জিজ্ঞাসু—মুখকে শরীরের আয়না বলা হয়, তাই একজন ডাক্তার হিসাবে আমার মনে হয় মুখ দেখেই শরীরের অনেক রোগ ধরা যায়। আর রোগ নির্ণয় হলেও অযথা ওষুধ ব্যবহারের যে প্রবণতা বর্তমান ডাক্তারদের –এটাও মনে হয় অন্যায়। এ ব্যাপারে আপনার sugges tion চাইছি।
গুরুমহারাজ—মুখ অর্থাৎ মুখমণ্ডল শরীরের আয়না—একথা তো ঠিকই। মুখ দেখে মা বুঝতে পারে ছেলের শরীর খারাপ কিনা। এমন কি শিশুরা এবং পশুরা মানুষের মুখ—বিশেষত চোখ দেখে নির্ধারণ করে নেয় লোকটি তাদের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বা তা নয়। বিশেষত Kidney, Liver এবং Prostate gland-এর দুর্বলতার সুস্পষ্ট ছাপ মুখমণ্ডলের মধ্যে ধরা পড়ে। ফলে যে কোন ডাক্তারের এই বিজ্ঞান জানা থাকলে রোগীর মুখ দেখেই ঐ অঙ্গগুলির কোন দুর্বলতা আছে কিনা তা বলে দিতে পারবে। দ্যাখো দুটো চোখ আর চিবুক মিলে যে রকম ডেল্টা form করে, শরীরের অভ্যন্তরে দুটো Kidney আর Prostate gland নিয়ে সেই একইরকম ডেল্টা গঠন করে থাকে। এই ব্যাপারটা বিজ্ঞান-সম্মতভাবেই সম্পর্কযুক্ত। চোখের নিচে কালি পড়া বা গোল গোল সাদা দাগ হওয়া এগুলো Liver-এর দুর্বলতার লক্ষণ। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় শরীরের ভাষা বা Language of body খুব ছোট থেকেই এক সাধুর কাছে শিখেছিলেন। ফলে পরবর্তীকালে উনি যখন ডাক্তারি পাশ করলেন তখন ওনার এই বিধানটি ডাক্তারি বিধান-এর সাথে যুক্ত হয়ে চিকিৎসা-ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হয়েছিল।
এছাড়া যে কথাটা তুমি বললে যে, Allopathic ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, এ নিয়ে প্রথম বিশ্ব খুবই research করছে। এখন ওরা Allopathic ওষুধ খাওয়া প্রায় একরকম বন্ধই করে দিয়েছে। এখন ওরা মেনে নিয়েছে যে, Prevention is better than cure. তাই Preventive measure হিসাবে ওরা নিরামিষ আহার গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে আর Naturopathy চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসা করাচ্ছে। Naturopathy চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে দেখলাম আসন, প্রাণায়াম শেখানো হচ্ছে আর পরিমাণ মত জল, ভিটামিন-সমৃদ্ধ পদার্থ ইত্যাদি গ্রহণ করিয়ে রোগের প্রতিরোধের বা রোগ সারানোর চেষ্টা চলছে। দেখা গেছে যারা খুব হাসে বা একটু রঙ্গরসপ্রিয় তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। ফলে constipation যাদের ধাত, তাদের ঐ সব কেন্দ্রে খুব হাসানো হয় অথবা তাদেরকে Laughing club-এর সদস্য করে নেওয়া হয়। তুমি যদি কোন Laughing-club-এ যাও তাহলে দেখবে সেখানে বিভিন্ন বয়সের নর-নারীরা বসে বসে হা-হা, হি-হি, হো-হো করে নানান অঙ্গভঙ্গি করে হাসছে। আসলে ব্যাপারটা হয় কি, হা-হা করে প্রাণখোলা হাসলে পেটের নাড়ীগুলোর মধ্যে একটা কম্পন হয়, এতেই কোষ্ঠ পরিষ্কারের ব্যাপারটা ঘটে। এমনিতেই দেখবে হাসিখুশিহীন শিশুদের অপেক্ষা হাসিখুশিপূর্ণ শিশুদের রোগ কম।
যাইহোক এইভাবেই ওইসব দেশে natural ভাবে অর্থাৎ ওষুধ না খেয়ে সুস্থ থাকার একটা প্রবণতা আজকাল খুব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, ওরা দেখেছে যে, Allopathic ওষুধের বেশীরভাগই শরীরে এতটা side-effect সৃষ্টি করে যে, একটা রোগ সারাতে আর দশটা রোগ উৎপন্ন হয়। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে জনসংখ্যা এত বেশী আর অশিক্ষিতের হারও বেশী, ফলে প্রথম বিশ্ব যে সমস্ত ওষুধ বহুদিন আগে reject করে দিয়েছে, এদেশের মানুষ সেগুলোই মুঠো মুঠো খাচ্ছে। এই ভাবে আমাদের এই সমস্ত দেশগুলোর জাতীয় স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে গেল। আর ডাক্তারগুলোও হয়েছে তেমনি, শুধু দুটো পয়সার জন্য, সব জেনেশুনেও রোগীকে ঐ সমস্ত ওষুধই pre- scribe করছে। যে সব রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যায় তাদের ৯০ ভাগের ক্ষেত্রে মামুলি কিছু পরামর্শই যথেষ্ট, ওষুধ Prescribe করার কোন প্রয়োজনই হয় না। ডাক্তারবাবুরা যদি মুখের ভালোবাসা দেখায় আর কিছু আসন, প্রাণায়াম ও খাদ্যবিধির পরিবর্তন করে দেয় তাহলেই বহু রোগী রোগমুক্ত হতে পারে। কিন্তু তারা তা না করে প্রথমেই গোটাকয়েক antibiotic আর pain-killer দিয়ে দেয়। ব্যস্ রোগীটার সেই রোগটা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে সারল, কিন্তু শরীরের vital আভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ যেমন, Heart, Lung, Liver, Kidney— এগুলোর মারাত্মক ক্ষতিসাধন হয়ে গেল। এইভাবে জ্বর-জ্বালা ইত্যাদিতে কোন শিশু বা লোক যদি কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যায় তাহলে কিছুদিন পরেই দেখা যাবে যে, সে মারাত্মক কোন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেছে। আর বর্তমানে এটাই ঘটে চলেছে। সুতরাং তোমরাও সতর্ক হও।
জীবনতত্ত্বের (*গুরুজীরআবিষ্কৃত৯টিআসন—যাপরমানন্দমিশনথেকেশেখানোহয়এবং’জীবনতত্ত্ব’নামকএকটাগ্রন্থওআছে।) আসনগুলি নিয়মিত অভ্যাস কর। কিছুক্ষণ করে সকাল-সন্ধ্যায় সহজ প্ৰাণায়াম অভ্যাস কর, আহার ও বিহারে সংযমী হও, আর অপ্রয়োজনে Allopathic ওষুধ খেয়ো না, দেখবে সুস্থ ও নীরোগ হয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবে।