জিজ্ঞাসু:— গুরু মহারাজ ! আপনি অনেক সময় বাস্ত বিজ্ঞান বা দিগবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন ! ভারতবর্ষ একটা দেশ হিসেবে বাস্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী কেমন অবস্থায় আছে ? এটা জিজ্ঞাসা করছি তার কারণ _বর্তমানে ভারতবর্ষের যা অবস্থা তাতে ভালো তো কিছু দেখছি না!

গুরু মহারাজ:—-ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিক দেশ । এদেশে ধর্মই হোলো প্রাণ। সামগ্রিকভাবে এইদেশ ধনী হোক আর গরিবই হোক _ভারতবর্ষ থেকে আধ্যাত্মিকতা কখনো লুপ্ত হবে না। এদেশের ঈশান কোণে হিমালয়ের ন্যায় পর্বতমালা রয়েছে, আর দক্ষিণে রয়েছে ভারত মহাসাগর । কোনো দেশের ক্ষেত্রে এমনটিই আধ্যাত্মিক ফিল্ড হবার উপযুক্ত স্থান । পৃথিবীর মানচিত্রে এমন কোনো দেশ যদি কোথাও থেকে থাকে, তাহলে জানবে সেই দেশটিতেও একটা আধ্যাত্মিক পরিমন্ডল রয়েছে।

 আমার যখন এই শরীরে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার সময় এসেছিলো _ তখন আমার ব্যক্তি চেতনা ক্রিয়াশীল হবার পর আমি দেখলাম আমার জন্মের উপযুক্ত জায়গা পৃথিবী গ্রহের মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষ ! তাও ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলায় এবং গঙ্গার তীরবর্তী কোনো স্থানে ! আমার জন্মগ্রহণের জন্য আধ্যাত্মিক ফিল্ডের একান্ত‌ই প্রয়োজন ছিল ! কারণ আমার জন্মের রাশি, লগ্ন _এগুলো এমনই যে, আমাকে যে কোনো অবস্থাতেই থাকতে হোক না কেন, সেখান থেকেই আমার দ্বারা আধ্যাত্মিক জগতের বিপ্লব সৃষ্টি হবে!

সে যাইহোক, ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিক দেশ । এমনটি বিশ্বের আর কোথাও নেই । এদেশের মানুষ হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান যাই হোকনা কেন_ আধ্যাত্মিকতার প্রবণতা নিয়েই জন্মায়! ভারতবর্ষ সেই দেশ যেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সুফী হয় ! খ্রিস্টানরা হরে-কৃষ্ণ নাম করতে করতে ভাবাবেশে নৃত্য করে ! হয়তো বলবে বিদেশেও তো এসব সংস্থা আছে । হ্যাঁ, আছে ! কিন্তু এগুলির সৃষ্টি এই ভারতেই হয়েছে ! আর এখান থেকেই বিশ্বের দরবারে তাদের প্রসার ঘটেছে ।

ভারতের ভূমির এমনই প্রভাব ! দিগবিজ্ঞান, বাস্তুবিজ্ঞান জানলে মানুষ এইসব রহস্য বুঝতে পারবে । ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির কথা যেটা বলছো_ এটা সাময়িক । ‘আমি’ বলছি _ভারতের সুদিন আসছে ! আর তা খুবই তাড়াতাড়ি আসছে ! প্রাচীন ভারতের যতদূর সীমানা ছিল, সেই অনুযায়ী যদি আবার ভারতের সীমা পূর্বের ব্রহ্মদেশ থেকে পশ্চিমদিকে হিন্দুকুশ পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে তাহলেই পুনরায় ভারতবর্ষ বিশ্বের সমস্ত দেশের কাছে আদর্শ স্থানীয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিগণিত হবে। তখন ভারতের রাজধানী কিন্তু দিল্লিতে থাকবে না, ওখান থেকে রাজধানী সড়িয়ে নিয়ে এসে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে করতে হবে । আর এমনটা হোলেই ভারতে তখন অনেক মহাপুরুষ একত্রে জন্মগ্রহণ করবে ! নতুন করে উপনিষদ লেখা হবে তখন !

 বাস্তুবিজ্ঞান জানা থাকলে এদেশের রাজনৈতিক-ধর্মনৈতিক মানুষেরা কি বিভেদকামী হোতো _না অখন্ড দেশ ভেঙে নতুন কোনো স্বাতন্ত্র দেশ চাইতো ? এইসব বিজ্ঞান জানেনা বলেই না দেশকে খণ্ড-খণ্ড করার প্রয়াস ! অখন্ড পুরাতন ভারতের যে ম্যাপ ছিল_ সেটাই ছিল বাস্তুবিজ্ঞান অনুযায়ী একেবারে ঠিক ঠিক ক্ষেত্র ! খন্ড খন্ড হোতেই সব গোলমাল হয়ে গেছে ! সব দেশগুলোই যেন জ্বলছে ! আর এমনটাই চলবে_ যতদিন না পুনরায় পুরোনো ম্যাপ অনুযায়ী পরস্পরে যুক্ত হয়ে যাবে।

তোমরা বলতে পারো এখন এটা প্রচার করলেই হয় ! কিন্তু এখন চিৎকার করে বললেও মানুষ মানবে না ! তুমি যদি এসব নিয়ে বই লেখো, লোকে হয়তো বলবে ‘বাঃ! আইডিয়াটা তো ভালো _ ভেবে দেখার মতো !’ কিন্তু বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না ! কাল প্রসন্ন না হোলে কিছুই হয়না । আমি এখন যেসব কথা বলছি _ পরে এগুলি সবই হবে ! উপযুক্ত কাজ কার্যকরী করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি এবং উপযুক্ত সময় বা কালের প্রয়োজন হয় ! এখন তাই অপেক্ষা করা যাক, দেখা যাক্_ কখন এটা বাস্তবে রূপ নেয়!

জিজ্ঞাসু:—গুরু মহারাজ ! আপনি ভারতবর্ষের মুসলমানদেরকেও ভালো বললেন ! ওদের এক একটা পুরুষ তিন-চারটে করে বিয়ে করে _তাহলে ভালো কি করে হোলো?

গুরু মহারাজ:—- আর তোমরা বোধহয় ধোয়া তুলসীপাতা ! কয়েক দশক আগেও কৌলিন্যের দোহাই দিয়ে একটা ব্রাহ্মণ একশ থেকে দেড়শ বিয়ে করতো _ সেসব দিন ভুলে গেলে ? তাছাড়া মুসলিম সমাজে সবাই তো বহুবিবাহ করে না ! শিক্ষিত মুসলমানেরা মোটেই তিন-চারটে বিয়ে করে না ! আর তাদের সন্তান সংখ্যাও কম! এমন অনেককেই পাবেযাদের সন্তান একটি বা দুটি । অশিক্ষিতদের মধ্যে হয়তো এরকম হয় তাও সবার নয় ! আর সন্তান-সন্ততির সংখ্যার কথা যদি বলো _ অশিক্ষিত হিন্দুদের মধ্যেও এই সংখ্যা কিছু কম নয় ! হয়তো তোমার চোখে পড়েনা কিন্তু আছে বৈকি ! আগের কয়েক প্রজন্মের লোকেরা এই অধিক সন্তান উৎপাদনের ব্যাপারে খুবই উদাসীন ছিল । বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা সকলেই এখন sincere হয়ে গেছে । ফলে পরবর্তী ২/৩-জেনারেশনের পর এই স্বতোঃপ্রনোদিত জন্মনিয়ন্ত্রণের একটা সুফল পাওয়া যেতে পারে । তবে এখন যতই চ্যাঁচাও _ একমাত্র ‘মেরে ফেলা’ ছাড়া আর অন্য কোনোভাবে এই জনবিস্ফোরণ বা বর্ধিত জনসংখ্যা দূর করতে পারবে না ! এই ‘মেরে ফেলা’-র
কাজটাও প্রকৃতিগতভাবেই হবে । Death, disease and destruction-এর মাধ্যমে বহু মানুষ মারা যাবে এবং পৃথিবীতে জনসংখ্যার একটা ব্যালেন্স আসবে । এই যে বিপুল জনস্রোতের ব্যাপারটা দেখছো _এটা থাকবে না।

জিজ্ঞাসু:— তাহলে গুরু মহারাজ! আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যে এত ধনী দেশ_ এটাও কি ওইদেশের বাস্তুবিজ্ঞানের জন্য?

গুরু মহারাজ:—হ্যাঁ ঠিকই বলেছো ! বাংলায় একটা কথা আছে “পূর্বে রানী, পশ্চিমে পানি, উত্তরে ধনী, দক্ষিনে বাণী” ! কথাটা হয়তো স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু এটা গোটা বিশ্বের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । দেখা গেছে, স্ত্রী বা ঘরনী হিসাবে পূর্ব দেশের মহিলারা সবচাইতে উপযুক্ত ! জাপানের নারীরা কি সাংঘাতিক সেবাপরায়ণ ! উত্তরের দেশ গুলির বেশিরভাগই দ্যাখো কিরকম ধনী দেশ ! পশ্চিমের দেশের জল স্বাস্থ্যের পক্ষে প্রচন্ড উপযোগী, আর দক্ষিণ দেশ গুলির ভাষা-সঙ্গীত এগুলি ভালো !

দিগবিজ্ঞান অনুযায়ী উত্তর আমেরিকার ইউএসএ যখন অনুন্নত অবস্থায় ছিল, তখনও ঐ দেশ পাশাপাশি অন্য দেশগুলি অপেক্ষা ধনী ছিল ! অথচ দ্যাখো, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির কি খারাপ অবস্থা ! ওইসব দেশগুলির জনগণ প্রায় সবাই দরিদ্র । ওসব দেশে যেটুকু অর্থ সম্পদ রয়েছে, কিছু ধনী লোক তা দখল করে বসে আছে ! ফলে বাকিরা গরীব অবস্থাতেই থেকে যাচ্ছে।

বাস্তুবিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ প্রমাণ হোলো বাংলাদেশ । ‘বাংলাদেশ’ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কি নিদারুণ সংকটের মধ্যে দিয়েই না এখন (১৯৯১-সাল) চলছে ! অথচ অখন্ড ভারতের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ছিল ওই অঞ্চলটি ! ‘পাকিস্তান‌’-ও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই অন্য দেশের তাবেদারীতে চলতে বাধ্য হচ্ছে! আর ওদের এই অবস্থাই এখনো বেশ কিছুকাল ধরে চলতে থাকবে ! আজ আমেরিকার তো কাল হয়তো অন্য কোনো দেশের তাবেদারীই কোরতে হবে ওদের ! কিন্তু নিজস্বতা ওরা কখনোই ফিরে পাবে না ! ভারতবর্ষ থেকে এরপর পাঞ্জাব যদি বিচ্ছিন্ন হয়(তখন পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছিল) _তাহলে ভারতে ‘সিভিল ওয়ার’ হয়ে যাবে !

পৃথিবীতে আর একটি অদ্ভুত মজার স্থান আছে, সেটা হোলো পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলি । এই দেশগুলি যদি অন্য কোনো দেশ আক্রমণ করে_ তাহলে সেইসব দেশের চরম রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেবে ! আগে আগে যেসব দেশ পূর্ব আফ্রিকার কোনো কোনো দেশকে আক্রমণ করেছিল, তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলেই এর প্রমাণ পাবে ! অনেক আগে ফ্রান্স একবার আলজেরিয়া আক্রমণ করেছিল । তারপর ফ্রান্সের কি শোচনীয় অবস্থাই হয়েছিল ! মিশর আক্রমণ করার পর থেকেই রোমের পতন শুরু হয়ে গিয়েছিল !

এইসব কারনেই বলছিলাম_বর্তমান রাষ্ট্রনায়কদের দিগবিজ্ঞান(বাস্তুবিজ্ঞান) জানা থাকলে বিশ্বব্যাপী বহু অশান্তি বা যুদ্ধের বীভৎসতা হয়তো কিছুটা প্রশমিত করা সম্ভবপর হোতো । কারণ জেনেশুনে নিজের ক্ষতি করতে নিশ্চয়ই কেউ চাইতো না ! তাই অকারনে কোনো দেশকে অধিকার করার জন্য যে যুদ্ধ, যে হিংসা _সেগুলি বন্ধ হোত ।

জিজ্ঞাসু:—ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার সমরকৌশল উন্নত থাকা সত্ত্বেও ঠিকমতো কাজে লাগেনি__ এরকম শোনা যায়। এমনটা হবার কারণ কি ছিল?

গুরু মহারাজ:— পৃথিবীর যে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আছে সেটা কোথায় কিভাবে কাজ করে তার জ্ঞান আমেরিকানদের ছিলনা । ফলে ওদের বোমারু বিমানগুলি সঠিক লক্ষ্যে গোলাবারুদ নিক্ষেপ করতে পারেনি। এখন অবশ্য এ ব্যাপারে আরও উন্নত রিসার্চ চলছে, যাতে পৃথিবীর এই ধরনের ফিল্ডকে উপেক্ষা করা যায় ! আজকের যা সমরকৌশল এগুলি বহুপূর্বেই ভারতে ব্যবহৃত হয়েছিল ! তখনকার অস্ত্রশস্ত্র, সমরবিজ্ঞান আরো উন্নত ছিল। মহাভারতে উল্লেখিত কর্ণের যে কবজ-কুন্ডল বা রক্ষাকবচ ছিল(শুধু যে কর্ণের‌ই ছিল তা নয়, আরো অনেকেরই ছিল), তৎকালে এই রক্ষাকবচগুলো শুধু যে অস্ত্রের আঘাত আটকানোর কাজে ব্যবহৃত হোতো তাই নয় এগুলি ছিল বর্তমানের রিমোট কন্ট্রোলের আরো উন্নত device ! এই রক্ষাকবজের বহুমুখী ক্রিয়াশীলতা ছিল। এর দ্বারা অস্ত্রের আঘাত নিয়ন্ত্রণ করা যেত, নিক্ষেপিত অস্ত্রকে নিষ্ক্রিয় করা যেত, এমনকি তার মুখ ঘুরিয়ে শত্রুর অস্ত্রকেই পুনরায় ব্যবহার করা যেতো। তাছাড়া এটি বিভিন্ন নিউক্লিয়ার রেডিয়েশনকে প্রতিহত করতে পারতো । বর্তমানে প্রাকৃতিক দূষনের জন্য যে গ্যাস-মাস্ক ব্যবহার করা হোচ্ছে, এগুলোরও তখন প্রচলন ছিল ! যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত মাস্ক-পরিহিত মানুষ ঠিক যেন রামায়ণের কাল্পনিক হনুমান বা জাম্বুবানের মতো দেখতেতাই না ! তার মানে কি বলো তো_ যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু রামের সৈনিকদের চিত্র হয়তো কোনো গুহায় অথবা অন্য কোনো স্থানে অঙ্কিত ছিলপরবর্তীতে সেই চিত্রগুলি থেকেই বানর সৈন্যের concept তৈরি হয়েছে মানুষের মনে । সুতরাং হনুমান,জাম্বুবান,নল,নীল,সুগ্রীব-আদিরা মানুষ‌ই ছিল _ বনের কোনো জন্তু-জানোয়ার নয়, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে !

তবে রামায়ণের যুগে রাম-রাবনের বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধগুলিতে ভয়ঙ্কর যেসব অস্ত্রের প্রয়োগ হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি হোল “মন্ত্র যুদ্ধ” বা psychic war ! খর-দূষণের সঙ্গে যুদ্ধে রামচন্দ্র এই অস্ত্রের প্রয়োগ করেছিলেন । রামায়ণে একে বলা হয়েছে “সম্মোহন বাণ”। এই মন্ত্রশক্তির এমন গুন যে, বিপরীত পক্ষকে কোনো অস্ত্র প্রয়োগ করতে হয় না ! শত্রুরা নিজেরাই পরস্পর পরস্পরে হানাহানি করে মারা যাবে। ঋষি ভরদ্বাজ রামচন্দ্রকে এই বিদ্যার ফর্মুলা দিয়েছিলেন।

জিজ্ঞাসু :—রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি মহাকাব্যগুলির অনেক ঘটনা বিজ্ঞানসম্মত _এটা মানতে পারা যায়। কিন্তু বিভিন্ন পৌরাণিক ঘটনাবলীর মধ্যে যেসব আজগুবি ব্যাপার রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কি কোনো আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত তথ্য রয়েছে ?

গুরু মহারাজ:— তা আছে বৈকি ! পুরাণে রয়েছে_ হিরণ্যাক্ষ ইন্দ্রকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে স্বর্গ মর্ত পাতাল জয় করে নিয়েছিল এবং সৃষ্টিকে রসাতলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেই সময় ঈশ্বরের একটা রূপ ‘বরাহ অবতার’ এসে দারুন গর্জন করে হিরণ্যাক্ষ সহ সমস্ত রাক্ষসকে নিধন করে । এখানে ‘হিরণ্যাক্ষ’ হচ্ছে Interplanetary disorder ! “ইন্দ্র” হচ্ছে ‘order’ ! বাইরের কোনো ধুমকেতুর বা অন্য কোনো নক্ষত্রের আকর্ষণ_ পৃথিবীর উপর প্রবল হওয়ায় পৃথিবী গ্রহটি সেই সময় কক্ষচ্যুত হবার উপক্রম হয়েছিল ! এমতাবস্থায় বিষ্ণুর অবতার অর্থাৎ ঈশ্বরীয় শক্তি বা যে তত্ত্ব সবকিছুরই sustaintion-এর জন্য দায়ী অথবা তোমরা বোঝার জন্য ধরে নাও Inter galaxy matter-এর অন্য একটা force পৃথিবীকে পুনরায় তার কক্ষে স্থাপন করেছিল। পুরাণে বর্ণিত রয়েছে__ হিরণ্যাক্ষ‌ যত গর্জন করে, বরাহ-অবতার‌ও তত‌ই গর্জন করছিল ! শেষে বরাহের গর্জনে হিরণ্যাক্ষ মারা যায় !

ব্যাপারটা সহজেই অনুমেয় যে, এই নক্ষত্রমন্ডলের system-এর মধ্যে কোনো একটির disorder এবং তাকে order-এ আনার জন্য যে দুটি ভীষণ বিপরীত বলের ক্রিয়া __ তার ফলে প্রচন্ড শব্দ সৃষ্টি হওয়াটা কোনো বিচিত্র ব্যাপার নয় ! ঐসময় এটাই হয়েছিল।

পুরাণে বর্ণিত এই রকম অজস্র বৈজ্ঞানিক ঘটনা রয়েছে ! সমাজের মানুষকে ঠিকমতো বোঝানো হয় নি বলে বহুকাল পরে মানুষের স্মৃতি থেকে আসল ঘটনাটা অবলুপ্ত হয়ে যায় ! শুধু ভাট বা চারণ কবিদের গানের কথায় গল্পটার উল্লেখ থাকে মাত্র ! পরবর্তীকালে রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় সভাকবি,সভাপন্ডিতবা অন্যান্য লেখকেরা লুপ্তপ্রায় প্রাচীন গ্রন্থগুলিকে(পুরাণাদি শাশ্ত্র) আবার একটা নতুন আকার দেবার চেষ্টা করেন। আর এইটা করতে গিয়ে তারা আবার নতুন নতুন অনেকগুলি ঘটনার সন্নিবেশ ঘটিয়ে ফেলেন ! ফলে প্রকৃত গ্রন্থের মূলভাবের কিছু বিকৃত হয়ে যায়, আবার নতুন কিছু সংযোজিত‌ও হয়ে যায় ! এইভাবেই পুরাণের ঘটনা থেকে আধুনিককালের মানুষেরা কোনটি সত্য তা বুঝে উঠতে পারেনা ! সে যাইহোক, এটা বৈবস্বত মনুর কাল ইনি চতুর্দশ মনু ! এর আগে আগে যে এইরূপ্ই আরো তের জন মনু ছিল __তার কোনো record নাই ব’লে এখনকার মানুষের আর সে সম্বন্ধে কিছু জানাও নেই !

কিন্তু জানবে, এই পৃথিবীতেই আগে আগে বর্তমানের মতো এরূপ কত যে সাম্রাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল বা জড় বিজ্ঞানের কত‌ই উন্নতি ঘটেছিল __তার ইয়ত্তা নাই ! ‘সাম্রাজ্য’ কথাটা বললাম ‘সভ্যতা’ বললাম না ! কারন, আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীতে সভ্যতা বা civilization এখনো আসেনি ! যা এসেছে তাকে dynasty বলা যায় civilization বলা চলে না।