জিজ্ঞাসু—গুরুমহারাজ, হিমালয়ের দুর্গম গিরি-গুহা-কন্দরে আপনি যেভাবে ঘুরেছিলেন—এর তো একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সত্যলাভ, তাছাড়া আর কি কোন উদ্দেশ্য ছিল ?

গুরুমহারাজ—সত্যলাভই তো মানবজীবনের উদ্দেশ্য। সত্যই ব্রহ্ম —সত্যই ঈশ্বর। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন—সত্যের জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করা যায় কিন্তু কোন কিছুর বিনিময়ে সত্যকে ত্যাগ করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—রাজা হরিশ্চন্দ্র সত্যরক্ষার জন্য স্ত্রী-পুত্র-রাজ্য-সম্পদ ত্যাগ করেছিলেন, প্রহ্লাদ সত্যের জন্য পিতার আদেশ অমান্য করেছিলেন, বলিরাজা গুরুদেব শুক্রাচার্যের নিষেধ মানেননি, রামচন্দ্র সত্যরক্ষার্থে শোনেননি পিতা বা মাতার কথা, গোপীরা স্বামীদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে সত্যস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গ করছিলেন—ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্যলাভ বা ঈশ্বরলাভের জন্য অনেক কিছুই অগ্রাহ্য করা যায়, কোন ক্ষতি হয় না। যাইহোক আমি যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তখন প্রথম দিকে শরীর রক্ষা করার জন্য একটা তাগিদ ছিল, তাই খাদ্যগ্রহণের জন্য সঙ্গে একটা পাত্র ও কম্বল রাখতাম। পরে একেবারে করপাত্রী হয়ে গিয়েছিলাম অর্থাৎ হাতের অঞ্জলিতে যেটুকু প্রসাদ বা অন্ন ধরে তাতেই উদরপূর্তি করতাম এবং ঝরনার বা নদীর জল অঞ্জলিভরে পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করতাম। কিন্তু ঐ সময় আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যেটার পর থেকে শরীর রক্ষার ব্যাপারটায় আর মনোযোগ দিইনি। ফলে আমার মন অনেক হাল্কা ও চিন্তামুক্ত হয়ে গেল এবং অনেক সময় বেঁচে গেল।