জিজ্ঞাসু—আচ্ছা মহারাজ ! সবকিছুই তো ঈশ্বরের ইচ্ছায়হয়, তাহলে জৈন ধর্মের খারাপটি নিয়ে আলোচনা করলেন কেন ?

গুরুমহারাজ—এটাও ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই হ’ল।

জিজ্ঞাসু—বর্তমানে গোটা বিশ্বব্যাপী খণ্ডযুদ্ধ, গোলাগুলির ব্যবহার, বোমাবাজি চলছে, তাছাড়া শিল্প, যানবাহনের ফলে বায়ুদূষণ আর তার উপরে রয়েছে নির্বিচারে বনাঞ্চল ছেদন, এগুলোর প্রভাব কি প্রকৃতির উপর পড়বে না ? গুরুমহারাজ—প্রকৃতি বলতে তুমি যা বোঝাতে চাইছ, সেটা তো unit-কে বাদ দিয়ে নয়। তাই জেনে রাখবে ছোট ছোট আকারে হলেও অসহজভাবে বা unnaturally যাই কিছু করা হোক না কেন, তাতে প্রকৃতি disturbed হবেই। গোলাগুলি ছুঁড়ে মানুষ মারা কেন কোন পশু-পাখীকে নির্বিচারে হত্যা করা বা বনাঞ্চল কেটে শিল্পাঞ্চল বা বসতি বানানো, এগুলো শুধু স্থানীয়ভাবে নয় সমগ্র পৃথিবীর পক্ষেই অত্যন্ত হানিকর। কারণ এতে ecosystem ব্যাহত হচ্ছে। যুদ্ধ- বিগ্রহ বা অপরকে মারা এগুলোর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে এই সত্য জানবে যে, “অপরের ক্ষতিসাধন করলে, নিজের ক্ষতিই হয়।” বর্তমানের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনেকটা পরে হলেও এখন ব্যাপারটা বুঝেছে। তাই phenomenal disturbance রুখতে ওরা এখন বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক কৰ্ত্তা-ব্যক্তিদের উপর চাপ দিচ্ছে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ কমে যায় বা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। দ্যাখো, এ ব্যাপারে ভারতীয় ঋষিদেরকি অসাধারণ দূরদৃষ্টি ও নিখুঁত ভাবনা ছিল, চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। তাঁরা সকলের শান্তি কামনা করে গেছেন—“আব্রহ্মস্তম্ব পর্যন্ত জগৎ শান্তিলাভ করুক।” প্রতিটি ঋষি আশ্রমে প্রতিদিন ভোরবেলায় সমবেত প্রার্থনার আওয়াজ আকাশে-বাতাসে মুখরিত হত। আজকের মানুষ ধীরে ধীরে এই রহস্য বুঝতে পারছে, তাই সমস্ত পৃথিবীজুড়ে আওয়াজ উঠছে “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।” অনেক বন ধ্বংস হয়েছে কিন্তু আজ আবার শুরু হয়েছে বনসৃজন প্রকল্প, অনেক বাঘ-ভালুক নির্বিচারে মেরে ফেলে আজকের মানুষ অভয়ারণ্য তৈরী করছে। কাজটা দেরিতে শুরু হলেও এতে মানুষের মঙ্গলই হবে। বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন যে স্তর রয়েছে তার মধ্যে Inosphere-এ পৃথিবীর উপরিভাগে যে কোন বস্তুর অবস্থিতি অনুযায়ী বিশেষ electron-মণ্ডল সৃষ্টি হয়। যেমন হয়তো হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বিশাল বিশাল বনাঞ্চল ছিল, এখন আর নেই কিন্তু Inosphere- এ ঐ বিশেষ বনাঞ্চলের জন্য বিশেষ electron-মণ্ডল আজও রয়ে গিয়েছে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এইসব তথ্য জানতে পেরেছেন। কিন্তু ঋষিরা কোন যন্ত্র দিয়ে এসব জানেননি, তাঁরা তাঁদের Intution-এ প্রকৃতির রহস্য জেনে নিতেন। যাইহোক, এইভাবে প্রকৃতিতে একটি বিশেষ অঞ্চলের গাছপালা, পশুপাখী, মানুষ—এমনকি তাদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ইত্যাদিরও এক একটি বিশেষ electron-মণ্ডল রয়েছে। কোন কারণে যদি সেই স্থানের ecosystem-এর কোন পরিবর্তন ঘটে তাহলে Inosphere-এ ঐ স্থানের যে impression রয়েছে তার সঙ্গে আর মেলে না, একেই Phenomenal disturbance বলা হচ্ছে। আর এই disturbance-এর ফলে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, যা কিছু হতে পারে। ইথিওপিয়ায় বর্তমানে যে নিদারুণ খরা চলছে, তার কারণ এটাই। বহু পূর্বে ঐ সমস্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা ধর্মাচরণের দিক থেকে pagan ছিল। ওদের সমাজে প্রত্যেক সন্ধ্যায় বড় বড় ঢাক বাজিয়ে প্রার্থনা করা হোত। প্রত্যেক গ্রামে-গ্রামে, পল্লীতে-পল্লীতে সন্ধ্যার আকাশে- বাতাসে, দূর-দূরান্তরে ছড়িয়ে যেত সেই ঢাকের আওয়াজ—“মা বু-বু- বু”, “মা বু-বু-বু”। তারপর যখন থেকে ওরা খ্রীষ্টান হোল বা বলা চলে ওদেরকে খ্রীষ্টান করা হোল তখন থেকেই ওরা গীর্জায় প্রার্থনা করতে শুরু করল ঘণ্টা বাজিয়ে, ঢাক বাজিয়ে নয়। ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় শোনা যেতে লাগল ঘণ্টাধ্বনি ঢং-ঢং। এই যে সামাজিক বা ধর্মনৈতিক পট পরিবর্তন, এর ফলেই ওখানকার আবহমণ্ডলে distur- bance দেখা দিল—আর যার পরিণতি হ’ল ১০-১২ বছরের লাগাতার অনাবৃষ্টি। কি নিদারুণ এবং অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ওখানকার মানুষেরা। হাজার হাজার মানুষ মরে গেছে, জলের অভাবে রক্ত চুষে খাচ্ছে মানুষ—ভাবা যায় ! তবে আশার কথা বর্তমানের impression- টা নিশ্চয়ই আবহমণ্ডল গ্রহণ করেছে কারণ কিছু কিছু স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এখন। হয়তো আগামী দিনে আবার নতুন climate-এ regular বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে ইথিওপিয়ায়।