স্থান ~ আজিমগঞ্জ স্পিরিচুয়াল সেন্টার । সময় ~ ১৯৯০ ডিসেম্বর । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ গঙ্গাবাবু, রমেনবাবু, দিল্লির ডাঃ গৌর, বহরমপুর ও আজিমগঞ্জের ভক্তবৃন্দ ।
জিজ্ঞাসু :— দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সাধন Period-এ বা তার অনেকদিন পর পর্যন্তও বলা যায়—কোলকাতার বাবু সমাজ তাে তাঁকে গ্রহণ করেনি ? যেটুকু তৎকালীন লেখকদের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে—তাতে তাে আমরা ঠাকুরের জীবনকালের শেষ কয়েকটা বছরে কোলকাতার বাবুদের আনাগােনা বা ঠাকুরকে মেনে নেবার ব্যাপারটা পাই। প্রথম দিকে তাে তারা মেনে নেয়নি বা গ্রহণ করেনি ?
গুরুমহারাজ :– করেনি তাে ! কে চিনতাে গদাই বা গদাধরকে ? দাদা রামকুমার টোলের পণ্ডিত ছিলেন–রাণী রাসমণি মন্দির প্রতিষ্ঠা বা বিগ্রহ পূজা করতে পারবেন কিনা (অব্রাহ্মণ, ছােট জাত বলে)—এই নিয়ে কোলকাতার স্থানীয় পণ্ডিতরা যখন প্রচণ্ড বিতর্ক তুলেছিল তখন জমিদারের লােক চারিদিক থেকে পণ্ডিতদের খুঁজে নিয়ে এল যাঁরা কোলকাতার পণ্ডিতদের মােকাবিলা করতে পারবেন। তাঁদের মধ্যে রামকুমারের যুক্তি, প্রমাণ, শাস্ত্র নিদর্শন ইত্যাদি ছিল অভ্রান্ত। কোলকাতার বা স্থানীয় পণ্ডিতেরা রামকুমারের যুক্তিজালে পরাস্ত হোল কিন্তু সিদ্ধান্ত হোল _কোন ব্রাহ্মণের নামে মন্দিরকে উৎসর্গ করতে হবে–শুদ্রানী কৈবর্ত রাণীর নামে উৎসর্গ করা কোন ঠাকুরের পুজো হবে না। রাণী রাসমণি রামকুমারের নামেই তা উৎসর্গ করলেন আর তাঁকেই প্রধান পুরােহিত পদে নিযুক্ত করে ✓রী মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন।
ফলে রামকুমারের নাম তৎকালীন কোলকাতার বাবুসমাজ জানতাে। পরবর্তীতে রামকুমার মায়ের বেশকারী হিসাবে গদাধরকে দক্ষিণেশ্বরে নিয়ে এলেন বটে কিন্তু তাঁর তাে কাজেই মন ছিল না–গঙ্গার ধারে গিয়ে বসে থাকতাে, গঙ্গার মাটি নিয়ে শিব-দুর্গা-কালী ইত্যাদি নানান মূর্তি বানাতাে—এই সব কোরতাে। রামকুমারের মৃত্যুর পর কোলকাতার বাবুসমাজ দক্ষিণেশ্বর নিয়ে আর মাথাই ঘামায়নি। রাণী রাসমণি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা-মােকদ্দমা করেছিলেন এবং কোর্টের রায়ে তাঁর জয় হয়েছিল। এতে করে_সেইসময় কোলকাতায় রাণীর বেশ নাম-ডাক ছিল! তাছাড়া সর্বোপরি দক্ষিণেশ্বরের মন্দির প্রতিষ্ঠা করাটা তাে তাঁর পরিচিতির অন্যতম কারণ বটেই ! কিন্তু রাণীর মৃত্যুর পর সেজ জামাই মথুরবাবু যখন জমিদার হলেন—তখন কিন্তু তাঁকে কোলকাতার বাবুসমাজ—শিক্ষিতসমাজ খুব একটা পাত্তা দেয়নি। যদিও মথুরবাবু তৎকালীন যুগে B.A পাশ ছিলেন এবং সম্ভবত দেবেন ঠাকুরের (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ) সহপাঠী ছিলেন। এসব সত্ত্বেও মথুরের জমিদার মহলে খুব একটা সম্মান ছিল না।
সুতরাং সেই মথুরের কালীবাড়ীর পূজারি বা পুরােহিতকে আর কেই বা পাত্তা দেয়, কেই বা তাঁর খোঁজ রাখে ? তার উপর পূজারিটা আবার খ্যাপা-পাগল, মা-মা বলে কাঁদে, মাটিতে গড়াগড়ি দেয়, মাটিতে মুখ ঘসে ঘসে মুখের রক্ত বের করে ফেলে ! সুতরাং লোকটা হয় বিকারগ্রস্ত অথবা রােগগ্রস্ত—এই ধারণাই বদ্ধমূল ছিল তৎকালে স্থানীয় মানুষের মনে। এমন টাও ঘটেছে যে, ঠাকুর হয়তাে ভাবাবেশে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মা-মা বলে কাঁদছেন, মুখ ঘসছেন মাটিতে বা কাদায়—পথ চলতি লােক বা স্নানের ঘাটে যাওয়া মহিলারা বলতেন–“আহা! ওর বুঝি মা মরেছে !” সুতরাং ঠাকুরের দক্ষিণেশ্বরে অবস্থানের প্রথমদিকে অর্থাৎ তাঁর সাধনজীবনে কোলকাতার বাবুসমাজ totally absent !
তখন কোলকাতায় ব্রাহ্মসমাজের রমরমা, শিক্ষিতরা এবং বাবু সমাজের লোকেরা মাঝে মধ্যে সেখানে প্রার্থনা করতে যেতো । আর খুব বড়লােক বা জমিদারদের __ইংরেজতােষণ, পায়রার বিয়েতে জাঁক করা, লক্ষ্ণৌ থেকে বাইজী এনে নাচানো—এইসব নিয়েই দিন কাটতাে। তাদের বাড়ির উৎসব-অনুষ্ঠানে সাহেবদের আমন্ত্রণ করা হোতো আর বাইজী নাচ, নিধুবাবুর টপ্পা–এসব চলতো। এর বাইরে তাদের অন্যকিছু ভাবার সময় কোথায়? ফলে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে__ দক্ষিণেশ্বর বা সেখানকার পুরোহিত শ্রীরামকৃষ্ণ যে কোন আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে, তা ভাবতেই পারতো না কোলকাতার বাবু সমাজ ! কিন্তু হিসাবটা পুরােপুরি উল্টে গেলো__যখন থেকে কেশবচন্দ্র সেন দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের কাছে আসতে শুরু কোরলো ! কেশব সেনের সাথে ঠাকুরের প্রথম সাক্ষাৎ হয় বেলঘরিয়ার বাগানবাড়িতে। ঠাকুরই সেখানে ভাগনে হৃদয়কে নিয়ে গিয়েছিলেন __ কেশবকে দেখতে। ওখানে কেশব সেন প্রায়ই ব্রাহ্মভক্তদের নিয়ে ধ্যান-প্রার্থনা করার জন্য সমবেত হোত ! কেশবের তখন কোলকাতায় খুব নাম-ডাক। কেশবের মতো বাগ্মী বাংলা তথা ভারতে খুব কম জন্মেছে। বিপিন চন্দ্র পালও খুব ভালাে বাগ্মী ছিলেন। এগুলিও এক ধরণের সিদ্ধি_পূর্ব পূর্ব জন্মের সাধনার ফল, এই জন্যই সবার মধ্যে এই Power থাকে না ! যাইহােক, তখন কেশব সেন "নববিধান" প্রতিষ্ঠা করে ব্রাহ্মসমাজ থেকে আলাদা হয়েছেন। মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রাণের বন্ধু বিজয়কৃষ্ণ সহ অনেকেই তার বিপক্ষে, নিদারুণ মানসিক অবসাদে দিন কাটছিল তার। ঠিক সেই সময়েই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গলাভ ও স্পর্শলাভ ঘটেছিল তাঁর। ঠাকুরের স্পর্শ পাওয়ার পরই নানান জ্বালায় অস্থির কেশবের শরীর-মন-প্রাণ শীতল হয়ে যায়। তিনি এই কৈবর্ত-বাড়ির পুরােহিতের মধ্যে যে সাংঘাতিক ঈশ্বরীয় ঐশ্বর্য বর্তমান _তা বুঝতে পারেন। আর বুঝতে পেরেই প্রচার করতে শুরু করেন। লেখায়, বক্তৃতায়, আলােচনায় শুধু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কথা ! কেশবের তৎকালীন Fan followers ছিল শিক্ষিত ইয়ং ছেলেরা। তারা কেশবের মুখে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রশংসা-স্ততি-ঐশী ক্ষমতার কথা শুনে বা পড়ে–দলে দলে দক্ষিণেশ্বরে আসতে লাগল। কথামৃতকার মহেন্দ্রগুপ্তও কেশবের বক্তৃতায় বা লেখা পড়েই ঠাকুরের কথা জানতে পেরেছিল। পরে অবশ্য আবার মহেন্দ্র-র কাছে শুনে বা তাঁর লেখা পড়ে বহু ছাত্র-ছাত্রী ঠাকুরের কাছে বা সান্নিধ্যে আসে—এদের অনেকে দক্ষিণেশ্বরে Permanent হয়ে যায়। তাই মহেন্দ্রর নাম হয়ে যায়–“ছেলেধরা মাষ্টার !” মহেন্দ্র গুপ্ত বিদ্যাসাগরের স্কুলে (মেট্রোপলিটনে) মাষ্টারি করতেন—তাই এমনিতেই ঠাকুর সহ সকলেই তাঁকে ‘মাষ্টার” বলে ডাকত।
যাইহােক আমরা আলােচনায় ফিরে আসি। যা বলছিলাম, কেশব সেনের প্রচারের জোয়ারে কোলকাতার শিক্ষিতসমাজ দক্ষিণেশ্বরমুখী হয়। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কেশবের বা ব্রাহ্মসমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণে মাঝে মধ্যেই ব্রাহ্ম সমাজেও যেতেন। কিন্তু কোলকাতার বাবুরা ঠাকুরকে বিশেষ পাত্তাই দিত না বরং বারবার অপমান করেছে–উপেক্ষা করেছে ! একবার তাে ইচ্ছে করে আলাে নিভিয়ে দিয়ে ঠাকুরকে ঠ্যালাঠেলি শুরু করে দিয়েছিল—যুবক নরেন্দ্রনাথ ভাবস্থ ঠাকুরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে বাইরে বের করে আনে_ এবং ঠাকুরকে দিয়ে প্রতিশ্রুতি করিয়ে নেয় যে তিনি যেন আর কখনোই এসব জায়গায় পা না দেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণনরেন্দ্র-র তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন“আমি তো এখানে তোর জন্য আসি! আমার যতোই অপমান হোক_তুই এলে আমিও আসবো!” নরেন্দ্র এই ঘটনার পর ব্রাহ্মসমাজে যাওয়া একদমই কমিয়ে দিয়েছিল।
তখন ব্রাহ্মসমাজের কি রমরমা ! দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ গােটা ঠাকুরবাড়ি তখন ব্রাহ্মধর্মের পৃষ্ঠপােষক! শিক্ষিত, পণ্ডিত, বাবু, ব্রাহ্মসমাজতাত্ত্বিক দল__ শাসক ইংরেজদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধর্মপ্রচার চালাচ্ছে, দেশে-বিদেশে বক্তৃতা দিচ্ছে। এই কৈবর্তবাড়ির পুরােহিত রামকৃষ্ণের সাথে তাদের তুলনা ! তারা ঠাকুরকে কোন তুলনাতেই আনতো না !
কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান ! মায়ের জগৎ—এখানে কখন কি হবে তা মহাকালের বুকে সব নির্দিষ্ট হয়ে আছে। হল কি জানাে—একে একে ব্রাহ্মসমাজের মাথাগুলিই বাঁধা পড়ে গেল ঐ আটহাত লালপেড়ে ধুতি পরা আধপাগলা ছােট ভটচায্ রামকেষ্ট ঠাকুরের কাছে ! কেশব সেন, বিজয়কৃষ্ণ গােস্বামী, ত্রৈলােক্যনাথ সান্যাল, প্রতাপ চন্দ্র মজুমদার–কে নেই সে দলে! দেবেন ঠাকুর এবং ঠাকুর পরিবারের সাধের ব্রাহ্মসমাজে সাংঘাতিক ফাটল ধরে গেল। ঐ ধরণের দিকপাল লােকেরা ঠাকুরের কাছে শুধু যাওয়া-আসাই নয়, যখন তাঁর স্তুতি করতে লাগলো—তখন কোলকাতার বাবুসমাজ ভাবলো__ 'তাহলে লােকটাকে একবার দেখতে হয় '! আর একবার তাঁকে দেখার পর ভাবতে লাগলো_ 'কেশব, বিজয়, ত্রৈলােক্য, প্রতাপরা যখন একে মানে–তাহলে তাে তাদেরও একে মানতে হয়'। ____এই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল আর কি।
তবু কিন্তু সবাই এইদলের নয় ! এই বাবু-দলের গোঁড়ারা শেষপর্যন্ত মানেনি তাে! ঠাকুর পরিবার বা ঐ পরিবার-পন্থীরা জীবনের শেষকাল পর্যন্ত ঠাকুরকে নিতে পারেনি। শুধুমাত্র পারিবারিক প্রভাবের কারণে রবীন্দ্রনাথের মতো ব্যক্তিত্বও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যাপারে অদ্ভুতভাবে চুপচাপ ছিলেন। তাঁর বিশাল সাহিত্যসম্ভারে যেখানে, দেশ-বিদেশের ঘটনা, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের নিয়ে লেখা রয়েছে _সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। ঠাকুরের মহাপ্রয়াণের পর দু-একটা লেখায় তিনি ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন মাত্র ! নিজেদের পরিবারের স্বপ্নের প্রাসাদশক্তিশালী ব্রাহ্মসমাজকে শ্রীরামকৃষ্ণ-মহাপ্লাবনের ধাক্কায় ভেঙে টুকরাে টুকরো হতে দেখে–এরকম হওয়াটাও হয়তাে স্বাভাবিক !
শেষের কয়েক বছরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে বাবুসমাজের আসা-যাওয়া শুরু হলেও __তাদের মধ্যে যারা ঠাকুরের ভক্ত-শিষ্য হতে পেরেছিল তারা ছাড়া বাকীরা শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যাপারে নাক সিঁটকানাের দলেই ছিল !
দ্যাখো, মথুরবাবুর মৃত্যুর পর মথুরবাবুর ছেলেরাই বা ঠাকুরের সাথে কি ভালাে ব্যবহারটা কোরলো ? দক্ষিণেশ্বর থেকে একপ্রকার তাড়িয়েই দেওয়া হােল ঠাকুরকে ! ঠাকুরের জন্য রাসমণির সময় থেকেএমনকি মথুরবাবুর সময়েও রাত্রের খাবার এবং সিনের বরাদ্দ ছিল। শিষ্য-ভক্তরা আসতে শুরু করায় এবং কয়েকজন ত্যাগী যুবক ভক্ত পাকাপাকিভাবে ঠাকুরের কাছে থাকতে শুরু করায় রাত্রের বরাদ্দ আটা-সব্জী একটু বেশী লাগতাে। তাও কতাে আর হবে হয়তাে এক-দেড় কিলাে আটা লাগতাে ! মথুরবাবুর ছেলেরা তাও দিতে চাইলো না ! সরাসরি বলে দিলো যে, অত বেশী খরচ চালাতে দেওয়া হবে না—খরচ কমাতে হবে। এইসব কারণে__ নানান অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে দেখেই ঠাকুরের ভক্তরা অসুস্থ ঠাকুরকে দক্ষিণেশ্বর থেকে সরিয়ে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে নিয়ে আসতে বাধ্য হোল। সারদা মাও চলে এলেন ঠাকুরের সাথে।
এইতাে বাবা _তােমাদের কোলকাতার মানুষ ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অনেক সময় কথায় কথায় বলতেন, “ওই বাপু তােমাদের কোলকাতার মানুষের ঐ এক দোষ !”
তবে কোলকাতার একটা বিশেষত্ব আছে। কিছু বিশেষ ব্যক্তি সবসময়েই এখানে থাকে। জানাে, এখনও কোলকাতার একশ্রেণীর মানুষ আছেন যাঁরা সত্যিই বােদ্ধা ! তাঁরা সঙ্গীত, Fine Arts, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, সাহিত্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় বােঝেন বা কদর করেন। কিন্তু আবার এখানেই এক ধরণের শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মানুষেরা আছে _যাদেরকে বলা যায়_ "আঁতেল সম্প্রদায়”। “আঁতেল” শব্দটা ফরাসী, ইংরাজীতে Intellectual, তবে বর্তমানে এখানে ঐ Intellectual-দের মধ্যে যারা একটু অন্যরকম, প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বিরােধী পথে চলতে চায়__ তাদেরকে একটু বক্রোক্তিতে ‘আঁতেল' বলা হয়। দেখবে, কোলকাতায় আজও এই শ্রেণীর লােক রয়েছে—উচ্চশিক্ষিত, কোলকাতার সবচাইতে দামী-নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রী রয়েছে, ভালাে চাকরি করে, স্ত্রীও শিক্ষিতা—প্রফেসর বা ডাক্তার, ছেলে-মেয়ে শহরের সবচাইতে দামী স্কুল-কলেজে পড়ে বা বিদেশে চাকুরীরত। কোলকাতার সবচাইতে important এলাকায় বাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন কিন্তু মুখে সাম্যবাদিতার কথা, বিদেশী দর্শনে বিশ্বাসী ! হাতের কাছেই রয়েছেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ- স্বামী বিবেকানন্দ__তাঁদেরকে এরা চেনে না—তাঁদেরকে জানার প্রয়ােজনও বােধ করে না ! কেমন_অদ্ভুত না!!
যদিও সমাজ থেমে থাকে না—সকলকে নিয়েই এগিয়ে চলে। যে কোন উৎসব-অনুষ্ঠানে আজ দক্ষিণেশ্বরে লক্ষ-লক্ষ মানুষের ঢল নামে। সেদিনের গদাধর আজ যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ !যিনি যুগপ্রয়ােজনে মানবের কল্যাণে দয়া করে শরীর ধারণ করেছিলেন মর্তের মানষের বেশে। অধরাই ধরা দিয়েছিলেন ধরার বুকে—মানবশরীরে। যে তাঁকে গ্রহণ করল সেই ধন্য হল যে পারল না সে বা তারা হল হতভাগ্য। তাদের জন্য ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা—সবার মঙ্গল হােক।
“সর্বেলােকাঃ সুখিন ভবন্তু।”