জিজ্ঞাসু—কলা এবং সংস্কৃতিতে ফরাসী জাতি অন্যান্য জাতি থেকে গুণগতভাবে এতটা উন্নত হ’ল কি করে মহারাজ ?
গুরুমহারাজ—কলা এবং সংস্কৃতিতে ফরাসীজাতির উন্নতি বা গুণের কথা তুমি বলছ ? কলা ও সংস্কৃতিতে ফরাসীরা নগ্নতাসরবরাহ করেছে আর অশ্লীলতা আমদানী করেছে আর কি করেছে ? আজ ইউরোপের অনেক দেশে প্রকাশ্য রাজপথে, কোন সরকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুবক-যুবতীরা নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানায়—এটা ফরাসীদের কাছ থেকে পাওয়া। ভারতবর্ষেও দিল্লী, মুম্বাই এই সমস্ত স্থানে এই ধরণের প্রতিবাদ হচ্ছে আজকাল শুনতে পাই, তার মানে ওদের প্রভাব এখানেও পড়েছে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নামে ‘কফি হাউস’ সৃষ্টি করেছে ওরা। বিশ্বকে শিখিয়েছে মদ না খেলে, লম্পট না হলে সু-সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় না—এটা মূর্খতা নয় কি ! ইংলণ্ড এই ভাব গ্রহণ করেনি—তাই ইংরেজ সাহিত্যিকরা যতটা আন্তজার্তিক স্বীকৃতি পেয়েছে, সংখ্যার বিচারে অন্যান্য দেশ ততটা পায়নি। ইতালি-স্পেন এরাও ওদের এই ভাবটা অতটা গ্রহণ করেনি। তবে Russian সাহিত্য বা কলা ততটা ভালো নয়। এক টলষ্টয় আর দুই-এক জন কবি ছাড়া অন্যেরা বিশেষ কেউই আন্তর্জাতিক মানের সু-সাহিত্যিক হয়ে উঠতে পারেনি।
যাইহোক ফ্রান্সের যে কথা হচ্ছিল তাতে দেখা যায় মোপাসাঁর মত বিখ্যাত লেখকেরও ‘মা’ গল্পটি বাদ দিলে বাকী রচনাগুলিতে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। ওদেশের বিখ্যাত artist-দের যত নাম করবে তাদের বেশীর ভাগ art-এ নগ্নতাই প্রাধান্য পেয়েছে দেখতে পাবে। সুতরাং ফরাসী কালচার আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে—বিশেষত সাহিত্যজগতে ক্ষতিকারক জীবাণুর মতো। আর ফরাসীজাতির গুণের কথা যদি বলো তা সেটা হচ্ছে ওদের স্বাধীনতা-প্রিয়তা। যে কোন দেশ বা জাতি যদি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে তবে ওরা তাকে সাহায্য করবে। মাও সেতুঙ, চো-এন-লাই এর মত নেতারা ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও এদেরকে ফরাসীরা সাহায্য করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের সময় ওরা সাহায্য তো করেছিলই আবার স্বাধীনতালাভের পর বিখ্যাত যে statue of liberty তা ওরাই উপহার হিসাবে দিয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে বা বৃটিশ বিরোধী যে কোন যুদ্ধে এমনকি সিরাজউদদৌলাকেও ওরা নানাভাবে সাহায্য করেছিল। পণ্ডিচেরী এবং চন্দননগরে — ওদের কুঠিতে সেই সময় বিভিন্ন বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছিল ওরা। সুতরাং গুণের কথা যদি বলতে চাও তো ফরাসীজাতির এই গুণটির কথাই বল, অন্য যে গুণগুলি বলছ এইগুলি সেই অর্থে ‘গুণ’ নয়।
জিজ্ঞাসু—বনগ্রাম আশ্রমে আপনার ঘরে যেমন গন্ধ পাওয়া যায়, এখানে আপনার কাছে এসে সেই সুগন্ধটি পাওয়া গেল। এটি কি আপনার গায়ের সুগন্ধ ?
গুরুমহারাজ—প্রতিটি মানুষের গায়ের গন্ধই পৃথক হয়। পৃথিবীতে যদি ৫০০ কোটি মানুষ থাকে তাহলে যেমন তাদের প্রত্যেকের স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য পৃথক তেমনি তাদের প্রত্যেকের গায়ের গন্ধ আলাদা। মানুষের শরীরে যে বিভিন্ন endocrine বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ রয়েছে তাদের মধ্যে thyroid এই গন্ধ সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাই ঘাড় বা গলা বা তার সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকেই গন্ধ বেশী নিঃসৃত হয়। কুকুর, সাপ, পিঁপড়ে, গরু—এরা প্রচণ্ডভাবে এই গন্ধে আকৃষ্ট হয়। মশাও মানবশরীরের এই জায়গাতেই বেশী ঘোরে, যেটা আমরা ভাবি কানের কাছে ভোঁ ভোঁ করছে। আমি দেখেছি আমার গায়ে পিঁপড়ে উঠলেই আমার ঘাড়ের কাছে ঘুরঘুর করে। যোগীদের গলায় সাপ জড়িয়ে থাকার কথা যেটা শোনা যায় সেটার কারণ আত্মস্থ যোগীর স্বভাবসিদ্ধ প্রাণায়াম আর যোগীর গায়ের সুন্দর গন্ধ। গরু বা বাছুর দেখবে মানুষের ঘাড় বা গলাটাই শোঁকে অথবা চাটতে শুরু করে। এইসব থেকে বোঝা যায় যে, মানুষের শরীরের অন্য অংশ অপেক্ষা তার body- odour বা গায়ের গন্ধ ঐ অঞ্চলগুলিতে বেশী নির্গত হয়। তবে মানুষের গায়ের গন্ধের ভিন্নতা নির্ভর করে তার শরীরের বিভিন্ন gland থেকে নিঃসৃত হরমোনের ভিন্নতা অনুযায়ী।
জীববিজ্ঞানীদের মতে জীবদেহের গন্ধ সৃষ্টি করে ‘ফেরোমেন ’ নামক একরকম পদার্থ। কোন মানুষের শরীরে যে যে gland বেশী ক্রিয়াশীল সেই শরীরের গন্ধ সেই অনুযায়ী হবে। কাজেই যিনি ঠিক ঠিক গন্ধবিচার করতে পারেন, তিনি কোন মানুষ কাছে এলেই তাকে না দেখে তার গায়ের গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারবেন যে, ব্যক্তিটি কি প্রকৃতির। আমার গুরুদেব রামানন্দজীর সঙ্গে দেখা হলেই প্রণাম করার সময় উনি আমার ঘাড়টা শুঁকতেন। আমার কাছে আসে অনেক মানুষ, প্রণাম করলে আমিও তাদের ঘাড়ের কাছ থেকে নানা ধরণের গন্ধ পাই। এক-একজনের গায়ের গন্ধ এত উৎকট যে, সহ্য করা মুস্কিল হয় । আদর্শ পুরুষের শরীর থেকে পদ্মগন্ধ বের হয়—তবে এটা দুর্লভ। সংযমী, সত্ত্বগুণীদের গায়ে ‘গাওয়া ঘি’-এর গন্ধ মেলে। আর আদর্শ নারীর গায়ের গন্ধ হবে ‘মধু’র মতো।
বিভিন্ন gland-এর অসাম্যতা বা disharmony থাকার জন্য অনেকের গায়ে যে উৎকট গন্ধ থাকে তা কিছু আসন, প্রাণায়াম, ধ্যান এবং আহার সংযম করলে দূর হয়ে যায়। কোন কিছুই এ জগতে স্থায়ী বা নিত্য নয়। সুতরাং কোন কিছুর জন্যই কারো হীনমন্যতায় ভোগা উচিত নয়। যার যে ত্রুটি রয়েছে, সে ইচ্ছা করলেই আবার সেখান থেকে উঠে আসতে পারে, ত্রুটিমুক্ত করতে পারে নিজেকে। এরজন্য প্রয়োজন শুধু নিষ্ঠাপূর্বক সাধনা বা অভ্যাস।
জিজ্ঞাসু—বর্তমানে pathology-তে বিভিন্ন প্রকার test করেও ঠিক ঠিক রোগ diagnosis করা যাচ্ছে না—এর কি আরও কোন উন্নত বিজ্ঞান আছে ?
গুরুমহারাজ—একথা বোলো না যে, একেবারেই pathology থেকে কোন রোগ নির্ণয় হচ্ছে না। মল-মূত্র-রক্ত-কফ পরীক্ষা করেও বহু রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে বইকি—অবশ্য যদি পরীক্ষাগুলি নিখুঁত হয়। এখন তো সব জায়গাতেই ফাঁকিবাজী। উপযুক্ত পরীক্ষা ছাড়াই সাধারণ গরীব মানুষের কাছ থেকে গাদা-গাদা পয়সা নিয়ে ভুল-ভাল Report দিয়ে দেওয়া হয়। এগুলি কিন্তু খুবই অন্যায়। তবে Pathology-র যন্ত্র- পাতি যত সূক্ষ্ম ও নিখুঁত হবে ততই দেখবে আগামীদিনে বিভিন্নরকম test করানোটা মানুষের কাছে সহজসাধ্য হয়ে যাবে এবং পরীক্ষাগুলিও নিখুঁত হবে।
আর অন্যান্য পরীক্ষা বলতে এখন তো অনেক জায়গায় শরীরের ঘাম নিয়ে test করা হচ্ছে এবং এতেও অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। আগামীদিনে দেখবে চুল নিয়ে বিশ্লেষণ হবে। বাংলায় প্রবাদ রয়েছে না ‘চুল চেরা বিশ্লেষণ’। হিন্দীতে বলে “বাল্ কা খাল উতরকে দেখনা।” এবার সেটাই হবে, দেখবে বাস্তবে। চুল বা চুলের গোড়া বিশ্লেষণ করলে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির রস বা হরমোন ক্ষরণের তারতম্য ধরা পড়বে। ফলে অল্পায়াসে অনেক কঠিন ব্যাধির সন্ধান মিলবে। তবে আগামী প্রজন্মের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে আসছে যেটা, সেটা হল, যে কোন জাতকের জন্মের সঙ্গে যে ফুল বা placenta নির্গত হয় মায়ের দেহ থেকে, তার বিশ্লেষণ। মানুষের যাবতীয় জেনেটিক রোগ নির্ণয়ে এবং নিরাময়ে এটি বিরাট ভূমিকা নেবে।
আবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ন্যায় ভবরোগবৈদ্য কিছু নতুন theory দিয়ে গেলেন বা শারীর লক্ষণ শিখিয়ে গেলেন। যেমন তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানরা প্রস্রাব করলে গিয়ে দেখে আসতেন প্রস্রাবের ধারাটা কোন দিকে বেঁকেছে, আবার কারও হাতটা নিজের হাতে নিয়ে তার হাতের ওজন পরীক্ষা করতেন এবং সেই ব্যক্তির স্বভাব বা প্রকৃতি সম্বন্ধে সঠিক মূল্যায়ন করতেন। ভক্তরা ঘুমিয়ে পড়লে তিনি তাদের শ্বাসের ক্রিয়ার গতি-প্রকৃতি লক্ষ্য করতেন। একদিন তিনি দেখলেন নরেনের প্রশ্বাস হ্রস্ব কিন্তু নিঃশ্বাস দীর্ঘ। তিনি পরের দিন সকালে বলে দিলেন নরেনের সব লক্ষণই ভাল কিন্তু ও খুব স্বল্পায়ু। একবার উনি মজা করে বলেছিলেন— ‘ভেঁয়ো পোঁ নারী’ খুব স্বার্থপর ও মন্দ হয়। আবার বলেছিলেন “মুখহলসা (যা খুশী বলতে পারে), ভেতর বুঁদে দিঘল ঘোমটা নারী, পানা পুকুরের শীতল জল বড় মন্দকারী।” আবার পুরুষদের খারাপ লক্ষণের মধ্যে বলতেন, “উন পাঁজুরে, বাছুর চোয়াল”। তবে এই যে লক্ষণসমূহের কথা ঠাকুর বলতেন, এগুলি যেন তোমরা মিলিয়ে কাউকে ছোট-বড় বলে বিচার করতে যেও না। তোমাদের কোন কথা বলা আবার ঐ এক বিপদ। শুনেই অমনি ডাক্তারি করতে লেগে যাবে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন লীলাময় ভগবান। এগুলি ছিল তাঁর লীলাবিলাসের অঙ্গ। কার কি ভাব, কার দ্বারা কি হবে — এসব তিনি এমনিই জানতেন। তবু লীলাবিলাসের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ভক্তের সঙ্গে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন লীলা করেছেন—শুধু এটাই বলা যায়।
জিজ্ঞাসু—ইউরোপের দেশগুলিতে তো যন্ত্রপাতি উন্নত এবং খাদ্যের ব্যাপারেও ওরা সচেতন শুনেছি। ওদের খাদ্য কিরূপ যদি একটু বলেন আর সেই খাবারে ওদের কি রোগ-ব্যাধি কম হয় !
গুরুমহারাজ—তার কি কোন মানে আছে ? শরীর থাকলেই রোগ-ব্যাধিও আছে। মানুষের অন্তঃকরণেই বীজাকারে রোগ বা ব্যাধি রয়েছে। সেটা যখন বাইরে প্রকট হয়, স্থূলশরীরে লক্ষণ দেখা যায়, তখন মানুষ বলে অমুকের অমুক হয়েছে। এই যে একটু আগে আমি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ নিয়ে আলোচনা করছিলাম—তুমি দুম্ করে রোগ- ব্যাধির কথায় আমাকে নামিয়ে আনলে –এইরূপ বিভিন্ন চেতনার মানুষ জগতে রয়েছে। সাধারণত মানুষ অন্নময়, প্রাণময় এবং মনোময় কোষের ক্রিয়াশীলতার মধ্যেই বেশী রয়েছে। তাই তাদের চিন্তাধারা, কাজকর্ম এবং জিজ্ঞাসার ধরণ দেখেও মানসিকতার level বোঝা যায় । যাইহোক আমি Art of Life এবং Art of Living-এর কথা বলি। ফলে শারীরবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, খাদ্যবিজ্ঞান সবই আমার আলোচনার অঙ্গ, এতে আমার কোন অসুবিধা হয় না। ইউরোপের বর্তমান খাদ্য বেশীরভাগটাই tinned অথবা packed আর বেশীর ভাগ main খাদ্যেই কোন না কোন পশুপাখীর মাংস অথবা চর্বি মেশানো আছে। তবে প্রতিটি tin বা pack-এর খাদ্যই sterilised, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট পরিমাণযুক্ত অর্থাৎ এককথায় স্বাস্থ্যসম্মত। আর প্রথম বিশ্বের দেশগুলোয় ভেজাল চলে না, একবার প্রমাণ হয়ে গেলে সেই কোম্পানীর সবকিছু বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে আর এত বিশাল পরিমাণ জরিমানা হবে যে, কোম্পানী বেচেও টাকা শোধ হবে না। সুতরাং খাদ্যের ব্যাপারে ওরা নিশ্চিত যে, তাতে কোন ভেজাল নেই। তবে নিরামিষাশীদের মুস্কিল, আমি তো ফল আর বিস্কুট ছাড়া খাবারই পেতাম না। বেয়ন নরওয়েতে আমার জন্য Indian Store থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনে আনত, আর রান্নাও করে দিত। তবে বেশীরভাগ দিনই নুন-ছাড়া খিচুড়ি আর চিনি ছাড়া হালুয়া ।
ইউরোপীয়দের একটা সুবিধা আছে খাদ্য যদি স্বাস্থ্যসম্মত হয় তাহলে গরু, শুয়োর না অন্য প্রাণীর মাংস এই নিয়ে ওরা খুব একটা বাছবিচার করে না। বর্তমানে Aids বা বিভিন্ন degenerative dis- ease-এর ধাক্কায় এবং দীর্ঘায়ু হবার জন্য ডাক্তারদের পরামর্শে বহু ইউরোপীয় নিরামিষ আহারের দিকে ঝুঁকেছে। ঐসব দেশে পাখির মাংস বা ঐ জাতীয় white meat নিরামিষ খাদ্য বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু ইসকন-এর ভাবধারায় যারা ভাবিত তারা কিন্তু pure vegeterian, ওদের দৌলতে ইউরোপের প্রায় সব দেশে super-market-গুলোতে তুমি ঝিঙে, পটল, আলু, কুমড়ো, উচ্ছে, পালংশাক, এমনকি তুলসীপাতা গঙ্গাজল সবই পাবে। তবে এগুলোর দাম এতবেশী যে, তোমার – আমার মত সাধারণ লোকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
সাধারণ ইউরোপীয়ানরা কেনা খাবারই খায়, রান্নাঘর একরকম উঠেই গেছে। আর ঐ যে বললাম সবরকম মাংসই খায়— তবে আমাদের মতো করে নয়। আমরা যেমন Tooth Paste ব্যবহার করি, ঠিক তেমনি করে বিভিন্ন পশু বা পাখীর মাংসের বা চর্বির Paste পাওয়া যায়। যে কোন খাদ্যে ওটাকে মিশিয়ে নিয়ে খাওয়া যায়। আর রান্না করা মাংস বলতে হয় সিদ্ধ না হয় ঝলসানো অথবা সেঁকা। কেউ কেউ smoked করেও খায়। যে কোন খাদ্যে মশলার ব্যবহার নেই বললেই চলে। শুধু খাদ্যের সঙ্গে প্রয়োজন মত salt অথবা কোন চিলি বা সস্ মিশিয়ে নেয়। ইউরোপীয়ানদের খাদ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তবে বার্মীজদের খাদ্য তুমি খেতে পারবে না। ওরা পচা মাংস বড় বড় পোকা হয়ে যাবার পর তবে খায়। চীনাদের দামী dish-এর মধ্যে একটা হচ্ছে—কোন ছোট বাঁদরের মাথা কাঠের হ্যামার দিয়ে মেরে মেরে নরম করে নিয়ে, সেটাকে রক্ত সমেত প্লেটে piece piece করে কেটে সবাই মিলে খেয়ে নেওয়া। নাইজিরিয়া বা কেনিয়ায় গরুর তাজা রক্ত পাত্র করে ধরে সম্মানীয় অতিথিকে পান করতে দিয়ে আপ্যায়ন করে।
এসব খাদ্য ইউরোপের উন্নত দেশগুলোয় পাবে না, তবে ভালো হোটেলে বা রেস্তোরাঁয় order দিয়ে বসে আছো কিছুক্ষণ পরে দেখবে হয়তো তোমার প্লেটে ‘গরুর জিভ’ রোষ্ট করে দিয়ে গেছে আর যদি Horse Penis পাও সেটা অন্যতম দামী খাবার। এবার রোগ-ব্যাধির কথা যদি বল তাহলে সাধারণত এক-এক দেশে রোগের প্রকোপ এক-একরকম। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাধারণত দাঁতের সমস্যা, চর্মরোগ বেশী। খুবই বিলাসবহুল ও উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনের জন্য মানুষ কিডনি, প্রোষ্টেট গ্ল্যাণ্ডের সমস্যা এবং বর্তমানে Aids-এর সমস্যায় ভুগছে। ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাও কম নয়। তবে যেটা বলছিলাম যন্ত্রপাতি উন্নত, চিকিৎসা-ব্যবস্থা উন্নত ও organized, ফলে রোগীরা এখানকার হাসপাতালের মতো অবহেলার শিকার হয় না, সুচিকিৎসাটা পায়।