[স্থান:—বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন। সময়:–মার্চ, ১৯৯৯!
উপস্থিত ব্যক্তিগণ:— জম্মুর কৌশলজী, মোরাদাবাদের সি এল শর্মাজী, হীরালাল, স্বামী স্বরূপানন্দ, নগেন এবং অন্যান্য ভক্তগণ।
[জিজ্ঞাসু(উত্তর ভারতের এক ভক্ত):– কোনো গুরুর শিষ্য যদি তার গুরুকে-ই ভগবান ভাবে__যদিও সে জানে যে, তার গুরু আধ্যাত্মিক ভাবে যথেষ্ট উন্নত নয় বা তিনি ব্রহ্মজ্ঞ ন’ন___ তাহলে সেটা কি ঐ শিষ্যের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে কোনো খারাপ ফল দেবে ?”
___এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন গুরু মহারাজ। আজ এই আলোচনার শেষাংশ]
……. এখানেই একটা জিজ্ঞাসা আসে যে, এমনটা হয় কেন ? মানুষ তো সেই অমৃতেরই পুত্র, শাস্ত্র মানুষকে সম্বোধন করেছে “অমৃতস্য পুত্রাঃ”! কিন্তু সেই ‘অমৃতের পুত্র’ হয়েও মানুষের এতো দূর্মতিই বা কেন আর তার এই দুর্গতিই বা কেন ? মানুষের দুর্গতির কারণ কি _তা বলতে গেলে বলতে হয় এর জন্য দায়ী হোলো _ কর্ম ! আরো ভালো করে বলতে গেলে বলা যায় _এর জন্য দায়ী ক্রিয়মান কর্ম ! কর্মদোষেই নানা রকম কষ্ট পায় মানুষ !
দেখবে, একটা কথার খুবই ব্যবহার হয়ে থাকে__ ‘সংযোগ-সম্পর্ক-সম্বন্ধ’ ! এখানে একটা কথা সকলের মনে রাখা উচিত __যে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ ঘটায় কাল বা সময়।
যখনই কোনো কিছুর জন্য একজন মানুষের প্রাণ কাঁদে, তখনই সেই ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে সেই মানুষটির সংযোগ ঘটে । কিন্তু কোনো বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে ওই মানুষটির সম্পর্ক স্থাপন হবে কিনা_ সেটি নির্ভর করে ক্রিয়মান কর্মের উপর ।
এছাড়াও দেখা গেছে যে, মানুষের জীবনে চরম সংকটের সময়ে অথবা চরম শোকের মুহূর্তে বা আনন্দের সময়ে __বিপরীতমুখী দু রকমের সংযোগের সুযোগ পায় মানুষ অর্থাৎ তার মনোজগতে দু’রকমের ভাবনার উদয় হয় । কার‌ও শোকের সময়ের কথাই যদি ধরা হয় __তাহলে সেই সময় একটা ভাবনা তাকে বলে যে, ”চল্ ! এইরকম পরিস্থিতিতে অমুক জায়গায় চল্, একটু স্ফুর্তি করে আসি ! তাহলে এই শোক বা সংকটের অবস্থার নিরসন হোতে পারে!” এই ভাবনার বশবর্তী হয়ে সেই ব্যক্তি যে কোনো স্ফুর্তির জায়গায় চলে যায় ! এমনকি সেই অবস্থায় ঐ ব্যক্তি(পুরুষ) কোনো মদের ঠেকে বা বেশ্যালয়েও যেতে পারে !
আবার ওই একই ব্যক্তির অন্য কোনো ভাবনাও আসতে পারে ! সে মনে মনে ভাবতে পারে_’ চলো ! এই শোকের মুহূর্তে, এই চরম সংকটকালে চলো আমরা গুরুদেবের কাছে যাই ! তিনিই হয়তো এই সময়ে আমার মনের চরম অশান্তি দূর করে দিতে পারেন ! আমাকে চরম শান্তি প্রদান করতে পারেন!’
চরম আনন্দের সময় বা পরম সুখের সময়ও এই ভাবেই দু’রকম বিপরীতমুখী সংযোগের সন্মুখীন হোতে পারে মানুষ । জেনে রাখবে_ এইখানেই মানুষের কিছুটা নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে ! এখানে ‘স্বাধীনতা’ অর্থাৎ free will ! সে কোন্ সুযোগটা গ্রহণ করবে অথবা করবে না_এটাতেই ঐ স্বাধীনতা থাকে। এবার সে যেটা গ্রহণ করবে__সেটাই ঐ ব্যক্তির বর্তমান ! আর তখন সে_যে কর্মটি করছে, সেই কর্মটি ‘ক্রিয়মান কর্ম’ ! এবার কথা হোচ্ছে__ ‘ক্রিয়মান কর্ম’ যেমন হবে, কর্মের ফলও তেমনটাই হবে।
এই জন্য‌ই বলা হয় যে, মানুষের জীবনে আসা যে কোনো অবস্থার জন্য মানুষ নিজেই দায়ী। এখানে ‘ঈশ্বর’ বা তার ‘ভাগ্য’ ইত্যাদি কোনোমতেই বা কোনভাবেই দায়ী নয় ! এইজন্য জ্ঞানী মহাজনগণ পদে লিখেছেন যে__ ‘দোষ কারো নয় গো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা’!
মানুষ যদি তার বর্তমানকে ঠিক করে নেয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ জানার জন্য কোনো জ্যোতিষী, গনৎকারের কাছে যেতে হবে না বা তাবিজ-কবজ-মাদুলি পড়তে হবে না ! কোনো নামধারী-ডিগ্রীধারী বাবার কাছে যাবার‌ও কোনো প্রয়োজন নাই । তুমি নিজে সৎ ও সুন্দর হয়ে ওঠো, তাহলেই তোমার বর্তমান সুন্দর হবে এবং তার পিছু পিছু ভবিষ্যৎও সুন্দর হবেই হবে ৷৷