স্থান ~ পরমানন্দ মিশন । সময় ~ ১৯৯২, নভেম্বর ৷ উপস্থিত ~ সিঙ্গুরের ভক্তগণ সহ আশ্রমস্থ ভক্তবৃন্দ ।
জিজ্ঞাসু :— বিভিন্ন ধরণের গবেষণা বা research থেকেই তাে আজকের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে success এসেছে, সুতরাং Research Centre বাড়ালেই তাে দেশের উন্নতি সম্ভব ?
গুরুমহারাজ :– কি করে বলছ এটা ! research কি শুধু উন্নয়ন আর সৃষ্টিমূলক—ধ্বংসমুলক বা ক্ষতিকর research কি হয় না, বরং ওটাই বেশী হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে কত ধরণের যে research হয়ে চলেছে, তার ইয়ত্তা করতে পারবে না! তবে জানবে _যে কোন গবেষণার বিষয়বস্তু কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতাপ্রসূত ! ভবিষ্যৎ নিয়ে research হয় কি ! অতীতের কোন ভাবনা বা theory-কে কাজে লাগিয়ে বস্তুবিজ্ঞান বা জীবনবিজ্ঞান গবেষণা করে থাকে। ভবিষ্যৎকে নিয়ে research করার ক্ষমতা একমাত্র অধ্যাত্মসাধক ছাড়া আর কারও নেই। আর ভবিষ্যৎকে পরিষ্কার দেখতে পান মহাজন-মহাপুরুষগণ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, “গ্রীনরুম বা সাজঘর দেখে যাত্রা শােনা।”
ভবিষ্যৎ বক্তা বা Foreteller-রা এই স্তরের নন। তারাও অতীতের কোন theory কে কাজে লাগিয়ে অভিজ্ঞতা ও সাধনার ভিত্তিতে ঐ বিদ্যার কিয়দংশ আয়ত্তে আনেন ও কিছু ভবিষ্যতের ঘটনার আলােকপাত করতে পারেন। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন কোন বিষয়, যা নিয়ে কখনও কোন চিন্তাও করেনি--তা নিয়ে সাধারণ মানুষ কিভাবে গবেষণা করবে ! সম্পূর্ণ নতুন কিছু, নতুন চিন্তা, নতুন theory কি সমাজকে তারা দিতে পারবে ? এটা দিতে পারেন একমাত্র বােধিব্যক্তিরা। এদেরকেই 'ঋষি' বলা হয়েছে! আর ঈশ্বরের অবতার যখন শরীর ধারণ করেন, তখন তাঁরা যা কিছু বলেন_ তা যুগ-প্রয়ােজনের জন্য অর্থাৎ সেই কথাগুলিই হয়ে ওঠে যুগ-উপযােগী কথা।সব কথা তো বলা যায় না,তবু সেখানে ঠারেঠোরে যা কিছু বলা হয় তা নিয়ে সমকালীন সময়ে গবেষণা কম হয়—অনেক পরে সেইসব চিন্তার কথা ধরতে পারে মানুষ। তাই অবতার পুরুষরা জগতে যেন অনেক advanced—অত্যাধুনিক মানুষ ! উদাহরণ হিসাবে স্বামী বিবেকানন্দকে দ্যাখো_সমকালীন মানব সমাজ তাঁকে কতটুকু গ্রহণ করেছিল! অবশ্য এখনো তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি_তবু তো বিশ্বের উন্নত মেধার মানুষেরা তাঁর চিন্তাকে গ্রহণ করতে শুরু করেছে_এটাই চরম!
তোমরা কি জানো__ বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যা কিছু উন্নতি করছে, আবিষ্কার করেছে বা System-এর উৎকর্ষতা সাধন করেছে_ এর মূলে কি রয়েছে ? এর মূলে রয়েছে insecurity ! অতীতের অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি এবং betterment-এর প্রচেষ্টা—এগুলিই তাে research-এর উৎকর্ষতা সাধন করে ! আদিমমানবসমাজ থেকে আজকের অবস্থায় আসতে যে ব্যাপার বা বিষয়গুলি মানুষকে আরও secured করেছে বলে তারা ভাবছে, সেইগুলিই কোন না কোন উৎকৃষ্ট গবেষণার ফল বলে বিবেচিত হচ্ছে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে— গবেষণার দ্বারা মানুষ insecured অবস্থা হতে আরও secured অবস্থা প্রাপ্ত হতে চাইছে। তাই বলা যায় এই যে insecurity থেকে security-র দিকে যাত্রা___ঐটাই মানুষকে নতুন নতুন গবেষণার প্রেরণা জোগায়।
তবে,তুমি যে গবেষণার কথা বলছ বা যে সব কথা এতক্ষণ বলা হোল_ এগুলি বাইরের গবেষণা বা বহির্জাগতিক গবেষণা, আর অধ্যাত্ম সাধনার গবেষণা হয় ব্যক্তির নিজের ভিতরে—তার অন্তর্জগতে। অন্তরের অন্তস্তলে ডুব দিয়ে উপনিষদের ঋষিরা বােধ করলেন যে, এক অখণ্ডসত্তা সর্বব্যাপী বিরাজমান। বােধের জগৎ থেকে ঋষি বললেন—“অহম ব্রহ্মাস্মি”__আমি-ই ব্রহ্ম। সামনে জিজ্ঞাসাকারী শিষ্য যখন জিজ্ঞাসা করলেন 'তাহলে আমি কে' ?–ঋষিরূপী গুরু তার উত্তরে বললেন “তত্ত্বমসি”("তৎ-তমসি"__তুমিই সেই) ! শিষ্য কেমন যেন ঘাবড়ে যাচ্ছে দেখে তিনি আবার বললেন, “প্রজ্ঞানম্ ব্রহ্ম”_প্রজ্ঞান অর্থাৎ প্রকৃষ্ট জ্ঞান-ই ব্রহ্ম ! যে জ্ঞানে বোধ হয় তুমি-আমি অভেদ_একই আত্মা ভিন্ন ভিন্ন নাম ও রূপে প্রতীয়মান ! তাই শেষে বললেন, “অয়মাত্মা ব্রহ্ম”_এই আত্মাই ব্রহ্ম!
তাহলে দ্যাখা যাচ্ছে, "আমি আত্মা"—এই "আমি"-ই শুধু আছি__ এটাই অদ্বৈতভাব। এখানে দ্বৈত ভাবনাই নেই তাে দ্বৈত সত্তা কোথা থেকে আসবে ? এবার কথা হচ্ছে সেই "আমি" তাে সবসময় secured __সেখানে আবার insecurity কি ? এর উত্তর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সহজ কথায় দিলেন_ব্যক্তির যে ব্যক্তিসত্তা বা ক্ষুদ্র অহং বা ‘কাঁচা আমি’–এরই insecurity। এই insecurity থেকে security-র খোঁজে যে যাত্রা তাই অভিসার বা সাধনজগৎ। এই জন্যই বলা হয়__পূর্ণই অপূর্ণতার জ্বালা বুকে নিয়ে ছুটে চলেছে পূর্ণত্বের দিকে।
কিন্তু বর্তমানের জড়বিজ্ঞানীরা_ বহিঃপ্রকৃতিকে জয় করার নেশায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি করে যাচ্ছে—একের পর এক theory আনছে,উন্নত যন্ত্র অথবা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছে। জীববিজ্ঞানীরা উন্নতর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবজগতের বিভিন্ন রহস্য অবগত হচ্ছে_সহজ পদ্ধতিতে রােগনির্ণয় করছে, জীবনদায়ী ঔষধ আবিষ্কার করছে ! উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত উন্নত বীজ-রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়ােগের ফলে_যে কোন ফসলের উৎপাদন বাড়ানাে সম্ভব হচ্ছে _ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বলা যায় ! এই সব গুলির লক্ষ্য উদ্দেশ্য মানুষকে insecurity থেকে security-র দিকে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এই বহির্বিজ্ঞানের আবিষ্কার বা বহির্জাগতিক আবিষ্কারের ফলে প্রকৃতই কি মানুষ secured হচ্ছে ? তােমরা যারা এখানে বসে আছো—তােমাদেরকেই আমি জিজ্ঞাসা করছি– ‘বল, তােমরা কি সকলে secured, তােমাদের কি কোন insecurity নেই ? তােমরা কি আমার এই জিজ্ঞাসার উত্তরে সকলেই ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবে ? __পারবে না ! তাহলে এখন জিজ্ঞাসা__ কি করলে secured হওয়া যায় ?
এইভাবেই প্রাচীনকালে কোন ব্রহ্মজ্ঞ গুরুর পদপ্রান্তে বসে শিষ্যরা জিজ্ঞাসা ও উত্তরের মাধ্যমে জ্ঞানচর্চার perfection-এ পৌঁছেছিলেন। শাস্ত্রে বলা হয়েছে “অথাথ ব্রহ্মজিজ্ঞাসা !” ঋষিরা দেখেছিলেন বহিঃপ্রকৃতি নয়, অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করেই বহিঃপ্রকৃতির সবকিছুকেই জয় করা যায় ! এতেই আসে permanent security এবং একমাত্র এই অবস্থাতেই জীব অভয় হয়। জীবের বিবর্তনে এককোষী প্রাণী থেকে যে চলা শুরু হয়েছিল, security-র অভাববোধ থেকে অগ্রগতির মাধ্যমে তা বহুকোষী হয়ে মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং সেখান থেকে বানর প্রজাতি হয়ে নর প্রজাতিতে এসে বাহ্যিকভাবে(শরীরে) পূর্ণতা পেয়েছিল। এবার মানুষ শরীরে এসে মানব তার অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করে লাভ করতে পারে পূর্ণতা বা perfection ! আর একমাত্র এই অবস্থাতেই জীব secured বা অভয় হয় !
সুতরাং “ক্ষুদ্র আমি” বা “কাঁচা আমি”-র অগ্রগতির জন্য research কি হবে ? সেই টা হবেপূর্ণতাপ্রাপ্তির research ! তাই বলছিলাম না একমাত্র অধ্যাত্ম-সাধকরাই প্রকৃত অর্থে ‘ভবিষ্যতে’-র research করে।বর্তমানের research সমূহ যেন অতীতের আবিষ্কারসমূহকেই পুনরায় ফিরে পাওয়া। তার বেশি কিছুই নয় ! তাছাড়া দ্যাখো_ কোন গবেষণাই তাে নিত্য নয় ! দেখবে_ আজকে যেটা সবচাইতে উৎকৃষ্ট তত্ত্ব অথবা গবেষণার বিষয় বা গবেষণালব্ধ ফল _ আগামীতে তা টিকছে না অথবা সেই তত্ত্বটি ভুল প্রমাণিত হচ্ছে ! তখন আবার অন্য আর একটা বিষয়ের research বা তার ফল এসে সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে। অ্যাভােগাড্রো–> ডালটন–> নিউটন–> আইনষ্টাইন _এইভাবে যদি material science-এ এঁদের research এবং তার ফল নিয়ে এঁদেরকে শ্রেনীবদ্ধ করো তাহলে দেখবে নিজ নিজ সময়ে এঁরা সকলেই শ্রেষ্ঠ ছিলেন এবং সেই সময়ে তাঁদের আবিষ্কার টাই ছিল সর্বোত্তম ! কিন্তু কাল বদলের সাথে সাথে নতুন নতুন তত্ত্ব স্থান করে নিয়েছে এবং পুরাতন তত্ত্বগুলি ভুল প্রমাণিত হয়েছে বা বাতিলের দলে চলে গেছে !
সমাজে “বস্তুবাদ” বলেও কথা রয়েছে, আবার বস্তুবিজ্ঞান শব্দটিও রয়েছে। কিন্তু “বস্তু” তাে শাশ্বত বা চিরন্তন নয়, তাহলে এই সংক্রান্ত গবেষণা কি করে শাশ্বত হবে ? ‘Material Science-এর গবেষণায় মানবসমাজের প্রভূত উন্নতি হয়েছে’_ এরূপ দাবি করা হয় কিন্তু এই আবিষ্কারসমূহ সাধারণ মানুষের ভোগবিলাসের প্রাচুর্য যত এনেছে, সাধারণের জ্ঞানবিজ্ঞানের অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে ততটা কি সফল ? সমাজে কল্যাণমূলক কাজে যতটা না success এনেছে—অকল্যাণকর কাজে—ধ্বংসাত্মক কাজে কি আরও বেশী সাফল্য আসেনি ? তাহলে ‘Material Science’-এর উন্নতিতে মানুষ secured হোল কোথায় ? বরং মানুষ তাে আরও insecurity-র শিকার হয়ে গেল !! তীর-বল্লম-তরবারির যুগে একটা অস্ত্রের ঘায়ে একজন মানুষ মারা যেতো _ বর্তমানের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে উন্নত আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের এক আঘাতে লক্ষ লক্ষ মানুষও মারা যেতে পারে !! তাহলে বহির্মুখী research মানুষকে স্বস্তি এনে দিতে পারল কোথায়, কোথায় মানুষের নিরাপত্তা এনে দিল ? বরং তো অস্বস্তি আশঙ্কা বাড়িয়ে দিল!!
তাই বহির্মুখী নয়, research যদি করতেই হয় তাহলে অন্তর্মুখী হয়ে reserch করাে—আত্মানুসন্ধানের গবেষণা করাে। মায়াবদ্ধ মানব তাে নিজেকেই ভুলে বসে আছে অথবা ভুল ভেবে বসে আছে। তাহলে_ সেই "ভুলোমানব" কি করে করবে সঠিক research ? এইটা ভাবাটাই ভুল হয়ে যাচ্ছে না কি ? আর এই যে দেখছ মানবকল্যাণের বদলে মানুষের অকল্যাণ করার research(আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে কম সময়ে অধিক মানুষ মেরে ফেলার আবিস্কার সমূহ)—এগুলাে তাে ঐরূপ ভুল মানুষ অথবা বিকৃত মানুষদের research-এর ফল ! ওরা তো বিজ্ঞানী পদবাচ্যই নয় ! তোমরা আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করাে_ প্রকৃত বিজ্ঞানী কে? তার উত্তরে আমি বলব, যিনি নিজেকে জানেন _অর্থাৎ যিনি জানেন_“I am that’ বা ‘আমিই সেই’ অথবা তাঁর বোধ হয়েছে_ “আমিই তিনি, তিনিই আমি”—সেই ব্যক্তিই যথার্থ বিজ্ঞানী ! আর পৃথিবীতে যারা উচ্চ শিক্ষিত, scholar, পণ্ডিত মানুষ হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত অথচ “আমি-আমার"—এই ভাবনা অতিক্রম করতে পারেননি, আধ্যাত্মিক চোখে তারা কিন্তু অজ্ঞানী !
জিজ্ঞাসু :— আপনি বাংলা অনেক শব্দের সঠিক মানে বা তার উৎস নিয়ে আলােচনা করেন। বাংলাভাষায় অনেক গালাগালি রয়েছে যেগুলাে অনেক সময় ঠিক বােঝা যায় না। যেমন ‘জোচ্চোর’ শব্দটি কিভাবে এসেছে যদি বলেন ?
গুরুমহারাজ :— জুয়াচোর থেকে ‘জোচ্চোর’ কথাটি এসেছে। জুয়ার নেশায় মানুষ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, কুটুম্ব—যে কাউকে ঠকাতে কসুর করে না। এমনকি বিভিন্নরকম কৌশল অবলম্বন করে তাদের কাছ থেকে টাকাকড়ি নিয়ে আর ফেরত দেয় না—এবং পাওনাদারের ভয়ে লুকিয়ে থাকে বা পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। তাই এদের বলা হয় জুয়া-চোর বা জোচ্চোর। জানো__এরা অনেককে ঠকাতে পারে, কিন্তু আমাকে পারবে না। আমার পাল্লায় এরা বড় একটা পড়েও না—পড়লে কিন্তু একদম ঠিক হয়ে যাবে। কারণ আমি তাে প্রথমেই এদের কাউকে পেলেই বেধড়ক ‘মার’ মারব। আর বেধড়ক মারই হচ্ছে এদের একমাত্র ওষুধ !
জুয়ার নেশায় মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। দ্যাখােনা মহাভারতের ঘটনা, যুধিষ্ঠিরের ন্যায় মহা ধীমান ব্যক্তিরও জুয়ার নেশায় বুদ্ধিনাশ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভাইদের, এমন কি স্ত্রীকে পর্যন্ত জুয়ার ‘দান' হিসাবে বাজিধরেছিল এবং অনিবার্যভাবেই সর্বস্ব হেরে সকলের চরম যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল। ওদের না হয় সখা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, যিনি চরম দুর্দৈব থেকে ওদেরকে রক্ষা করেছিলেন এবং পুনরায় হৃতমর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু সাধারণ মানুষকে কে রক্ষা করবে ! তাই ‘জুয়া' ব্যাপারটা থেকে প্রচণ্ড সাবধানে থাকতে হয়। তবে এদেশের জুয়ারি অপেক্ষা পাশ্চাত্তের বিশেষত ইংল্যাণ্ডের জুয়ারিরা খুবই সাংঘাতিক। জুয়া ওদের করতে এমনভাবে মিশে গেছে যে _ওরা ছেলে-মেয়ে , বাপ-মা মিলে ঘরেতে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে জুয়া খেলে ! প্রাণকে বাজি রেখেও জুয়া খেলে ওরা। একটা এইরকম প্রাণঘাতী জুয়ার কথা বলছি শোন__ধরো, ৫/৬ জন মিলে একটা টেবিলে বসে নিজেদের suicide note লিখে সই করে তাদের সারা জীবনের সমস্ত টাকাপয়সা, সম্পত্তির কাগজ ঐ টেবিলে রাখলো। তারপর একটা রিভলবারে ১টা মাত্র গুলি পুরে গুলি থাকার case-টাকে revolve করে ছেড়ে দিল__ ফলে কেউ জানে না কোন round-এ গুলিটা রয়েছে ! এক-একজন কাঁপতে কাঁপতে রিভলবারটি তুলছে আর নিজের কপালে ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপছে। এইভাবে round হতে হতে একজন না একজন মরবেই। ব্যস্_ তখন তার টাকা-সম্পত্তি যা কিছু রয়েছে, বাকি সবাই ভাগ করে নিল! আবার এমনও হয় যে __ঐ খেলাটি বাকিদের মধ্যে পুনরায় চলতে থাকল, ফলে বেঁচে থাকা শেষ ব্যক্তিটি সবার সমস্ত টাকা-সম্পত্তি পেয়ে গেল! যেহেতু suicide note লেখা থাকে এবং যে যখন মারা যাচ্ছে তখন রিভলবারে তারই নিজের হাতের ছাপ থাকে—তাই বেঁচে থাকা ব্যক্তিটিকে পুলিশের ঝামেলায় বিশেষ ভুগতে হয় না।
এছাড়াও এই ধরনের আর একটা প্রাণঘাতী ভয়ঙ্কর খেলা রয়েছে,সেক্ষেত্রে হয় কি__ধরো,মাঝখানে দুটো লোডেড রিভলভার রেখে দু'জনে হয়তো মদ খাচ্ছে এবং একটা বিশেষ মিউজিক বাজানো হচ্ছে। এবার বাজিটা হচ্ছে– যখন মিউজিক থামবে তখনই যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিভালবার মাঝখান থেকে তুলে নিয়ে একে অপরকে গুলি করবে ! যেজন আগে গুলি করতে পারলো হয়তো সে বেঁচে গেল এবং যে মারা গেল তার স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির মালিক ও দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হয়ে গেল। তবে এমনও দেখা যায়__এই ধরনের জুয়া বাজি খেলতে গিয়ে দুজনেই মরে পড়ে আছে।
এই ধরনের সব ভয়ঙ্কর জুয়ার নেশায় first world মেতে উঠেছে ! জীবনটাকেই যেখানে জুয়ার দান হিসাবে ধরা হচ্ছে সেখানে morality বলে কি আছে_বলো ! তাই সর্বদা মনে রাখবে, সর্বনাশা এই জুয়ার নেশা! মানুষ যত তাড়াতাড়ি এর হাত থেকে মুক্ত হতে পারবে– ততই তার নিজের আর সাথে সাথে সমাজেরও মঙ্গলসাধন হবে।