স্থান ~ শ্রীরামপুর অসীম ব্যানার্জীর বাড়ি । সময় ~ ১৯৯০ সাল । উপস্থিত ব্যক্তিগণ ~ সব্যসাচী মান্না, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, ন’কাকা এবং অন্যান্য স্থানীয় ভক্তগণ ।
জিজ্ঞাসু :— আমার মেয়ের খুব ঠাকুর ঠাকুর বাতিক। সারাদিন গা ধােয়া, পা ধােয়া, স্নান করা, কাপড় ছাড়া এসব নিয়েই থাকে। বারবেলা, কালবেলাও খুব মানে। তবে ঈশ্বরে খুবই ভক্তি ! ওর এই লক্ষণগুলি কি ভালাে না খারাপ ?
গুরুমহারাজ :— দ্যাখাে মা ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন ‘বন্যা এলে (অর্থাৎ প্লাবনের সময়) ডাঙ্গায় এক বাঁশ জল’ ! সাধারণত গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায় মাঠের জমিগুলি ছােট ছােট ‘আল’ বা বাঁধ দিয়ে আলাদা আলাদা করা থাকে, কিন্তু বন্যার সময় সব জলে জলাকার বা একাকার, কোন বিভেদ বিচ্ছেদ থাকে না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বর্ষাকালে কামারপুকুরে মাঠের ঐরকম বিভেদ-বিচ্ছেদহীন জল থৈ থৈ অবস্থা দেখে একবার ভাবস্থ হয়েছিলেন। মা ! ঐ যে বলা হােল ছােট ছােট ‘আল’ দিয়ে বাঁধ বেঁধে রাখা, ওটাই সঙ্কীর্ণতা। মনের বিস্তার হলে আর বাঁধ নেই। বিস্তারিত হােক না অসীম পর্যন্ত।
'জয়কালী’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে হবে–কাজ থাকলে তাে বেরােতেই হবে। তখন কি ‘বারবেলা’-‘কালবেলা' মানলে হবে ? ‘বারবেলা’ বলে সূর্য তার আলাে দেওয়া বন্ধ করে কি ? বাতাস প্রবাহিত হয় না ? নদী বা যে কোন স্রোতস্বিনী কি তার স্রোতের গতি বন্ধ করে দেয় ? করে না তাে! অতএব বুঝতেই পারছাে মা, যারা নিজেকে ছােট ছােট গণ্ডীর মধ্যে বেঁধে রাখতে চায়—তারাই এইসব সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে জীবন কাটায়। প্রকৃত পক্ষে সঠিক কথা বলতে গেলে এটাই বলতে হয়, যে সমস্ত আচার বা সংস্কারগুলির মধ্যে বহুজনের হিতকর কোন কারণ নেই—সেইগুলি কুসংস্কার এবং এগুলি পরিত্যজ্য। বহুজনের হিত না হােক, যদি তার নিজের মঙ্গল হয়—তাহলেও ভালাে। কিন্তু যে সব আচার, যে সব সংস্কার তাকে দিনে দিনে আরও বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলছে, সংকীর্ণ করে তুলছে—তা সে কেন গ্রহণ করবে ?
এইগুলি আধ্যাত্মিকতা নয়—আধ্যাত্মিকতা মানুষকে বন্ধন থেকে মুক্ত হতে শেখায়। নতুন কোন বন্ধনে আবদ্ধ হতে শেখায় না। একটা বিন্দুকে কেন্দ্র করে পরিধি বাড়িয়ে বাড়িয়ে যেমন বড়, আরও বড় বৃত্ত টানা যায়, ঠিক তেমনি যে কোন মানবজীবনকে কেন্দ্র করেও তার মনের পরিধি বাড়ানাে যায় অনন্ত পর্যন্ত। এটাকেই বলা হয় 'বাঁচার কলা’ বা Art of Life ! স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন –“সঙ্কোচনই মৃত্যু, সম্প্রসারণই জীবন।” 'তাই যা তােমাকে সঙ্কুচিত করে তােলে বা মনকে, সঙ্কীর্ণ করে তা পরিত্যাগ করতে হয়। তােমরা জীবনমুখী হও—মুক্তির অনাবিল আনন্দের স্বাদ গ্রহণ কর’ এটাই প্রাচীন কাল হতে ভারতবর্ষের সনাতন শিক্ষা।
তুমি মা হিসাবে তােমার মেয়ের আচার-আচরণের কথা যা বলছ, সেটা তাে ‘শুচিবাইগ্রস্ততা’ ! এটা এক ধরণের মনােরােগ বা ‘ম্যানিয়া’। মেয়েরা সাধারণত মায়েদের কাছ থেকেই এটা পায়। এর ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমি যেটা বললাম ওটাই হয়। ছােটবেলা থেকেই মায়ের কাছে কাছে থাকে মেয়েরা, ফলে অন্য অনেককিছুর সাথে এই শুচিবায়ুগ্রস্ততাও শেখে ! তারপর সে যখন বড় হয়—সংসার করে, তখন তার নিজের জীবনেও ঐটির প্রকাশ ঘটে যায়। এটা ঠিক যেন ছোঁয়াচে রােগের মতাে। সাংঘাতিক সংক্রামক। মা থেকে মেয়েতে–শাশুড়ি থেকে বৌমায় সংক্রামিত হয়ে যায়। তাই বলছিলাম এইরকম ভাবে ‘ঠাকুর’-‘ঠাকুর’_ করা আধ্যাত্মিকতা নয়—এগুলি বিকার ! আধ্যাত্মিক ব্যক্তি তাকেই বলা হবে—যার অন্তর শুচি। অন্তরে কোন বিকার নেই। যদি শাক্ত হয়—তাহলে ‘জয়কালী’ বললেই শুচি। যদি বৈষ্ণব হয়—তাহলে ‘জয় গােবিন্দ’ বলবে, শৈবরা বলবে “জয় শিবশম্ভু”, ব্যস্ _এতেই শুচি হয়ে যাবে !
ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন—অন্তর শুচি হলেই এই ধরণের ষােলােআনা বিশ্বাস জাগ্রত হয়। অন্যথায় যতই উপরটা ধােও না কেন (হাত-পা ধােয়া, বারবার স্নান করা, কাপড় কাচা) তাতে ভিতরের ময়লা যাচ্ছে যে ! তাই ঐ ধরণের ব্যক্তিদের প্রতিমুহূর্তেই মনে হয় “বােধহয় ঠিকমতাে শুচিভাবে ঠাকুরপূজায় বসা হােল না, ঠিকমতাে হাতের ময়লা ধােওয়া হয়নি, এই কাপড়টা পরা ঠিক হয়নি—আরাে শুদ্ধ বস্ত্র পরা উচিত ছিল, ‘ওকে’ ছোঁওয়াটা ঠিক হয়নি—আর একবার স্নান করে আসি!” ।
আচ্ছা মা—আমি তােমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি– হাত-পা ধুয়ে অথবা স্নান করে না হয় এ শরীরের উপরের অংশের ময়লা ধুয়ে ফেললে কিন্তু তােমার পেটের মধ্যেই তাে দুর্গন্ধযুক্ত মল (যাকে নােংরা, অপবিত্র ভাবা হচ্ছে) রয়েছে সেটা কি করে পরিষ্কার করবে ? মনের ময়লা বাদ দিলেও শরীরের মধ্যে অত দুর্গন্ধযুক্ত মল বা ময়লা নিয়ে ঠাকুরের পূজা কোরছো—তাহলে আর শুচি থাকলে কই ? ইসলাম ধর্মে রয়েছে মৃত্যুর পর দেহগুলি আল্লাহর দরবারে শেষবিচারের দিনের অপেক্ষায় থাকে। তাই তারা মৃতদেহটিকে মলমুক্ত করার জন্য এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরীরের সব মল বের করে দেয়। একে ‘দফন’ বলে। ঐ সমাজে এই ব্যাপারে Expert-রা রয়েছে, তারা এসে সুচারুভাবে এই ‘দফন’ ক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। যাইহােক, তাহলে তােমার তাে শরীরকে সম্পূর্ণরূপে মলমুক্ত করতে হলে প্রত্যেকবার পূজায় বসার আগে—ঐরকম Expert আনিয়ে ‘দফন’ ক্রিয়া করাতে হবে। তখন হয়তাে তােমার মনে একটা satisfaction আসবে যে তুমি ‘শুচি’ হয়েছ। কিন্তু সেটা কি সম্ভব
কিন্তু মজাটা কি জানাে—এতকিছু করেও কিন্তু মনের খুতখুঁতুনি যাবে না। একটা পূরণ করবে তাে অন্য আর একটা বাহানা জোগাড় হয়ে যাবে। তাই বলছিলাম—আত্মবিশ্বাসী হও। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন—“নাই’ বললে সাপের বিষ থাকে না’! এটা অবশ্য বিশ্বাসের কথা। প্রবল আত্মবিশ্বাসের সাথে ইষ্টচিন্তা করলে বা ইষ্টনাম স্মরণ করলেই শুচি। বুঝতে পারছাে তাে—কি বলতে চাইছি। মনের ময়লা ধুয়ে ফেলাই তাে আসল কথা। শরীরের উপরিভাগের ময়লা ধােয়া-মােছা করতে হয় কেন—শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য, কোন আধ্যাত্মিকতার জন্য নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিকই শরীর সুস্থ থাকলে তবেই সাধন-ভজনও ঠিক মতাে হয়—কিন্তু সেটাকেই সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দিলে তাে হবে না। যেটুকু প্রয়ােজন ব্যস সেটুকুই। আধ্যাত্মিক হতে গেলে মনের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। আর এরজন্য ঈশ্বরের কাছে আকুল হয়ে প্রার্থনা করতে হবে। ঈশ্বর করুণাময়—কৃপাসিন্ধু। তার করুণা হলে এই ধরণের সব বন্ধন কেটে যাবে, তখন আর কুসংস্কারাদি এবং মনের বিকারাদি থাকবে না। তাই আমি সবাইকেই বলি–শ্রীভগবানের শরণাপন্ন হও—এটাই একমাত্র পন্থা। অন্য কোনভাবে মানুষের মন থেকে কুসংস্কার, বিকার মিটিয়ে ফেলার উপায় নেই।
জিজ্ঞাসু :– রামজন্মভূমি নিয়ে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে (১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দ) এর জন্য দায়ী তাে রাজনৈতিক দলগুলি। বলা হচ্ছে বাবরি মসজিদ, কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে রামলালা সেখানে পূজিত হয়ে আসছে। মন্দির দখলের দিন (কিছুদিন আগেই ঐ কাণ্ড হয়েছিল) প্রায় ৪০০০ (চার হাজার) লােককে উত্তর প্রদেশের পুলিশ মেরে ফেলল—তার মধ্যে অধিকাংশই সাধু-সন্ন্যাসী! এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলুন—রাম বা রামায়ণের ঐতিহাসিক প্রমাণ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান কিভাবে হবে ?
গুরুমহারাজ :— তুমি ঠিকই বলেছো –ঐদিন প্রায় চার হাজার মানুষ মারা পড়েছিল এবং তাদের অধিকাংশই সাধু-সন্ত (গুরুমহারাজ বলেছিলেন ঐ ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সূক্ষ্ম শরীরের সাথে তাঁর যােগাযােগ হয়েছিল)। সংবাদপত্রগুলি সত্য ঘটনা এবং সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি, কিন্তু ঘটনা সত্য ! তুমি হয়তাে কোন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে শুনে প্রকৃত সংখ্যাটা জানতে পেরেছো। তবে জেনে রাখবে_ এর effect পড়বে ভারতীয় রাজনীতিতে এবং ওখানকার (অযােধ্যার) ঘটনা পরম্পরায় ! তবে একটা কথা তােমাদের বলছি—এই ঘটনার পর সারা ভারতবর্ষে চরম Reaction হােত, কিন্তু হােলনা শুধুমাত্র এই আন্দোলনের শীর্ষে সাধু-সমাজ রয়েছে __এই জন্যেই !
যাইহােক, তুমি যে রাজনীতির কথা বলছিলে —ঐ রাজনীতি আমি বুঝি না! কিন্তু আমি এটা বুঝি যে, অপপ্রচারের দ্বারা সত্যকে আড়াল করে রাখা বা দমিয়ে রাখা যায় না। রামজন্মভূমিকে কেন্দ্র করে অথবা মন্দির-মসজিদ বিতর্কে মানুষের (হিন্দু-মুসলমানের) রক্ত ঝরুক—তার পক্ষপাতী আমি নই। ঐ স্থানে মন্দির বা মসজিদ পূর্বে কোনটি ছিল – সেই নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে, আমি সেইসব বিতর্কেও যাচ্ছি না! কিন্তু ‘রামায়ণ’ মহাকাব্যের বর্ণনা অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই_ অযােধ্যা উত্তরভারতে অবস্থিত, মিথিলা North বিহারে অবস্থিত এবং তৎকালীন কিস্কিন্ধ্যা বর্তমান দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত ছিল_ যেখানকার তৎকালীন শক্তিশালী নৃপতি ছিলেন বালী। রামায়ণে উল্লেখিত তখনকার আরও কয়েকটি উন্নত সভ্যতার মধ্যে ছিল মেক্সিকান (দক্ষিণ আমেরিকার) ‘মায়া’ সভ্যতা। ওখানকার নৃপতির নাম ছিল ময়দানব। তিনি তার দুই কন্যার বিবাহ দিয়েছিলেন তৎকালীন দুই দিকপাল বীরের সাথে । ‘তারা’-র সাথে কিস্কিন্ধ্যাতি বালীর এবং মন্দোদরীর সাথে লঙ্কাধিপতি রাবণের। ‘লঙ্কা’ বর্তমানের শ্রীলঙ্কা নয়, লঙ্কারাজ্যটি তখন দক্ষিণভারতেরই একটা অংশ ছিল। এটা ছিল একটা বিশাল দ্বীপভূমি__মালদ্বীপ থেকে সুবর্ণদ্বীপ পর্যন্ত ছিল এর বিস্তৃতি। এখন এই দ্বীপরাজ্যটির প্রায় সবটাই সমুদ্রগর্ভে লীন হয়ে গেছে—বলতে গেলে প্রায় কোন চিহ্নই নেই। অযােধ্যা বা কিস্কিন্ধ্যার চাইতে Material Seience-এ অনেক উন্নত ছিল লঙ্কারাজ্য এবং ময়দানবের ‘মায়া’ রাজ্য। মেক্সিকানরা ‘মায়া’ বিদ্যা জানতাে। কালনেমী, মারীচ ‘মায়াবী’ ছিল অর্থাৎ ওরা ঐ দেশ থেকে এসেছিল। ময়দানব জামাতা রাবণকে যে পুষ্পক রথ দিয়েছিল, তা বর্তমানের Two-seeter ছােট বিমান ছাড়া আর কিছুই নয় ! ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়াল থেকে বা অদৃশ্য হয়ে যুদ্ধ করতাে বলে ওর নাম মেঘনাদ—এখনকার বিজ্ঞানীরা দেখেছে যে, কোন বস্তুর উপর যদি Infra- red আলাে ফেলা যায়, তাহলে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। সেই রকমই কিছু system-কে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিমান নিয়ে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধ কোরতাে। এসব দেখে বােঝাই যায় যে, তখনকার মানুষ জড় বিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিজ্ঞানেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিল। আবার ঐ গ্রন্থ (রামায়ণ) যিনি লিখেছিলেন তাঁরও এসব সম্বন্ধে ধারণা না থাকলে—তিনি গল্পাকারে বা রূপকাকারে এইসব বিজ্ঞানের কথা লিখতেও পারতেন না ।
ইন্দ্রজিতের নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার বর্তমানের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের NASA-র মতাে কোন উন্নত মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ছিল। ইন্দ্রজিতের হাতে এই Centre-এর দেখভালের দায়িত্ব ছিল। শত্রুপক্ষ কোন ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করছে তা দেখে তার প্রতিরােধক এবং তার চেয়েও মারাত্মক অস্ত্র এখানে তৈরী করে নেওয়া হােত। এরপর যুদ্ধে গেলে জয় সুনিশ্চিত হােত। এইজন্যেই বলা হােত নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইন্দ্রজিৎ একবার ঢুকে ‘সাধনা’ করে বেরিয়ে আসলেই সে অবধ্য। ঠিকমতাে বিচার করলে রামায়ণের প্রতিটি ঘটনার বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর পাওয়া যায়। আবার দ্যাখাে, নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে বিভিন্ন রকমের Switch ছিল, যা টিপলে ওখান থেকেই অস্ত্রগুলি দূরের বস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম হােত–এটা থেকে বােঝা যায় তখনও ক্ষেপণাস্ত্র ছিল এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Electronics সরঞ্জামেরও প্রয়ােগ হােত। Electronics ব্যবহারের আরও প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় কালনেমি ঘরে বসে বসে যুদ্ধ দেখছে। এতে পরিষ্কার বােঝা যায় যে, তখন T.V. বা ঐ ধরণের device ছিল। রাবণের ভাই বিভীষণও ঐ গবেষণাগারের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। বিভীষণ রামের পক্ষ অবলম্বন করায় রাম তথা লক্ষ্মণের পক্ষে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার ধ্বংস করা অনেক সহজ হয়ে গেল। কারণ ঢােকা-বেরােনাের বিভিন্ন দরজা বা গেট খােলার কায়দা, অস্ত্রগুলিকে deactivate করার সমস্ত Code বিভীষণের জানা ছিল। যেমন দ্যাখাে, আজকের আমেরিকার NASA-র যে সমস্ত ভারতীয় বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন তারা তাে ওখানকার অনেক Code-ই জানেন তাই Internal Sabotage করতে চাইলে ভিতরকার লােক ছাড়া করতে পারবে না। বিভীষণও সেইরকমই ভিতরকার লােক ছিলেন—ফলে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার ধ্বংস করা লক্ষ্মণের পক্ষে সহজ হয়ে গিয়েছিল। ধ্বংস অর্থে ভিতরকার যে Internal System ছিল, সেগুলিকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ঐ গবেষণাগার থেকে আর নতুন করে কোন কাজ করা সম্ভব ছিল না। রাবণের শক্তির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র এই নিকুম্ভিলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়—রামের সাথে যুদ্ধে তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল।
এখন কথা হতে পারে যে, ভারতীয় আর্য সংস্কৃতির মানুষের (দশরথ) চেয়ে রাবণের রাজ্যে বা ময়দানবের রাজ্যে Material Science এত উন্নত ছিল কেন ? এর কারণ হচ্ছে তৎকালে দুই ধারার শিক্ষা সমাজে চালু ছিল একটা বৃহস্পতির নীতি অন্যটা শুক্রাচার্যের নীতি। দেবগুরু বৃহস্পতির নীতিতে Materialistic উন্নতির চেয়ে মানবের আত্মিক উন্নতির উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আর রাক্ষস, অসুর বা দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের নীতিতে বলা হয়েছে —জীবন যখন পেয়েছ তখন enjoy কর। মেরে-ধরে, কেড়ে-কুড়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছিনিয়ে নাও। অপরের দিকে দেখার প্রয়ােজন নেই। আর আর্যজীবন কলায় রাজাদের মাথায় থাকতাে ঋষিরা। ঋষিরা সব বিদ্যাই জানতেন, কিন্তু মানবজাতির অকল্যাণ হয় এমন কোন কাজ ওঁরা রাজাকে করতে দিতেন না। কিন্তু রাবণের পিতা বিশ্বশ্রবা মুনি হলে কি হবে—মাতা ছিল রাক্ষসকুলজাত ‘নিকষা’! রাবণ পিতার গুণ পায়নি, মাতার গুণ পেয়ে শুক্রাচার্য নীতি follow করত—তাই বলা হয়েছে রাক্ষসরাজ রাবণ।
রাবণ যখন খুবই অহংকারী ও অত্যাচারী হয়ে উঠল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের মুনি-ঋষিদের আশ্রমগুলি Attack করতে লাগল, তখন ঋষিরাই সঙ্কল্প করে ‘রাম’ অবতারকে ধরায় অবতীর্ণ হবার প্রার্থনা জানালেন। পরবর্তীতে রাম যখন রাবণের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন, তখন ভরদ্বাজাদি ঋষিগণ রামকে ‘নানান দিব্যাস্ত্র’ দান করলেন। এই দিব্যাস্ত্র মানে হচ্ছে রাবণের অস্ত্র ভাণ্ডারের সমস্ত অস্ত্র নাশ করার formula বা Theory ! এই Formula গুলি ঋষিদের সাধনালব্ধ ধন। শুধুমাত্র জনকল্যাণমূলক কাজে এবং উপযুক্ত পাত্রকেই যা দান করা হয়। অন্যের হাতে পড়লে সে অনর্থ বাধিয়ে বসবে। যাইহােক এবার যুদ্ধের কথায় আসি–রামচন্দ্র লঙ্কা রাজ্য আক্রমণের শুরতেই ওখানকার Ecosystem টাকেই নষ্ট করে দিয়েছিলেন। এরফলে কি কি হতে পারে—যেমন বৃষ্টিপাত একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা প্রবল বর্ষণ আরম্ভ হয়ে যেতে পারে, ঝড়-ঝঞায় সমুদ্রের জলােচ্ছাস এত বৃদ্ধি করা যেতে পারে যে, দুকূল প্লাবিত হয়ে যেতে পারে, ওজনােস্ফিয়ারে পরিবর্তন ঘটিয়ে সূর্যের তাপ এত বেশী বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, জঙ্গলে আপনা-আপনিই দাবানল সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এমনটাই করা হয়েছিল। গােটা লঙ্কায় অগ্নিকাণ্ড ঘটানাে কি একা হনুমানের লেজের আগুনে হয় ? কোন রাষ্ট্রকে বাইরে থেকেও দুর্বল করে দেওয়া যায়—যদি সেই রাষ্ট্রে অন্নকষ্ট, জলকষ্ট, বাসস্থানের কষ্ট সৃষ্টি করে দেওয়া যায়, তাহলে সেখানকার প্রজারা অনেকে মারা যাবে, আর যারা বেঁচে থাকবে তারা দেশের রাজাকে মানবে না, বিদ্রোহ করবে। ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকলে বহিঃশক্রর আক্রমণে দেশটির প্রতিরােধ সহজেই ভেঙে পড়বে। রাম এই কায়দাতেই অত শক্তিশালী রাবণ এবং তার সাম্রাজ্যকে ধবংস করতে পেরেছিলেন।
লঙ্কায় অভিযান ঘটানাের আগে ঋষিদের সাথে রামচন্দ্রের দীর্ঘ পরিকল্পনা হয়েছিল এবং যুদ্ধের যাবতীয় ছক বা রূপরেখা সেখানেই তৈরী হয়েছিল। তাই তুমি যে জিজ্ঞাসা করছিলে—রামায়ণের কাহিনী সত্যি কি না ?—এগুলি সবই সত্যি, কোনটাই গাঁজাখুরি গল্প নয়—ঐতিহাসিকভাবেই সত্য। প্রকৃত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এসব সত্য ধীরে ধীরে আবিষ্কৃত হবে, মানুষ তখন সবই জানতে পারবে।