স্থান ~ পরমানন্দ মিশন । সময় ~ ১৯৯২, জানুয়ারী । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ স্বামী স্বরূপানন্দ, পঙ্কজ মহারাজ ও অন্যান্য ভক্ত ।
জিজ্ঞাসু :— মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সঙ্গে কি শরীর ও মনের সম্পর্ক রয়েছে ?
গুরুমহারাজ :– রয়েছে বই কি ! বহিঃপ্রকৃতি আর অন্তঃপ্রকৃতি–প্রকৃতিই তাে। এর বােধ নেই তাই অনুভূত হচ্ছে না। তুমি দেখছ মেঘলা আকাশ __আর আমি তাে দেখছি অন্যকিছু এবং আজ প্রকৃতিতে শুনছি কেমন যেন একটা বিষাদের সুর ! প্রকৃতি কেমন যেন বিষন্ন। আমার মনে হয় কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবীতে বেশ কিছু সংখ্যক লােকক্ষয় হবে। এটা Natural Calamities থেকে অথবা মানুষে মানুষে বিভেদ থেকে অথবা কোন disease থেকে, যে কোন ভাবে হবেই। আর পটভূমি তো তৈরীই রয়েছে—মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করায় প্রকৃতি রুষ্ট আবার হিন্দু-মুসলমান, খ্রীষ্টান বা ইহুদি-মুসলমান—সাদা-কালাে এইসব সেন্টিমেন্টাল প্রবলেম তাে রয়েছেই। এখন তাে ইরাক-কুয়েত সমস্যা খুবই খারাপ দিকে turn নিয়েছে। ইরাকের সাধারণ জনগণের কি নিদারুণ দুর্দশা! ওখানকার সরকার তাে প্রথমত কুর্দী মুসলমানদের প্রায় মেরে শেষ করল, এখন কুয়েতের সঙ্গে ঝামেলার জন্য বিদেশ থেকে সাহায্য বা খাবার আসা প্রায় বন্ধ। ফলে সাধারণ মানুষের সারাদিনে খাবার বরাদ্দ একটা রুটি, একটা টম্যাটো আর এক বোতল জল। ভাবাে কি নিদারুণ অবস্থা!
যাইহােক, তোমরা হয়তাে ভাবছ, প্রকৃতি বিষন্ন—বহু মানুষ মারা যাবে—এসব কি করে বলছি __তাইতাে ? ওটা তুমিও পারবে—বলছিলাম না যে, প্রকৃতির দুটি রূপ– অন্তঃপ্রকৃতি আর বহিঃপ্রকতি। এখন যার অন্তঃপ্রকৃতি জয় হয়েছে তার বহিঃপ্রকৃতির রহস্যও অবগত হয়েছে। তাই বহিঃপ্রকৃতির বিষন্নতা আমাকেও বিষন্ন করছে !
তবে এরজন্য তোমাকে হিমালয়ে গিয়ে সাধনা করার প্রয়ােজন নেই, এমনি তুমি যদি বহিঃপ্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে কাছ থেকে দেখো তাহলে দেখবে যে, এমন অনেক জিনিস তােমার চোখে পড়ছে বা তুমি বুঝতে পারছ—যা অন্যেরা পারছে না বা তারা হয়তাে তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দেখেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। এইরকমই আমার জীবনের একটা ঘটনা বলছি শোন ! নরওয়েতে একবার বিয়নের সাথে পাহাড়ি রাস্তায় বেড়াচ্ছি, পথের দুপাশে গাছপালা রয়েছে। আমি বিয়নকে বললাম, “বিয়ন, শীতকালে এসমস্ত অঞ্চলে বরফে পড়ে প্রায় সাড়ে-তিন ফুট ঢেকে যায়,তাই না" ? ও অবাক হোল, ভাবল বােধহয় আমি যােগশক্তি প্রয়োগ করে জেনেছি। আমি ওকে বললাম–“না না দেখছি প্রতিটি গাছের গােড়ার দিকে একটা নির্দিষ্ট height পর্যন্ত রঙটা আলাদা, আর তারপর থেকে উপরের অংশে একরকম fungus জন্মেছে। তাই বুঝলাম শীতকাল পড়তে আর দেরি নেই–fungus-রা বরফের মধ্যে বাঁচবে না বলেই একটা নির্দিষ্ট height পর্যন্ত জন্মেছে, তার নীচে নামেনি"। কারণটা বােঝাতেই বিয়ন হেসে উঠল, তারপর বলল, "আমরা এখানে থাকি তাও ব্যাপারটা লক্ষ্য করিনি, আর আপনি একদিন দেখেই বুঝে ফেললেন! সত্যিই ভারতীয়দের প্রকৃতি থেকে পাঠ নেবার ক্ষমতা অন্যান্য সবার চেয়ে বেশী বলেই পুরাকাল থেকে বিশ্বকে জ্ঞান দিয়েছে ভারত। আর অন্যেরা এই কাজটা না করে__ কেন যে কেবলমাত্র ভারতীয়রাই করতে পেরেছে, সেটা আপনাকে দেখে বেশ বুঝতে পারছি।”
সে যাইহােক, মানুষের শরীর বা মনের উপর প্রকৃতির প্রভাব যে খুবই প্রকটভাবে রয়েছে__ তা যে কেউ একটু মনোযোগী হোলেই বুঝতে পারবে। দেখবে, যেদিন নির্মল আকাশ, রৌদ্রোজ্জ্বল দিন সেদিন শরীর এবং মন দুটোই কত ভালাে থাকে_অপরপক্ষে মেঘলা আকাশ থাকে অথবা রাতের আকাশে তারা থাকে না _সেই দিনগুলােয় শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে--মনটাও যেন উদার হতে পারে না, কোন ভালাে কাজ করতে উৎসাহ আসে না, এমনকি খেয়ে ভালাে হজমও হয় না ! মনােবিজ্ঞানীরা এবং সমাজ-বিজ্ঞানীরা এই সব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করে থাকে। ইংল্যাণ্ডের আবহাওয়া সবচাইতে কুয়াশাচ্ছন্ন ও মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাই ইংল্যাণ্ডের জনগণের মেঘলা দিনের এবং পরিষ্কার দিনের মানসিকতার উপর research চালানাে হয়েছিল, তাতে দেখা গেছে মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়াযুক্ত দিনগুলিতে বা রাত্রে চুরি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজকর্ম যত বেশি হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বা নির্মল আকাশযুক্ত রাত্রে এগুলি তত হয় না।এটা যে শুধু ইংল্যাণ্ডেই কার্যকরী তা নয়, সারা পৃথিবীতেই এই পরীক্ষা চালিয়ে দেখা হয়েছে যে, ফল একই _ বেশীর ভাগ অপরাধপ্রবণ কাজ মেঘাচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় বেশী হয়। এমনকি এইরকম দিনে মানুষের মধ্যে Suicide করার tendency আসে এবং suicide বেশী হয়ও।
তবে দ্যাখাে, সাধারণ মানুষের এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানাের সময় কোথায় ? তাদের তাে কত কাজ ? মনােবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানীরা এইসব নিয়ে গবেষণা করে দু’চারটে theory বের করে বা কোন article ছেপে সেগুলি প্রকাশ করে। তখন মানুষ সেগুলি পড়ে ঐ সব সম্বন্ধে কিছুটা জানতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কখনোই প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে সমস্ত সাধক সাধনার দ্বারা তার অন্তঃপ্রকৃতিকে স্ব-বশে আনতে পেরেছেন, তিনি পারেন বহিঃপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা বশে আনতে। আচার্য শঙ্কর তার গুরুর আশ্রমকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করার জন্য সমগ্র বন্যার জলকে একটা কলসীর মধ্যে আবদ্ধ করেছিলেন। এইরকম অবস্থাপ্রাপ্ত হয়েই বিশ্বামিত্র আর একটা নতুন পৃথিবী তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন। এরূপ কথিত আছে তিনি গরুর বিকল্প মহিষ, গাধার বিকল্প খচ্চর ইত্যাদি তৈরি করেছিলেন–কিন্তু কোনোটাই প্রাকৃতিকভাবে শ্রেষ্ঠ জীবের মর্যাদা পায় নি! তবে সাধনার একটা নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছে সাধকের যখন “সবই জগদম্বার ইচ্ছায় হচ্ছে”- এইরূপ বােধ হয়,তখন তার দ্বারা আর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ হয় না।
অবতার পুরুষরা কখনোই প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করেন না, নিজে মায়াধীশ হয়েও মায়ার অধীনে থাকা আর পাঁচটা সাধারণ জীবের ন্যায় থেকে_ লীলাবিলাস করে যান। তাঁরা দ্রষ্টাবৎ থেকে শুধু লীলারস আস্বাদন করেন। এটা জানবে যে সিদ্ধ, যােগী, মহাপুরুষ ইত্যাদি যে নামেই তাঁদেরকে বিভূষিত করা হােক না কেন প্রকৃতপক্ষে অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করেই তিনি বহিঃপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভ করেছেন ! আর এই অবস্থা প্রাপ্ত যিনি হয়েছেনতিনিই তখন যথার্থ “স্বামী” পদবাচ্য হন তিনি তখন তাঁর অন্তঃপ্রকৃতির এবং সেই সঙ্গে বহিঃপ্রকৃতির “স্বামী”। যে কোন সন্ন্যাসীরা তার নামের আগে যে “স্বামী” শব্দটা ব্যবহার করেন, সেটা প্রধানত এখন টাইটেল হয়ে গেছে_কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থ বা রহস্য এটাই ! যাইহোক, এই ধরনের উন্নত অবস্থার সাধকদের মধ্যে অনেকে এই অবস্থা প্রাপ্ত হয়েই সন্তুষ্ট থাকেন,আত্মরসে মগ্ন হয়ে থাকেন আবার কেউ কেউ সেই রসের ভাগ আর পাঁচজনের সঙ্গে share করতে উদ্যোগী হন। প্রথমটি শিবভাব আর দ্বিতীয় ভাবটি হরির বা কৃষ্ণের।
এই-তো রহস্য বাবা! শিবই জীব হয়েছেন–একথা সত্য, কিন্তু জীবত্ব থেকে শিবত্বে না পৌঁছালে তাে ঠিক ঠিক আনন্দরস আস্বাদন হয় না বা ঠিক ঠিক সত্যের বােধ হয় না। এইজন্যই সাধনা—এইজন্যই এগিয়ে চলা, চরৈবেতি–চরৈবেতি—চরৈবেতি। এগিয়ে চলা জীবত্ব থেকে শিবত্বের দিকে, জীবন থেকে মহাজীবনের দিকে, অন্ধকার থেকে আলাের দিকে, মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে চির আনন্দময় অমৃতের দিকে !
জিজ্ঞাসু :— ভারতীয় দর্শনে বলা হয় পুরুষ-প্রকৃতি। তাহলে প্রকৃতি কি নারী ?
গুরুমহারাজ :– শব্দজালে জড়িয়ে পড়াে না ! জানােতাে সেই গল্পটা—যেখানে এক অন্ধকে দুধের স্বাদ বােঝাতে গিয়ে একজন পণ্ডিতমূর্খ প্রথমে বলল, ‘শুভ্রম্’ , এবার ‘শুভ্রম’ বােঝাতে ‘বক সদৃশম্’, তারপর বক বােঝাতে গিয়ে বক থাকে যেখানে অর্থাৎ “স্বচ্ছসলিলম্”- ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে লাগল। এরপর স্বচ্ছ কি বােঝাতে “সীসা সদৃশম্” বলে একটা কাচের টুকরাে অন্ধের হাতে দিতেই অন্ধ সেটিকেই দুধ ভেবে মুখে দিল । আর অমনি রক্তপাত, মুখের ভিতরটা ছিঁড়েখুঁড়ে _কেলেঙ্কারী কাণ্ড! সেইজন্য বলছিলাম শব্দজালে জড়িয়ে পােরো না !
পুরুষ-প্রকৃতি যেটা বেদাদিশাস্ত্র বা দর্শনে রয়েছে, সেটা ব্রহ্মের নির্গুণ ও সগুণ অবস্থাকে বােঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এটাই আবার অন্যত্র পাবে অক্ষর পুরুষ ও ক্ষর পুরুষ, কোথাও পাবে বিন্দু- বিসর্গ ইত্যাদি নামে। “একং সদবিপ্রা বহুধা বদন্তি।” এই এক আর বহু-র মাঝে থাকে দুই। এইজন্য বিন্দু আর বিসর্গ। এক --দুই – বহু–এটাই ক্রম। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের এই যে চক্র চলছে একে বিন্দু-বিসর্গের খেলাও বলা হয়ে থাকে। অবরােহক্রমে বিন্দু বিসর্গ থেকে বহু, আর আরােহক্রমে বহু বিসর্গ হয়ে বিন্দুতে—এটাই ব্রহ্মবিলাস। আর এই ব্রহ্মবিলাস হয়ে চলেছে কল্প থেকে কল্পান্তরে।
তাই 'পুরুষ' বলতে মানুষ শরীরের নারী-পুরুষ এরূপ ভেবাে না। বেদের পুরুষ হচ্ছে অক্ষর পুরুষ। আবার ঈশ্বর অর্থাৎ যিনি ঈক্ষণ করেন—তিনি পুরুষ, তাছাড়া তো বাকি সবই প্রকৃতি। জীবসমাজে নারীপুরুষ তাে লিঙ্গভেদে ! এখানে নারী-পুরুষের লিঙ্গ পৃথক হয় শুধুমাত্র তাদের মিলনের জন্য বা বংশবৃদ্ধির জন্য। কিন্তু বিরাটের চোখে দেখলে তো_ ঈশ্বর ছাড়া সবই 'প্রকৃতি', সেখানে এই জৈবিক নারী-পুরুষের কোন ভেদ নাই। তাছাড়া দ্যাখো_ বাহ্যিক নারী-পুরুষের যে ভেদ, তাও কিন্তু স্থায়ী নয়। বহু পুরুষ-সাধকের.নারীভাবে সাধনা করতে করতে নিজেদের শরীরে নারীভাব__ এমনকি নারীশরীরের লক্ষণসমূহও প্রকট হয়ে যেতে দেখা যায় , পুরুষশরীরে ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে_ এমনও ঘটনা ঘটেছে। আবার নারী শরীরের কোন সাধিকা_ সাধনা করতে করতে তার নারীভাব অবলুপ্ত হয়ে গেছে, তাঁর শরীরের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেছে_ এমনও অনেক example পাবে। আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরাও নানা Operation-এর মাধ্যমে নারী থেকে পুরুষে বা পুরুষ থেকে নারীতে পরিণত করতে পারছে ! আরও উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে _ ভ্রূণ অবস্থায় ক্রোমােজমের বিন্যাস বা গুণের পরিবর্তন ঘটিয়েও লিঙ্গ পরিবর্তন করা যায় ! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, লিঙ্গভেদের পার্থক্য বা কিছু শারীরিক গঠনের পার্থক্য এমন কিছু নয়--স্বরূপত সকলেই প্রকৃতি।
তবে দ্যাখো_প্রকৃত কথা বলতে গেলে_ অধ্যাত্মজগতে নারী-পুরুষ আবার কি ? ভক্ত, সাধক এইসবই তাে তার পরিচয়—তার ইষ্টই তার অভীষ্ট, ইষ্টলাভই উদ্দেশ্য। কোন মহাপুরুষ কি কখনও এই নিয়ে কোন ভেদ-ভাবনা করেছেন ? আমি তাে সকলকে ‘প্রিয় আত্মন্’ বলে সম্বােধন করি, কই কোন নারী-পুরুষ ভেদভাব তাে জাগে না। আর সাধু ও সন্ন্যাসী তারা তাে প্রকৃতিভাব বা নারীভাবেই সাধনা করেন, তাইতাে গৈরিক বসনের কাছা দেন না, ভিতরে লেংটি পরেন।
পরমেশ্বরের এই লীলাজগতে_ পরমপুরুষের ভিতর যেমন দুটো ভাব বিদ্যমান থাকে, তেমনি পরমাপ্রকৃতিরও দুটো ভাবই থাকে। এই যে বহির্জাগতিক ভিন্নতাটুকু দেখছ —এটা এই জন্যই। নারীভাব হচ্ছে বাঁধনকামী–গৃহমুখী বা অন্তর্মুখী, আর পুরুষভাব দুর্বার, বাঁধনছাড়া, বহির্মুখী। নারী সঙ্গিনী হয়, তাই পুরুষ ঘর বাঁধে। নারী না থাকলে শুধু পুরুষসমাজ কখনও ঘর বাঁধতাে না, বলা যায় ঘর-বাঁধার কোন প্রসঙ্গই আসতাে না ! কেউ কেউ এইজন্য বলেছেন নারী যেন Nostalgic আর পুরুষ Bohemian। হিমালয়ে আমি দেখেছি পুরুষ-বাঁদরের সন্ন্যাসীর দল। ওরা বংশবিস্তারের জন্য মারামারি করে না---কোন দলেও যায় না। আবার স্থায়ীভাবে কোন স্থানে বসবাসও করে না ! এখান-ওখান শুধু ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। মনুষ্যসমাজে সন্ন্যাসী বা সাধুদেরও তেমনই কোন বন্ধন নাই! কোন সন্ন্যাসী কোথাও হয়তাে রয়েছে__স্থানটা ভালো লাগলো না অথবা কারো সাথে পােষালাে না, অন্য কোথাও চলে গেল! সন্ন্যাসী মানে তো সে স্বাধীন,কাজেই সে তার মন-মর্জি কাজ করতেই পারে—তাই বলে বিরােধ করবে নাকি ? স্থানদখল, গদিদখল নিয়ে মারামারি, ঝগড়া, বিরােধ তাে গৃহস্থীরা করে_ সন্ন্যাসীরা কেন করবে ? যদি এমনটা কোথাও হয়, জানবে তারা সাধক অবস্থায় আছে_প্রকৃত সাধু বা সন্ন্যাসী হয়ে ওঠা হয় নি !
এইজন্য পরিব্রাজন বা প্রব্রজ্যা সন্ন্যাসীর অবশ্য কর্তব্য, এতে যেমন ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা বাড়ে, তেমনি ভূগােল, ইতিহাস, সমাজ, দর্শন ইত্যাদির জ্ঞান হয়। রমতা সাধুর কখনো কোন স্থানের উপর বা গদির উপর লােভ জন্মানাের সুযােগ থাকে না। কথায় বলে “রমতা সাধু- বহতা পানি কভি না মইলি হােই।”
যাইহােক পুরুষের নারীভাব তাে অনেক শুনলে এবার বলতো নারী কখন পুরুষভাব ধরে ? না_নারী যখন রণচণ্ডী মূর্তি ধারণ করে ! কোন নারীর রণচন্ডী মূর্তি দেখেছ কখনও? এই মূর্তিতে সাধারণ কোন নারী দশটা পুরুষের মোকাবিলা করতে পারে। আর ঐ নারীর যদি সাধনশক্তি থাকেতাহলে শত শত অসুরের মুন্ডপাত করে দিতে পারে ! পৌরাণিক আখ্যানে পাবে মায়ের রনচন্ডী রূপের বর্ণনাদেখবে কি ভীষণ সেইরূপ! বিশ্বপ্রকৃতিরও রনচন্ডী রূপ রয়েছে। বহিঃপ্রকৃতিতে যখন ঝঞ্ঝা, তুফান, বন্যা,ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতইত্যাদি প্রলয়ঙ্করী.রূপ দেখা যায় _তখন প্রকৃতির পুরুষ ভাব ! আর অন্য সময় অর্থাৎ যখন প্রকৃতি শান্ত তখন প্রকৃতির নারীভাব।
তাহলে বােঝা গেল ব্যাপারটা ! প্রকৃতি-পুরুষ বলতে সবসময় লিঙ্গভেদে নারী-পুরুষকে ভেবে নিওনা। অন্তর্নিহিত অর্থগুলি বুঝতে হবে, তাহলেই যাবতীয় সমস্যার সমাধান হবে। আর মুস্কিল আসানের জন্যই তাে গুরু ! তার না হলে আর গুরুর ভূমিকা কি ? গুরুর শরণাপন্ন হও—সব অজ্ঞান মেঘ সরে যাবে, আবার চিত্তাকাশে জ্ঞানসূর্যের উদয় ঘটবে।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।