ্রামের প্রসঙ্গে আসি — যার যখন ঘুম পাবে সে তখন শোবে, এর কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে অধিক রাত্রি জাগরণ শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। আধ্যাত্মিক লোকেরা সকাল সকাল শোবে এবং ভোর সাড়ে তিনটার মধ্যে উঠে পড়বে, তারপর প্রাতঃকৃত্য-স্নান সেরে জপ-ধ্যান করবে — নিজ নিজ সাধন-ভজনে মগ্ন হবে। তবে শোবার সময় দিনের বেলায় ডান কাৎ এবং রাত্রে বাম কাৎ হয়ে শোয়াটাই বিধেয়।

  কিডনীর দোষের কথা যেটা বলছিলাম, সেটা শরীরের যে water-channel রয়েছে তার গোলমালের জন্যই হয়। বেশি পরিমাণে বিশুদ্ধ জল পান করে গেলে কিডনির সমস্যা কম হয়। সূর্যগ্রন্থি ও চন্দ্রগ্রন্থির সাম্যতা থাকলে শরীরে কোন রোগ-ব্যাধি হবেই না। এই দুটি গ্রন্থিকে আবার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যোমগ্রন্থি। ব্যোমগ্রন্থি সাম্য থাকে প্রাণায়ামের দ্বারা। সংযত জীবনযাপন এবং বিশুদ্ধ নিরামিষ আহার গ্রহণ করে যদি কেউ হঠযোগীর নির্দেশমত আসন-প্রাণায়াম অভ্যাস করে তাহলে সে রোগমুক্ত হবেই হবে। আসন-মুদ্রা-প্রাণায়ামের দ্বারা শরীরকে স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ করা যায়। হঠযোগীরা শরীর সুস্থ তো রাখেনই — প্রয়োজনে তাঁরা তাঁদের আয়ুষ্কালকে বাড়িয়ে নিতেও পারেন।

 প্রাচীন আর্য ঋষিদের প্রবর্তিত এইসব শিক্ষা সমাজে যত গৃহীত হবে_ সমাজের ততই মঙ্গল। সমাজেসুস্বাস্থ্য ফিরে আসুক, রোগমুক্ত স্বাস্থবান মানব সমাজ বিরাজ করুক__ এটাই তো আমাদের কাম্য। আগামীদিনে সুস্বাস্থ্যের জন্য ভারতীয় "যোগ"_ বিশ্বের দরবারে সর্বাপেক্ষা অধিক গৃহীত ও আদৃত হতে চলেছে।

 খাদ্য তালিকায় তোমরা এখন থেকেই কাঁচা-নুন, লঙ্কা, উগ্রমশলা এইসব বাদ দিয়ে দাও দেখি! আর সরষের তেলকে ভোজ্যতেল হিসাবে যে ব্যবহার করছ — এটাও কমিয়ে দাও — পার তো অন্য তেল খাও। বাঙালির রান্নাঘরে বিজ্ঞানটা হারিয়ে গেছে। আমাদের মায়েরা ফ্যাটযুক্ত খাদ্যকেও তেলে ভাজছে! বড় মাছ, চর্বিযুক্ত মাংস তেলে ভাজছে! টাটকা মাছ কিনবে — নুন-হলুদ দিয়ে কিছুক্ষণ মাখিয়ে রেখে কাঁচা রান্না করবে। স্বরূপানন্দ, মুরারী এদেরকে জিজ্ঞাসা করো__ আমি আশ্রমে বাচ্ছাদের জন্য একবার ১৭ কেজি মাছ মাত্র ২০০ গ্রাম তেলে রান্না করে ওদের দেখিয়েছিলাম যে, কিভাবে রাঁধতে হয় ! রান্নাও উৎকৃষ্ট হয়েছিল, ছেলেরা সবাই চেটে চেটে খেয়েছে। পদ্ধতিটাও সহজ — আলু-টালু ইত্যাদি সবজি ও আদাবাটা এগুলি তেলে কিছুক্ষণ নেড়ে নিয়ে জল ঢেলে ঝোলটা করে নিতে হবে। তাতে নুন, হলুদ, মিষ্টি যা দেবার দিয়ে নুন-হলুদ মাখানো টাটকা মাছ একটা একটা করে ওতে ফেলে দিয়ে ঢাকা দিয়ে দাও। ১৫/২০ মিনিট অল্প অল্প আঁচে সেদ্ধ করে নিয়ে নামিয়ে দাও। রুচিকরও হবে আবার মাছের পুষ্টিগুণ সবটাই বজায় থাকবে। বেদে যেহেতু সরষের উল্লেখ নেই _তাই বোঝা যাচ্ছে এটা migrated, অর্থাৎ এটি অন্য কোন দেশ থেকে এই দেশে এসেছে, এদেশের original ফসল এটা নয়। জেনে রাখবে_ কোন দেশের climate সেখানকার মানুষের শরীরের সাথে যেমন সম্পর্কযুক্ত, তেমনি সেই দেশের original ফসল_ সেখানকার মানুষের পক্ষে সবচাইতে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত ! তবে মানুষ আর করবেই বা কি_অত্যধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে স্বদেশীয়-বিদেশীয় বা migrate করা খাদ্যশস্য সব‌ই গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে! কিন্তু বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছে যে_ migrate করা খাদ্যগুলো মানবশরীরের পক্ষে কল্যাণকর নয়। সেই অর্থে_ এদেশীয় তিলতেল, সূর্যমুখী তেল — এমনকি নারকেল তেলও শরীরের পক্ষে অতটা খারাপ নয় _যতটা migrated সরষের তেল ! তাই তোমরা এটা বন্ধ করলে সত্যিই আমি খুব খুশি হব।

জিজ্ঞাসু :– গুরুজী, বাঙ্গালিদের কোন দেহসৌষ্ঠব নাই ! তুলনায় ইউরোপীয়দের শরীর কেমন সুগঠিত ও সৌষ্ঠবমণ্ডিত তাই নয় কি?

গুরুমহারাজ :– সব্য, তোমার ইউরোপীয় প্রীতিটা একটু কমাও। শুধু সাদা চামড়া আর লম্বা-চওড়া দেখে সৌন্দর্যবিচার করতে চাইছো ? তাহলে ভারতের পশ্চিমপ্রান্তের লোকেরা বিশেষত পাঞ্জাবীরাও তো বেশ লম্বা-চওড়া, মুখচোখও ভালোতুমি তো ক‌ই তাদের দেহসৌষ্ঠবের প্রশংসা করো না ! দ্যাখো, তুমি নিজে ভারতীয় এবং তোমার গায়ের রঙ কালো বলেই হয়তো সাদা-চামড়ার প্রতি অতটা প্রীতি দ্যাখাচ্ছো, কিন্তু আমি যখন ইউরোপে ঘুরছিলাম তখন বিভিন্ন জায়গার মানুষেরা আমার চামড়ার কোয়ালিটি বা ঔজ্জ্বল্য দেখে অবাক হয়েছে ! কোন make-up বা বিশেষ পরিচর্যা ছাড়া যে এই ধরনের চামড়া হয় এটা ওরা বিশ্বাস করতেই চাইছিল না ! তাহলে বুঝতে পারছোওদের দুর্বলতাটা কোথায়! ওদের চামড়া কটা হলে কি হবে — ভীষণ অসুস্থ চামড়া। প্রায় সকলেই skin disease বা চর্ম রোগে ভোগে। চামড়ার ক্যান্সার ওদেশের মানুষের খুব হচ্ছে, তাছাড়া গায়ে উৎকট গন্ধ — body lotion, deodrant এসব মাখেগায়ের গন্ধ দুর করার জন্য, কিন্তু তাতে ঐ কৃত্রিম গন্ধের সাথে গায়ের ঘেমো গন্ধ মিশেএকটা উৎকট দুর্গন্ধ বের হয়, কাছে থাকলে তা সহ্য করা মুস্কিল !

 তুমি কদিন আগে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার কথা বলছিলে __জানো, ওগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন নামী-দামীপ্রসাধন company বা বস্ত্র ডিজাইনিং company-গুলো sponsor করে। গোটা পৃথিবীর বহু সুন্দরীদের এক জায়গায় জড়ো করে Reality show করায়। যেমন ওদের পিছনে কোটি কোটি dollar খরচ করে, তেমনি show থেকে টাকা তুলেও নেয়। তবে ওসব show-তে যা নোংরামি হয়_ সেটা আর না বলাই ভালো। দ্যাখো সব্য, আমি পক্ষপাতিত্ব করছি না_তবু বলছি বাঙালি ছেলে-মেয়েরাও  যথেষ্টই সুন্দর ! সহজ-সরল-সংযত জীবনযাপন করলে সৌন্দর্য আরও প্রকট হয়। তুমি পুরুলিয়ায় ঝালদার Prince-কে দেখেছিলে তো, সত্যই ভদ্রলোক সুন্দর দেখতে নয় কি?

 তবে, আমি চিন্তা করে দেখেছি_সাধারণত কিশোর বা কিশোরীরাই good looking হয় ! তোমার 'দেহবোধ' _ব্যাপারটা আর পাঁচজনের চাইতে একটু বেশি বলেই_ তোমার জিজ্ঞাসার উত্তরে দেহের সৌন্দর্য নিয়ে এত কথা বললাম। অন্যথায় দেহের সৌন্দর্যে কি যায় আসে — যার মন সুন্দর, স্বভাব সুন্দর, চরিত্র সুন্দর __সেই তো প্রকৃত সুন্দর, অন্যথায় আবার সৌন্দর্য কি! প্রাকৃতিক বা নৈসর্গিক সৌন্দর্য বরং অনেক বেশি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে, মনকে অন্তর্মুখী হতে সাহায্য করে ! তাই আমি ঐ সৌন্দর্যগুলিকেই অপেক্ষাকৃত অধিক মর্যাদা দিই।

  কিন্তু আমি জানি জগৎসংসারের সৌন্দর্যের যিনি স্রষ্টা তিনিই সর্বাপেক্ষা সুন্দর ! তুমিও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হ‌ও এবং ঐ পরম সুন্দরের উপাসনা করো — দেখবে ধীরে ধীরে তুমিও সুন্দর হয়ে উঠবে।