স্থান_শিবপুর (হাওড়া) এবং খড়দহ । সময়:– 1990- 91
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:– সব্যসাচী মান্না, রমেশ বাবু (দত্ত) ও ওনার ছেলে, গঙ্গা বাবু, চিত্তবাবু (খড়দহ) এবং অন্যান্য ভক্তগণ।
জিজ্ঞাসু:– বাবা! উপবাস করে শরীরকে কষ্ট দিয়ে বার-ব্রত পুজো আচ্ছা করা উচিত না শরীর ঠিক রেখে ওসব করা উচিত?
গুরু মহারাজ:—শরীর ঠিক রাখতে হবে বৈকি “শরীরম্ আদ্যম্ খলু ধর্ম সাধনম্”শাস্ত্রে রয়েছে এ কথা ! তবে দ্যাখো মা ! ঈশ্বর লাভের জন্য বা আত্নদর্শনের জন্য শরীর পাত করে ফেলছে এমন আর কজনকেই বা পাওয়া যায় বলো ? তেমনটা হোতে পারলে তো খুবই ভালো ! ঘর সংসার করতে করতে এমনটা করা যায়ও না! আর যদি যায় তাও সেই সংখ্যা ‘কোটিতে গুটিক’ ! সর্বত্যাগী সাধু-সন্তরা বা যোগীরা এমনটা করতে পারেন_ সাধারণ গৃহস্থ মানুষ(নারী বা পুরুষ) হয়তো ঘরসংসার করছে, ছেলে মেয়ে হয়েছে, তাদেরকে বড় করা- শিক্ষিত করা এইসব নিয়ে ভাবছে, সংসারের অন্যান্য ঝামেলা নিয়ে ভাবছে_ আবার পুজো-আচ্চার নামে অকারণে উপবাস করছে- অসময়ে খাবার খাচ্ছে __ এগুলো না করাই ভালো!
শরীর নিয়ে কথা বলার সময় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন_ 'শরীরের ট্যাক্সো দিতে হয়' অর্থাৎ শরীর থাকলেই মানুষের এমনিতেই মাঝে মাঝে শরীর খারাপ হয় । তার মধ্যে আবার যদি অকারণে তুমি অবৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার শিকার হয়ে শরীরকে কষ্ট দাও _তাহলে তো শরীর আরও দুর্বল হবেই ! শেষে কোনো কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্তও হতে পারো। সুতরাং শরীরকে যত্ন করতে হবে বৈকি! শরীর সুস্থ না থাকলে মন ঠিক থাকবে না । আর মন সুস্থ না হোলে পূজা-পাঠ কেন, কোনো কাজই ঠিক মতো হবে না।
দ্যাখো, প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার সংজ্ঞাই তো আলাদা ! আমি এই কথাগুলো আগেও বারবার বলেছি_ এখানে অনেকেই রয়েছে যারা মাঝেমাঝেই বনগ্রাম আশ্রমে যায় _ওরা শুনেছে ! প্রকৃতপক্ষে art of life এবং art of living হলো spirituality বা আধ্যাত্মিকতা ! 'জীবনের কলা' এবং 'জীবনযাপনের কলা'-ই হলো আধ্যাত্মিকতা ! তাহলে জীবনযাপনকে সুশৃংখল করতেই হবে । আহার এবং বিহার অর্থাৎ food habit ও lifestyle এই দুটিকেই সংযত করতে হবে বা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তবে তো সাধন সাধন-ভজন হবে! তোমার শরীর সুস্থ হবে, মন ভালো থাকবে বা মনের বিক্ষেপ কমে যাবে। তবে তো তুমি ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক হয়ে উঠতে পারবে! নাহলে ওই পূজা-আচ্চাই হবে_ আধ্যাত্মিকতা হবে না।
সবল সুস্থ দেহ মনেই আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ঘটে। তাই তুমি তোমার নিজের শরীর সুস্থ রাখো । তুমি একজন গৃহবধূ, তোমার সংসারের তুমি গৃহিণী, তোমার শরীর সুস্থ থাকলে__ তবে তো তোমার সংসারের সবার শরীর সুস্থ থাকবে! তুমি চেষ্টা করো __যাতে তুমি নিজে এবং তোমার সংসারের বাকি সমস্ত সদস্যরা দুপুর বারোটার মধ্যে মধ্যাহ্নভোজন করে নেয়। আমাদের দেশে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের দ্রাঘিমাংশ বা অক্ষাংশ অনুযায়ী এখানে দুপুর 12 টার মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজন সেরে নেওয়া উচিত। কারণ শরীরের মধ্যে থাকা সূর্যগ্রন্থি (যে গ্রন্থি খাদ্য হজমে সহায়ক) ওই সময়ে সব চাইতে অধিক ক্রিয়াশীল থাকে, ফলে পাকস্থলীতে থাকা খাদ্য খুব সহজেই হজম হয়ে যায় ! শীতপ্রধান দেশের লোকেরা অধিক রাত্রে বেশি পরিমাণ খাবার বা আমিষ জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে পারে _এতে ওদের শরীরে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। যেহেতু ঐ সমস্ত অঞ্চলের আবহাওয়া খুব ঠান্ডা, তাই খাদ্য দীর্ঘক্ষন পাকস্থলীতে থাকলেও পচে দুর্গন্ধ হয়ে যায়না। অপরপক্ষে ক্রান্তীয় বা উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের পরিমাণ, গুণমান এবং খাদ্য গ্রহণের সময়ের হেরফের হলেই বদহজম বেশি হয় গ্যাস অম্বল হয়।
এই জন্যই আমাদের এখানকার মানুষের বাতকর্ম বেশি হয় এবং তা খুবই দুর্গন্ধযুক্ত হয় ! তুলনায় ইউরোপের ঠান্ডা দেশগুলিতে মানুষের ওই কর্মটি কম হয় । জানো তো ওইসব দেশে একসাথে কয়েকজন বসে কথা বলাকালীন কেউ বাতকর্ম করতে পারে _এতে লজ্জার কিছু নেই! কিন্তু যদি কেউ ঢেকুর তোলে_ সেটা খুবই নিন্দনীয় ! আমাদের এখানে অবশ্য এর ঠিক উল্টো নিয়ম!
যাইহোক আপনাকে যা বলছিলাম_ আপনি সচেতন হোন! আর শুধু আপনাকেই বা কেন, সকলকেই বলছি__ আপনারা সকলেই শরীরের ব্যাপারে যত্নশীল থাকবেন দুপুর 12 টার মধ্যেই দিনের হেভি খাবারটা খেয়ে নেবেন আর
রাত্রির খাবার খাবেন হালকা ! তাহলেই দেখবেন, শরীর অনেকটা সুস্থ থাকবে। আর যদি কফ-পিত্ত-বায়ু জনিত কোনো সমস্যা বা শরীরের অভ্যন্তরীণ গ্রন্থির কোন দুর্বলতা থাকে__ তাহলে কোন উপযুক্ত যোগগুরুর কাছে গিয়ে কিছু কিছু আসন প্রাণায়াম শিখে নিয়ে সেগুলি প্র্যাকটিস করতে হবে। এই ভাবেই শরীর ঠিক রাখতে হয়।
জিজ্ঞাসু:--(জনৈক প্রৌঢ়) মহারাজ ! একটু দেখবেন_ যেন পৃথিবীতে খুন-জখম, মারামারি, হিংসা এগুলি বন্ধ হয়ে যায় ! আপনাদের মতো মানুষ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই তিনি শুনবেন ! আমি চাই বিশ্বে শান্তি আসুক__ তাই আপনাকে এত করে বলছি!
গুরু মহারাজ:---সেকি গো ! তুমি চাইছো বলে আমাকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হবে ? আচ্ছা, তুমি বলোতো _তুমি নিজের জীবনে কি শান্তি খুঁজে পেয়েছো ? তোমার পরিবারকে অর্থাৎ পরিবারের সকল সদস্যদেরকে তুমি শান্তিতে রাখতে পেরেছো ? তা যদি তুমি পারো _তবেই তুমি বিশ্বশান্তির কথা চিন্তা করতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে ! প্রতিটি individual আগে নিজের শান্তির কথা ভাবুক, তারপরে বিশ্বশান্তির কথা ভাববে ! বিভিন্ন group বা বিভিন্ন organisation এই ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই কাজের কাজটি হচ্ছে না ! এর প্রধান কারণ হল বেশিরভাগ মানুষ individualy অনিয়মিত, উচ্ছৃংখল জীবনযাপন কোরে__ নিজের জীবনকে অশান্তিময় করে তুলছে, আর মুখে বিশ্বশান্তির কথা বলছে ! এই জন্যই তো কোনো কাজ হচ্ছেনা ! ঠিক যেন একজন অন্ধ আরো কয়েকজন অন্ধকে পথ দেখানোর ভার নিতে চাইছে !
দ্যাখো, আমি বলব এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলি ভালো কিন্তু তাতে কি লাভ ? সেই প্রচেষ্টা তো কখনই সফল হচ্ছে না ! এই জন্যই বলছিলাম যে, যতই বিভিন্ন মানুষ বা organisation বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করুক না কেন __কেউই successful হতে পারছে না ! কাজের কাজটি করতে পারবেও না কোনোদিন !
হ্যাঁ, সেই দিন পারবে __যেদিন প্রতিটি individual ঠিক হবে, অন্ততঃ বেশিরভাগকে ঠিক হতেই হবে ! একটা একটা unit যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে সমগ্র অংশটাই ঠিক হয়ে যাবে । কি করে হবে সেটা বোঝাচ্ছি ! দ্যাখো, প্রতিটি individual হচ্ছে সমাজের unit, সমাজ আবার একটা বিরাট অঞ্চলের unit, সেরকম একটা বিরাট অঞ্চল একটা রাজ্যের unit, একটা রাজ্য একটি দেশের unit, এরকমভাবে একটি দেশ যেন একটি মহাদেশের unit এবং মহাদেশগুলি সমগ্র পৃথিবীর unit, পৃথিবী সৌরমণ্ডলের unit, সৌরমন্ডল ছায়াপথের unit__ এইভাবে চলতে চলতে কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা কোন মানুষ কল্পনাতেও আনতে পারবে না !
Individual বা ব্যষ্টির শান্তি না হলে সমষ্টির শান্তি হবে কি করে_ কখনোই হবে না ! কাজেই সেই চেষ্টা করতে যাওয়াটাও বৃথা ! যেটা তোমার control-এ নেই, সেই চেষ্টা করার প্রয়োজনটাই বা কি ? তুমি নিজেকে control করো ! নিজের অন্তর্জগতে ডুবে আত্মোপলব্ধির চেষ্টা করো_ তাহলেই অন্তরে শান্তি পাবে ! তোমার অন্তরে শান্তি এসে গেলে, তখন দেখবে এতদিন তুমি বাইরের জগতে যেসব অশান্তি দেখছো__ সেগুলি আর থাকবে না ! তখন দেখবে, তুমি যেনো শান্তির পারাবারে বসে আছো__ চারিদিকে শুধু শান্তি, শান্তি আর শান্তি ! বিভিন্ন মহাপুরুষদের চিত্রের দিকে তাকিয়ে দেখলে আমার এই কথাগুলো বুঝতে পারবে ! দেখবে_ তাঁদের মুখমন্ডলে যেনো শুধু প্রশান্তি বিরাজ করছে !
আমিও তো তাই দেখি ! কিছু কিছু স্থানে কিছু কিছু disharmony রয়েছে ঠিকই__ তবে সেটা harmonised হলেই সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমি আমার সাধ্যমতো ওই harmonisation-এর কাজটাই করে যাচ্ছি । দ্যাখো, আমি নিজেকে জানি_ আমার কি কাজ তাও আমি জানি, এবং সেই কাজগুলোই করে যাচ্ছি ! তুমি বা অন্য কেউ আমাকে বলে কিছু করাতে পারো __তোমাদের সে সাধ্য কোথায় ? হ্যাঁ_তেমন কেউ থাকলে নিশ্চয়ই আমি তার কথা মতো কাজ করতে পারি।।
জিজ্ঞাসু:--পৃথিবীর মানুষের কথা না ভেবে শুধু নিজের উন্নতির কথা চিন্তা করাটা কি স্বার্থপরতা নয়?
গুরু মহারাজ:---না এটাই প্রকৃষ্ট পন্থা ! তুমি যেভাবে ভাবছো বা চিন্তা করছো_ সেভাবে বা সেই ধরনের চিন্তার দ্বারা তো আর এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না ? সেখানে অন্য নিয়ম ক্রিয়াশীল ! তোমার ধারনা নাই, তাই তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছো না ! তবুও উদাহরণ দিয়ে আমি তোমাদেরকে ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করছি! এক অণু জলকে বিশ্লেষণ করলেই তো জলতত্ত্ব জানা যায়__ যায়না কি ? ভারতের জল, ইউরোপের জল, আরবের জল, আমেরিকার জল বা H2O কি আলাদা কম্পোজিশন দিয়ে তৈরি ? তা তো নয় ! ঠিক তেমনি__ আত্মবোধ হলেই ব্রহ্মতত্ত্ব অবগত হওয়া যায় । যে কোন মানুষ তার অন্তঃপ্রকৃতিকে জয় করেই বহিঃপ্রকৃতিকে জয় করতে পারে ।
একটু আগে শান্তির কথা হচ্ছিল, প্রতিটি জীব জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে শান্তি বা আনন্দ পেতে চাইছে এবং চাওয়াটাও সত্য ! কাজেই যে এই সত্যের সন্ধানে, আনন্দের সন্ধানে অথবা শান্তির সন্ধানে অগ্রসর হতে চাইছে__ সে স্বার্থপর কি করে হবে ? জেনে রাখবে, যদি এমন কোন ব্যক্তি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে কোন মানবসমাজের কোথাও
থাকে, তাহলে শুধু ওই ব্যক্তিই যে তাঁর জীবনে শান্তি লাভ করেছেন তাই নয়__ তাঁকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ শান্তি ও আনন্দের সন্ধান পেয়ে চলেছেন !
দ্যাখো, ধ্যানীর ধ্যানে আনন্দ, জ্ঞানীর জ্ঞানলাভে বা জ্ঞানবিচারে আনন্দ, কর্মযোগীর সেবামূলক কর্মে আনন্দ__ এব্যাপারে বিরোধ করে কোন লাভ হবে না ! মানুষ তার প্রকৃতি অনুযায়ী কর্ম করে । তুমি কোনো কিছু দিয়েই তার কর্মের ধারা বদলাতে পারবে না ! মহাজনেরা বলে গেছেন_ be and make ! এটাই চূড়ান্ত শিক্ষা ! তুমি ব্যাকরণে পন্ডিত না হলে অপরকে ব্যাকরণ শেখাবে কি করে ? এই যে তোমরা 'শান্তি' 'শান্তি' করছো__তা শান্তি কি হাটে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না কি ? আগে শান্তির স্বরূপ বোধ করতে হয়, তবে নিজে 'শান্তি' পাওয়া যায় এবং অপরকে শান্তি দেওয়া যায় ! শান্তির বোধ যদি কেউ করতে পারে_ তাহলে সে অপরকে পরিপূর্ণ শান্তি দিতে না পারলেও অন্ততঃ শান্তির কনসেপ্টটা দিতে পারবে।
এসব রহস্য বুঝতে পারলে_তখন মানুষ দেখবে "সবই ঈশ্বরের লীলা" ! অন্যথায় মানুষের জীবনে শুধুই জ্বালা ! সাধারণ মানুষ অহরহ ত্রিতাপ জ্বালা (আধিভৌতিক, আধিদৈবিক, ও আধ্যাত্মিক)-য় জ্বলছে, আবার সে অপরকে শান্তি দিতে চাইছে ! মুখে 'শান্তি', 'শান্তি' করছে_ এর ফলে কি হচ্ছে জানো তো__মানুষের আরো ক্লেশ বাড়ছে, সে নিজে আরো বেশি অশান্তিতে ভুগছে ! আর ওই অশান্ত ব্যক্তিটি তার চারপাশে থাকা মানুষগুলোকেও অশান্ত করে তুলছে !
জানো_ পৃথিবীর সামগ্রিক ভালো-মন্দের ব্যাপারটিও একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে । হয়তো বিশ্বের বর্তমান রাজনৈতিক, ধর্মনৈতিক বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিচলিত হচ্ছো_ কিন্তু কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের ফল আজকের এই পৃথিবী ! এই দীর্ঘ সময়ে এই পৃথিবীর উপর দিয়ে কত বিপর্যয়, কত ঝড়-ঝাপটা বয়ে গেছে_ তার খবর রাখো ? কত অত্যাচারি রাজা, কত দূরাচারি রাষ্ট্রনেতা, কত অহংকার, কত যুদ্ধ, কত মৃত্যু _দেখেছে এই পৃথিবী ! সে সব ইতিহাসও হারিয়ে গেছে ! সামান্য কয়েক হাজার বছর আগের হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, মেহেরগড় সভ্যতার ইতিহাস জানেনা আজকের সভ্য মানুষ ! তাহলে কোটি কোটি বছর ধরে এই পৃথিবীর কত স্থানে কত পরিবর্তন ঘটেছে __তা কি কোনো ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব ? তাই এসব নিয়ে মাথা ঘামিও না _যা ঘটার তা নির্দিষ্ট নিয়মেই ঘটবে ! 'ঘটন-অঘটন' ঘটানোর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, আর সেই নিয়ম সঠিকভাবে এক্সিকিউট করার জন্য নিখুঁতভাবে কাজ হয়ে চলেছে ! তোমরা এগুলো দেখতে না পেলেও আমি দেখছি__জগদম্বার জগতে কোথাও কোনো ভুল নেই ! সবই ঠিকঠাক চলছে।
তাই তোমরা কোন ব্যাপারই অকারণ উদ্বিগ্ন হয়োনা। সুযোগ পেয়েছো_ আত্মমগ্ন হও, আত্মোপলব্ধির চেষ্টা করো ! আমার গুরুদেব রামানন্দ বলেছিলেন_"ইয়ে জগ্ ঝুট হ্যায়, কুত্তাকা পুছ্ হ্যায়"! যতই চেষ্টা করা হোক _কুকুরের লেজ যেমন সোজা করা যায় না, ছেড়ে দিলেই আবার বেঁকে যায়, তেমনি বর্তমান জগতে যতই 'শান্তি', 'শান্তি' করে আন্দোলন করুক না মানুষ_ তাতে কিছুটা সাময়িক শান্তির কাজ হোলেও স্থায়ী কোনো ফলই হবে না ! কোথা থেকে নতুন নতুন অশান্তি ঠিক এসে হাজির হবে__ কিছুতেই এর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না ! তাই বলছিলাম, তোমরা ঐসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না ! নিজেরা সৎ হও, সুন্দর হও, পবিত্র হও, ঈশ্বরপরায়ণ হও__ দেখবে নিশ্চয়ই শান্তির সন্ধান পাবে । (ক্রমশঃ)