জিজ্ঞাসু:– আমরা সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানদেরকেই সমাজনেতা হিসেবে পাই। বিবেকবানেরা যেন অন্তরালে থাকে অথবা বলা যায় নেতাদের ছায়ায় থেকে জীবন কাটিয়ে দেয় । এটাই তো দেখছি বাস্তব চিত্র- তাই নয় কি গুরুজী ??

গুরু মহারাজ:– সেটাই তো হয় _কারণ পৃথিবীগ্রহ এখনো ততোটা উন্নত হয়ে ওঠে নি। এটা ঠিকই যে, যে কোনো সমাজ ব্যবস্থায় ক্ষত্রিয় শক্তি থেকেই সমাজনেতা, দেশনেতা তৈরি হবে, কিন্তু সমাজকে সুস্থ রাখতে হোলে সমাজনেতাদের মাথার উপরে কোনো বোধি ব্যক্তি বা সদগুরুকে স্থান দিতে হবে । অন্ততঃ তিনি হবেন বিবেকবান কোনো মহাত্মা ! সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এইটা একটা সার্বজনীন principle! আর এমনটা হোলেই একটা আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবে !
কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর কোনো সমাজেই এই নিয়ম follow করা হয় না বলেই যত গন্ডগোল ! এখনো পৃথিবী গ্রহ ততোটা উন্নত হয়নি যে, বুদ্ধিমানেরা বিবেকবানদের দ্বারা পরিচালিত হবে বা তাদের সমস্ত নির্দেশ মেনে কার্য করবে । তবে, এটা জেনে রাখবে_ পৃথিবী গ্রহে কোনো কোনো সময় কোনো কোনো স্থানে এমনটা হয়েছিল এবং সেখানে সাময়িকভাবে হোলেও একটা আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। তাই সেইগুলিই এখনো পর্যন্ত আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত হয়ে আছে । আগামী দিনে পৃথিবীর কোনো স্থানে এইরূপ আদর্শ বাস্তবায়িত হোলে __অবশ্য‌ই সেখানকার মানুষ তার সুফল লাভ করবে ।

দ্যাখো, বিবেক সব কালে- সব যুগেই আদৃত হয় কিন্তু বুদ্ধি অতোটা নয় ! বুদ্ধিমানেরা সমাজে আপাতদৃষ্টিতে ভালো হয়তো অনেক কিছু করেছে বলে মনে হোতে পারে কিন্তু যদি প্রকৃতপক্ষে বিচার করে দ্যাখো_ তাহলে দেখা যাবে জগতে সবচাইতে মন্দ কাজগুলোও করেছে বুদ্ধিমানেরা! জগতের ভালোকে বারবার তারাই ধ্বংস করেছে । সব দেশে বুদ্ধিমানেরা নানা রকম নীতি নির্ধারণ করেছে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো হয়ে গেছে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ! কারণ প্রকৃতির পাঠশালায় তারা পাঠ গ্রহণ করেনি, তারা কৃত্রিম পাঠশালায় পাঠগ্রহণ করে বুদ্ধিমান হয়েছে _বিবেকবান হোতে পারেনি । ন্যায়-অন্যায়, নীতি দুর্নীতি এগুলো তো স্থান-কাল পাত্রে সীমাবদ্ধ। কেন না _ এক দেশে যেটা নীতি, হয়তো দেখা যাবে অন্য দেশে সেইটাই দুর্নীতি ! আবার দ্যাখো, আজ থেকে 2000 বছর আগে এই ভারতীয় সমাজে যে সমস্ত নিয়ম ‘নীতি’ বলে বিবেচিত হোতো _ এখনকার সমাজে দেখা যাবে সেগুলোই ‘দূর্নীতি’ হিসাবে বিবেচিত হোচ্ছে ! আবার হয়তো এখনকার অনেক নিয়ম, নীতি বা ন্যায় __আজ থেকে হাজার বছর পরে অনিয়ম-দুর্নীতি বা অন্যায় বলে বিবেচিত হবে ! কিন্তু দেখা গেছে বিবেক বা বিবেকচালিত কর্ম _ সর্বকালীন, universally আদৃত। বিবেক পরায়ন ব্যক্তিরা সবসময়ই ‘বহুজন হিতায়’ ও ‘বহুজন সুখায়’ কাজ করে থাকেন ! বৈষ্ণব শাস্ত্রে এটাকে বলা হয়েছে _’কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা’ ! আর বুদ্ধি চালিত কর্ম-ই হোলো ‘আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা’!

যাই হোক, তোমার জিজ্ঞাসার উত্তরে অনেক কথাই বলা হোলো, আরো যেটা বলা যায় যে _ পৃথিবী গ্রহ এখনো যেহেতু ততোটা উন্নত হয়নি_ তাই এখন যেমনটা দেখছো_এমনিটাই বেশ কিছুদিন চলতে থাকবে। তারপর সবকিছুরই পরিবর্তন হবে।।