স্থান ~ পরমানন্দ মিশন, বনগ্রাম । সময় ~ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ (Dec.) ৷ উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ আশ্রমস্থ ও বহিরাগত ভক্তবৃন্দ ।

জিজ্ঞাসু :– পেরেন্টাপল্লীর স্বামী বাউলানন্দের আশ্রমের কাছাকাছি নাকি চিতাবাঘ থাকে ?

গুরুমহারাজ :– পেরেণ্টাপল্লী পাহাড়ি এলাকা, আর কাছাকাছি রয়েছে বেশ ঘন জঙ্গল । ওই সব জঙ্গলে বুনাে কাঁঠালের গাছ প্রচুর রয়েছে ! কাঁঠালগুলাে ঠিক মানুষের খাদ্য নয়—আমি পাকা অবস্থায় দেখেছি যে, কোয়ার অংশটি বড় নয় _আর শুধু মোটা মোটা বীজ রয়েছে অনেক! ফলে শাঁস একেবারেই কম এবং তেমন taste-ও নেই ! তবে ওগুলাে পেকে পড়লে শেয়ালে খুব খায়, অন্যান্য পশু-পাখিও খায়। তবে ঐ অঞ্চলের শেয়ালের বােধহয় এই খাবারটি খুবই প্রিয়। সাহেবরা Jackal fruit থেকেই কাঁঠালের ইংরেজি নাম Jack-fruit করেছে কিনা কে জানে ?

 ওখানে চিতাবাঘ আর ময়ুর এই দুটিই প্রচুর পরিমাণে রয়েছে! ঐ অঞ্চলের ময়ুর এত বড় বড় যে, একবার মিহির মহারাজ(স্বামী প্রজ্ঞানন্দ)-কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল ! ওখানে থাকাকালীন সময়ে আমি আশ্রম থেকে সামান্য দূরে একটা বড় পাথরখণ্ডের উপর বসে থাকতাম _আর সারাদিন এবং রাত্রেও ওখানকার প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখতাম। স্বামী বাউলানন্দ কেন যে পপি পাহাড়ের ঐ স্থানটি ছেড়ে আর আসতেপারেননি_ তার একটা কারণ হতে পারে ওখানকার নৈসর্গিক বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ! জ্যোৎস্নালােকিত রাত্রে পাহাড় এবং জঙ্গল যখন মায়াবী আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকে, তখন সত্যিই মনে হয় বনপরী অথবা স্বর্গের অপ্সরারা বােধহয় ওখানেই বনবিহারে অবতরণ করেন !

 যাইহােক, ওখানে বসে থাকতে থাকতে আমি অনেক চিতাবাঘকে ঘােরাফেরা করতে দেখেছি। আর পরবর্তীকালে পূৰ্ণানন্দ (অনুপ মহারাজ) যখন ওখানে বছরখানেক সাধন-ভজন করার জন্য ছিল, তখন ঐ পাথরখণ্ডটিতে বসেই ও ধ্যানজপ কোরতো!  ঐ সময় ওর সাথে একটা চিতাবাঘের প্রায় মুখে মুখে ঠেকে যাবার উপক্রম হয়েছিল !

 ঘটনাটা হয়েছে কি–পূৰ্ণানন্দ পাথরখণ্ডটায় বসে ধ্যান করছিল_ বেলা তখন পড়ে আসছে, সূর্য পাহাড়ের চূড়ার আড়ালে ঢুকে যাচ্ছে। তখন একটি পাহাড়ি আদিবাসী ছেলে কয়েকটা ছাগল নিয়ে ঐ পাথরখণ্ডের পাশটা দিয়ে ফিরছিল। চিতাটা ওদেরকে অনুসরণ করতে করতে এতদূর চলে এসেছিল_ এইবার সে  বড় পাথরটার উপর সামনের পা দুটো তুলে দিয়ে ছাগলগুলাের অবস্থান বুঝে নিতে চাইছিল। 'সরসর' করে একটা শব্দে আর মাংসাশী পশুর গায়ের উৎকট গন্ধে পূর্ণানন্দের ধ্যানের একাগ্রতা ভঙ্গ হয়ে গিয়েছি। ফলে ও ব্যাপারটা কি দেখার জন্য বাঁ দিকে ঘুরে মুখ বাড়িয়ে যেই দেখতে গেছে_দ্যাখে কয়েক হাত দূরেই চিতার মুখ! চিতাটির দৃষ্টি বা মনােযােগ দুটোই পূর্ণানন্দের দিকে ছিল না—ছিল ছাগলের দলটির দিকে। তাই সেও আচমকা পূৰ্ণানন্দকে দেখে অবাক ! তার ওপর পূর্ণানন্দ-র তখন এক মুখ বড় বড় দাড়ি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল–ওকে দেখে চিতাটা বােধ হয় বড় বাঘ বা সিংহ ভেবে উল্টো দিকে এক লাফ মেরে পালিয়ে গিয়েছিল !

          ঐ সময়েই পূর্ণানন্দ বর্ষাকালে খুব বিপদে পড়েছিল। পাহাড়ি এলাকায় উপরে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে সেই জল প্রবল বেগে নিচের দিকে তৎক্ষণাৎ নেমে আসে। আর সেই সঙ্গে নুড়িপাথর এমনকি বড় বড় পাথরের চাঁইও প্রবল বেগে নিচের দিকে জলের সাথে পড়তে থাকে। এরফলে পাহাড়ের গায়ে বা ঢালের বাড়িঘর, মানুষজন-—এমনকি গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হয়। পূৰ্ণানন্দ ছিল পেরেন্টাপল্লী আশ্রমে_ সেখানেও পাশ দিয়ে যে ঝরনাটি বয়ে গেছে_সেটি দিয়ে পাহাড়ের উপর অংশ থেকে প্রবল গতিতে জল নামায় ঐ রকম একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল ! ফলে ও ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে উঁচুতে অন্যএকটা বড় পাথরখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু সারারাত বৃষ্টি হচ্ছিল এবং ওর দু'পাশ দিয়ে প্রবল বেগে জলসহ পাথর, নুড়ি নেমে যাচ্ছিল ! যেগুলির একটা খন্ড গায়ে লাগা মানেই_নির্ঘাৎ মৃত্যু! এদিকে প্রবল গতিতে জল নেমে আসার ফলে ও যে পাথরখণ্ডটায় আশ্রয় নিয়েছিল __সেটাও  টলমল করে দুলতে শুরু করেছিল—সে এক অভাবনীয় অবস্থা! পাথরখণ্ডটা সরে গেলেই ও পাথরখণ্ডসহ জলের স্রোতে কোথায় নিচে পড়বে কে জানে! এমত অবস্থায় সারা রাত ধরে ও শুধু জলে ভিজে কেঁপেছে_ আর ঈশ্বরের উপর সম্পূর্ণভাবে শরণাগত হয়ে প্রার্থনা করেছে। সকাল হলে ও দ্যাখে যে, ওর পাথরটাই last, তারপরই খাদ। তাছাড়া পুরাে পাথরখণ্ডটা একটা ছােট পাহাড়ি গাছে আটকে ছিল, যেটা গতরাত্রের তাণ্ডবের বিচারে টিকে থাকা একেবারেই অসম্ভব ছিল !

এদিকে আমি তখন রায়নায়। হঠাৎ করে রাত্রিতে আমার নাক-চোখ-মুখ—এমনকি গা দিয়েও প্রচণ্ড জল ঝরতে শুরু করে দিল। আমার পরনের জামা-কাপড়, এমনকি ২-৩ টে তােয়ালে ভিজে গিয়েছিল, জগাদার বাড়ির লোকেরা এবং আশ্রমের ভক্তরা সবাই চিন্তা করতে লাগল – ‘গুরুজীর হোলটা কি ? কিছুদিন পরে যখন ঐ দুঃস্বপ্নের রাত্রির বর্ণনা দিয়ে পূর্ণানন্দের চিঠি এল —তখন সবাই বুঝতে পারল পূর্ণানন্দের ভােগটা এই শরীরের সঙ্গে শেয়ার হয়ে গেছে।

জিজ্ঞাসু :– ইউরােপের মানুষ তাে শুনেছি materialist, তা ওদেশে গিয়ে এখানকার দর্শন বা বেদান্ত কিভাবে বােঝালেন বা ওরা এগুলি কিভাবে নিল ?

গুরুমহারাজ :— দেখুন, প্রথমত ‘ওরা’ এবং ‘আমরা’–এইরূপ ভেদজ্ঞান আমার নাই_ সুতরাং ‘ওরা’ বলতে পৃথকভাবে কোন মানব সম্প্রদায়কে আমি দেখি না। আমি মানুষকে মানুষ হিসাবেই দেখি—যেটা তার আসল পরিচয়। এই পরিচয় ভুলেই মানুষের মুস্কিল বেড়েছে। আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ অথবা আমি ভারতীয়, আমি ইউরােপীয়, এছাড়াও রয়েছে আমি শিক্ষিত, আমি ধনী, আমি সাধু, এসবই sentiment ! কোন মানুষেরই জন্মের আগে এগুলি ছিল না, মৃত্যুর পরেও তা থাকবে না ! মাঝখানে কয়েক বছরের জন্য গয়না পরার মত এই ‘উপাধি’গুলাে চাপিয়ে ঘুরে বেড়ানাে। ফলে এইগুলিকে বেশী প্রাধান্য দেওয়াটা মূর্খতা বা আহাম্মকি নয় কি ?

   দ্বিতীয়ত_ ভারতীয় দর্শন বা বেদান্তের শিক্ষা, ভারতীয়রাই ক’জন জানে ? আপনি তাে শিক্ষিত লােক _আপনাকে জিজ্ঞাসা করলে কয়টা উপনিষদ রয়েছে-- বিভিন্ন উপনিষদের প্রতিপাদ্য বিষয় সম্বন্ধে জানতে চাইলে আপনি কিছু বলতে পারবেন? আর কয়টা দর্শনশাস্ত্রের শ্লোকগুলি আপনি মুখস্থ বলতে পারবেন ? বেদান্তের শিক্ষা _জীবনে যােজনা করার কথাটা তুলছি না, আগে মুখস্থই বলুন ? পারবেন না। সুতরাং শুধুই ভারতীয় বলে ‘বেদ-বেদান্ত’ আপনার হয়ে গেল--এটা ঠিক নয়। 'বেদ' কথাটা এসেছে ‘জ্ঞান’ থেকে। যাঁর জ্ঞান আছে তিনিই বেদের অধিকারী। ইউরােপের নানা দেশে কত মনীষীরা আছেন, যাঁরা সদাসর্বদা উচ্চচিন্তায় নিজেদেরকে নিয়ােজিত রেখেছেন—তাঁদের ক’জনের খবর আপনি রাখেন ? আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস ও সাহিত্যের বেশীরভাগ দিকপালরাই তাে ইউরােপীয়। তাহলে ‘ভাসা-ভাসা’ জ্ঞান নিয়ে ‘ওরা' এবং 'আমরা’র বিভেদ করছেন, এটা কি যুক্তিযুক্ত—আপনিই বলুন?


  প্রকৃতপক্ষে কথা কি জানেন__ ত্রিগুণময়ী প্রকৃতি, এই প্রকৃতিতে তাই সর্বদা তিন প্রকার গুণের প্রকাশ রয়েছে _এর কোন ব্যতিক্রম নেই, এর কোন এদেশ-ওদেশ নেই। সবদেশে সবসময়েই ত্রিগুণসম্পন্ন মানুষেরা বসবাস করে। তবে হ্যাঁ, এটা বলতে পারেন যে, কোথাও সত্ত্বগুণীর সংখ্যা বেশী, কোথাও রজোগুণীর আর কোথাও তমােগুণীর সংখ্যা বেশী। কিন্তু সকল সমাজেই কম-বেশী, ভালাে-মন্দ, জ্ঞানী-মূর্খ, ধনী-নির্ধন রয়েছে।প্রত্যেকের‌ই পৃথক পৃথক গ্রহনীয় বিষয় রয়েছে_ তাই বেদান্ত কোন সমাজেরই সকল মানুষ কখনই গ্রহণ করেনি, আজও করবে না ! সবাই না হোক, ভারতীয়দের অধিকাংশরাই  যদি গ্রহণ করতাে__ তাহলে হাজার হাজার বছর আগেই ভারতের সকলেই বেদান্তী হয়ে যেতাে ! মহাপুরুষদের আর শরীর নেবার প্রয়োজন‌ই হোত না।

  দেখুন_ভারতের মানুষ বলে সবাই কি সাধু পুরুষ নাকি? এই ভারতেই বেদের কত বিরােধ হয়েছে_ জানেন ! ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি_ আর নিজ নিজ প্রকৃতি অনুযায়ীই মানুষ ভিন্ন ভিন্ন মত বা পথকে সঠিক বলে মনে করে এবং সেই মত বা পথকে আদর্শ করে জীবন অতিবাহিত করে। সবদেশে বা সব সমাজে এই রকমটাই চলছে।

আপনি যদি কোন দেশের ভালােটা জানতে চান_ তাহলে দেখতে পাবেন তাদের প্রচুর ‘ভালাে’ রয়েছে। যদি কোন দেশের ‘কালাে” অর্থাৎ খারাপ দেখতে চান তাহলে তাও প্রচুর পাবেন ! কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এই কথাগুলি প্রযোজ্য। এবার কথা হচ্ছে আপনি কি দেখতে চাইছেন অর্থাৎ আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটা কি ? আর এখানেই আসছে আপনার চেতনার উৎকর্ষতার ব্যাপার ! যেটা একটু আগে আলােচনা করছিলাম। ঠাকুরশ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “সংসারে দুধে-জলে মিলেমিশে আছে, জল ফেলে দুধটা খেতে হবে।” কিন্তু তা করতে হলে যে নিজেকে পরমহংস হতে হবে—নিদেনপক্ষে রাজহংস। ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ হয়েছে ১০০ বছরের উপর হয়ে গেল—কিন্তু ক’জন মানুষ তার উপদেশ শুনে জীবনে যােজনা করল ? দেখবেন ভালাে জিনিস নেবার লােক পৃথিবীতে খুবই কম, তুলনায় মন্দ বা কারও দোষ-ত্রুটি নিয়ে মানুষ বেশী চেঁচামেচি করে বা সেটাকে তুলে ধরে। তাই বলছিলাম পৃথিবীগ্রহের মানসিকতাই এইরূপ। এখানে এদেশ এবং ওদেশের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।

  বেশীরভাগ ইউরােপীয় দেশগুলির অধিবাসীরাই ব্যবসায়ী। ওরা business ভালাে বােঝে। ওখানকার দেশগুলােতে প্রচুর ওষুধ এমন রয়েছে-- যেগুলি সরকারীভাবে ৫/১০ বছর আগেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ওরা সেই ওষুধগুলাে হয় ভারতের মতো দেশে supply করছে অথবা তৃতীয় বিশ্বের এইসব দেশগুলােয় ফ্যাক্টরি বানিয়ে তৈরি করে বিক্রি করে যাচ্ছে ! ওরা জানে এগুলো ব্যবহার করলে মানুষের ক্ষতি হবে—তাও পয়সার জন্য এইসব করছে।

 এইতাে নরওয়ের ‘ক্যারিয়াদা রয়েছে, ও ওখানকার medical dept.-এর সাথে যুক্ত। (গুরুজী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন)—'Do you know about the medicines which are already banned in Europe but are still manufactured and supplied to the third world ? (ক্যারিয়াদা সম্মতি জানাল) দেখেছো –ও জানে ব্যাপারটা ! এগুলাে ওরা খুবই করে। ব্যবসার স্বার্থে ওরা বিশ্বকে শােষণ করতে বা যে কোন অন্যায় করতে পিছপা হয় না। কিন্তু এই যে ইউরােপীয় মানসিকতার উল্লেখ করলাম __তাই বলে এটা কিন্তু সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কিছু কিছু ব্যবসাদার ওমনটা করে থাকে। ঐ সব দেশেই আবার অনেক ভালো মানুষ‌ও রয়েছে,তার ফলে এসব নিয়ে প্রতিবাদ‌ হচ্ছে- রাজপথে মিছিল বের হচ্ছে ! এদেশের মানুষের এখনও এইসব নিয়ে কোন হেলদোল নেই কিন্তু ওসব দেশে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মানুষ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে।

 এইটাই বলতে চাইছিলাম যে, ভালাে-মন্দ সব দেশেই রয়েছে। জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টাও  সবদেশেই রয়েছে। সুতরাং ভারতীয় দর্শন, বেদ-বেদান্ত ইউরােপের বহুদেশে বহু মানুষের কাছে খুবই সমাদৃত। স্বামীজীর সাথে ম্যাক্স-মুলার, রােমাঁ রোলার মত মহান মানুষদের দেখা হয়েছিল, যাঁরা ভারতীয় দর্শন নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ম্যাক্সমুলার তার জীবনের বেশ কয়েকটা বছর ধরে নিষ্ঠাসহকারে সংস্কৃত শিখে _তবেই সংস্কৃতে বেদ-বেদান্তাদি গ্রন্থগুলি পড়েছিলেন এবং বেশ কয়েকটা অনুবাদ মূলক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এরকমটা ক'জন ভারতীয় করতে পারে ?

 যাইহােক, বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি থাকবেই, তবে এইটা জেনে রাখবেন—প্রত্যেকেরই কিন্তু এই জীবনেই উন্নতিলাভ সম্ভব। উপনিষদ বলেছে –মানুষ পূর্ব থেকেই পূর্ণ। এই সত্য আমি আমার জীবন দিয়ে বোধ করেছি, এখন আমার কাজ হোল মানুষের কাছে কাছে গিয়ে শুধু সেই সত্য জানিয়ে দেওয়া—এতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গুণ প্রভৃতি দেখার দরকার নেই। বেদ সম্বোধন করেছে –“শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ"। এখানে কোন ক্ষুদ্ৰগণ্ডি টানা হয়নি—বিশ্বের সকলের জন্যই বেদ-বেদান্ত ! কারণ সকলেই অমৃতের পুত্র। শিষ্যের মধ্যে এই ‘বােধ’টি জাগিয়ে দেওয়াই গুরুর কাজ। তাই কোন বিভেদ বা বিরোধ নয়, কোন সংকীর্ণতায় নিজেকে আবদ্ধ না রেখে আপনিই যে নিত্যমুক্ত, শুদ্ধ-বুদ্ধস্বরূপ তা বোধ করুন_ গুরু নির্দেশিত পথে সাধনার গভীরে ডুবে যান _এটাই এখন আপনার একান্ত করণীয় হোক !

সবসময় মনে রাখবেন_ আপনি পূর্ব থেকেই পূর্ণ, আবার পূর্ণতাই আপনার লক্ষ্য। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি destination-এ পৌঁছানো যায় ততই মঙ্গল ! মাঝের ক'দিন অযথা দেরি করে ত্রিতাপ জ্বালায় ক্লিষ্ট হওয়াটা বোকামি নয় কি ! এই জন্ম-মৃত্যুর আবর্তন থেকে মুক্ত হোন–পূর্ণ হোন !

“ওঁ পূর্ণমিদং পূর্ণমদঃ পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।৷”

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।৷