স্থান ~ পরমানন্দ মিশন । সময় ~ ১০/১১/১৯৯০ ৷ উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই, অন্যান্য ভক্তবৃন্দ ও আশ্রমবাসীরা ।

জিজ্ঞাসু :— দেখা যায় মানুষের মধ্যে কেউ বুড়াে বয়সেও ঈশ্বরমুখী হয় না, আবার দেখা যায় কেউ কেউ কম বয়সেই বেশ ধার্মিক বা ঈশ্বরমুখী। কিন্তু আমরা জানি যে, মানুষমাত্রই ব্রহ্মের অষ্টমকলার প্রকাশ, তাহলে এই তারতম্য কেন ?

গুরুমহারাজ—মাষ্টারমশাই! আপনি শুধু কি একটা ব্যাপারেই পার্থক্য বা বৈচিত্র্য দেখছেন নাকি ? বৈচিত্র্যের পর বৈচিত্র্য, অনন্ত বৈচিত্র্য_ ব্রহ্মের অনন্ত লীলাবিলাস ! ইংরাজীতে বলা হয় Unity in diversity –বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। দেখুন_ আপনি ইংরাজীর শিক্ষক, তাই আমার মুখেও ইংরাজী কথা চলে আসছে ! জানেনবৈচিত্র্য অর্থে Variety বলা যেত কিন্তু diversity শব্দটা আরও appropriate ! Horizontal body অর্থাৎ মানুষ অষ্টমকলায় প্রকাশিত ঠিকই কিন্তু ব্ৰহ্ম তো ষােলােকলায় পূর্ণ। ফলে সকলকে পূর্ণ হোতেই হবে আর জীবসকলকে বিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাে বিবর্তবিলাস ! সুতরাং অষ্টমকলায় জীব কি করে আবদ্ধ থাকবে ? তাকে পরের দশা অর্থাৎ দশম কলায় বা দেবতায় উন্নীত হতেই হবে। এর পরের দশা__ দ্বাদশ কলায় সিদ্ধ বা ঋষি অবস্থা ! এটাই জীবের পুরুষকার বা সাধন-ভজনের চূড়ান্ত অবস্থা। এতদূর জীব গুরুকৃপায় সাধনবলে যেতে পারে।

 কিন্তু এখানে একটা কথা এসে যেতেই পারে__জীব অষ্টমকলা থেকে দশম কলায় যাবে কেন ? ব্রহ্মের এক কলায় জড়জগৎ, দ্বিতীয় কলায় উদ্ভিজ্জ বা vegetation থেকে যে প্রাণের বিবর্তন শুরু হয়েছিল তা ছিল অধঃমূল ও ঊর্বশাখা, কিন্তু অষ্টমকলায় মানুষে এসে যেন সেই বিবর্তন একটা cycle complete করলো। মানুষে এসে হল ‘উধ্বমূলম্ অধঃশাখ’ এখানে মানুষের মাথাই হচ্ছে সার অংশ। গাছের ডাল কাটলে বাঁচবে, কিন্তু মূল কাটলে বাঁচবে না, তেমনি মানুষের হাত-পা কাটা গেলে উপযুক্ত চিকিৎসার পর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু মাথা কাটলে তৎক্ষণাৎ মারা পড়বে। তাই যে বিবর্তনের একটা cycle পূর্ণ হল মানুষে এসে, তার আবার কিসের অগ্রগতি ! এবার প্রাণের বিবর্তনে চেতনার উৎক্ৰমণ __ মনুষ্যচেতনার চৈতন্যের পথে যাত্রা ! এটাকে involution বা উদবর্তন বলা যেতে পারে। মানুষের মধ্যে যে জ্বালা রয়েছে, যে insecurity রয়েছে, এটাই মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এই জ্বালা ত্রিতাপ জ্বালা– নামভেদে এগুলি তিন প্রকার আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ও আধ্যাত্মিক । আপনি সমাজে তাকিয়ে দেখুন __যে কোন মানুষ, কোন না কোন জ্বালায় জ্বলছে ! প্রতিটি মানুষ insecured ! এই inscurity-ই মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে জন্ম থেকে জন্মান্তরে—কি করে আরও secured হওয়া যায়, কিভাবে জ্বালা থেকে নিজেকে মুক্ত করা যায়—তারই অন্বেষণ, আর অন্বেষণই আধ্যাত্মিকতা ! আপনি বলছিলেন বালক বা বৃদ্ধ বয়সের কথা কিন্তু যা আলােচনা হ’ল তা থেকে তাে এটা বুঝলেন যে, একটা জীবনের আয়ুষ্কালের উপর মানুষের seniority বা juniority নির্ভর করে না। কে বৃদ্ধ বা কে বালক ? – জন্ম-জন্মান্তরের অভিজ্ঞতাপুষ্ট ব্যক্তিই বৃদ্ধ, বাকীরা বালক ! আমাকে যখন কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা স্পর্শ করে প্রণাম করে, আমি দেখি উপস্থিত অনেকের চোখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটে ওঠে__ 'গুরুদেব অল্পবয়সী হওয়া সত্ত্বেও ঐ পক্ককেশ বৃদ্ধের প্রণাম নিচ্ছেন' ! আমি কিন্তু নিজেকে তখন অতি প্রাচীন বৃদ্ধ হিসাবে দেখি আর প্রণামরত ব্যক্তিকে দেখি শিশু—এটাই রহস্য।

যাক যা বলছিলাম—এইভাবেই অষ্টমকলায় ব্রহ্ম মানুষরূপে প্রকাশিত হলেও, প্রতিমহুর্তেই পরবর্তী কলায় প্রকাশের জন্য তার উৎক্ৰমণ ঘটে যাচ্ছে। ফলে উন্নীত হবার সম্ভাবনা সবসময় বিদ্যমান থাকছে। কিভাবে এটা ত্বরান্বিত হয় ? ‘মনুষ্যত্বং, মুমুক্ষুত্বং, মহাপুরুষসংশ্রয়ঃ’। মানুষের শরীরলাভ বিবর্তনের মধ্যে হচ্ছে ঠিকই কিন্ত মনুষ্যত্ব লাভ কি করে হবে ? হবে সাধনার দ্বারা অর্থাৎ বিবেক জাগরণের দ্বারা বা চেতনার জাগরণ ঘটিয়ে। মনুষ্যত্বলাভের পর তাে মুমুক্ষুত্ব অর্থাৎ মুক্তি পাবার ইচ্ছা জাগবে। সাধারণ মানুষ কোথায় মুমুক্ষু—স্ত্রী-পুত্র-সংসার, বিষয়-আশয় নিয়ে বেশ দিব্যি সুখে রয়েছে। কি বলছ ? দুঃখও রয়েছে, হ্যাঁ, তা রয়েছে ! ছেলে হ’ল সুখ, হঠাৎ ছেলেটা মরে গেল দুঃখ। কিন্তু মহামায়ার কেমন মায়া দেখাে—কিছুদিন কান্নাকাটি, শােক প্রকাশ—তারপর আবার ভুলেও গেল—হয়তাে আবার একটা ছেলে বা মেয়ে হ’ল। তাদের নিয়ে ঐ ব্যক্তি আবার আহ্লাদ করতে লাগল। সুতরাং দুঃখ আছে কিন্তু সুখও আছে, আর এই সুখের আশাতেই সংসার পেতে বসে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, কে মুমুক্ষু বাবা ! ক’জন ঈশ্বরকে ধ্যান-জ্ঞান করেছে জীবনে ! বহুজন্মের সাধনায় ভগবৎপদে ভক্তি জন্মে ! সে কি এক জন্মে হবার জো আছে ! ধর্মজগতে এইভাবেই senior বা junior বিচার হয়। বয়স দেখে বা পাকা চুল দেখে, জটা দেখে, তিলক দেখে বা পােশাক দেখেও নয়। গৃহস্থ আশ্রম অপেক্ষা সন্ন্যাস আশ্রমে এই ধরণের senior-এর সংখ্যা বেশী, তাই সন্ন্যাস আশ্রমের লােকমাত্রই senior এটা ভাবা ভুল। সন্ন্যাস আশ্রমে এমন অনেকে রয়েছে যারা পরে আবার সংসারী হবে। আবার এখন সংসার করছে আগে হয়তাে সন্ন্যাস আশ্রমে ছিল। এই জন্যই আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান। তাই বয়স দেখে বিচার করতে যাওয়া মূর্খতা। পূর্ব পূর্ব জন্মদিতে সে কিরূপ কর্ম করেছে, আত্মজ্ঞান লাভে তার কিরূপ ব্যাকুলতা ছিল, অনিত্যের প্রতি তার বিরাগ জন্মেছিল কিনা—এইসব দেখে সদগুরু শিষ্যের seniority নির্ণয় করেন, সাধারণ মানুষ এই রহস্য কি করে জানবে ?

তাই এ জন্মে কার কিরূপ প্রকৃতি বা সে কিরূপ আচরণ করছে তা নির্ধারিত হচ্ছে তার পূর্ব পূর্ব জন্মের কর্মাদি দ্বারা। এই বিশ্বকে বলা হচ্ছে ত্রিগুণ প্রপঞ্চ । সত্ত্ব-রজঃ-তমঃ ভেদে মানুষও ত্রিগুণবিশিষ্ট হয়। এর মধ্যে যার যে গুণটি বেশী, তাকে সেই গুণপ্রধান মানুষ বলে। যেমন তমােগুণ প্রধান হলে তাকে তমােগুণী, রজোগুণ প্রধান হলে রজোগুণী, সত্ত্বগুণ প্রধান হলে তাকে সত্ত্বগুণী বলা হয়। বাকীগুণগুলিও ব্যক্তির মধ্যে থাকে তবে একটি বিশেষ গুণ প্রধান হয় সাধনার দ্বারা। মানুষ যখন সত্ত্বগুণী হয়—এরাই হয় ধর্মজগতের চোখে senior | এই সত্ত্ব প্রধান ব্যক্তিরা মুমুক্ষ হলে তারা মহাপুরুষের সংশ্রয় লাভ করে এবং তাদের অধ্যাত্মজীবন শুরু হয়ে যায়। মহাপুরুষগণ যখন শরীর ধারণ করে সমাজে কাজ করতে আসেন তখন তাদের সান্নিধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে কিন্তু সবারই আধ্যাত্মিক রাজ্যে প্রবেশাধিকার ঘটে না ! যে যে অবস্থায় আছে–সেই অবস্থার উন্নতি হয়। এটাই মহাপুরুষের কৃপা। কিন্তু মহাপুরুষের সান্নিধ্যে এসে সকলের যে আত্মজ্ঞান লাভের বাসনা জন্মাবে তা নয়, যাঁরা senior ও উপযুক্ত, তাঁদেরই হবে! এরপর হয়তাে দুটো-একটা জন্মের পরই তাঁদের আত্মজ্ঞান লাভ হবে। তখন তাঁরাও আবার সমাজের মঙ্গলের জন্য শরীর ধারণ করে কাজ করতে পারেন বা ভগবানের পার্ষদ হয়ে তাঁর সঙ্গে শরীর নিয়ে লীলাসঙ্গী হতে পারেন। তবে এটাও একবারে হয় না, এখানেও তিনটি ধাপ–সংযােগ, সম্পর্ক, সম্বন্ধ। সত্ত্বগুণী ব্যক্তির আকুলতায় সদগুরু লাভ হল বা মহাপুরুষ সংসর্গ হল কিন্তু নানান দুর্বলতার কারণে, সংকোচ করে, লজ্জা করে, দূরে দূরে থেকে সম্পর্ক স্থাপন আর হ’ল না, গুরুকৃপা লাভও হ’ল না। এবার কারও হয়তাে সম্পর্কও হ’ল কিন্তু এই পর্যন্ত—মহাপুরুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠল না কেমন যেন একটু দূর দূর ভাব, ফলে সম্বন্ধ তৈরী হ’ল না, তাহলেও আবার শরীর নিয়ে—সাধন করা বাকী থেকে গেল। তাই মহাপুরুষের সঙ্গলাভ হলে যাে-সাে করে তাঁর প্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করাে, যে ভাবেই হােক তাঁর সাথে সম্বন্ধ গড়ে তুলতেই হবে—এই প্রচেষ্টা রাখাে। তখন তিনি তােমার হাত ধরবেন। এতক্ষণ তুমি তাঁকে ধরার চেষ্টা করছিলে, এবার তিনি তােমাকে ধরবেন। বাবা যদি ছেলের হাত ধরে থাকেন তাহলে সেই ছেলের কি আর পড়ার ভয় থাকে ? তেমনি আধ্যাত্মিক জগতেও এইরূপই হয় মানুষ নির্ভয় থেকে অভয় হয়।

আশাকরি বুঝতে পারলেন। শাস্ত্রে রয়েছে ধ্রুবের কঙ্কালের গল্প। ধ্রুব রাজা উত্তানপাদের পুত্র, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নারায়ণকে লাভ করল। নারদ ভগবান বিষ্ণুর কাছে এর কারণ জানতে চেয়ে বলেছিল – “প্রভু আমি ত্রিভুবন ঘুরে বেড়াই, দেখেছি কত বৃদ্ধ তপস্বী হেটমুণ্ড-ঊধর্বপদে কত হাজার বছর ধরে কঠোর সাধনায় নিমগ্ন। তাঁরা আপনার দর্শন পাচ্ছেন না, আর এইটুকু বালক কি করে হরিপদ বা পরমপদ লাভ করল ?” তখন নারায়ণ নারদকে একটা কঙ্কালের পাহাড় দেখিয়ে বললেন, “দ্যাখাে নারদ ! জন্ম-জন্মান্তর ধরে এই বর্তমানের ধ্রুব সাধনা করে গেছে, এক-এক করে কত শরীর চলে গেছে, আর মৃত শরীর জমে জমে কঙ্কালের পাহাড় হয়েছে। অত জন্ম-জন্মান্তর কাটিয়ে শেষে আর মাত্র ৫ বছরই বাকী ছিল, তাই এই জন্মে ধ্রুব নামধারী বালক পরমপদ লাভ করেছে। সুতরাং বুঝতে পারলেন তাে ধর্মজগতে বা অধ্যাত্মজগতে একটা স্থূল শরীরের বয়স দিয়ে বিচার হয় না, তাঁর অধ্যাত্মজগতে কতদিন প্রবেশ ঘটেছে—এই দিয়ে বিচার করা হয়। কারও হয়তাে সবে এই জন্মে মুমুক্ষত্ব জেগেছে, তাহলে তার অধ্যাত্মজগতে প্রবেশের বয়স মাত্র কয়েক বছর। কারও হয়তাে কয়েকজন্ম ধরে সাধন-ভজন চলছে—সে senior ৷

এবার আপনার মনে জিজ্ঞাসা আসছে অধ্যাত্মজগতে প্রবেশের দরজা কি করে খুলবে ? অন্তর্মুখী হলে। এত দিন ধরে তাে Outward manifestation হয়ে চলছিল—এবার Inward হােক। Out ward manifestation থেকেই মানুষের বৈচিত্র্যের প্রতি নেশা জন্মে। এই যে এখানে যারা আসে, তারা বেশীরভাগই এটা-ওটা-সেটা জিজ্ঞাসা করছে, বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইছে—আত্মতত্ত্ব ক’জন জানতে চাইছে ? ওটা জানতে গেলে Outward-এ হবে না—In ward বা অন্তর্মুখী হতে হবে। সামুদ্রিক এক প্রকার বিশেষ ঝিনুকে মুক্তা জন্মায়। সে তার শরীরে একদানা বালিকে প্রবেশ করিয়ে নেয় আর তার শরীরের বিশেষ রস তাতে মেশায়। এবার সে তার শরীরের ঢাকনা খুলে সমুদ্রের উপরিভাগে অপেক্ষা করতে থাকে কখন শিশিরকণা সেই রসের সাথে মেশে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন স্বাতী নক্ষত্রের জল। এটি লাভ হয়ে গেলেই ঝিনুকটি তার ঢাকনা দুটি বন্ধ করে দেয়, তার শরীরে প্রচণ্ড pain হতে থাকে, সে চলে যায় সমুদ্রের গভীরে আর ওঠে না। অতল গভীরতায় একদানা সিলিকন ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় মুক্তায়। সমুদ্রের গভীরে এইরকম কত শত-সহস্র রত্ন লুক্কায়িত রয়েছে, ক’জন ডুবুরি আর কটা রত্ন তুলে আনতে পারে ? তাইতাে সমুদ্রকে বলা হয় রত্নাকর। সাধকের জীবনে এইরকমটাই হয়। সেও গুরুপ্রদত্ত বীজ বা সাধনাকে অবলম্বন করে ডুব দেয় আপন অন্তরের গহনে। তীব্র আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে সঙ্গী করে গভীরে ডুবতে থাকে, ধীরে ধীরে সেই মানুষ হয় মানুষরতন—এটাই সাধনজীবনের রহস্য।

আমাদের শাস্ত্রসমূহ আরও গল্পের অবতারণা করেছে মানুষকে শিক্ষাদানের জন্য। একদিন শিবানী তার দুই শিশুপুত্র গণেশ ও কার্তিককে কোলে নিয়ে বসে আছেন। মায়ের গলায় বহু রত্নখচিত সুদৃশ্য হার ঝুলছিল, সেটাকে উভয়ই দাবী করে বসল। মা আর কি করেন, দ্বন্দ্ব মেটানাের জন্য বিধান দিলেন—যে আগে এই বিশ্ব-বিরাটকে প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসবে—সেই পাবে এই বহুমূল্য হার। কার্তিক মহাখুশি হয়ে ময়ূরবাহনে বেরিয়ে পড়ল বিশ্বপরিক্রমায়, আর গণেশের বাহন ইঁদুর, সে তাে পারবে না গণেশকে পিঠে চড়িয়ে দ্রুত ফিরে আসতে, তাই চিন্তায় পড়ে গেল গণেশ। জ্ঞানী গণেশ বিচার করে দেখল মা-তাে স্বয়ং জগদম্বা, সুতরাং তাকে প্রদক্ষিণ করা মানে শুধু পৃথিবী কেন সপ্তভুবন পরিক্রমা হয়ে যাবে। তাই সে মা-কে সাতবার প্রদক্ষিণ করে চুপ করে মায়ের কোলে বসে পড়ল। অনেক পরে পরিশ্রান্ত কার্তিক ফিরে এসে দেখল গণেশ নিশ্চিন্তে “হারটি গলায় পরে মায়ের কোলে বসে আছে।”

এবার গল্পের মূল তত্ত্বটি বলছি __ বহির্মুখী জ্ঞান দিয়ে বহির্জগৎকে জানা যায়, আর তাই করতে গিয়ে বহু সময়, বহু. শক্তি ব্যয় হয়ে যায়, প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছানাে মুস্কিল হয়ে পড়ে। কিন্তু অন্তর্মুখী হয়ে আত্মজ্ঞান লাভ করলেই পূর্ণত্বপ্রাপ্তি ঘটে। তাই বলা হচ্ছিল মনুষ্যত্বং, মুমুক্ষুত্বং, মহাপুরুষসংশ্রয়ঃ, মানবশরীর লাভটা through evolution হচ্ছে কিন্তু মানুষের মনুষ্যত্ব লাভ করতে হলে অন্তর্মুখী হয়েই করতে হয়। মনুষ্যত্ব লাভের পর দেবত্ব, তার পরের অবস্থা ঋষিত্ব বা সিদ্ধ অবস্থা, যা মানবের সাধন জগতের বা acending-এর চূড়ান্ত অবস্থা।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ॥