স্থান ~ শিবপুর, হাওড়া, গঙ্গাবাবুর বাড়ি ৷ সময় ~ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ গঙ্গাবাবু, সব্যসাচী মান্না, সিঙ্গুরের ভক্তগণ ও পূর্ণানন্দ মহারাজ ।
জিজ্ঞাসু :— কাটোয়া অঞ্চলে ‘দুলালসাধু’ নামে একজন সাধু রয়েছে — ওকে কি আপনি চিনতেন?
গুরুমহারাজ :— কমবয়সে কিছুটা সময় আমি কাটোয়া অঞ্চলে গঙ্গার তীরে কাটিয়েছিলাম। তাছাড়া ওই সমস্ত অঞ্চলে কিছু কিছু স্থান রয়েছে যেগুলি সাধনপীঠ বা শক্তিপীঠ — সেগুলিতেও আমি কয়েকরাত্রি করে কাটিয়েছি। ওখানে কাটোয়ার কাছে শ্রীখণ্ড নামে একটি বর্ধিষ্ণু প্রাচীন গ্রাম রয়েছে। ঐ গ্রামের শিবমন্দিরে শিবলিঙ্গের নাম_ ‘ভূতনাথ’। ওই মন্দিরে আমি বেশ কয়েক রাত্রি কাটিয়েছিলাম । শ্রীখন্ড থেকে কিছুটা দূরে ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা মায়ের পীঠস্থান রয়েছে। যোগাদ্যা মন্দির প্রাঙ্গণেও আমি বেশ কয়েক রাত্রি ছিলাম। কাটোয়ার সন্নিকট কেতুগ্রামে এবং অট্টহাসেও গেছি এবং বেশ কয়েকদিন অট্রহাসেও কাটিয়েছি। ফলে ঐ সমস্ত অঞ্চল আমার ভালোভাবেই ঘোরা আছে।
কাটোয়ায় থাকাকালীন আমার ভালো লেগেছিল কাটোয়া শ্মশানে একজন অঘোরপন্থী সাধু ছিলেন তাঁকে। উনি নেশা করতেন আর পোড়া শবদেহের মাংস খেতেন। যারা মড়া পোড়ায় (তখন কাঠের চিতা সাজিয়ে শবদেহ পোড়ানো হোত) — তাদের সাথে ওই সাধুটির যোগ-সাজস ছিল। ওরাই ওনাকে পোড়া মাংস supply দিতো। আর বিনিময়ে ডোম-বাবাজী (যে মড়া পোড়ায়) free-তে মদ-গাঁজা ইত্যাদি নেশার দ্রব্য সাধুটির কাছ থেকে পেয়ে যেতো। ওই সাধুটির বেশ কিছু fan followers-ও ছিল। তারাই মদ্য ইত্যাদির জোগান দিতো। উনি একা থাকলে আমি ওনার সাথে অঘোরীদের সাধন-পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতাম। তখনই উনি বলেছিলেন যে, দীর্ঘদিন উত্তরভারতে (হিমালয়ান region-এ) কোন স্থানে উনি সাধন করেছিলেন — তারপর নানা স্থান ঘুরতে ঘুরতে ওখানে কিছুদিন যাবৎ রয়ে গিয়েছিলেন। পরে খবর পেয়েছিলামআমার সাথে যোগাযোগ হবার কিছুদিনের মধ্যেই কিছু অসুবিধা হওয়ায় উনি ঐ স্থানত্যাগ করেছিলেন।
দুলালসাধুর সাথে আমার ওই সময়তেই দেখা হয়। ও তখন ব্রহ্মচারী পোশাকে থাকতো। ও স্থানীয় লোককাটোয়া-আজিমগঞ্জ রেল লাইনের কাটোয়ার পরের স্টেশনেই ওর বাড়ি ছিল। ওর দাদা স্কুলের শিক্ষক। আমার সাথে ওনারও আলাপ হয়েছিল। কোন কারণে কলেজে পড়ার সময় ওর মনে বৈরাগ্য আসে এবং তারপরেই স্থানীয় এক গুরুর কাছে দীক্ষা ও ব্রহ্মচর্য নিয়ে নিয়েছিল। ও কাটোয়ার কাছে গঙ্গার তীরে একটা কুটির করে এবং ভিতরে একটু গর্ত মতো করে তার মধ্যে বসে সাধন-ভজন কোরতো ! দ্যাখো, সাধনাতেই সিদ্ধিলাভ হয়। তীব্র সাধন-ভজনের ফলে ওর মধ্যে কিছু শক্তির প্রকাশ ঘটতে থাকে। আরও শক্তিলাভের নেশায় দুলাল ওই অঞ্চলের কিছু তান্ত্রিক বা শক্তি-সাধকের সাথে মিলে গঙ্গার তীরে ভৈরবীচক্র বসাতো। ওদের মধ্যমণি একজন নারী ছিল_ভৈরবী, তার মাথাতেও বেশ বড় বড় জটা ছিল, সবসময় হাতে ত্রিশূল নিয়ে ঘুরে বেড়াতো।
প্রকৃতপক্ষে ওই সময়তেই ওদের সাথে আমার দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছিল। ওরা যেদিন যেদিন ওই চক্রটি বসাতো কার্যকারণসূত্রে আমি ঠিক এখানে হাজির হয়ে যেতাম এবং ওদের পাশে একটু দূরে আমিও বসে থাকতাম। ওদের মধ্যে অনেকেই তখন আমার সাথে আলাপ করেছিল, বনগ্রাম আশ্রম তৈরি হবার পরও ওদের মধ্যে কেউ কেউ যোগাযোগ রেখেছিল, দু-একজন দীক্ষাও নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ওই ভৈরবী মা-টিও ছিল। ও পরবর্তীতে আমার কথামতো জটাজূটো কেটে ফেলে সাধারণ নারীর মত জীবন-যাপন কোরতো। আমার নির্দেশ অনুযায়ী ধ্যান-জপ করে ওর শেষ বয়সে আধ্যাত্মিক উন্নতিও হয়েছিল।
যাইহোক, ওই ভৈরবীচক্র বসানোর সময়কার কথা বলি — একটি ঘটনার পরই ওদের চক্র ভেঙে গিয়েছিল এবং ওরা আপন আপন কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়েছিল — সেটা বলছি। সেদিন বিশেষ তিথিতে ওরা গঙ্গার ধারে গভীর রাত্রে ভৈরবীচক্র বসিয়েছে_ আর আমিও ঘুরতে ঘুরতে ওখানে হাজির! ওরা ওদের নানারকম ক্রিয়াদি, মন্ত্রোচ্চারণ এসব করছে আর আমি একটু দূরে বসে আমার নিজের কাজ করছি। ওরা আমাকে লক্ষ্য কোরতো আর ওদের কেউ কেউ আমাকে disturbing element ভাবতো ! ফলে ওরা সেদিন করলো কি — আমাকে tight দেবার জন্য তন্ত্রের একটি অভিচার_ “প্রেতচক্র” বসালো। জায়গাটার নাম শাঁখাই, কাটোয়া শহরের কাছে গঙ্গা আর অজয়নদের সংঙ্গমস্থলে। গঙ্গার পাড় ধরে উদ্ধারণপুরের দিকে খানিকটা আগিয়ে গেলে এনায়েতপুরে একটা প্রাচীন ভগ্নপ্রায় কালীমন্দির রয়েছে — জঙ্গলাকীর্ণ স্থান, নিরিবিলি। ওখানেই গঙ্গার একদম ধারে ওই ক্রিয়াটি সেদিন চলছিল। ওরা আমাকে তাড়াবার ব্যবস্থা করেছিল, হঠাৎ কি ঘটনা ঘটল জানো — দেখি বিকট একটা আওয়াজ হলো আর ওরা চিৎকার করতে করতে কে কোনদিকে পালিয়ে গেল। আর কখনও ওরা ওই ধরনের চক্র করেনি।
ঘটনাটির পরই ওই মা (ভৈরবী) এবং আরো একজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। আমি ওদেরকে কিছু সাধন-পদ্ধতি বলে দিয়েছিলাম। বাকিদের সাথে পরে আর যোগাযোগ হয়নি !
সেদিন আসলে কি হয়েছিল বলোতো — কোন সাধকের জীবনে অকারণ কিছু শক্তিলাভ হলেই সে তার দুরোপযোগ করে বসে। এতে সমাজের কল্যাণ বা মঙ্গল না হয়ে ক্ষতিসাধনই বেশি হয়। তাই হয়ত মা জগদম্বা চাইছিলেন না যে, ঐ সকল ব্যক্তিদের অহেতুক শক্তিলাভ হোক — সেইজন্যই মায়ের ইচ্ছায় প্রেতচক্র ভেঙে গিয়েছিল এবং বিপরীত ক্রিয়া হয়েছিল। ঘটনাটা ঘটেছিল কি, প্রেত বা শক্তির আবির্ভাব হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেই শক্তি আমার উপর ক্রিয়া না করে ওদের উপরেই ক্রিয়া করেছিল ! এরপর আমি ওই অঞ্চল থেকে চলে আসি — তবে পরে পরে খবর পেয়েছি যে দুলালসাধু আর ওইসব তন্ত্রের অভিচার চক্রে না ফেঁসে বিভিন্ন সমাজ-সেবামূলক কাজের সাথে যুক্ত হয়েছিল। সাধু-সন্ত লোক সিদ্ধাই-এ ফেঁসে গেলেই তার ক্ষতিসাধন হয় — ✓রীমা চেষ্টা করেন তাঁর ত্যাগী সন্তানকে রক্ষা করার কিন্তু সে নিজে যদি মায়ের কৃপা বা করুণা না গ্রহণ করে সেকথা আলাদা — তখন মহাপ্রকৃতির নিয়মে সে নানারকম দুর্গতি ভোগ করে এবং ক্লেশ পায়। সাধকের জীবনে সবচাইতে বড় অন্তরায় অভিমান এবং অহংকার। কাম-ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি ত্যাগ হলেও অহং বা ego যেতে চায় না। বহু সাধক এখানেই ফেঁসে যায়। সমাজে এই রকম অনেককে দেখি তো_ নিজেকে মোহান্ত, মণ্ডলেশ্বর, যোগী ইত্যাদি নানান উপাধিতে ভূষিত করে রেখেছে। উঁচু সিংহাসনে বসে সৎসঙ্গ করছে বা সদগ্রন্থ পাঠ-ব্যাখ্যা করছে আর লোকমান্যতা অর্জন করছে — ব্যস্ আর কিছুই নয়। সাধনার সমস্ত ফল এইভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো নিজেকে ‘ভগবান’ — নিদেনে ‘ছোট ভগবান’ বলতে বা প্রচার করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। এইভাবে এই জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে,তারপর তাকে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হচ্ছে।
[ স্থান ~ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন । সময় ~ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ ৷ উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ বিভিন্ন স্থানের ভক্তবৃন্দ ও মহারাজগণ ৷]
জিজ্ঞাসু :— ক্রিয়াযোগই শ্রেষ্ঠ সাধনা — কারণ আমাদের ওখানে ক্রিয়াযোগী পরম্পরার দীক্ষিতরা সেইকথাই বলে?
গুরুমহারাজ :— দ্যাখো, প্রত্যেক পরম্পরার followers-রাই নিজ নিজ পরম্পরাকে শ্রেষ্ঠ বলে থাকে। কিন্তু তোমাদের দেখতে হবে ফলটা। গাছ দেখে কি হবে — ‘বৃক্ষ ফলেন পরিচীয়তে’। কোন পরম্পরা থেকে কতজন সাধক পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে — এটা দেখতে হবে। জগতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহাপুরুষগণ এসেছেন — আর তাঁদেরকে কেন্দ্র করে এক একটা পরম্পরা গড়ে উঠেছে। হয়ত কোনটা ব্যাপকতা পেয়েছে, কোনটা ক্ষুদ্র কোন গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। কিন্তু যে ব্যক্তি যে পরম্পরার মধ্যেই থাক না কেন অর্থাৎ ছোট বা বড় প্রত্যেকেরই sentiment সাংঘাতিক। তার পরম্পরা থেকে প্রাপ্ত বিশ্বাস বা ধারণাকে — তুমি সহজে ভাঙতে পারবে না। যা একদম দৃঢ় হয়ে বসে রয়েছে তার মস্তিষ্কে। এইজন্য যুগধর্ম প্রচারের বা স্থাপনের জন্য যাঁরা অবতীর্ণ হন, তাঁদের অনেক শক্তিশালী হতে হয় — মাথা থেকে পুরানো সংস্কারের আবর্জনা বের করার জন্য মুগুর মারতে হয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে তোমরা যেমন ভাবো যে অশিক্ষিত, আটহাত লালপেড়ে কাপড় পরা, কথা বলতে গেলে একটু তোতলামো ভাব, টলমল করে হাঁটা, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঝুঁকে দাঁড়ায় — ওটা কিন্তু তোমাদের কল্পনার রামকৃষ্ণ — বাস্তবের নয় ! বাস্তবে ঠাকুর ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন — তাঁর চোখের দিকে চোখ রেখে কথা বলার মানুষ কে ছিল তৎকালে। অথচ দ্যাখো, তাঁর কাছে সাধারণ মানুষ যেমন এসেছে তেমনি অসাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগের সংখ্যাও কম ছিল না — বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, মধুসূদন, কেশব সেন, বিজয়কৃষ্ণ, প্রতাপ মজুমদার, দেবেন ঠাকুর — অর্থাৎ তৎকালের দিকপাল ব্যক্তিরা! প্রত্যেকে ঠাকুরের কাছে মাথা নত করেছেন — কেউ হয়ত এড়িয়ে গেছেন নিজের অস্তিত্বরক্ষার সংকট বিবেচনা করে সেরকম দু-একটাকে বাদ দিলে বাকি সব তৎকালীন দিকপালেরা নতমস্তকে ঠাকুরকে মেনে নিয়েছেন বা বলা যায় মানতে বাধ্য হয়েছেন ! এঁরা তো ছিলেন তৎকালীন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, ধনে-মানে-বিদ্যায় জ্বল জ্বল করতেন। আর অন্যদিকে ঠাকুরকে দ্যাখো_ অখ্যাত গ্রামের, অশিক্ষিত-দরিদ্র পরিবারের ছেলে ! তাহলে এমন কি ধন ছিল ঠাকুরের __যার ফলে তিনি এই সব তৎকালীন সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের তাঁর চরণে এনে ফেললেন ! এটাই আধ্যাত্মিকতা! ভারতবর্ষ এটাই গোটা পৃথিবীকে উপহার হিসাবে দিয়ে আসছে বহুকাল আগে থেকে।
ক্রিয়াযোগ তো ভারতীয় যোগবিজ্ঞানেরই অন্তর্ভুক্ত। বাবাজী মহারাজ যোগী শ্যামাচরণ লাহিড়ীকে মাত্র ৫টা যোগের ক্রিয়া বা ক্রিয়াযোগ দিয়েছিলেন। নিষ্ঠাভরে তা পালন করলে মানবের কল্যাণ হবে — এটাই ছিল উদ্দেশ্য। যোগীজী তাঁর শিষ্য যুক্তেশ্বর গিরিজীকে দিলেন ৪-টি উনি হয়তো ভেবেছিলেন এই যুগের দুর্বল মানব ৫-টি পারবে না অন্তত ৪-টি করুক, তাতেই মানুষের কল্যাণ হবে। এখন ক্রিয়াযোগীদের দুটো পরম্পরা পাশাপাশি চলে — গৃহী পরম্পরা ও সন্ন্যাসী পরম্পরা। আমি দেখেছি দুটো পরম্পরাতেই বর্তমানে ওই ৪-টে ক্রিয়াই follow করা হয়। আসন-প্রাণায়াম-ধ্যান এইগুলিই করণীয়। দ্যাখো, মহাপুরুষরা তো মানুষের মঙ্গলই চান — মানুষ তাঁদের উপদেশ ঠিকমতো পালন করে না বলেই নানান দুর্ভোগে পড়ে।
জিজ্ঞাসু :— কিছুদিন আগে এখানে একজন সাধুবাবা এসেছিল, ও যাবার সময় বলে গেল — যে সব সাধুরা গ্যাঁজা খায় না — তারা আবার কি সাধু?
গুরুমহারাজ :— দ্যাখো, কথায় রয়েছে — “ছাগলে কি না খায় — পাগলে কি না বলে”। যতসব পাগল-ছাগল! তবে প্রথমেই তোমাকে একটা কথা বলি যে, ওই ব্যক্তি এখানে এসে তোমাদেরকে হয়তো উল্টোপাল্টা কিছু বলেছে কিন্তু আমাকে তো এই ধরনের কোন কথা বলেনি ! এখন দেখতে হবে যে, ওই লোকটি হয়তো গেরুয়া বা লাল বস্ত্র পরেছে কিন্তু ও কি প্রকৃত সাধু! সাধু হলেই গ্যাঁজা খেতে হবে — এ আবার কি কথা! সাধু হবার কোন সংবিধান বা শর্তাবলী রয়েছে নাকি!
এখানে অর্থাৎ এই বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে যারা সাধু-ব্রহ্মচারী হিসাবে রয়েছে তারা তো বনে-জঙ্গলে থাকে না,তারা সমাজে রয়েছে! ফলে এই ধরনের আশ্রম বা মঠ-মিশনে যারা থাকে_তারা যেহেতু সমাজে বাস করে তাই তাদের সামাজিক দায়-দায়িত্বও রয়েছে। তারা সাধু হয়েছে বলে সমাজের Rule বা Regulation-কে violate করতে পারে না ! বিশেষত Mission-গুলি সমাজসেবামূলক কাজ করে — বহু মানুষের সাথে তাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। ফলে তাদের ব্যক্তিগত জীবনযাপন, আচার-আচরণ এগুলি সাধারণ মানুষ বা সমাজের মানুষ লক্ষ্য রাখে। Mission-এর কোন ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসীর ব্যক্তিগত জীবন যদি পরিচ্ছন্ন না হয় তাহলে সে সমাজে গ্রহণযোগ্য হবে না। বেশিরভাগ মানুষই তাকে এড়িয়ে চলতে চাইবে। তাই সাধুর আচরণ সাধুচিত হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।
তবে হিমালয়ের কোন গুহায় অথবা সমাজেও শহর বা গ্রাম থেকে দূরে কোন নির্জন স্থানে কোন সাধুর কুঠিয়া রয়েছে — তিনি হয়তো গ্যাঁজা খান, তা তিনি খেতে পারেন ! যাঁরা সাধন-ভজন করেন যাঁরা যোগী, তাঁরা যদি গ্যাঁজা খান — তাহলে তা অমৃত, আর সাধারণ মানুষ বা ভেকধারীরা যদি গ্যাঁজা খায় _তাহলে তা বিষ! কিছুদিনের মধ্যেই ঐরূপ ব্যক্তির প্রোষ্টেট গ্ল্যাণ্ড, কিডনি ইত্যাদি শরীরের আভ্যন্তরীন অঙ্গ সমূহ নষ্ট হয়ে যাবে। ব্রহ্মচর্য না থাকলে গ্যাঁজা খাওয়াই উচিত নয়।
দ্যাখো, গ্যাঁজা খাওয়া বা না খাওয়ার উপর কি সাধুর সাধুতা নির্ভর করে ? হিমালয়ের দুর্গম স্থানে আমি এমন যোগীপুরুষদের দেখেছি যাঁরা গ্যাঁজা খান। কিন্তু সেইসব মহাপুরুষদের দর্শন পেতে গেলে সাধনা করতে হয় — এবার কি বলবে বলো? তাঁরা এত উচ্চকোটির মহাত্মা যে, তাঁদের যে কোন সিদ্ধি(অনিমা–অনুবৎ হয়ে থাকা,লঘিমালঘু বা তরলবৎ হয়ে থাকা ইত্যাদি) করায়ত্ত। ফলে তাঁর পাশ দিয়ে হাজার মানুষ চলে গেলেও কোনমানুষ কোনদিন তাঁর সন্ধান পাবে না। এইজন্য একটা কথা রয়েছে — ভগবানের দর্শন পাওয়া সহজ কিন্তু ভগবানের ভক্তের দেখা পাওয়া সহজ নয়।