জিজ্ঞাসু:—আচ্ছা গুরুজী! যারা একটু আধটু সাধন-ভজন করে, তাদের অনেকেই বলে__ আজ ধ্যান করার সময় আমার ‘এটা দর্শন হোলো’, ‘ওটা দর্শন হোলো’ ! কিন্তু ‘দর্শন’ মানে তো দেখা ! ‘দর্শন’-এর আর একটা মানে জানি দর্শনশাস্ত্র! তাহলে সাধন-ভজনের ক্ষেত্রে ‘দর্শন’-এর কি অন্য কোনো অর্থ আছে ?
গুরু মহারাজ:–তুমি বললে ‘দর্শন’ মানে ‘দেখা’ অর্থাৎ চোখে দেখা। কিন্তু ‘দেখা’– এই শব্দ টাও তো বাংলা সাহিত্যে বা আমাদের ব্যবহারিক জগতে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন ধরো__ ‘চোখে দেখা’ যেমন হোতে পারে, তেমনি ‘চেখে দেখা’-ও তো হয়। প্রথমটার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘to see’, আবার দ্বিতীয়টার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘to taste’ ! এমনি আরো অনেক রকম ‘দেখা’-র কথা বলা যায়, যেমন ধরো_ ‘মন দিয়ে দেখা’, ‘জ্ঞানের গভীরে দেখা’, ‘ধ্যানের গভীরে দেখা’ ইত্যাদি। এই সমস্ত ‘দেখা’-গুলির অর্থ সবই পৃথক পৃথক । যদি কোনো স্থুল বস্তুকে চোখে দেখার কথা বলো__ তাহলে সেখানেও গোলমাল দেখা দিতে পারে। যেমন, তুমি একজন মানুষ হিসাবে কোনো বস্তুকে যেমনটা দ্যাখো_ একটা কুকুর কিন্তু ওই বস্তুটাকে তেমনটা দ্যাখে না ! একটা মাকড়সা আবার সেটাকেই আরো অন্যরকম দ্যাখে ! মাছ বা জলজ প্রাণীরা আরো ভিন্নরকম দ্যাখে ! গরু কোনো বর্ণেরই বিশেষ তারতম্য করতে পারে না। ওরা যেকোনো রঙিন বস্তুকে কালো দেখে__ তাইতো ষাঁড়ের সামনে লাল কাপড় ধরলে ওরা তেড়ে যায়!
মানুষের মধ্যেও দৃষ্টির নানান বিভিন্নতা ঘটতে পারে । তোমার চোখের রেটিনায় যদি rapture হয়, তো তুমি কোনো বস্তুকেই আর সঠিক আকার বা আকৃতি অনুযায়ী বুঝতে পারবে না। অন্যরা ঐ বস্তুকে যেমন দেখছে_ তুমি তার চেয়ে অন্যরকম দেখবে। তোমার visual cortex-এ যদি কোনো গন্ডগোল হয়ে যায়__ তাহলে তোমার ‘চোখে দেখার’ ব্যাপারটা সব গোলমাল হয়ে যাবে। আবার দ্যাখো, তুমি এমনিতে একটা বস্তুকে যেমনটা দেখছো__ সেই বস্তুকেই যদি তুমি লেন্সের সাহায্যে দ্যাখো, তাহলে দেখবে যে ওই বস্তুটির আকার এবং আকৃতির পরিবর্তন হয়ে গেছে । এটা হয়না কি ? আবার ওই বস্তুকেই তুমি যদি আরও শক্তিশালী লেন্স বা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখো_ তাহলে আরো অন্যরকম হয়ে যাবে।
তাহলে বলো__ তোমার কোন দেখাটা সঠিক? প্রকৃতপক্ষে কোনো
দেখাটাই সঠিক নয়। কারণ যে বস্তুটিকে তুমি দেখছো এবং যে মাধ্যমের সাহায্যে দেখছো__ সেই সবকিছুই তো স্থান-কাল-পাত্রের দ্বারা সীমাবদ্ধ। খালি চোখে মানুষ three dimensions বা two dimensions-এর যে কোনো বস্তু দেখতে পায়। কিন্তু four dimensions, five dimensions, six dimensions এবং seven dimensions-এর কোনোকিছুকে তুমি কিভাবে দেখবে ? স্থুল চোখ দিয়ে কি দেখা সম্ভব _ কখনোই তা সম্ভব নয় !
ভিন্ন ভিন্ন dimensions-এর বস্তু বা বিষয়সমূহ দেখার জন্য শুধুমাত্র আমাদের শরীরের একটি বহিঃ-ইন্দ্রিয় ‘চোখ’ দিয়ে দেখা হবে না। ঐগুলির কিছু কিছু অতীন্দ্রিয়গ্রাহ্য। আবার কিছু কিছু আছে অতীন্দ্রিয়ের দ্বারাও জানা যায় না__ তার জন্য জ্ঞানচক্ষুর প্রয়োজন হয়। … (ক্রমশঃ)