গুরু মহারাজ:—কারণই কার্যে রূপ নেয়_ পৃথিবী গ্রহের এইটাই অমোঘ নিয়ম। এটাকে ‘কার্যকারণ সূত্র’ বলা হয়েছে। কারণ শরীরই সূক্ষ্ণে রূপ নেয়, আবার কারণ শরীর সৃষ্টির পিছনেও কার্যের ভূমিকা রয়েছে।
তুমি জানতে চাইলে সূক্ষ্ম থেকে স্থুল কিভাবে আসে_তাইতো ? জড়বিজ্ঞানের একটা উদাহরণ দিয়ে তোমাকে বলছি শোনো_কারণ তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র, ব্যাপারটা ধরতে পারবে! প্রকৃতিতে অথবা গবেষণাগারে যেভাবে শক্তি(সূক্ষ্ম) বস্তুতে(স্থুলে) রূপ নেয়__ ঠিক সেই ভাবেই সূক্ষ্মদেহ থেকে জীব স্থূলদেহ প্রাপ্ত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই theory একই কিন্তু স্থুলদেহ প্রাপ্ত হবার ক্ষেত্রে একটাই বিশেষ শর্ত রয়েছে__ এটি হয় through জীবদেহ! যেহেতু স্থুল দেহটি জীবের তাই through জীবদেহ–ব্যাপারটা ধরতে পারলে কি !
জিজ্ঞাসু:–আচ্ছা গুরুজী! এই যে বলছিলেন সূক্ষ্ম দেহ থেকেই আসে স্থুল দেহ ! তাহলে বিভিন্ন প্রাণীরও তো সুক্ষদেহ রয়েছে !! আর একই প্রাণীর সুক্ষদেহ থেকে সবসময় কি ওই বিশেষ প্রজাতির প্রাণীরই স্থুল দেহ হয় ?
গুরু মহারাজ:—কারণ> সূক্ষ্ম> স্থূল__ এইটা যেমন একটা ক্রম, তেমনি স্থুল> সূক্ষ্ম> কারণ__ এটাও আরেকটি ক্রম ! ‘কারণ’ থেকে ‘কার্যে’ রূপ পরিগ্রহণ করে হয় সূক্ষ্ম দেহ এবং সূক্ষ্ম থেকে আসে স্থূল দেহ । এই স্থূল দেহ লাভ করার পর জীবের মনোজগতের ক্রিয়া এবং স্থুল শরীরের ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা সংঘটিত ক্রিয়ার কার্য শুরু হয়। আবার এই যে কারোর, সেই কার্যই পরবর্তী জীবনের সূক্ষ্ণশরীরে ক্রিয়াশীল হয় এবং সেইগুলিই আবার আরো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ণ রূপে কারণ শরীরে সঞ্চিত হয় এবং সেখান থেকেই পরবর্তী শরীরের ভিন্ন ভিন্ন রূপরেখা তৈরি হয়।
পৃথিবী গ্রহের জীব সকলের মধ্যে সব চাইতে উন্নত শরীর হোলো মানুষের । এই জন্য এই গ্রহে মানুষের স্বভাবটিও উন্নত হওয়া অর্থাৎ সুন্দর হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এটা দেখা গিয়েছে___ যে সমস্ত মানুষের স্বভাব সুন্দর, তাদের সবই সুন্দর হয়ে থাকে। ঐরূপ ব্যক্তিদের বর্তমান জীবন অপেক্ষাও পরবর্তী জীবনের শরীর এবং জীবনযাত্রা সুন্দর হয়ে ওঠে।
এখানে একটা জিজ্ঞাসা আসতে পারে, এরূপ হবার কারণটা কি ? এর উত্তরে বলতে হয় যে, কোনো মানুষের স্বভাব সুন্দর হোলে তার চিন্তার জগতে একটা ছন্দবদ্ধতা আসে। সেই ছন্দ_ ‘কারণ শরীরে’ও ছন্দবদ্ধতা আনে অর্থাৎ একটা harmony সৃষ্টি করে । ফলে, ওই ‘কারণ’ যখন কার্যে রূপ নেয় অর্থাৎ সূক্ষ্ম অবস্থা হয়ে যখন পরবর্তী স্থুলশরীর নেয়__ তখন সেই শরীরটি উন্নত আধার রূপে জগতের কাছে প্রতীয়মান হয়।
অপরদিকে যদি কোনো মানুষ ইতর স্বভাবের হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির পরবর্তী শরীরে ইতর যোনি প্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের শরীর পেয়েও যদি কোনো ব্যক্তির কুকুরের মতো স্বভাব হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি পরবর্তী শরীরে কুকুর-যোনি প্রাপ্ত হবে। যদি কারো শুয়োরের মতো স্বভাব হয়, তাহলে সে পরবর্তী শরীরে শুয়োর হয়ে জন্মাবে। যদি কোনো ব্যক্তি বর্তমান শরীরে শুধু অপরের দোষ দেখে বেড়ায় অর্থাৎ ছিদ্র অন্বেষণ করে অর্থাৎ এটাই যদি তার স্বভাব হয় __তাহলে সে পরবর্তী শরীরে সরীসৃপ হয়ে জন্মাতে পারে !
এই জগতের রহস্য বড়ই বিচিত্র বাবা ! কখন কি যে হয় এবং কিভাবে হয়_ তার হিসাব ক’জন রাখে বলো ? একমাত্র স্বয়ং পরমেশ্বর সব জানেন আর বোধি ব্যক্তিরা অর্থাৎ মহাপুরুষ- মহাজনেরাও ঈশ্বরের ইচ্ছায় সমস্ত খবর রাখতে পারেন বা অপর ব্যক্তিদেরকে জানাতেও পারেন।
আবার জানো__ অভিশাপগ্রস্থ হওয়ার জন্য বা মহাপাতক করে ফেলার জন্যও__ মানুষ শরীর থেকে সরাসরি ইতরযোনি প্রাপ্ত হোতে পারে। অবশ্য এইটার theory আলাদা। অভিশাপ থেকে কোনো মানুষের জীবনে নানারকম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে ! তবে এক্ষেত্রে একটা কথা জেনে রাখা ভালো যে, কেউ শাপ-শাপান্ত করলেই তা ক্রিয়াশীল হয় না। যে ব্যক্তি অভিশাপ দিচ্ছে_ তাকে দ্বিতীয় ব্যক্তি অপেক্ষা চেতনায় উন্নত হোতে হবে–তবেই অভিশাপ ফলতে পারে !অন্যথায় এই ধরণের অভিশাপ শুধু কথার কথা হয়ে যায়। আর একটা কথা জানবে_ অভিশাপের ক্ষেত্রে, অভিশাপ দানকারী এবং অভিশাপগ্রস্ত ব্যক্তি__এই দুজনেরই ভোগান্তি হয়ে থাকে।
তাই ধ্যান-জপ করে কিছুটা শক্তি লাভ হয়েছে বলেই হুট্ করে অপরকে শাপ-শাপান্ত করা বা অভিশাপ দেওয়াটা ভালো জিনিস নয় ! তাতে হয়তো অপরের ক্ষতি হয় ঠিকই কিন্তু নিজেকেও তার ফল ভোগ করতে হয় ।
আরও একটা কথা এখানে বলা দরকার, তা হোলো__ কোনো অসহায়-অসমর্থ- দুর্বল মানুষকে(সে যদি বাবা-মা বা কোনো আত্মীয় হয়_তাহলে তো নয়ই, এমনকি অনাত্মীয় হোলেও নয়) উপেক্ষা, অবজ্ঞা বা অবহেলা করা অথবা অত্যাচার বা নির্যাতন করা একেবারেই উচিত নয়। দুর্বলের উপর অত্যাচার করতে থাকলে__ ওই অসহায়-অসমর্থ মানুষগুলির অন্তরে স্থিত অন্তরাত্মা যেন কেঁপে ওঠে ! আর এমনটা হয় বলেই ঐ অত্যাচারীকেও চরম ফল ভুগতে হয়। হয়তো এইজীবনে কিছু ভোগান্তি হোলো না বলে অনেকে ভাবে_’কই অন্যায়-অত্যাচার করলেই বা কি আর এমন ক্ষতি হোলো ? দিব্যি জীবন কাটানো যাচ্ছে তো !’ কিন্তু এই জীবনে ফলভোগ না হোলেও পরবর্তী জীবনে ভয়ঙ্কর ফলভোগ করতে হয়। বাস্তবে যে সমস্ত বিকলাঙ্গ,কানা, খোঁড়া,অন্ধ অথবা অসহায়ভাবে_অবহেলায় পথে পড়ে থাকা নর-নারী __এরা সকলেই ঐরূপ শাস্তি ভোগ করছে !
এই যে কথাগুলি বলছি __এগুলি সব ধ্রুব সত্য কথা জানবে।।
আর মহাপাতকের কথা যেটা বলা হচ্ছিলো_ তা হোলো_ পিতা-মাতা-গুরু বা গুরুস্থানীয় কোনো ব্যক্তির প্রতি যদি অত্যন্ত গর্হিত আচরণ করা হয়_ তখনই মহাপাতক হয় । আর মহাপাতকগ্রস্থ জীবের সাধারণ নিয়মে মুক্তি ঘটে না ! যখন কোনো না কোনো মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন_ তখন তাঁর সান্নিধ্যলাভ করতে পারলে, সেই মহাপুরুষের কৃপায় ঐসব ব্যক্তির মহাপাতক থেকে মুক্তি ঘটে।।