স্থান:—বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন। সময়:–১৯৯১সাল।

  উপস্থিত ব্যক্তিগণ:-- সিঙ্গুরের ভক্তগণ, পঙ্কজবাবু, রমেশবাবু, রায়নার আরতি, এবং অন্যান্যরা।

  জিজ্ঞাসু:----প্রতিটি মহাপুরুষের জীবনী পড়লে দেখা যায়, তিনি যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছেন _তখন‌ই কোনো না কোনো অলৌকিক শক্তির সাহায্যে তিনি সেই অবস্থার মোকাবিলা করেছেন ! তাহলে, আপনার জীবনেও কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল?

   গুরু মহারাজ:------আপনি কি আমাকে মহাপুরুষ ঠাউরে নিয়েছেন নাকি ? যদি প্রকৃত‌ই তা নিতে পারেন, তাহলে জানবেন আপনিও একজন মহাপুরুষ ! কারণ একজন মহাপুরুষ‌ই অন্য একজন মহাপুরুষকে ঠিক ঠিক চিনতে পারে । সে যাই হোক, আপনি যে বললেন মহাপুরুষগণ যখনই কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন তারা কোনো না কোনো অলৌকিক শক্তির সাহায্যে সেই অবস্থার মোকাবিলা করেন _এই কথাটা ঠিক নয় ! কারণ আপনি হয়তো এইরকম দু-একটা ঘটনার কথা জানেন, যেটা দেখে আপনি ঐ ধরনের বিচার করছেন ! কিন্তু একজন মহাপুরুষের জীবনের কত ঘটনা, কত মহিমা, ঈশ্বরের কত লীলা সেই শরীরকে কেন্দ্র করে ঘটে চলে__ তা সাধারণ মানুষের কাছে কখনোই সবটা প্রকাশিত হয় না ! সেইসব মহাজন মহাপুরুষগণ পরবর্তীতে যতটুকু মানুষের কাছে ব্যক্ত করেন সেটুকুই পরবর্তীকালের মানুষ জানতে পারে ! অথবা যে কতিপয় ভাগ্যবান তাঁর লীলা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছুটা জানতে পারে_ তাই না !

   বলুনতো, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনজীবনের প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত্রি, প্রতিটা ঘণ্টা, প্রতিটা মুহূর্ত _কিভাবে, কত বিচিত্র ভাবে কেটেছে, সেগুলির সব __কে প্রত্যক্ষ করেছে ? তার সব হিসাব কে রেখেছে ? সাধক বামদেব তার সুদীর্ঘ ত্যাগপূর্ণ মহিমাময় সাধনজীবনের প্রতিটি মুহূর্তের কথা কে রেকর্ড করে রেখেছে ? কাশীর সচল শিব ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সুদীর্ঘ জীবনকালে(২৮৭-বছর) কত ঘটনা, কত ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত হয়েছিল __তার কতটুকু মানুষ জানে !! সুতরাং আপনি কখনো দু-একটা ঘটনা দেখে মহাপুরুষদের লীলার বিষয়কে সিদ্ধান্তে এনে ফেলবেন না।

   আমার জীবনেও ছোটবেলা থেকে মা জগদম্বা কতভাবে, কত বিচিত্র লীলা ঘটিয়েছেন __তার ইয়ত্তা নাই ! কিন্তু সে সমস্ত ঘটনার কথা আমি যদি আপনাদের বলি, তবেই আপনারা জানতে পারবেন _ নাহলে তার কতটুকু মানুষ জানবে ? যদিও বা কেউ সেগুলির কিছুটা প্রত্যক্ষ করেও থাকে, তাহলেও সে অনধিকারী হলে সেই সব লীলার ভুল ব্যাখ্যা করবে বা অপব্যাখ্যা করবে ! প্রকৃত ব্যাখ্যা একমাত্র সেই মহাপুরুষই করতে পারেন !

 আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা আমার মা বাবা জানতেন ! আমার দিদিরা বা বাড়ির লোকজন এবং কৃষ্ণদেবপুরের দু একজন বন্ধু  অনেক ঘটনার কিছু কিছু সাক্ষী ছিল ! কিন্তু তারা যদি তাদের দেখা ওই ঘটনাগুলির ব্যাখ্যা করতে যায় __তাহলে ভুল করে ফেলবে ! কারন সমস্ত ঘটনার ব্যাখ্যাও হয়না ! যেমন ধরুন দামোদরের ধারের একটি গ্রাম শম্ভুপুরে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তার কি ব্যাখা দেবে !

  ঘটনাটা বলছি শোন:-- কোন কারণে শম্ভুপুর গ্রামের বহু মানুষ আমাকে মারতে এসেছিল ! কিন্তু তারা দেখল যে হঠাৎ করে আমি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছিলাম এবং আমিও দেখলাম যে আমি ওই ঘটনাস্থল থেকে দু তিন কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় বসে রয়েছি ! এই ঘটনাটা আমাকেও খুবই অবাক করেছিল __কারণ এরূপ ঘটনা

ঘটানোর জন্য আমি নিজে থেকে কোনো সংকল্প করিনি, মা জগদম্বার কাছে কোনো প্রার্থনাও করিনি ! কারণ ঘটনাটা এমন আকস্মিকভাবে ঘটেছিল যে আমার ঐসব করার সময়ই ছিল না ! কিন্তু তবুও ঘটনাটি ঘটেছিল ! আর এটাই আমার বিস্মিত হবার কারন !

  বহুদিন পর্যন্ত এই ঘটনার সঠিক কারণটা জানার জন্য আমি সচেষ্ট ছিলাম । তারপর যখন আমার সাথে আমার গুরুদেব রামানন্দ অবধূতের সাক্ষাৎ হলো এবং উনি আমাকে সন্ন্যাস দীক্ষা দিলেন __তখন একদিন ওনার সেবা করার সুযোগ পেয়ে ওনাকে ওই ঘটনাটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম ! উনি সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে গেছিলেন, তারপর বলেছিলেন _"ব্রহ্ম কা অনন্ত্ মহিমা হোতা হ্যায় বেটা!" আর কিছু বলেন নি_ চুপ করে গিয়েছিলেন ! আমিও তাঁর কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে চুপ করে গিয়েছিলাম।
  অনেক পরে বৃন্দাবনে থাকার সময় আমি একজন ভক্তিমার্গের মহাসাধকের দর্শন করেছিলাম এবং কথা প্রসঙ্গে তাকেও আমি এই কথাটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলাম ! তিনিও বলেছিলেন _"ভগবানের মহিমা কে জানতে পারে !"

  তাহলে বুঝতে পারছেন তো, আপনি যে গুলোকে অলৌকিক শক্তির প্রকাশ বলছেন _ওগুলো প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের মহিমা ! ব্রহ্মজ্ঞানী ব্যক্তি একেই বলছেন "ব্রহ্মের মহিমা", ভক্ত বলছেন "ভগবানের মহিমা"! এই হলো প্রকৃত রহস্য !

 তবে এটা জেনে রাখবেন, সাধারণত লোকসমাজে যেটা ঘটে সেটাকেই মানুষ বলে লৌকিক, আর সচরাচর যেটা ঘটে না_ বিশেষ বিশেষ সময়ে ঘটে বা হঠাৎ করে ঘটে __তখন তাকে মানুষ বলে অলৌকিক ! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অলৌকিক বলে কিছু হয়না, যেটা ঘটে সেটা হোল __ঈশ্বরের মহিমা শক্তির প্রকাশ!!

  জিজ্ঞাসু:---আচ্ছা মহারাজ!  আপনি একদিন "সাত বছর" অন্তর আপনার জীবনের বিশেষ কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন ! তাছাড়া বলেছিলেন এই "সাত" সংখ্যাটির একটি বিশেষ গুরুত্ব এবং মর্যাদা আছে ! ব্যাপারটা ঠিক কি?
   গুরু মহারাজ:-----হ্যাঁ, আমার জীবনেই শুধু নয়, সব মানুষের জীবনেই প্রতি সাত বছর অন্তর অবস্থার পরিবর্তন হয় ! যেমন ধরো, প্রথম সাত বছর পর্যন্ত মানুষের শৈশবকাল, 7 থেকে 14 বছর পর্যন্ত মানুষের বাল্যকাল, 14 থেকে 21 হল কৈশোর, 21 থেকে 56 যৌবন, 56 থেকে 77_প্রৌঢ়ত্ব এবং 77-এর পর থেকে মানুষের জীবনে আসে বার্ধক্য ! এইভাবে 7 বছর অন্তর অথবা 7-এর গুণিতক দিয়ে মানুষের জীবনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে ! মানুষের সম্পূর্ণ আয়ুষ্কাল 7×21=147 বছর !  যেহেতু 21-বছর বয়সে মানুষের জীবনে যৌবন শুরু হয়, তাই 21-এর গুনিতক দিয়ে বিচার হয় !  এরপরেও যদি কেউ বেঁচে থাকে, তাহলে তার আবার দাঁত বের হতে পারে__ চামড়ায় পুনরায় glaze বা glamour ফিরে আসে !

  তবে সে যাই হোক, এছাড়াও দেখবে কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা, ডি.এন.এ-র সংখ্যার সাথেও 7 -এই সংখ্যাটির সম্পর্ক রয়েছে ! এভাবেই আরো অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় __মানুষের জীবনকে 'সাত' এই সংখ্যার দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব!

   এবার যদি বহির্জগতের ক্ষেত্রে আসো, তাহলে দেখতে পাবে সেখানে __seventh dimension, সপ্ত আকাশ, সপ্ত তত্ত্ব, সপ্ত নিম্ন ভূবন এবং সপ্ত ঊর্ধ্বের ভূবন মিলে চতুর্দশ ভুবন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে সাতটি প্যালেট, আলোর সাতটি রং, সংগীতের হাত সূর __এইভাবে পৃথিবীর তথা জগতের অনেক তত্ত্বকে __সপ্ততত্ত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় !
  তোমরা যদি তোমাদের জীবনকে দেখো, তাহলেও দেখবে সেখানে প্রতি সাত বছর অন্তর কোনো না কোনো বিশেষ পরিবর্তন ঘটে চলেছে ! এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারবে আমার সাথে পরিচিত হবার পর ! আমার সাথে দেখা হবার 7 বছর পর দেখবে_ তোমাদের জীবনে কোনো না কোনো বিশেষ পরিবর্তন ঘটেছে ! এই ভাবেই প্রত্যেকের জীবনে এটা ঘটে চলে এবং যে কেউ তার জীবনে এটা মিলিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে।

  জিজ্ঞাসু:---গুরুজী ! নারী ঘোমটা এবং অন্দরমহলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তার বাইরের জগতে বেরোনো বারণ __এগুলো কি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে চলে আসছে?

 গুরু মহারাজ:----না না ! তা হবে কেন ? বৈদিক সমাজে নারী অচ্ছুৎ, অপাংক্তেয় ছিল না তো ! নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল ! তৎকালীন আর্য সংস্কৃতি, নারীকে যথেষ্ট সম্মান দিতো। বেদের বিভিন্ন ঋক্ নারীদের সৃষ্ট । এঁদের অনেকে ছিলেন ঋষি-ভার্যা, , আবার অনেকে অবিবাহিত বিদূষী ঋষি ছিলেন। বেদের বিভিন্ন অংশে এইরকম অনেক মহীয়সীর উল্লেখ রয়েছে !  ঘোষা, অপালা, বাক ইত্যাদি অনেকের নামই পাওয়া যায় _যাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন শ্লোক রচনা করেছিলেন ! আর বেদের শ্লোক যারা রচনা করেছিলেন তারাই তো ঋষি বা উপলব্ধিবান ব্যক্তি !

    দ্যাখ্ আরতি, তুই যেটা 'মেয়েদের অন্দরমহলেই স্থানে'র কথা বলছিস__ এটা এসেছে যখন থেকে মানুষ পারিবারিক জীবনে অভ্যস্ত হয়েছে_তখন থেকে ! এখনো দেখবি__ বাঙালি গ্রাম্যসমাজে নিজের বউকে পরিচয় করানোর সময়, বাড়ির কর্তা বলছে 'এইটা আমার পরিবার' ! এটা কিন্তু সম্মানের সম্বোধন ! বউকে "পরিবার" হিসেবে

সম্বোধন করে নারীকে সম্মান‌ই দেখানো হয় ! অসম্মানের কোনো স্থান সেখানে ছিলনা ! প্রকৃতপক্ষে নারী হচ্ছেপ্রকৃতি’, তাই সে স্বভাব-অন্তর্মুখী ! তাই সমাজজীবন বা পরিবারজীবন গঠিত হবার পর নারী নিজেই তার স্থান অন্দরে করে নিয়েছিল ! আলাদা করে পুরুষকে সেখানে প্লেস করতে হয়নি ! অনেক পরবর্তীতে যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষরা নারীদেরকে শাসন করতে চেয়েছে, অবদমিত করতে চেয়েছে, তখন থেকেই জোর-জবরদস্তি করে অন্দরমহলে ধরে রাখার ব্যাপারটা এসেছে ! কিন্তু প্রাচীনকালে এটা ছিল না ! নারীর প্রকৃতি‌ অন্তর্মুখী, আর পুরুষের প্রকৃতি বহিঃর্মুখী ! তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে পুরুষ অধিকতর শক্তিশালী এবং সন্তান উৎপাদনের ঝামেলা তাদেরকে পোহাতে হয়না তাই বাইরের দায়িত্ব নিয়েছে পুরুষেরা, আর সন্তানের জন্ম দেওয়া, তার প্রতিপালন এবং পরিবারের বাকি সকলের খাদ্যাখাদ্যের জোগান দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল নারীরা ! এইভাবেই নারীরা গৃহবন্দী বা অন্তঃপুরচারিনী হয়েছিল ! জোর করে তাদেরকে কেউ ঘরে ভরে রাখে নি, অন্তত প্রাচীন ভারতবর্ষে তো নয় ই।

    ভারতবর্ষে যখন থেকে বিদেশী-আক্রমণ হোতে শুরু করলো, তখন থেকেই অন্যান্য ধন-সম্পদের সঙ্গে নারীরাও লুণ্ঠিত হতে শুরু হোল ! এই সময় থেকেই ভারতবর্ষের নারীদের মাথায় ঘোমটা, বোরখা ইত্যাদি পরার প্রচলন হয়েছে ! তার আগে ভারতবর্ষে এগুলি ছিলনা ! প্রাচীন মন্দিরগাত্রে যেসব নারীমূর্তি বা দেব-দেবীদের মূর্তি খোদাই করা রয়েছে__ সেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখবে, সেগুলির মাথায় কোথাও ঘোমটা দেখেছ কি ? প্রকৃতপক্ষে তখনকার নারীরা উর্ধাংগে কোনো বসন‌ই ব্যবহার করতো না ! উর্ধাঙ্গে শুধু একটা বক্ষবন্ধনী থাকতো যার পিছন দিকটা বাঁধা থাকতো খুবই সরু ফিতের মতো দড়ি দিয়ে ! রাম-পত্নী সীতাদেবী ওইরকম পোষাকেই দীর্ঘদিন রাবণের বন্দিনী ছিলেন !

 তখকার দিনে অবস্থাপন্ন ঘরের নারীদের ঊর্ধ্বাঙ্গ অলংকারে ঢেকে রাখার প্রচলন ছিল ! তবে এটা শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবিত্তদের ঘরের নারীদের জন্য‌ই, সাধারণ মানুষ বা মধ্যবিত্তদের ঘরের মানুষের সে সঙ্গতি ছিল না ! তাদের একটাই বস্ত্র__কোনোরকমে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা !

   সাধারণত বড় ঘরের নারীরা একটা পাতলা ওড়না দিয়ে মাথার কিছুটা এবং ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢেকে রাখতো ! ওরণা বা উরণি  কথাটা এসেছে ঊর্ণনাভ বা মাকড়সা থেকে ! এই নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে ওড়ণা বা উরণি খুবই পাতলা একটা কাপড়, মা মাকড়সার জালের ন্যায় পাতলা ! এইরকম পাতলা কাপড় দিয়ে নারীর ঊর্ধ্বাঙ্গ আবৃত থাকতো ! নারীর নিম্নাঙ্গে চুমকি দেওয়া ধুতির মত কাপড় কাছা দিয়ে পরা থাকতো ! তখনও এ দেশে শাড়ির প্রচলন ছিল না ! শাড়ি আমদানি হয় অনেক পরে মালয়েশিয়ার "সারং" থেকে ।

  যাইহোক, ভারতীয়দের নারীদের কেশবিন্যাস নিয়েও অনেক সাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে ! বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তিতেও তার পরিচয় পাওয়া যায় ! কিন্তু কোথাও ঘোমটা দেওয়া বা উর্ধাঙ্গ সম্পূর্ণভাবে আবৃত রাখা নারীর কোনো প্রামাণ্য চিত্র পাওয়া যায় না ! এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, এই অবস্থায় কিন্তু তৎকালীন সমাজে নারী বা পুরুষের মধ্যে কোন পারস্পরিক পাপবোধ বা ব্যভিচার স্পৃহা বিশেষ কাজ করতো না ! প্রাচীন গ্রন্থাদিতে দু-একটি এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যাদের বেশিরভাগেরই ফল সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক হয়েছিল (ব্যাসদেবের জন্ম, শকুন্তলার জন্ম, বশিষ্ঠের জন্ম ইত্যাদি!) ! একমাত্র দৈত্য-দানো, অসুর ইত্যাদিরা যখন সভ্য মানবসমাজে ঢুকে পড়তো, তখনই এই ধরনের আচরণ হোত !  এরকমটাই বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে বা শাস্ত্রাদিতে উল্লেখ রয়েছে !

 তবে দ্যাখো, ব্যতিক্রম সবসময়েই থাকে ! ফলে সমাজের সকলেই যে সকলরকম পাপাচার ক্রিয়া থেকে মুক্ত ছিল, তা বলছি না __কিন্তু বেশিরভাগের কথা বলছিলাম ! কারণ তখনকার দিনে সাধারণের মধ্যে কোন যৌন রোগের কথা প্রাচীন গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়না !

  আমি যখন ঘুরতে ঘুরতে মধ্যপ্রদেশের বস্তার জঙ্গলে গিয়েছিলাম, তখন ওখানকার মারিয়া উপজাতিদের দেখেছিলাম ! এখানকার নর-নারীরা এখনো আদিম অবস্থায় অর্থাৎ উলঙ্গ অবস্থায় গভীর জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করে ! দেখেছিলাম__ওদের মধ্যে কারোর কোনো যৌন রোগ নেই ‌!

   তাহলে বুঝতে পারলি তো আরতি, প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে নারীদের যথেষ্ট মান-সম্মান ছিল, স্বাধীনতাও ছিল, কিন্তু এদেশে বিদেশি আক্রমণের পর থেকে ভারতীয় প্রাচীন আচার, সংস্কার, সংস্কৃতি __ এগুলি সবই নষ্ট হয়ে গেছে ! এখন যেগুলো সমাজে দেখছিস__ এগুলো সবই মিশ্র সংস্কৃতি ! তাই সবকিছুই জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেছে ! ফলে এখন যেমনটা চলছে, তার সঙ্গে adjust করে চলতে হবে ! ভারতীয় সমাজে যদি আবার কখনো ভারতের মূল সংস্কৃতি পুরোপুরিভাবে ফিরে আসে, তাহলে আবার এখানকার নারীরা স্বাধীন হবে, স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি ঘোরাফেরা করতে পারবে এবং সমাজে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করার অধিকার ফিরে পাবে ! এমনটা যদি হয়, তাহলে সেটা ভারতবর্ষ কেন __যে কোনো দেশের পক্ষেই মঙ্গল হবে _ তাই নয় কি !