স্থান ~ পরমানন্দ মিশন, বনগ্রাম ৷ সময় ~ ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ নগেন, পঙ্কজবাবু, সব্যসাচী মান্না, আনন্দ ও মিশনস্থ ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসীগণ ।

জিজ্ঞাসু :– শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে পাওয়া যায় যে, নারীভাবে সাধন করলে নাকি কামভাব নষ্ট হয়– এটা কি ঠিক?

গুরুমহারাজ :— ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাে নিজের জীবনেই এটা করে দেখিয়ে গেছেন, সুতরাং ব্যাপারটি একদমই ঠিক। কিন্তু নারীভাব বা রাধাভাবের সাধন ঠিক ঠিক করতে পারে ক’জন বলো ! সাধারণ মানুষজন এইসব করতে গিয়ে ভাবটা বিকৃত করে ফেলে। এ সমস্ত অঞ্চলে ঐ ভাবের সাধকের সংখ্যা তত নয় কিন্তু বৃন্দাবনে আমি দেখেছি প্রচুর সাধক এইভাবে সাধনা করছেন। তারা এটাকে বলেন রাধাভাব বা গােপীভাব।

 সাধারণত এই ধরণের সাধকেরা খুব ভােরে উঠে দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে নেন। তারপর শাড়ি, গহনা ইত্যাদি নানা আভরণ পরে মেয়েলি আচার-আচরণ করেন। তবে আমি দেখেছি, এঁদের মধ্যে অনেকেই perverted ! যেমন ধরাে_ রাস্তায় বেরিয়ে এঁদের যদি কোন পুরুষের গায়ে গা ঠেকে _তাহলে এঁরা মেয়েদের মতই বা তারও বেশী করে শিউরে উঠে মেয়েলি সুরে বলেন, “অসভ্য, ইতর" এবং মেয়েদের মতাে(ঘরে তোদের মা-বোন নাই!) গালাগাল‌ও দেন।   

  দ্যাখো_এ সবের মধ্যে কিন্তু আধ্যাত্মিকতা নেই, এগুলি একটা বিকৃত মানসিকতা। তবে এই মত বা পথের কিছু প্রকৃত সাধক‌ও রয়েছেন। যেমন ধরাে_ মােহনানন্দ ব্রহ্মচারী, ভােলাগিরি প্রমুখ এই সাধনায় সিদ্ধ হয়েছিলেন। ডাহাপাড়া ধামের প্রভু জগদ্বন্ধুসুন্দরও রাধাভাবের সাধনা করেছিলেন।

 দীর্ঘদিন ধরে ঠিক ঠিক এইমতে সাধনা করলে সামগ্রিকভাবে মেয়েদের ন্যায় প্রকৃতি লাভ করা যায়। এবার দ্যাখো_ পুরুষের কামভাব তাে জাগে নারীর প্রতি, তাই নিজের ওপর নারীভাব আরােপ করলে সেই ভাবটা আর থাকে না। প্রকৃতপক্ষে কাম কিন্তু শরীরের ব্যাপার নয়_এটি সম্পূর্ণভাবে মনের ব্যাপার ! মনে কামভাব না জাগলে _এটি শরীরে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়__কোন পুরুষ তার কন্যা বা ভগিনীর সংস্পর্শে এলে তো তার মধ্যে কোন উত্তেজনার সৃষ্টি হয় না ! এর কারণটা হোল যেহেতু ঐ সময়ে ব্যক্তিটির মনে কোন কামভাব থাকে না। অথচ ঐ ব্যাপারটাই যদি বাইরের কোন নারীর সাথে হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিটির শরীরে যৌন-উত্তেজনার sparking হতে পারে !

তাই নারীভাবে সাধনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মনের কামভাবটিকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করা। শােনা যায় এই সাধনার একটা stage-এ এসে পুরুষ-শরীরেও মেয়েদের মতাে menstruation শুরু হয়ে যায় এবং স্তন্যগ্রন্থির বিকাশ ঘটে।

 তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই ব্যাপারগুলিকে disease বলে। ওদের অবশ্য বলার পিছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ইউরােপ-আমেরিকায়, এমনকি এদেশেও ডাক্তারদের কাছে এমন প্রচুর case আসছে _যাতে operation করে ছেলেরা মেয়ে হয়ে যাচ্ছে বা মেয়েরা ছেলে হচ্ছে ! তবে সবাই হতে পারে না, যে সমস্ত ছেলেদের মধ্যে নারীসুলভ হাবভাব রয়েছে বা যেসব মেয়েদের পুরুষালি ভাব রয়েছে__ তাদেরই কিছু জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক লিঙ্গ থেকে অন্য লিঙ্গে transfer করা সম্ভব হচ্ছে !

   কিন্তু ভারতীয় ঋষি পরম্পরায় যােগবিজ্ঞানের সাহায্যে পুরুষের মেয়ে হয়ে ওঠা বা নারীর পুরুষ হয়ে ওঠার যে tendency, সেটা রুখে দেওয়া যায়। কিছুদিন আগে আমাদের আশ্রমে সিঙ্গুর থেকে একটি ছেলে এসেছিল—আশ্রমের ভক্ত। ওর শরীরে স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ধীরে ধীরে নারীর লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। বহু চিকিৎসা করেও কিছু ফল পায়নি। P.G. Hospital-এ ভর্তিও ছিল কিছুদিন। কিন্তু ডাক্তাররা এরকম জবাব দেয় যে, Operation করা ছাড়া _ওর কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এদিকে ওর শরীরে নারীর সমস্ত লক্ষণ প্রকট হতে থাকে, breast বড় হয়ে যেতে থাকে-এমনকি ওর Menstruation হোতে শুরু হয়ে যায়!এমত অবস্থায় ছেলেটি অনন্যোপায় হয়ে এই বনগ্রাম আশ্রমে এসেছিল। ওর ঐরকম অসহায় অবস্থা দেখে _ওকে কিছুদিন আশ্রমের রেখে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা হয়। কয়েকটি আসন-প্রাণায়াম ইত্যাদি করাতেই ওই ছেলেটি কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে গেল ! এখন ছেলেটি একজন W.B.C.S. officer, বিয়ে-থা করে সুখে সংসার করছে, ছেলে-মেয়েও হয়েছে। অথচ ঐ ছেলেটিই তখন নিজেকে মেয়ে ভাবতাে এবং অন্য একজন ছেলের সাথে বিয়ে করবে বলে ঠিকও করে ফেলেছিল। ভাবাে একবার !

যাইহােক কথা হচ্ছিল নারীভাবের সাধনা নিয়ে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কিছুদিন এইভাবের সাধন করেছিলেন। তিনি তাে এরকম কত সাধনাই করেছিলেন সাধনার পন্থাগুলিকে মর্যাদা দেবার জন্য এবং লােকশিক্ষার জন্য। যার এক একটা করতেই এক একটা সাধকের একজন্ম বা বহুজন্ম লেগে যাবে। কিন্তু তাঁর জীবন থেকে যদি পরবর্তীকালের মানুষকে শিক্ষালাভ করতে হয় তাহলে দেখতে পাবে যে, বহু মত বা পথের সাধন করা সত্ত্বেও তাঁর ভক্ত বা শিষ্যমণ্ডলীকে তিনি এই সব পথের সাধন করতে বলেননি ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন সব ভাবেই সিদ্ধ—সকলভাবের সাধনা করে তিনি সেই সব সাধনপদ্ধতিগুলিকে নতুন করে জীবনদান করে গেলেন। কিন্তু তার ভক্ত-শিষ্যদের তিনি অন্য ব্যক্তিগত সাধন দিলেন আর বলে গেলেন, “জীবে প্রেম”, “জীবে ভালােবাসা”-ই আচরণীয়। দ্যাখোসাধনজীবনের মূল উদ্দেশ্য ঈশ্বরলাভ বা আত্মসাক্ষাৎকার রিপুসমূহকে দমন-পীড়ন করা বা নষ্ট করা তাে সাধকের উদ্দেশ্য নয়। কাম কি করে জয় করা যায়–এইটা কিন্তু সাধকের সাধন জীবনের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নয় _এগুলি উপলক্ষ্য ! তাই তােমাদের বলছি, তােমরা যেন লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষ্যে আটকে যেও না !

 এইজন্যেই মানবের জীবনে সদগুরুর প্রয়ােজন হয়। যে মানবের যা প্রকৃতি, সদগুরু সেই প্রকৃতি অনুযায়ী দীক্ষা দেন, অর্থাৎ সেই ব্যক্তির নির্দিষ্ট সাধন-পদ্ধতি বলে দেন এবং তাকে  তার জীবনে এগিয়ে চলার পথ দেখিয়ে দেন। আর যে ভক্ত গুরুবাক্যে সংশয় না রেখে প্রাণপণে তা পালন করার চেষ্টা করে, সে কৃতকার্য হবেই। তবে গুরুর নির্দেশ না মেনে এটা ওটা করতে গেলে হয় মুস্কিল__কোনটাই সঠিক হয় না, কর্মবিপাক উপস্থিত হয়, নানান বিকৃতি আসে সাধকের জীবনে! একে তাে মানব ত্ৰিতাপক্লিষ্টহয়েই রয়েছে_তাতে আবার গুরুবাক্যে অবহেলা-জনিত নতুন নতুন কর্মফলরূপ ক্লেশ জমা হতে থাকে। যােগশাস্ত্রে বলা হয়েছে ছােলা সিদ্ধ হলে যেমন সেখান থেকে আর অঙ্কুরােদগম হয় না, তেমনি সাধক যখন সাধনার দ্বারা সিদ্ধ হন তখন আর নতুন করে কর্মফল সৃষ্টি হয় না। তাই যে ভাবেই হােক বাসনারূপ ছােলা সিদ্ধ করে ফেলতে হবে অথবা ভেজে ফেলতে হবে। আর তা না করে নতুন নতুন বাসনার শাখা-প্রশাখা গজাতে দিলেই তাতে আবার ফুল ফুটবে, ফল ধরবে। সাধারণত জীবসকলের জন্ম-জন্মান্তর এই ভাবেই হয়ে চলেছে।

  তাই ঠেকে না শিখে _দেখে শেখাে, শুনে শেখাে। বিধাতাকে ভুলে বিধানে আটকে যেও না, লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষ্যকে প্রাধান্য দিও না। চরৈবেতি-চরৈবেতি করতে করতে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হও এবং পূর্ণ হও।

জিজ্ঞাসু :– সন্ন্যাসীরা বিবাহ করেন না কেন ? আর যদি করেন তাহলে কি হয় !

গুরুমহারাজ :– ‘বি’ পূর্বক ‘বহ্’ ধাতুর ঘঞ্ প্রত্যয় যোগে ‘বিবাহ’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। বিশেষরূপে একে অপরকে বহন করা—তবে প্রকৃতপক্ষে হৃদয়ের মিলনকেই ‘বিবাহ’ বলা হয় ! আমাদের শাস্ত্রে আবার ৮ রকমের বিবাহের কথা রয়েছে,_যেমন প্রজাপত্য বিবাহ, গন্ধর্ব বিবাহ, রাক্ষস বিবাহ ইত্যাদি।

 কিন্তু কথা হচ্ছে যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে যাঁরা জীবনপথে একা চলতে চান না বা জীবনরথকে একাঠেলতে পারেন না, তাদের প্রয়ােজন হয় আর একজনের সাহচর্য _এটাই বিবাহের মূল কারণ। বংশােৎপাদন না করেও বিবাহ করা যায়, যেটা প্রাচীন ঋষিসমাজে প্রচলিত ছিল। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, যাঁরা জীবনপথে একা চলতে বা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন তাদের তাে দোসরের প্রয়ােজন নেই, শুধু পথ-প্রদর্শকের ভূমিকায় থাকেন গুরু। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই পুরুষ ও নারীসত্তা লুক্কায়িত রয়েছে। পুরুষ সাধক তার অন্তরের অন্তঃস্থিত নারীকে এবং নারী সাধিকা তার অন্তরের অন্তরতম পুরুষকে আবিষ্কার করার যে চেষ্টা করে তাই হোল সন্ন্যাসীদের সাধনা। আর এর সন্ধান পেলেই সিদ্ধি। যারা এটা পারেন তাঁরাই যথার্থ সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনী। আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার রমণ বা মিলনের প্রয়াসী এঁরা। জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের লােভ-মােহাদিকে অতিক্রম করেছেন, তাই এঁরা বৈরাগী। ঈশ্বরই এঁদের স্বামী বা স্ত্রী ! স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে পর-পুরুষ বা পরমপুরুষ অথবা জগৎস্বামীর সঙ্গলাভই এদের অভীষ্ট। আগে যে রাধাভাব, নারীভাব বলছিলাম—এই দ্যাখাে, এখন তার প্রকৃত কারণ বললাম। জগতে পরমপুরুষই পুরুষ আর সকলই প্রকৃতি, তাই বৃথা পুরুষ শরীরের গর্ব করে লাভ কি!

যীশু একবার সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটছিলেন, হঠাৎ তিনি পাহাড়টির শীর্ষস্থানের দিকে দ্রুতপদে হাঁটতে লাগলেন। দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত এবং অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে সাথীরা একে একে বসে পড়তে লাগল। যীশুর কিন্তু ক্লান্তি নেই, চলার ক্ষান্তি নেই। শিষ্য টমাস একমাত্র অতি কষ্টে যীশুকে তখনও follow করে চলছেন কিন্তু তিনিও যখন আর পারছেন না, তখন কাতরকষ্ঠে মিনতি করলেন—“প্রভু! আপনি কোথায় চলেছেন ?” যীশু হাঁটতে হাঁটতেই উত্তর দিলেন–"অভিসারে ! আমি প্রেমিকা, আমার স্বামীর সাথে মিলনের প্রয়াসে আমি এগিয়ে চলেছি, যদি পারাে আমাকে অনুসরণ করাে (follow me)"। কিন্তু টমাস আর এগােতে পারলেন না–যীশু একাই এগিয়ে গেলেন।

 এই দ্যাখাে_এটাই প্রকৃত সন্ন্যাসীর রূপ ! সন্ন্যাসী চলার পথে কাউকে যদি সাথী না পান, কেউ যদি সঙ্গী না হয়, তাতেও কোন দুঃখ নেই, একলাই এগিয়ে যাবেন, অন্যের প্রতি কোন অভিযােগ নেই, বিরক্তি নেই, নিজকর্মে অটল। এঁদের বাহ্যিক বিবাহের কি প্রয়ােজন ? এঁরা বংশবিস্তার করতেও চান না, তাই উত্তরসূরি শ্রাদ্ধ করবে কিনা সে ভরসা না করে এঁরা সন্ন্যাস নেবার সময় "বিরজাহােম” করে আত্মশ্রাদ্ধ করে নেন। পুত্রপৌত্রাদির দ্বারা পিণ্ডগ্রহণের বাসনাও নষ্ট করে দেন।

  তবে বর্তমানে আমরা যেসকল সনাতনপন্থি সন্ন্যাসী দেখি, আচাৰ্য শঙ্করের আগে কিন্তু এরকম সন্ন্যাসী ছিল না। তখন ছিল বৈদিক চতুরাশ্রমের সন্ন্যাস আশ্রমের সন্ন্যাসীরা। পরবর্তীকালে ভগবান বুদ্ধের পর বৌদ্ধসন্ন্যাসী বা শ্ৰমণ অথবা ভিক্ষুদের পাওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক সনাতনী সন্ন্যাসীদের প্রবর্তনকারী ছিলেন আচার্য্য শঙ্কর। তিনি ভারতবর্ষের চারদিকে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করে চারজন শঙ্করাচার্যের post বা পদ সৃষ্টি করে ভারতীয় সন্ন্যাসী পরম্পরাকে নতুন রূপ দিলেন এবং যাতে এগুলি ঠিক ঠিক বজায় থাকে তার ব্যবস্থা করে গেলেন। গিরি, পুরী, ভারতী, সরস্বতী, বন, পর্বত ইত্যাদি দশনামী সম্প্রদায়ে ভাগ করে গেলেন সমগ্র সন্ন্যাসী-সমাজকে। এঁদের বাইরেও কিছু অঘােরাচারী, কাপালিক বা তান্ত্রিক সন্ন্যাসীরা রয়েছেন, তবে দশনামী সন্ন্যাসীদের সংখ্যাই বর্তমানে ভারতবর্ষে সর্বাধিক। আমি উত্তরভারতে দেখেছি এক-একটি আখড়ার under-এ দশ হাজারেরও বেশী সন্ন্যাসী রয়েছে ! এই দশনামী সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা সাধারণত তাঁদের নামের আগে ‘স্বামী” কথাটি ব্যবহার করেন, যেমন স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ ইত্যাদি।

   এইবার কথা হচ্ছে যদি কেউ সন্ন্যাস গ্রহণের পরও বিবাহ করে বসেন তাহলে কি হয় ? বিরজাহােম হবার পর যদি কোন সন্ন্যাসী বিবাহ করে সংসারী হন, তাহলে তিনি আর স্বামী’ পদবাচ্য থাকেন না—তিনি হন গােস্বামী। জগৎকল্যাণের জন্য, লীলা পােষ্টাই-এর জন্য, দৃষ্টান্ত স্থাপন ইত্যাদির কারণেও অনেক সময় গুরুর নির্দেশে বা তার অনুমতি নিয়ে অনেক সন্ন্যাসী বিবাহ করতে পারেন। যেমন মহাপ্রভুর নির্দেশেনিত্যানন্দ অবধূত বিবাহ করেছিলেন। তবে পদস্খলন হয়ে বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোন সন্ন্যাসী সংসারে ফিরে গেলে–সেটা কিছুটা অপরাধ হয় বই কি! সমাজে দেখবে অনেক পরিবারের title গােস্বামী, গিরি, পুরী ইত্যাদি। সেইসব ক্ষেত্রে ওঁদের কোন না কোন পূর্বপুরুষের এই ধরণের ইতিহাস রয়েছে।

    বাংলায় একটা কথা রয়েছে_“হেগাে গুরুর পেদো শিষ্য”! এইধরনের শিষ্যদের কথা আলাদা, কিন্তু উপযুক্ত গুরু আর উপযুক্ত সন্ন্যাসী-শিষ্যের পদস্খলন হয় না অর্থাৎ তাকে আর সংসারে ফিরে যেতে হয় না। কারণ নাভির উপরে কুলকুণ্ডলিনীর ক্রিয়া স্থায়ী হয়ে গেলে_ নাভির নিচে আর মন আসে না। জোর করে যদি কেউ নামাতেও চিয় তাহলে হয় সেই সাধক পাগল হয়ে যাবে অথবা তার শরীর ছুটে যাবে ! তবে এখানের (পরমানন্দ মিশনের) কিন্তু বিচিত্র বিধান, মা জগদম্বার দরবারে পদস্খলিতদের‌ও আলাদা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা হয়—এখানে কিন্তু অনেক কিছুরই ছাড় রয়েছে।

    যাইহােক, আশাকরি তােমার জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়েছাে এবং ব্যাপারটা clear হয়েছে। এবার চতুরাশ্রমের মধ্যে তােমার যে আশ্রম পছন্দ, সেই আশ্রমের উপযুক্ত করে নিজেকে গড়ে তােলাে ! তবে একটা কথা জেনে রাখবে__'জিজ্ঞাসা' ভালাে, তবে অহেতুক কৌতুহল ভালাে নয়।